এমন একটি দৃশ্যের কথা কল্পনা করুন যেখানে ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে আপনাকে কষ্ট করে দরজায় গিয়ে খবরের কাগজটি আনতে হবে না; ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে একটি উচ্চপ্রযুক্তির কোনো ডিভাইসে আপনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে। এক সময় এমন দৃশ্য কল্পনাতে সীমাবদ্ধ থাকলেও আজ তা খুবই বাস্তব। আপনার ডেস্কটপ কমপিউটার, মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই দেখতে পাবেন প্রতিদিনের খবরের কাগজের সর্বশেষ ইন্টারনেট সংস্করণ। আসলে খবরের কাগজ একটি উদাহরণ মাত্র! এরকম নানাবিধ কাজে আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কমপিউটিং ডিভাইস ব্যবহার করি। সম্প্রতি পোর্টেবল পার্সোনাল কমপিউটিং এবং ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অ্যাপল বিশাল ঝড় তুলেছে। আর বিশ্বব্যাপী এ আলোড়নটি সৃষ্টি হয়েছে অ্যাপলের বহুল প্রতীক্ষিত আইপ্যাডের (iPad) মাধ্যমে। অ্যাপলের অন্যান্য পণ্যের মতো আইপ্যাডের ডেভেলপমেন্টের বিষয়টি পর্দার আড়ালে রাখা হয়েছিল। পর্দাটি উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে দেখা গেল আইপ্যাড আসলে স্মার্টফোন এবং কমপিউটারের মাঝামাঝি একটি ডিভাইস।
আইপ্যাড দেখতে আইফোন কিংবা আইপড (iPod) টাচের মতো মনে হলেও আসলে এটি এগুলোর চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু নোটবুক কমপিউটারের চেয়ে ছোট। এটা অনেকের কাছেই একটা বিস্ময়ের ব্যাপার, আসলেই আইপ্যাডটা কী? উত্তর হলো, এটা একটা ডিজিটাল মিডিয়া ট্যাবলেট। আপনার কাছে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট না হলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ লেখাটিতে আমরা আইপ্যাড সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করবো।
আইপ্যাড ডিজাইন :
আইপ্যাড মূলত একটি হ্যান্ডহেল্ড মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস। আইফোন এবং আইপড টাচের মধ্যে আছে এ ধরনের অনেক বৈশিষ্ট্যই রয়েছে এ ডিভাইসটিতে। আইপ্যাডের গঠন আইফোন এবং অ্যালুমিনিয়াম বেষ্টিত ম্যাকবুকের মাঝামাঝি রকমের। আকার-আকৃতি এবং কারিগরি দিক- উভয় দিক দিয়েই এর ৯.৭ ইঞ্চি স্ক্রিনটি আইফোন এবং ম্যাকবুকের স্ক্রিনের মাঝামাঝি রকমের। ১নং ছকে আইপ্যাড, আইফোন, আইপড টাচ এবং ম্যাকবুক প্রো’র তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য দেখানো হয়েছে :
লক্ষ করে দেখুন, আইপ্যাডের ডিসপ্লে বৈশিষ্ট্যে আইফোন/আইপ্যাড টাচ এবং ম্যাকবুক প্রো’র ডিসপ্লে বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। আইপ্যাডের স্ক্রিন আইপড টাচ এবং আইফোনের মতো মাল্টিটাচ টেকনোলজি অনুসরণ করে।
আইপিএস বা ইন-প্লেইন স্যুইচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইপ্যাড। আইপিএসের ডিসপ্লে খুব উন্নতমানের। এর স্ক্রিন নোটবুক কমপিউটারের মনিটর কিংবা ফ্লাট-প্যানেল মনিটরের মতো। আইপিএস ডিসপ্লে খুবই স্বচ্ছ। এটি অনেক বড় ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ১৭৮ ডিগ্রি ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল থেকে আইপ্যাডের স্ক্রিন বেশ ভালোভাবে দেখা যায়। লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (LCD) তৈরিতে যেভাবে আলো চলাচল করে, আইপিএস টেকনোল-জিতেও সেভাবে আলো চলাচল করে।
আইপ্যাডের বৈশিষ্ট্য :
এতক্ষণ আইপ্যাডের ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এবার এ ডিভাইসটির বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো :
আইফোন, আইপড টাচ এবং আইপ্যাড-এ তিনটি ডিভাইসই তিন অক্ষবিশিষ্ট অ্যাকসেলারোমিটার ঘুরানোর মাধ্যমে পিকচার অরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করে। কিন্তু আইপ্যাডের স্ক্রিনে রোটেশন লকের মাধ্যমে এর স্ক্রিন অরিন্টেশন পোর্টেইট (উলম্ব) অথবা ল্যান্ডস্কেপ (অনুভূমিক) অবস্থায় আটকে দেয়া যায়।
আইফোন এবং আইপড টাচের মতো আইপ্যাডের একটি সম্পূর্ণ কোয়ার্টি অন-স্ক্রিন কীবোর্ড রয়েছে। যখন ডিভাইসটি ল্যান্ডস্কেপ মোডে চলে, তখন এর কীবোর্ডটি অনেকটা আইম্যাক (iMac) সিস্টেমের কীবোর্ডের মতো দেখায়।
অ্যাপলের মতে, বর্তমানে আইফোন এবং আইপ্যাড টাচের ব্যবহার হওয়া ১ লাখ ৫০ হাজার অ্যাপ্লিকেশনের বেশিরভাগ চলবে আইপ্যাডে। সাফারি ব্রাউজার এবং নতুনভাবে ডিজাইন করা মেইল অ্যাপ্লিকেশনসহ ১২টি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাল্টিটাচ অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে প্রাথমিকভাবে অ্যাইপ্যাড লোড করা থাকে। এর মধ্যে ইউটিউব, ম্যাপস্, অ্যাপস্টোর, নোট, ক্যালেন্ডার, কন্টাক্ট ও আইবুকসহ আইপড এবং আইটিউনের অ্যাপ্লিকেশনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কিছু কারিগরি তথ্য :
দু’ধরনের স্টোরেজ কনফিগারেশনের আইপ্যাড কিনতে পারেন। একটি শুধু ওয়াইফাই, অন্যটি ওয়াইফাই প্লাস থ্রিজি। ছক-২-এ এই দুই কনফিগারেশনের একটি তুলনামূলক চিত্র দেয়া হলো-
২ নং ছকের তথ্য অনুযায়ী দু’টি মডেলের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কিন্তু থ্রিজি সামর্থ্যসহ কয়েকটি বিষয় এদেরকে আলাদা করেছে।
ওয়াইফাই মডেল অনেকটা নোটবুক কিংবা নোটবুক কমপিউটারের মতো কাজ করে। এই তিনটি ডিভাইসই বিল্ট-ইন ওয়াইফাইর মাধ্যমে ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়। নোটবুক কমপিউটারের মতো আইপ্যাড মডেলে হটস্পট সীমাবদ্ধতা আছে। থ্রিজিসহ ওয়াইফাই মডেলের আইপ্যাডে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং ই-মেইল চেকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক স্বাধীনতা আছে।
ডিজিটাল রিডার হিসেবে আইপ্যাড :
একটি ডিজিটাল ই-রিডারের চেয়েও বেশি কাজ করবে আইপ্যাড। অ্যাপল আশা করছে এরা ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল মিডিয়ার বাজারটি দখল করবে যা বর্তমানে আমাজন নিয়ন্ত্রিত। তবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আইপ্যাড একটি বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ ডিজিটাল মিডিয়া ডিভাইস।
আমাজনের কিন্ডেল খুবই জনপ্রিয় একটি ই-রিডার। কিন্তু এটি শুধু ইলেকট্রনিক বই পড়ার কাজে ব্যবহার করা যায়। অ্যাপলের আইপ্যাডের চেয়েও বেশি কাজে ব্যবহার হয়। অ্যাপলের মতে, আইপ্যাড এমন একটি ই-রিডার যা কিন্ডেলকে অতিক্রম করতে সমর্থ হবে।
শেষ কথা :
প্রযুক্তি জগতে অ্যাপল কিছু দিন পর পরই এক একটি নতুন পণ্যের মাধ্যমে ভোক্তাদের মধ্যে এক বিশাল বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। অ্যাপলের সর্বশেষ আবিষ্কার অ্যাপল আইপ্যাড সে বিস্ময়ের মূল্যায়ন করে রাখতে পারবে বলে আশা করছে প্রযুক্তিবান্ধব মানুষেরা।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rabbi1982@yahoo.com