লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ যখন সেরা ত্রিশে
সদ্য বিদায় নেয়া ২০১০ সালের একদম শেষ দিনে এসে বাংলাদেশের আইসিটি খাত সম্পর্কিত একটা খবর জাতীয় দৈনিকগুলোতে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হতে দেখলো এদেশের মানুষ। খবরটি ছিল আমাদের আউটসোর্সিং বিষয় নিয়ে। খবরের সারকথা হচ্ছে- আউটসোর্সিংয়ে সেরা ৩০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নিজের স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ প্রযুক্তিভিত্তিক বৈদেশিক শ্রমবাজার হিসেবে বিশ্বসেরা ৩০টি সেরা দেশের অন্যতম বলে বিবেচিত হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ। বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান গার্টনারের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বিশ্বসেরা ৩০টি আউটসোর্সিং দেশের তালিকায় এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নাম স্থান পেলো। এ তালিকা থেকে এবার বাদ পড়েছে ৭টি উন্নত দেশের নাম। উন্নত এসব দেশ এর আগে তালিকার প্রথম দিকেই ছিল। এবার তালিকা থেকে বাদপড়া এসব দেশ হচ্ছে : অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ইসরাইল, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও স্পেন। এই বাদপড়া দেশগুলোর জায়গা দখল করেছে নতুন ৮টি দেশ, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশের নাম।
এই ত্রিশটি দেশের মধ্যে রয়েছে- আমেরিকা অঞ্চলের ৮টি দেশ : আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, মেক্সিকো, পানামা ও পেরু; এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৯টি দেশ : বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এবং ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা মহাদেশের ১৩টি দেশ : বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মিসর, হাঙ্গেরি, মৌরিতিয়াস, মরক্কো, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রাশিয়া, স্লোভাকিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক ও ইউক্রেন।
প্রথমবারের মতো সেরা ৩০ আউটসোর্সিং দেশের মধ্যে স্থান করে নেয়ার বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই আনন্দদায়ক একটি খবর। তবে সেই সাথে বিষয়টি আত্ম-সমালোচনার বলেও আমরা মনে করি। গার্টনারের রিপোর্টের দিকে যদি তাকাই তবে দেখা যায়, আউটসোর্সিং দেশের গ্রেডিং নির্ণয়ের জন্য ১০টি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে : ভাষা, সরকারি সহায়তা, লেবার পুল বা শ্রমিক সংঘ, অবকাঠামো, শিক্ষাব্যবস্থা, খরচ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ, সাংস্কৃতিক সহনশীলতা, বৈশ্বিক ও আইনী পরিপক্বতা এবং ডাটা, মেধাসম্পদ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা। এই ক্রাইটেরিয়া বা মাপকাঠি বিবেচনায় ৫টি রেটিং স্কেলে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো যথাক্রমে হচ্ছে : poor, fair, good, very good এবং excellent। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসব মাপকাঠি রেটিং করতে গিয়ে দেখা গেছে- ভাষা, অবকাঠামো এবং ডাটা ও মেধাসম্পদ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান poor। শুধু কস্ট বা ব্যয়ের ক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থা very good, অন্যান্য ৬টি ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান fair অর্থাৎ মোটামুটি। অতএব যেসব ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান poor কিংবা fair সে অবস্থানগুলোর উত্তরণের ব্যাপারে এখন থেকেই ভাবতে হবে। সেজন্য সেরা ত্রিশে স্থান পাওয়ার খবরে আমাদের আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার বদলে বরং আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমে সতর্ক পদক্ষেপে যেতে হবে আসছে দিনগুলোতে। সেই সাথে বাংলাদেশ সম্পর্কিত গার্টনার রিপোর্টের মন্তব্যগুলোও সক্রিয় বিবেচনায় আনতে হবে।
এ রিপোর্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে গার্টনারের প্রথম মন্তব্য হচ্ছে : একটি জনপ্রিয় বিদেশী গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করার মতো যথার্থ পরিপক্বতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। কারণ, ভাষা, অবকাঠামো, ডাটা, মেধাস্বত্ব নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো পুওর, তথা খারাপেই রয়ে গেছে। গার্টনার আরো উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ খরচের বিবেচনায় ভালো অবস্থানে থাকলেও, এর সার্বিক আইটি ইকোসিস্টেম খুবই অনুন্নত। গার্টনারের এসব মন্তব্য মাথায় রেখেই আমাদের এ অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। আশা করব, সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে নজর দেবেন।
কজ ওয়েব