বর্তমানে ওডেস্ক (www.oDesk.com) মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক। ওডেস্কে যেসব ফ্রিল্যান্সার টিম সফলতার সাথে কাজ করছে, তাদের মধ্য অন্যতম হচ্ছে ‘আলফা ডিজিটাল’ নামের একটি টিম। বর্তমানে এ টিমের সদস্য সংখ্যা ৫০-এর কাছাকাছি। কয়েক মাস আগেও এ গ্রুপটি ওডেস্কের শীর্ষ দশের মধ্যে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছিল। গত বছরের এপ্রিলে গঠিত হয়ে মাত্র এক বছরে এরা এ পর্যন্ত ৩১৮ প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং মোট ১৩ হাজার ঘণ্টার বেশি কাজ করেছে। এ মূহুর্তে এরা একসাথে ৭৫ প্রকল্পে কাজ করছে। এ টিমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হচ্ছেন মামুনুর রশিদ নামের একজন ফ্রিল্যান্সার। ওডেস্কের এ সফলতা নিয়ে কথা বলেছিলাম তার সাথে। তিনি জানিয়েছেন এই সফলতার পেছনের সব কথা।
মামুনুর রশিদ পড়ালেখা করেছেন ঢাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপিউটার প্রকৌশল বিভাগে। জন্মসূত্রে বরিশালের ছেলে। বাবার চাকরির সুবাদে এখন খুলনায় বসবাস করছেন। সেখানে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে এত বড় একটা টিম পরিচালনা করছেন। মামুনুর রশিদের কমপিউটারের সাথে পরিচয় ২০০১ সালে, এসএসসি পরীক্ষার পর নিজের আগ্রহ এবং বাবার উৎসাহে কমপিউটার প্রকৌশল বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে এবং পরে খুলনায় একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় কিছুদিন কাজও করেছেন।
ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ফিচার থেকে। এরপর www.odesk.com, www.freelancer.com এবং www.rentacoder.com-এ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নেন। কিন্তু প্রথম অবস্থায় অনেক বিড (Bid) করার পরও কাজ না পাবার কারণে ফ্রিল্যান্সিং আর করা হয়নি। বছর দেড়েক পরে ‘কমপিউটার জগৎ’ ম্যাগাজিনে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে একটা লেখা পড়ে এ বিষয়ে আবারো আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এবারে নিজের একটি ভালো প্রোফাইল তৈরি করেন এবং এলোমেলোভাবে বিড না করে প্রতিটি প্রজেক্ট ভালোভাবে বুঝে বিড করা শুরু করেন। ৪ দিন পর এক সাথে দুটি প্রজেক্ট পেয়ে যান। প্রথম প্রথম ডাটা এন্ট্রি দিয়ে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে Project Manager, Wordpress, Magento Shopping Cart, X-Cart Shopping Cart, Zen Cart Shopping Cart-এর কাজগুলো করে থাকেন। কাজ করার সময় সততা, কাজের গুণগত মান এবং ডেডলাইনের দিকে যথাসম্ভব সতর্ক থাকেন।
ওডেস্কে টিম তৈরির কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওডেস্কে কাজ শুরু করার মাত্র ২ মাস পর প্রচুর পরিমাণ কাজ পেতে শুরু করেন, যা একার পক্ষে সম্পন্ন করা অসম্ভব। প্রথম দিকে ক্লায়েন্টদের ফিরিয়ে দিতেন, কিন্তু পরে টিম করার কথা ভাবলেন।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, টিমের সদস্যদের সবাইকে অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চ্যাট করার জন্য ইয়াহু এবং স্কাইপ সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। আর সদস্যদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য সিটিসেল ব্যবহার করে থাকেন। প্রজেক্টের নির্দেশাবলী বোঝানোর জন্য টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। সব সদস্য ও সব প্রজেক্ট পরিচালনা করার জন্য টিমে একজন ম্যানেজার এবং চারজন সুপারভাইজার রয়েছেন। অনলাইন থেকে নতুন অদক্ষ সদস্য সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হয়। অবশ্য এর জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয় না। বর্তমানে ‘আলফা ডিজিটাল’ টিম ২৫-৩০ জন ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত কাজ করছে। কাজের মধ্যে রয়েছে Data Entry, Personal Assistant, Web Research, Email Response Handling, Advertising, Email Marketing, Social Media Marketing, Search Engine Optimization, Search Engine Marketing, Market Research And Surveys, Web Design এবং Wordpress।
বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ফোনে কথা বলেছিলাম মামুনুর রশিদের সাথে। এই কথোপকথন নিচে উপস্থাপন করা হলো :
জাকারিয়া : প্রথমে আমাকে ওডেস্কের টিম তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটু বলুন। যে কোনো ব্যবহারকারী কি আপনাদের মতো এধরনের একটি টিম গঠন করে কাজ করতে পারবে?
মামুন : ওডেস্কে দুইভাবে কাজ করা যায়। একটি হচ্ছে স্বতন্ত্রভাবে এবং অপরটি হচ্ছে কোম্পানি তৈরির মাধ্যমে। ওডেস্কে স্বতন্ত্রভাবে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর কোম্পানি তৈরির জন্য একটা অপশন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কোম্পানির একটি নাম এবং আইডি দিতে হয়, যা কখনও পরিবর্তন করা যায় না। কোম্পানির অধীনে আবার বেশ কয়েকটি টিম তৈরি করা যায়। আমাদের ‘আলফা ডিজিটাল’ কোম্পানির কয়েকটি টিম রয়েছে। যেমন- আলফা ডাটা, আলফা ওয়েব, আলফা ডিজাইন, আলফা এসইও ইত্যাদি।
জাকারিয়া : টিমের সদস্যের ম্যানেজ করার জন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়?
মামুন : ওডেস্ককে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা বলতে পারেন, অনেকটা অফিস ম্যানেজমেন্ট করার মতো। আমাদের কাজ করার জন্য ‘ওডেস্ক টিম সফটওয়্যার’ নামের নির্দিষ্ট একটা সফটওয়্যার চালু করে কাজ করতে হয়। সফটওয়্যারের আকার খুবই ছোট, ৪২২ কিলোবাইটের মতো।
জাকারিয়া : ওডেস্কে টিমের জন্য বিড কিভাবে করতে হয়? টিমের পক্ষ থেকে এটা কী আপনি করে থাকেন, না সদস্যরা নিজেরাই বিড করে থাকে?
মামুন : যখন একজন নতুন সদস্য আমার টিমে যোগ দেয়, তখন তাদের আইডির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আমার কাছে চলে আসে। তাদের কাছে নিয়ন্ত্রণ থাকে শুধু বিড করা আর কাজ করা। এমনকি কাজের মূল্য পর্যন্ত আমার ওপর নির্ভর করে। তাদের ব্যালেন্সও আমার কাছে আসে। কাজ করার জন্য একজন সদস্য নিজেও বিড করতে পারে এবং আমিও তাদের জন্য বিড করতে পারি।
জাকারিয়া : যখন একটা নতুন কাজ পেলেন, তখন সেই কাজটা কি তারা নিজেরাই শুরু করে দিতে পারে?
মামুন : যখন কোনো সদস্য একটা কাজ পায় তখন সে নিজেই বায়ারকে ই-মেইল করে কাজের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করে। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে যখন উত্তর আসে, তখন সে নিজে বুঝতে চেষ্টা করে। বুঝতে পারলে কাজ শুরু করে দেয়, আর না পারলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরপর আমি তাকে কাজটি বুঝিয়ে দেই।
জাকারিয়া : টিমের ব্যবস্থাপনা কি শুধু আপনি একাই করছেন?
মামুন : টিমের ব্যবস্থাপনা করার জন্য আমাদের একজন ম্যানেজার এবং চারজন সুপারভাইজার রয়েছেন। টিমের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি ইচ্ছে করলে কাউকে ম্যানেজার করে দিতে পারি। আমাদের টিমের ম্যানেজারের হাতে অ্যাকাউন্ট অংশটা ছাড়া একজন ফ্রিল্যান্সারকে নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে সব ক্ষমতাই আছে।
জাকারিয়া : এবার কী কী কাজ করছেন সে সম্পর্কে একটু ধারণা দিন, যেমন কোন ধরনের ডাটা এন্ট্রি কাজ করে থাকেন?
মামুন : আমরা এই মূহুর্তে একটি ই-কমার্স সাইটের কাজ করছি। এদের সাথে প্রায় ছয়মাসের মতো কাজ করছি। আমাদের ১২ জন সদস্য এ প্রজেক্টে কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন প্রোডাক্টের নাম, ছবি, মূল্য, বর্ণনা ইত্যাদি সাইটের Admin Panel-এ যোগ করে দেই। ডাটা এন্ট্রি কাজের রেট কখনও ঘণ্টায় ১ থেকে ১.৫ ডলারের বেশি পাওয়া যায় না।
আরেক ধরনের কাজ ওয়েব রিসার্চ। এ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৪ ডলার প্রতি ঘণ্টায় পাওয়া যায়। মনে করুন, আপনি হোস্টিং ব্যবসায় করবেন। এক্ষেত্রে আপনি হয়ত অন্যান্য হোস্টিং কোম্পানির বিভিন্ন প্লানের মূল্য জানতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আমরা ইন্টারনেটে এই রিসার্চটা করে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির মূল্য বের করে দিই।
আমরা ই-মেইল মার্কেটিংয়ের কাজও করে থাকি। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে হয়। এটা সবার কাছে থাকে না বলে তারা এই কাজগুলো করতে পারে না। ই-মেইল মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি SEO Optimization, SEO Marketing, Personal Assistance-এর কাজও করে থাকি। এ কাজের নির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্র নেই। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট যা বলে তাই করতে হয়।
জাকারিয়া : টিমের সদস্যদেরকে কতটুকু অর্থ দেয়া হয়? আপনারা কি কোনো কমিশন রাখেন?
মামুন : হ্যাঁ, আমরা এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কমিশন রাখি। মূলত একজন সদস্য যখন আমাদের এখানে যোগ দেয়, তখন তাকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিই। প্রশিক্ষণটা বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। এরপর সে যখন ওডেস্কে একটা কাজ করে, তখন সেখান থেকে ১৫% কমিশন রেখে বাকিটা তাকে দিয়ে দেয়া হয়।
জাকারিয়া : সদস্যরা প্রতিমাসে গড়ে কত টাকা আয় করে?
মামুন : এটা কাজের ওপর নির্ভর করে। কেউ কেউ হয়ত মাসে মাত্র ৫৫ টাকা আয় করে, আর কারো কারো ক্ষেত্রে মাসে বাইশ-তেইশ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। যে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা করে কাজ করে, তার আয় ৮-১০ হাজারের মতো হয়ে যায়। আর যার কাজের রেট প্রতি ঘণ্টায় ২ ডলার, তার জন্য অনায়াসে ২০ হাজার টাকা চলে আসে। আমাদের টিমের প্রতি সপ্তাহে আয় থাকে প্রায় ৫০০ ডলার এবং মাসে আমরা কমপক্ষে ২,০০০ ডলার আয় করি।
জাকারিয়া : পেমেন্টের হিসেব নিকাশ কি সব আপনার মাধ্যমেই হয়ে থাকে?
মামুন : একজন সদস্য কত রেটে কাজ করছে বা কত আয় করছে, তা দেখতে পারে না। আসলে তাদের দিক থেকে এটা অনেকটা একটা কোম্পানিতে কাজ করার মতো হয়ে থাকে। কোম্পানিতে কাজ করলে, নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পাবে। কিন্তু আমি যেটা করি, টিমের স্বচ্ছতা থাকার জন্য প্রতিমাসে বিলের যে PDF ফাইল পাই, তা মেইল করে সবাইকে পাঠিয়ে দেই। তখন সবাই দেখতে পারে, কে কত ঘণ্টা কাজ করেছে, কত রেটে কাজ করেছে, মোট কত আয় করেছে ইত্যাদি। তবে ওডেস্ক এটা করতে কখনও অনুমতি দেয় না।
জাকারিয়া : আপনাদের গ্রুপে যোগ দিতে হলে ন্যূনতম কী কী জানতে হবে?
মামুন : কমপিউটারের বেসিক কাজগুলো এবং ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারলেই যথেষ্ট। আসলে আমরা যেসব সদস্য নেই, তারা Notepad কী তাই অনেক সময় জানে না। একজনকে আমি বলেছিলাম আপনি Notepad চালু করেন। সে বলল, ভাই আমার কমপিউটারে Notepad ইনস্টল করা নেই। সে পরে আমাদের সুপারভাইজার পদে নিয়োগ পেয়েছে। তাকে সেভাবে দক্ষ করে নেয়া হয়েছে।
আমার টিমে যোগ দেয়ার কয়েকটা শর্ত রয়েছে : ০১. ডাচ বাংলা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। কারণ মাসের ৭-১০ তারিখ ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে সদস্যদের টাকা দেয়া হয়, ০২. সিটিসেল মোবাইল সংযোগ থাকতে হবে, কম খরচে কথা বলার জন্য। আমাদের দেশে ইন্টারনেটের স্পিড যদি আরেকটু বেশি থাকত, তাহলে আমরা অনায়াসেই ভয়েস কনফারেন্স করতে পারতাম এবং ০৩. যেকোনো আদেশ বিনা বাক্যে পালন করতে হবে।
জাকারিয়া : প্রশিক্ষণটা কিভাবে দিয়ে থাকেন?
মামুন : আমাদের বেশিরভাগ প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে ভিডিও টিউটরিয়ালের মাধ্যমে। আমাদের কয়েকটি ভিডিও টিউটরিয়াল আছে, যাতে কিভাবে বিড করতে হবে, কিভাবে প্রোফাইল সাজাতে হবে ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে। বিড করার পর বায়ারের সাথে যোগাযোগের ওপর কয়েকটা টিউটরিয়াল রয়েছে। টিউটরিয়ালগুলো আমাদের নিজস্ব সার্ভারে আপলোড করা আছে, আমরা তাদেরকে লিঙ্কগুলো দিয়ে দিই। টিউটরিয়ালগুলো বাংলায় আমি নিজেই তৈরি করেছি। নতুন কাজের ক্ষেত্রে টিউটরিয়াল তৈরি করা হয় না, সেক্ষেত্রে ফোনে তাদেরকে বুঝিয়ে দিই। সাথে টিম ভিউয়ার সফটওয়্যার দিয়ে দেখিয়ে দিই কোথায় কোথায় ক্লিক করে কাজ করতে হবে।
জাকারিয়া : ইংরেজি কতটুকু জানতে হয় বা না জানলে হয় কি না?
মামুন : আসলে সদস্যদের ইংরেজি না জানলেও চলে। টিমের মাধ্যমে কাজ করার সুবিধা হচ্ছে এটি নির্দেশনা বোঝার কোনো ঝামেলা হয় না। ক্লায়েন্ট ই-মেইল পাবার পর আমাকে ফোন করলে আমি সাথে সাথে তা বুঝিয়ে দিই। আর বিড করার জন্য তাদেরকে একটা কভার লেটার তৈরি করে দিই।
জাকারিয়া : আপনাদের টিমে মেয়েদের কাজের পারফরমেন্স কেমন?
মামুন : বর্তমানে ৪ জন মেয়ে আমাদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। পুরুষদের চেয়ে মেয়েরা খুব বিশ্বস্ততার সাথে এখানে কাজ করেন।
জাকারিয়া : টিমের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে একটু বলুন।
মামুন : টিমে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই শিক্ষার্থী। ফলে পরীক্ষা চলার সময় আমাদেরকে কম প্রজেক্টে কাজ করতে হয়। তখন প্রায় মাসখানেকের মতো বিড করা বন্ধ করে দিই। টিমে ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন পাঁচজন, যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ করেন।
জাকারিয়া : এত বড় টিমে নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য কোনো ফোরাম কি আছে?
মামুন : এজন্য গুগল গ্রুপে আলফা ডিজিটাল প্রজেক্ট নামে আমাদের একটা গ্রুপ আছে। এটি একটি প্রাইভেট গ্রুপ, যেখানে যেকেউ যোগ দিতে পারে না। প্রজেক্টগুলো আমরা এই গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করে থাকি।
জাকারিয়া : টিম পরিচালনার পাশাপাশি আপনি কি অন্য কোনো কাজ করছেন?
মামুন : না, না, এসব কাজ করেই আর সময় পাই না।
জাকারিয়া : টিমের মাধ্যমে কাজ করার সময় কোনো ধরনের সমস্যা হয় কি?
মামুন : আমরা সাধারণত অদক্ষ লোক নিয়ে কাজ করি। এদের মধ্যে অনেকেই দক্ষ হয়ে নিজেরাই আলাদাভাবে কাজ করা শুরু করে। ফলে টিমটা আর বড় হয় না। সবার মধ্যে একতা থাকলে শীর্ষ অবস্থানটা অনায়াসে ধরে রাখা যেত। কিছুদিন আগেও আমরা ওডেস্কের শীর্ষ দশে ছিলাম, এখন আমাদের স্কোর অনেক কমে গেছে। টিমে সবাইতো আর সততার সাথে কাজ করে না। যেমন একটা প্রজেক্টে বায়ার বলেছিল আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে, তার সার্ভারে একটা কাজ চলছে। তখন টিমের একজন ওডেস্কের টিম সফটওয়্যারটি প্রায় ৫ ঘণ্টা চালিয়ে রেখে বায়ারকে বলেছিল সে কাজ করেছে এবং সে অনুযায়ী বিল করে দেয়। আসলে তখন সে কোনো কাজই করেনি। ওই কাজে ১২ জন সদস্য কাজ করত, বায়ার তখন সবাইকে ৫-এর মধ্যে ১ ফিডব্যাক দিয়ে দেয়। এখন চিন্তা করেন ১২ জনের ফিডব্যাক যদি ১ করে পড়ে তাহলে কোম্পানির প্রোফাইল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। তখন আমাদের গড় ফিডব্যাক ২-এর কাছাকাছি চলে আসে। এরপর দীর্ঘ ৩ মাস কাজ করতে করতে এখন ৩.৭৮-এ উঠে এসেছে।
ওডেস্কে দুই ধরনের কাজ পাওয়া যায়- Fixed এবং Hourly Job। ওডেস্কে কাজের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে এখানে Fixed Job প্রজেক্টে টাকা পাবার গ্যারান্টি পাওয়া যায় না। অনেক বায়ার আছে যারা মধুর মধুর কথা বলে Fixed Job প্রজেক্টগুলো করায়। কাজ শেষে আর টাকা দেয় না। গত মাসে এভাবে আমি ৭৫০ ডলার লোকসান করেছি। ওডেস্কে Fixed Job কাজ না করে শুধু Hourly Jobগুলো করা উচিৎ। এই সাইটে অন্যান্য সাইটের মতো Escrow-তে টাকা জমা রাখার সুবিধা নেই। এটা নতুনদের খেয়াল রাখা উচিৎ।
জাকারিয়া : টিমে কাজ করার ক্ষেত্রে মজা কেমন?
মামুন : মজা তো অনেক। আসলে এই লাইনে কাজ করতে এসে অনেক অনেক সম্মান পেয়েছি, যেটা আমি আমার চাকরি জীবনে পাইনি। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া, টাকা পয়সা পাই বা না পাই। আমাদের সম্পন্ন করা সব প্রজেক্টের মধ্যে সেরা এবং আনন্দদায়ক প্রজেক্ট হলো- ‘টেলিকমিউনিকেশন সার্ভে’। এই প্রজেক্টে আমরা নরওয়ের এক বায়ারের হয়ে বাংলাদেশের সব মোবাইল কোম্পানির ওপর সার্ভে করেছিলাম। গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, ওয়ারিদ, সিটিসেল, একটেল এবং টেলিটক কোম্পানির মধ্যে কার কল রেট কেমন, কে কী কী সুবিধা দিচ্ছে, কে কে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়, কোন কোম্পানির শতকরা গ্রাহক কত, কার কভারেজ কেমন- এসব বিষয়ের ওপর আমরা রিপোর্ট করি। এই প্রজেক্টে আমরা ৪ মাসের অধিক সময় কাজ করি। সেই বায়ার বাংলাদেশে অনেক বড় একটা ব্যবসায় শুরু করতে চেয়েছিল। এখন তারা ফিলিপাইনে কাজ করছে।
জাকারিয়া : ওডেস্কে টিম নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মামুন : এই টিমকে আমি অনেক বড় করব। ওডেস্কে একটা টিম আছে, যারা প্রায় ১১ লাখ ঘণ্টা কাজ করে ফেলেছে। সেখানে আমরা মাত্র ১৩ হাজার ঘণ্টা কাজ করেছি। ওরা অবশ্য ২০০১ সাল থেকে ওডেস্কে কাজ করছে। আমরা এক বছরে এই অবস্থানে এসেছি। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে আমরাও এরকম একটা পর্যায়ে যাব, ওডেস্কের মধ্যে শক্ত একটা অবস্থান তৈরি করবো।
‘আলফা ডিজিটাল’ টিমের ওডেস্ক প্রোফাইলের ঠিকানা হচ্ছে www.alphadigital.tk। বর্তমানে তাদের একটি ওয়েবসাইট (www.alphadigitalgroup.com) নির্মাণাধীন রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সব ধরনের আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাওয়া যায়। ইমেল : mamunur_rasid@yahoo.com
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : zakaria.cse@gmail.com