লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
লুৎফুন্নেছা রহমান
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
অ্যাপলের আইওএস সম্পর্কে কিছু অতিকথন, যা বিশ্বাস করবেন না
বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলোঅ্যাপলের আইওএস।আইফোন এবং অ্যাপলের আইওএস পস্নাটফরম দামি হলেও এটি অনেকের পছন্দে শীর্ষে রয়েছে। তবে এ কথা সত্য, অ্যাপলের আইওএস অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সত্যিকারঅর্থে আইওএস কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে আমাদেরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলেছে এসব ভুল ধারণা। এ লেখায় ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে অ্যাপল আইওএসে বহুল প্রচলিত কিছু ধারণা তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যাবে কেন এগুলো অতিকথন বা ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই নয়।
০১. আইওএস ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ থাকা
অনেক ব্যবহারকারীই মনে করেন, যেহেতু আইওএস একটি ক্লোজড তথা বদ্ধ সিস্টেম, যেখানে অ্যাপলের রয়েছে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। সুতরাংএকটি আইওএস ডিভাইস ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বা অমূলক। এমনকি অ্যাপলের রিভিউ করা লিস্টের অ্যাপ স্টোরের অ্যাপগুলো অথবা অ্যাপ স্টোরে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য যেসব অ্যাপ আপনার ফোনের সিকিউরিটিকে কম্প্রোমাইজ করে, সেগুলোও ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হতে পারে। যেমন- সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় অ্যাপল তার অ্যাপ স্টোর থেকে কিছু অ্যাড-বস্নকিং অ্যাপ অপসারণ করে নেয়, যখন তাদের নজরে আসে যে এসব অ্যাপ তাদের নিজস্ব রুট সার্টিফিকেট ইনস্টল করার জন্য প্ররোচিত করছে।তত্ত্বীয়ভাবে এসব অ্যাপ এনক্রিপ্টেড ট্রাফিকে অ্যাক্সেস করার সুযোগ পায়।
আইওএস ডিভাইস নেটওয়ার্ক অ্যাটাকের বেলায় বেশ ভঙ্গুর। যেসব ÿÿত্রে ব্যবহারকারীরা খুব একটা সচেতনতার সাথে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন না, সেসব ÿÿত্র - যেমন- কফি শপ,বিমানবন্দর, রেলস্টেশনসহ অন্যান্য জায়গা নেটওয়ার্ক - অ্যাটাকের জন্য খুব ভঙ্গুর।এমনকি আপনি যদি একটি নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড থাকেনযা আপনি আগেও ব্যবহার করেছেন, তাহলে এর মাধ্যমেও হ্যাকারেরা আপনার নেটওয়ার্কে অ্যাক্সেস করে ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিতে পারে।
০২. টাচ আইডি নিরাপদ নয়
উৎস: অ্যাপল
আমাদের সাধারণ জ্ঞানে বলা যায়, টাচ আইডি খুব সহজে হ্যাক করা যায়। কেননা, আইফোনের বায়োমেট্রিক্সের গঠনের অথেনটিকেশন তথা বৈধতা নির্ভর করে আঙ্গুলের ছাপের ওপর। আপনি স্পর্শ করেছেন এমন কিছু থেকে হ্যাকারেরা খুব সহজেই আপনার আঙ্গুলের ছাপ ডিটারমাইন করতে পারে। কিন্তু, গড়পড়তা ব্যবহারকারী যারা গোয়েন্দা মুভির জগতে বাস করেন না, তাদের কাছে এ ব্যাপরটি সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য।
এটি সত্য যে, টাচ আইডির কিছু ত্রম্নটি রয়েছে এবং এ ত্রম্নটিকে কাজে লাগিয়ে যেকেউ অন্যায় ও অবৈধভাবে আপনার আইফোনে অ্যাক্সেস পেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি এক অসম্ভব ব্যাপার যে, কেউ একজনআপনার আইফোন থেকে পেতে পারেআপনার ভায়ারেবল আঙ্গুলের ছাপ, এমনকি আপনার আইফোন নিজেই যথাযথভাবে প্রিন্ট তুলে নিতে পারে।এরপর ব্যয়বহুল ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহার করে ভুয়া আঙ্গুলের ছাপ তৈরি করে বোকা বানাতে পারবে।
টাচ আইডি যথাযথভাবে সিকিউর নয়, বায়োমেট্রিক্স অথেটিকেশনও নয়। যদি গোয়েন্দা উপন্যাসের ভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো জেনে থাকবেন টাচ আইডি ব্যবহার হতে পারে আইফোনে অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য। তবে ছিঁচকে চোর বা সুযোগসন্ধানীদের ÿÿত্রে টাচ আইডি আপনার পারসোনাল তথ্যে সহজে অ্যাক্সেস সুবিধা দেবে না। যেহেতু অন্য যেকোনো মোবাইল অপারেটিং, আইওএসে কিছু ভলনিয়ারিবিলিটি রয়েছে, তাই যদি আপনার ফোনে ট্র্যাকার যুক্ত থাকে, তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
০৩. আইওএসে আপনি সবকিছু পরিবর্তন করতে পারবেন, অ্যান্ড্রয়িডে পারবেন না
উৎস : অ্যাপল
অ্যান্ড্রয়িড তার কাস্টোমাইজেবিলিটির জন্য সুপরিচিত। তবে প্রচার পরিমাণে অ্যাপল ভক্ত মনে করেন, সাম্প্রতিক আপডেট আইওএসকে গুগলের ওপেন অপারেটিং সিস্টেমের মতো অনেকটা কাস্টোমাইজেবল করে তুলেছে। এটি পুরোপুরি সত্য নয়। আইওএস একটি ‘walled garden’ হিসেবে পরিচিত এবং অ্যাপলের হাতে রেখে দেয় প্রচুর পরিমাণের কন্ট্রোল। যেখানে আপনি অ্যান্ড্রয়িডের ইন্টারফেসের লুকপুরোপুরি বদলে ফেলতে পারেন, যা আইওএসে করা সহজ নয় এবং আপনি আইওএসে সবকিছু পরিবর্তন করতে পারবেন না, যা অ্যান্ড্রয়িডে করতে পারবেন। যদি আপনি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের লুক এবং ফাংশনালিটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাহলে আইফোনের পরিবর্তে অ্যান্ড্রয়িড স্মার্টফোন বেছে নিলে ভালো হবে।
লÿণীয়, অপারেটিং সিস্টেমের সাম্প্রতিক ভার্সনের সাথে অ্যাপল কাস্টোমাইজেবিলিটিকে কিছু সম্প্রসারণ করে। সম্ভবত, ব্যবহারকারীদের অনেকেই বেশি কন্ট্রোল পছন্দ করেন, যা তাদের আইফোনে করতে পারবে। অ্যাপল থার্ডপার্টি কিবোর্ড অনুমোদন করতে শুরু করবে তাদের আইওএস ৮-এর সাথে।
০৪. সব ভালো অ্যাপসই আইওএসের, যা তথ্য নয়
সবার একটি ভুল ধারণা যে, অ্যাপল আইফোনের সাথে সাথে ‘উদ্ভাবন’ করে অ্যাপস এবং এরপর অ্যাপস স্টোর। এটি পুরোপুরি অসত্য। ২০০৭ সালে আইফোন প্রথম চালু হয়। এটি মূলত আইপড টাচ। এর ফাংশনালিটিতে ছিল না কোনো থ্রিডি কানেক্টিভিটি এবং চালু ছিল না কোনো অ্যাপস্টোর। তবে অ্যাপল মোবাইল অ্যাপের ধারণার জন্য জনপ্রিয়তার জন্য কৃতিত্বের দাবি করতে পারে প্রথম অ্যাপস স্টোর, ক্যালেন্ডার অ্যাপ, রিংটোন এডিটর এবং বেসিক মোবাইল গেম চালু করে।
অ্যাপল ভক্তরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, প্রচলিত সব ভালো অ্যাপের কৃতিত্ব প্রথমেই যায় আইওএসের পÿÿ, যা মোটেই সত্য নয়। এটি এখন এক সুপরিচিত অতিকথন ছাড়া আর কিছুই নয়। সত্য কথা হলো, বর্তমানে অসংখ্য ডেভেলপার তাদের নতুন অ্যাপ প্রথমেই অবমুক্ত করছে আইওএসে। এ কথা সত্য, আইওএস অ্যাপ স্টোর গুগলের পেইড বা অ্যাপ উইথ ইন-অ্যাপ পারচেসে প্লে স্টোরের চেয়ে ভালো ÿÿত্র। তবে সব ডেভেলপারই চান বিসত্মৃত পরিসরে তাদের ডেভেলপ করা অ্যাপ ডিস্ট্রিবিউট হোক, যেমন আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়িড উভয় ÿÿত্রেই। তবে এ ÿÿত্রে ডেভেলপারদের টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডই প্রভাবিত কোনো পস্নাটফরমেতাদের ডেভেলপ করা অ্যাপ প্রথমে পাবলিশ করবে।
অ্যান্ড্রয়িড এবং আইওএস অ্যাপ স্টোরে মোটামুটিভাবে প্রায় একই পরিমাণের অ্যাপ রয়েছে। যদি আপনি অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার অনুভূতি এমন হবে যে, ওইসব অ্যাপ আইওএস প্রথমে ব্যবহার করে যেগুলো আপনি এখন চাচ্ছেন। আর এমন ধারণা হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির অনেক স্টার্টআপ আইওএস ব্যবহারকারীর মাধ্যমে রান করে।
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com