• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আউটসোর্সিং ও ট্রেনিং সেন্টার বাণিজ্য
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:৫১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আউটসোর্সিং
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আউটসোর্সিং ও ট্রেনিং সেন্টার বাণিজ্য
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বায়নের যুগে কাজের ক্ষেত্র বর্তমানে নিজ দেশ বা নির্দিষ্ট গ--র মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তথ্যপ্রযুক্তির সুবাধে ঘরে বসেই বিশ্বব্যাপী কাজের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর শ্রমের মূল্য বেশি হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অল্প খরচে কাজ করিয়ে নেয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে প্রায় দুই দশক ধরে। তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা ব্যবহার করে ঘরে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পেশা ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ দেরিতে প্রবেশ করলেও সম্ভাবনাময় দেশের তালিকায় রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ মার্কেটপ্লেসের মতে, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারেরা ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৮ সাল নাগাদ অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার শ্রমশক্তির বাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে গবেষকেরা ধারণা করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং পেশায় বিশ্বে তৃতীয় স্থানে আছে। তবে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই রাজধানী শহর ঢাকাকেন্দ্রিক। অথচ গ্রামে-গঞ্জে বসেই ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের কাজের ব্যবস্থা করা যায় এবং সম্পাদন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। মফস্বল শহর বা উপশহরগুলোতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কমপিউটার রয়েছে এবং ইন্টারনেটও ব্যবহার করছে। ফ্রিল্যান্সিং জব উপযোগী সফটওয়্যারগুলোর ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্স হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারে। দিনে ২-৩ ঘণ্টা কাজ করে স্বনির্ভর হতে পারে, পারে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার কাজটিও চালিয়ে নিতে। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তির ও এ বিষয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারেরা লোগো ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি, এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে প্রতিমাসে প্রতিজনে গড়ে প্রায় ১ হাজার মার্কিন ডলার আয় করছে। প্রথম অবস্থায় আয় একটু কম হলেও ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে যেকারও পক্ষেই তা সম্ভব।
উপরে বর্ণিত সব কথা পুরোপুরি যে সত্যি হবে তা যেমন বলা যায় না, তেমনি এটাও সত্যি- আউটসোর্সিং নামের এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আউটসোর্সিংয়ের নামে হাজার হাজার ডলার আয়ের এক অলীক স্বপ্নকে পুঁজি করে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার নামে এখন এক ধরনের প্রতারণা ব্যবসায় শুরু করে দিয়েছে। তবে অবস্থা আরও গুরুতর হয়েছে সরকার যখন এই খাতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট দেয়া শুরু করে। ফলে শুরু হয় আরেক নতুন যুগ- যার নাম ‘বাড়ি বসে বড় লোক’! যাই হোক, এই হাইপের পেছনে অনলাইন পত্রিকাগুলোর ভূমিকাও কম নয়। তথ্যের কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ট্রেনিং সেন্টারগুলোর নানা ধরনের চটকদার সংবাদ প্রকাশ করা শুরু করে। ফলে যা হওয়ার তাই হলো- লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এসব নিমণমানের ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে আসলে কিছুই না শিখে তাদের কষ্টের টাকা নষ্ট করছে। কোর্স শেষে টেকনিক্যাল তেমন কিছুই শিখছে না, যা শিখছে তা হলো কীভাবে মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় আর বড়জোর কিছু স্পামিং মার্কা ইন্টারনেট মার্কেটিং।
কোর্স করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ : প্রথমেই আসা যাক, আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে হলে আসলেই কি ট্রেনিংয়ের দরকার আছে? আমার মতে, ঠিকভাবে রিসার্চ করলে কোনো ধরনের ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন নেই। তবে গাইডলাইনের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যাদের আউটসোর্সিং কাজে দক্ষতা আছে, তাদের সাথে শলাপরামর্শই যথেষ্ট। ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে হলে আপনাকে নিজে নিজে শেখার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে। তাই প্রথম থেকেই ইন্টারনেট ঘেঁটে শেখার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। ‘শেখা’ ব্যাপারটি সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি ব্যাপার। আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে সব কাজই শেখা সম্ভব, তবে সে ক্ষেত্রে ওই বিষয়ের ওপর সঠিক ধারণা থাকতে হবে। যেমন সঠিক বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে যেমন ব্যাকরণ জানা প্রয়োজন। ধারণায় ঘাটতি থাকলে অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিখতে অসফল হলে ট্রেনিংয়ের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। নিজে শিখতে শিখতে মোটামুটি মধ্যম মানের দক্ষ হয়ে উঠলে মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করা উচিত।
এবার আসা যাক ট্রেনিং সেন্টার বা ট্রেনিং সেন্টার নামের প্রতারণামূলক বাণিজ্য প্রসঙ্গে। নিঃসন্দেহে কম কষ্টে বেশি আয় বা ইংরেজি ভীতি বা প্রাইভেট টিউটর ধরনের মানসিকতাই আমাদের ট্রেনিং সেন্টারগুলোর দিকে নিয়ে যায়। তাছাড়া সেন্টারগুলোর নিত্যনতুন চটকদার বিজ্ঞাপনও এই ক্ষেত্রে বিশাল বেকার যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করে।
অনেকেই ফেসবুকে বিশাল বিশাল ইনকামের স্ক্রিনশট দিয়ে নতুনদেরকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, তবে শেষে দেখা যায় তারা আসলে এসব স্ক্রিনশট ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করেছে। অর্থাৎ পুরোই ভুয়া। তাদের টার্গেট মূলত এই সেক্টরে যারা নতুন তাদেরকে বিশাল বিশাল অঙ্কের ইনকামের কথা বলে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকার ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি করানো। অনেকে আবার একধাপ এগিয়ে গিয়ে লেকচার ভিডিও বিক্রি করা শুরু করে।
পরিশেষে প্রথমত নিজেকেই নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে প্রচুর গাইডলাইন রয়েছে। তবে একান্তই যদি কোনো ট্রেনিং সেন্টারে যেতে হয়, তবে একটু সতর্ক হওয়াটা বাঞ্ছনীয়
সাবধান হব কীভাবে?
এসব মন ভোলানো ও চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে সবারই উচিত একটু সতর্ক হওয়া ও যাচাই-বাছাই করে তারপর কোনো ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া। অনলাইনে শেখাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। এরপরও যদি কোনো ট্রেনিং সেন্টারে যেতেই হয়, তবে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।
০১. ট্রেনিং সেন্টারের সুনাম কেমন? তা জানার জন্য বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক ফোরাম/ব্লগ বা ফেসবুক গ্রুপে তাদের সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে পারেন। এছাড়া আপনি কোনো প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সারের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে পারেন।
০২. যিনি আপনাকে ট্রেনিং দেবেন সেই ট্রেইনারের বায়োডাটা বা মার্কেটপ্লেসে তার প্রোফাইল দেখে নিন। যে মার্কেটপ্লেসে কাজ করেছেন, সেখানে তিনি কত ঘণ্টা কাজ করেছেন, কত রেটে কাজ করেছেন। সেখানে তার রেট বা রিভিউ কেমন তা যাচাই করে নিন। এছাড়া তার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপেও অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।
০৩. আপনার আগে যারা এই ট্রেনিং সেন্টার থেকে কোর্স করেছেন তাদের ফিডব্যাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে ট্রেনিং সেন্টারের নিজস্ব ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ফিডব্যাকের ওপর ভরসা না করাই ভালো। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি সঠিক হয় না। যদি সম্ভব হয়, তবে আপনার আগে যারা এই সেন্টারে কোর্স করেছেন তাদের কাছ থেকে জেনে নিন তাদের প্রশিক্ষণের মান সম্পর্কে।
০৪. দক্ষ একজন ফ্রিল্যান্সারই যে দক্ষ শিক্ষক হবেন তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই কোনো বিখ্যাত ফ্রিল্যান্সারের নাম শুনেই তার পেছনে হাজার হাজার টাকা খরচ করা ঠিক নয়। তাই তার শিক্ষকতার দক্ষতা ও ডেডিকেশন পরখ করে দিন।
০৫. যদি কোর্স শেষে কোনো প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ থাকে তবে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে এই ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি, যাতে ভর্তি হওয়ার সময় এই প্রতিশ্রম্নতি দেয়। অনেক ট্রেনিং সেন্টার কোর্স শেষে তা সঠিকভাবে কার্যকর করে না।
ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস