লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
সিকি শতাব্দীর কমপিউটার জগৎ
কমপিউটার জগৎ। একটি নাম। একটি পত্রিকা। একটি আন্দোলন। একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের তথ্যপযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার হাতিয়ার- ইত্যাদি নানা বিশেষণেই কমপিউটার জগৎকে বিশেষায়িত করা যায়, অভিহিত করা যায়। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের এ এক ধারাবাহিক ইতিহাস। এর পরতে পরতে গ্রথিত হয়ে আছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসের সমূহ উপাদান। তাই কমপিউটার জগৎকে বলা যায় এক ইতিহাসেরও নাম। কমপিউটার জগৎ-এর চলতি সংখ্যাটি যখন বর্ধিত কলেবর নিয়ে নানা দিক থেকে সমৃদ্ধ হয়ে সম্মানিত পাঠকদের হাতে, তখন এর মাধ্যমে কার্যত পূরণ হলো এ দেশের সিকি শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসের এক গৌরবদীপ্ত দলিলায়ন, ডকুমেন্টেশন। কারণ, এই ‘এপ্রিল ২০১৬’ সংখ্যাটি হচ্ছে কমপিউটার জগৎ-এর ‘২৫ বছর পূর্তিসংখ্যা’।
এ এক অনন্য উদাহরণ
কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত পাঠক ও এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাথে সংশ্লিষ্টজনেরা নিশ্চয় জানেন, কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনা শুরু করেছিল ১৯৯১ সালের ১ মে। চলতি এপ্রিল ২০১৬ সংখ্যাটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে পূর্ণ হলো এর নিয়মিত প্রকাশনার ২৫ বছর। তথ্যপ্রযুক্তির মতো কাঠখোট্টা বিষয়ে একটি বাংলা সাময়িকী নিয়মিতভাবে পঁচিশ বছর একটানা প্রকাশ যে কত দুরূহ ব্যাপার, তা শুধু ভোক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারবেন। বাংলা ভাষায় একটি তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকী একটানা ২৫ বছর নিয়মিত প্রকাশ করে পাঠকদের হাতে তুলে দেয়ার এই দুরূহ কাজের উদাহরণ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আর কোথাও নেই। এ এক অনন্য উদাহরণ। তবে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদেরকে তা সম্ভব করে তুলতে হয়েছে। আর তা করতে পেরে আজ আমরা সত্যিই গর্বিত। তবে আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করি- এ গর্বের ভাগীদার আমাদের সম্মানিত লেখক, পাঠক, গ্রাহক, উপদেষ্টা, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা,পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীরা। কারণ, তাদের সক্রিয় সহযোগিতাই মূলত আমাদেরকে এ গর্বের ভাগীদার করে তুলেছে। আমরা সুদৃঢ়ভাবে আশাবাদী- তাদের এই সক্রিয় সহযোগিতা আগামী দিনেও সমধিক অব্যাহত থাকবে। তাদের এই সহযোগিতাই আমাদের আগামী দিনের পাথেয়। আর এই পাথেয়সূত্রেই কমপিউটার জগৎ আগামী দিনগুলোতে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
একটি আন্দোলনের নাম
কমপিউটার জগৎ পাঠকের অনেকেই জানেন- এর সূচনা সংখ্যাতেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়, এই পত্রিকাটি এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার সুদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এর প্রকাশনার অভিযাত্রা শুরু করে। আর এই আন্দোলন হবে একটি মৌল আন্দোলন, যা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সত্যিকারের উন্নয়ন আর অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। কমপিউটার জগৎ-এর সাংবাদিকতা এগিয়ে চলবে শুধুই ইতিবাচকতার ওপর ভর করে, যেখানে কোনো ধরনের নেতিবাচকতার স্থান কখনই থাকবে না।কমপিউটার জগৎ হবে না কোনো মহলবিশেষের মুখপত্র। এটি হবে সত্যিকারের জাতীয় মুখপত্র। এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের প্রথম মৌলদাবি ছিল- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। আমরা আমাদের এই দাবিটিই উপস্থাপন করি আমাদের সূচনা সংখ্যা ‘মে ১৯৯১ সংখ্যায়’। এই দাবিটিকে আমরা জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করি- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। কারণ তখন কমপিউটার নামের যন্ত্রটি ছিল সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটি ছিল অভিজাতের ঘরের শৌখিন এক পণ্যবিশেষ। তাই এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা সেই ১৯৯১ সালেইউচ্চারণ করি- ‘এ দেশে প্রচলিত রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সুযোগ ও অধিকারের মতোই কমপিউটারের বিস্তার সীমিত হয়ে পড়েছে মুষ্টিমেয় ভাগ্যবান ও শৌখিন মানুষের মধ্যে। মেধা, বুদ্ধি ও ক্ষেপ্রতায় অনন্য এ দেশের সাধারণ মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শাণিত করে তোলা হলে এরাই সম্পদ-জীবন ও বিবেকবিনাশী বর্তমান জীবনধারা বদলে দিতে পারে। ইরি ধানের বিস্তার, পোশাকশিল্প ও হালকা প্রকৌশল শিল্পে কৃষক, সাধারণ মেয়ে, কর্মজীবী বালকেরা সৃষ্টি করছে বিস্ময়। একই বিস্ময় কমপিউটারের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হতেপারে- যদি স্কুল বয়স থেকে কমপিউটারের আশ্চর্য জগতে এ দেশের শিশু ও শিক্ষার্থীদের অবাধ প্রবেশ ও চর্চার একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যায়।’
মূলত এ উপলব্ধি থেকে আমরা দাবি জানাই- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। নিঃসন্দেহে এই ২৫ বছরে এই আন্দোলনে আমরা এগিয়ে গেছি অনেকদূর। তাই বলে এ দাবির সবটুকু পূরণ হয়ে গেছে, এমনটি মনে করি না। ফলে এখনও আমাদেরকে সে আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। একটি দাবি আক্ষরিকভাবে উচারণ করেই আমরা থেমে থাকিনি। আমরা সে দাবির যৌক্তিকতা উপস্থাপন করে সে দাবির পেছনে জনমত গড়ে তোলার পক্ষে যেমন কাজ করে আসছি, তেমনি তা নীতি-নির্ধারকদের কাছে তুলে ধরতে সচেষ্ট থেকেছি এ দাবি বাস্তবায়নে তাদের আনুকূল্য লাভের প্রত্যাশায়। প্রয়োজনে আয়োজন করেছি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সংবাদ সম্মেলন। একই সাথে আমাদের নীতি-নির্ধারকদের বাতলে দিয়েছিএ দাবি বাস্তবায়নের পথও। উদাহরণ টেনে বলা যায়, আমরা আমাদের দ্বিতীয় সংখ্যার ‘বর্ধিত ট্যাক্স নয়: জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করি- ‘শোনা যাচ্ছে, এবারের বাজেটের ওপর কর বাড়াবে বর্তমান সরকার। বাজেট আসছে ১২ জুনে। ৯২০০ কোটি টাকার রাজস্ব বাজেটের প্রায় সবটাই অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয়ে যাবে। এ অর্থ জোগানো হবে কর ও বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে। এবার নতুন রীতির ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স পদ্ধতির কারণে বর্ধিত রাজস্ব আয় হওয়ার কথা ২৫০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বর্ধিত কর দাঁড়াবে ৭০০ কোটি টাকা। ... এবার কমপিউটার, বিশেষ করে এর সংযোজন শিল্পের ওপর করহার বাড়ানো হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এতদিন কমপিউটারের ওপর কর ছিল কম। গত বছর এর ওপর কর বাড়ানোর পর আবার দাবির মুখে কমাতে হয়েছিল। ভারতের পশ্চিমবাংলায় কমপিউটার কিনলে আয়কর অব্যাহতি পাওয়া যায়। প্রতিবছর এর মূল্যের ওপর ৩৩ শতাংশ অবচয় দেয়া হয়। এতে সেখানে গত বছর ৭০০০ কমপিউটার বিক্রি হয়েছিল। বাংলাদেশে কমপিউটারের প্রসারের জন্য এমন পদক্ষেপ যখন দরকার, তখন কর বাড়ানোর সংবাদে কমপিউটার জগৎ উৎকণ্ঠিত। এমনিতে দেশের অর্থনৈতিক রাজ্যে চলছে দুর্দৈব। শিল্প ও প্রতিষ্ঠানমালা ঋণ-দেনা-অব্যবস্থায় ম্রিয়মাণ। এর মধ্যে কমপিউটার মহার্ঘ হলে কমপিউটারের স্বাভাবিক প্রসারও থেমে যাবে। আধুনিক ও অনাগত ভবিষ্যতের নবীন প্রজন্মের নাগালের বাইরে চলে যাবে কমপিউটার।’
এছাড়া যেখানে যখন যে প্রশ্ন তোলার প্রয়োজন এসে দরজায় কড়া নেড়েছে, তখন সে প্রশ্ন তুলতে আমরা ছিলাম যথা সচেতন। যেমন- প্রথম বছরের দ্বিতীয় সংখ্যাটিতেই আমরা সম্পাদকীয়র মাধ্যমে প্রশ্ন তুলি- ‘জনগণের দাবির মধ্যে একটি বিষয়ই মুখ্যভাবে এসেছে, সেটি হচ্ছে দেশে ব্যাপক কমপিউটারায়নের দাবি। এর জন্য এরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগগুলোকে স্থবিরতা কাটিয়ে অবিলম্বে ত্বরিত কর্মসূচি হাতে নেয়ার দাবি তুলেছেন। কোনো আমলাতন্ত্রিক জটিলতায় যেনো এর গতি শস্নথ না থাকে, সে ব্যাপারে সবাই সোচ্চার। মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও গত দুই বছরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমপিউটার শিক্ষা কেনো চালু করা হলো না, কেনো বিশ্ববাজারে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সফটওয়্যার রফতানির কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, কেনো অতি সহজ পদ্ধতির যন্ত্রাংশের উৎপাদনও এখানে হচ্ছে না- এসব ব্যাপারেসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয় দরকার রয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
এভাবে প্রয়োজনীয় দাবিকে সামনে নিয়ে আসা, এ দাবি বাস্তবায়নের উপায় উদ্ভাবন এবং বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের স্বার্থে স্বাভাবিক প্রশ্ন তুলে সংশ্লিষ্টদের করণীয় আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া এবং যথাসময়ে যথাদাবি নিয়ে সোচ্চার হওয়ায় কমপিউটার জগৎ এই ২৫ বছর বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি। সেই সূত্রেই কমপিউটার জগৎ আজ সব মহলে একটি আন্দোলনের নাম হিসেবেই বিবেচিত।এমনও বলা হচ্ছে- ‘কমপিউটার জগৎ এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক’।
একটি বিশ্বাসের নাম
আমাদের পাঠক মাত্রই লক্ষ করে থাকবেন, কমপিউটার জগৎ এর সার্বিক কার্যক্রম শুধু একটি পত্রিকা প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। ফলে সময়ের চাহিদা পূরণে এই পত্রিকাটিকে এর প্রচলিত সাংবাদিকতার অর্গল ভেঙে সাংবাদিকতার বাইরের বৃত্তেও প্রবেশ করতে হয়েছে। আমরা পত্রিকা প্রকাশের সাথে সাথে আমাদের লক্ষেত তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করে তুলতে সময়ে সময়ে আয়োজন করেছি সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ নানাধর্মী অনুষ্ঠানের। এমনকি কমপিউটার সাধারণ্যের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার লক্ষে্য বৈশাখীমেলায় আমরা আয়োজন করেছি কমপিউটার মেলা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে কমপিউটার যন্ত্রটিকে ডিঙি নৌকায় করে আমরা নিয়ে গেছি রাজধানীর বাইরে, বুড়িগঙ্গার ওপারে। কারণ তখনও দেশের অনেক শিক্ষার্থী কমপিউটার যন্ত্র ব্যবহার করা দূরে থাক, চোখে পর্যন্ত দেখেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি পত্রিকা হয়েও কমপিউটার জগৎসাংবাদিকতার স্বাভাবিক গন্ডি ছাড়িয়ে কেনো এসব কর্মকান্ড জড়িয়ে পড়ল? এর জবাবে বলব- কমপিউটার জগৎ নিছক একটি পত্রিকার নাম নয়, একটি বিশ্বাসেরও নাম। আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস- ‘একটি পত্রিকাও হতে পারে একটি আন্দেলন, আন্দোলনের মোক্ষম হাতিয়ার’। সেই বিশ্বাসের ওপর ভর করেই কমপিউটার জগৎ সূচিত হয়েছিল বলেই কমপিউটার হতে পেরেছে এতটা বহুমাত্রিক। এই বিশ্বাসকে লালন করে আগামী দিনের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে সমধিক বেগবান করার প্রয়োজনে কমপিউটার জগৎ-এর কার্যক্রমে প্রয়োজনে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করতে আমরা পিছপা হব না। কারণ, আমরা মনে করি সময় বদলাবে, সময়ের সাথে বদলাবে আমাদের প্রয়োজনও। তাই সে বদলে যাওয়ার ও বদলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি রইল আজকের এই ২৫ বছর পূর্তির শুভদিনে।
একটি ইতিহাসেরও নাম
কমপিউটার জগৎ একটি আন্দোলনের নাম কিংবা বিশ্বাসের নাম বললেই যথেষ্ট হবে না। এটি একটি ইতিহাসেরও নাম। এই সিকি শতাব্দীর কমপিউটার জগৎ-এর যেকোনো সংখ্যার যেকোনো পাতা উল্টানোর অপর অর্থ বাংলাদেশের সিকি শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে ইতিহাসের কোনো না কোনো উপাদানে হাত রাখা। আগামী দিনে যারা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাস রচনায় উদ্যোগী হবেন, তাদেরকে অপরিহার্যভাবে কমপিউটার জগৎ-এর পাতায় চোখ রাখতে হবে। কারণ, কমপিউটার জগৎই সম্ভবত একমাত্র দলিল, যেখানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ধারাবাহিক উত্থান-পতনের ইতিহাস গ্রথিত আছে। কখন কোন পক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কোন দাবি তুলেছে, কোন পরামর্শ রেখেছে, সংশ্লিষ্টজনের এসব দাবি বা প্রস্তাবে সাড়া দিতে কে বা কারা কতটুকু সচেতনতা বা সীমাহীন অবহেলা প্রদর্শন করেছেন, কখন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নতুন সূচনা বা উত্তরণ ঘটেছে, কখন কোন আন্দোলনের কীভাবে সূচনা ঘটল, কখন কোন আন্দোলন গতি পেল, আবার কখন কোন আন্দোলনের গতি শস্নথ হলো, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কারা কোন কোন ক্ষেত্রে কী প্রয়াস চালিয়েছেন, তাদের সাফল্য-ব্যর্থতা কী মাত্রায় ঘটেছে, দায়িত্বশীলদের মধ্যে কে ছিলেন কতটুকু সচেতন বা অসচেতন- ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এক কথায় বাংলাদেশের সিকি শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার পূর্বাপর জানার নির্ভরযোগ্য দলিল এই কমপিউটার জগৎ। সে জন্যই সহজবোধ্য কারণে দাবি তোলা যায়-‘কমপিউটার জগৎ একটি ইতিহাসেরও নাম’।
রেকর্ড গড়ার কমপিউটার জগৎ
এই ২৫ বছর কমপিউটার জগৎ প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অজান্তেই অনেক গৌরবদীপ্ত রেকর্ড গড়ে বসে আছি-কমপিউটার জগৎ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম তথ্যপ্রযুক্তিমাসিক। কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশের, এমনকি বিশ্বের একমাত্র বাংলা তথ্যপ্রযুক্তি মাসিক, যা সুদীর্ঘ ২৫ বছর নিয়মিতভাবে এর প্রকাশনা অব্যাহত রেখে প্রতি মাসে প্রতিটি সংখ্যা এর পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরেছে।এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রযুক্তি-মাসিক, যেটি পুরো ২৫ বছরে এর প্রচারসংখ্যা বরাবর শীর্ষে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯১ সালে কমপিউটার জগৎ-এর সূচনা সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমেদেশে জনগণের হাতে কমপিউটার তুলে দেয়ার আন্দোলনের সূচনা করে কমপিউটার জগৎ। কমপিউটার জগৎই প্রথম দাবি তোলে কমপিউটারের দাম কমানোর। শুরুর দিকে আমরাই সবার আগে দাবি তুলি শুল্কমুক্ত কমপিউটারের। ১৯৯২ সালের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনামের মাধ্যমে আমরাই প্রথম দাবি তুলি-‘কমপিউটারে বাংলা ব্যবহার, সব স্তরে আদর্শ মান চাই’। আমরাই প্রথম ডাটা এন্ট্রির অফুরান সম্ভাবনার কথা দেশবাসীকে জানাই অক্টোবর,১৯৯১ সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং ২১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে।১৯৯২ সালে বাংলাদেশের গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে কমপিউটার পরিচিতির কর্মসূচি প্রথম চালু করে কমপিউটার জগৎ। ১৯৯২ সালের ২৮ ডিসেম্বর আমরা আয়োজন করি দেশের প্রথম কমপিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনী। ১৯৯২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আয়োজন করি দেশের প্রথম কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। আয়োজন করি বৈশাখীমেলায় দেশের প্রথম কমপিউটার প্রদর্শনীর।১৯৭৩ সালের জানুয়ারি সংখ্যা থেকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিয়োজিতদের অবদানের প্রতি স্বীকৃতি জানাতে ও তাদের এ ব্যাপারে উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগাতে বর্ষসেরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব ও পুরস্কার দেয়ার প্রচলনআমরাই এ দেশে সর্বপ্রথম চালু করি। ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলন করে আমরাই সর্বপ্রথম দেশবাসীকে জানাই- সরকারের অবহেলার কারণে প্রায় বিনামূল্যের ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, আর কার্যত ঘটেও তাই। ১৯৯৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন করে কমপিউটার ব্যবহারে প্রতিভাধর শিশুদের জাতির সামনে উপস্থাপন করি।১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে সেনাবাহিনীতে কমপিউটারের অপরিহার্যতা জাতির সামনে আমরাই তুলে ধরি।১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারি কমপিউটার জগৎ আয়োজন করে দেশের প্রথম ইন্টারনেট সপ্তাহ। ১৯৯৬সালের জুলাইয়ে ইন্টারনেট ভিলেজের দাবি আমরাই তুলি সবার আগে। কমপিউটার জগৎই সর্বপ্রথম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে অবস্থানরত এ দেশের কৃতী সন্তানদের সম্পর্কে জাতিকে অবহিত করে। ২০০৩ সালের অক্টোবর সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরাই প্রথম জাতির সামনে ‘নিজস্ব উপগ্রহ চাই’ দাবি তুলে ধরি।কমপিউটার জগৎই বাংলাদেশের একমাত্র ম্যাগাজিন, যেটি ২০০৯ সালেসর্বপ্রথম ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি করে।ওই বছরইকমপিউটার জগৎ শুরু করে এ দেশের প্রথম লাইভ ওয়েবকাস্ট। প্রচুরসংখ্যক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে মাতৃভাষা বাংলার কমপিউটার কোড এবং একটি আদর্শ কিবোর্ডের জোরালো দাবি আমরাই জানিয়ে আসছি বিগত সিকি শতাব্দী ধরে। বিগত কয়েক বছর ধরেআমরা নিয়মিত প্রণোদনা ও দিকনির্দেশনামূলক লেখা প্রকাশ করে আসছি ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর। আমরাই ফেব্রুযারি ২০১৪ সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভার্চু্যয়াল ডিজিটাল কারেন্সি ‘বিটকয়েন’ সম্পর্কে জাতিকে অবহিত করি।
১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে আমরাই প্রথম জাতির কাছে তুলে ধরি ই-কমার্সের অপরিহার্যতা। ২০১৩ সালের ৭-৯ ফেব্রুয়ারিকমপিউটার জগৎ ঢাকায় আয়োজনকরে দেশের প্রথম ই-বাণিজ্য মেলা। এছাড়া একই বছরের ৭-৯ সেপ্টেম্বরকমপিউটার জগৎ আইসিটি মন্ত্রণালয় ও লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় দেশের বাইরে লন্ডনে প্রথম আয়োজন করে‘ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার’। ২০১৫ সালের নভেম্বরেআমরাই প্রথম জাতিকে অবহিত করি নীতিমালাহীনভাবে চলছে ই-বাণিজ্য এবং সেইসাথে ই-বাণিজ্য নীতিমালা প্রণয়নের দাবি তুলি।
আমাদের রেকর্ড গড়ার এই ফর্দ খুব বেশি সুদীর্ঘ না হলেও একেবারে কমও নয়। আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস- আসছে দিনেও আমাদের থলিতে আসবে আরও গৌরবজনক নানা রেকর্ড।
বাংলা কমপিউটিং ও কমপিউটার জগৎ
আমরা বারবার একটা দাবি উচ্চারণ করে আসছি-‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। আর এটিই ছিল আমাদের মৌলদাবি।বলা যায় প্রথম ও শেষ দাবি। শুরু থেকে আমাদের সচেতন উপলব্ধি ছিল আর এই দাবির সফল বাস্তবায়নে আমাদের অপরিহার্য করণীয় হচ্ছে মাতৃভাষায় কমপিউটার চর্চা। সোজা কথায়, বাংলা কমপিউটিংকে বাদ দিয়ে কখনই জনগণের হাতে কমপিউটার পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাই বাংলা কমপিউটিংকে সবার আগে স্থান দিতে হবে। আমরা সিকি শতাব্দীর কমপিউটার জগৎ প্রকাশ করতে এবং কমপিউটার জগৎকেন্দ্রিক তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে কখনই সেই উপলব্ধি থেকে সরে আসিনি।
আমরা লক্ষ করেছি, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি হচ্ছে বাংলাভাষা সম্পর্কে যাবতীয় সচেতনতা সৃষ্টির একটি মোক্ষম সময়। তাই ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলা কমপিউটিংয়ের বিষয়টিকে বারবার জাতির সামনে নিয়ে আসার ব্যাপারে মোটামুটিভাবে একটি স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েই রাখি। দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া আমরা কমপিউটার জগৎ-এর প্রায় প্রতিটি ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রচ্ছদকাহিনী ও অন্যান্য লেখালেখির মাধ্যমে আমরা বাংলা কমপিউটিংয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে জাতির সামনে তুলে ধরেছি। সেই সাথে প্রয়োজনীয় করণীয় নির্দেশ করেছি।
আমরা কমপিউটার জগৎ প্রকাশনা শুরু করি ১৯৯১ সালের মে মাসে। অতএব কমপিউটার জগৎ-এর সামনে প্রথম ফেব্রুয়ারি সংখ্যাটি আসে ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসটি। এই ফেব্রুয়ারি মাসেই আমরা যে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপি, এর শিরোনাম ছিল- ‘কমপিউটারে বাংলা, সর্বস্তরে আদর্শ মান চাই’। পরের বছর ১৯৯৩ সালে অবশ্য জানুয়ারি সংখ্যাটিতেই প্রচ্ছদ কাহিনী রচনায়ও আমরা বাংলা কমপিউটিংকেই অনুষঙ্গ করি। আর এই প্রচ্ছদ কাহিনীর শিরোনাম করি- ‘বাংলা একাডেমির হাতে বিপন্ন বাংলা’। একই বছরের আগস্ট সংখ্যায় আমরা প্রকাশ করি বাংলা কমপিউটিংয়ের ওপর ‘বিসিসির পোস্টমর্টেম: বাংলাদেশের বাংলা ভারতের নিয়ন্ত্রণে’ শীর্ষক আরেকটি প্রচ্ছদ কাহিনী।
প্রথম বাংলা কমপিউটিংবিষয়ক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘কমপিউটারেবাংলা, সর্বস্তরে আদর্শ মান চাই’-এ আমরা লিখেছিলাম-‘কমপিউটার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রসার লাভ করছে। বাংলাদেশকেও প্রযুক্তির এই নতুন প্রবাহে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাংলা ব্যবহারের ফলে কমপিউটারকে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব। সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারের অনেক দিনের প্রচেষ্টাতে এর অবদান হবে যুগান্তকারী। ইংরেজিতে নির্ভুল, সহজ ও তাড়াতাড়ি লেখার যান্ত্রিক যেসব সুযোগ বিদ্যমান, বাংলাভাষাকে সর্বস্তরে ব্যবহার এবং সবার কাছে গ্রহণীয় করার জন্য বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সেসব সুবিধাদি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে। তাই গত কয়েক বছর ধরে কমপিউটারে বাংলাভাষার সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা চলছে এবং এ ব্যাপারে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে- এটি আমাদের জন্য আশার বাণী।’
‘বাংলা একাডেমির হাতে বিপন্ন বাংলা’ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে এমনটি আমরা এজন্যই বলি- তখন দেশে বাংলা কমপিউটারে বাংলা কিবোর্ড লেআউট প্রমিত করার ব্যাপারে একটি কমিটি থাকলেও দীর্ঘ ছয় বছর কাজ করার পর কমিটি যখন একটি কিবোর্ড প্রণয়নে ঐকমত্যে পৌঁছে, তখন বাংলা একাডেমি একটি বিপণন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশ করে ওই ব্যবসায়ীর কিবোর্ড বিন্যাস আদর্শ হিসেবে ধরে। এতে সচেতন নাগরিকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হন। এর বিস্তারিত তুলে ধরেই ছিল এই প্রতিবেদন।
বাংলা কমপিউটিং নিয়ে তৃতীয় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘বিসিসির পোস্টমর্টেম: বাংলাদেশের বাংলা ভারতের নিয়ন্ত্রণে’ আমরা লিখি-‘শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ পর্যন্ত আইএসওতে তাদের নিজস্ব ভাষায় কোডিং জমা দিয়ে অপেক্ষা করছে দুই বছর ধরে। ভাষার অহঙ্কারে মাটিতে পা পড়ে না যে জাতির, সেই বাংলাদেশকে ফেলে রেখেএই জাতির ভাষার বর্ণমালার কোডিং তৈরি করে ফেলেছে ভারত। শুধু তাই নয়, তারা বাংলাভাষার ওপর যে সফটওয়্যার তৈরির কাজ সেরেছে, তা আগ্রাসী শক্তিতে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে অচিরেই। বিনা যুদ্ধে ভাষা ও বর্ণের ওপর জাতীয় অধিকার ছেড়ে দিয়ে এ সরকার ১৯৫২-র ও ১৯৭১-এর বিজয়কে সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। অথচ কেতার রচয়িতা বাংলাভাষার অহংধারী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এখনপর্যন্ত এর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।’
এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরি- এ ব্যর্থতার ভয়াবহতা কতটুকু, বাংলা প্রমিত বর্ণমালা কোড কী, কেনো ব্যর্থ হলো বিসিসি, বিশেষজ্ঞেরা কী ভাবছেন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এভাবে কমপিউটার জগৎ-এর গোটা সিকি শতাব্দীর ইতিহাসে আমরা বাংলা কমপিউটিং আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যখন যা বলার প্রয়োজন, তা উল্লেখ করেছি অসংখ্য প্রচ্ছদ প্রতিবেদন রচনা করে, প্রতিবেদন তৈরি করে ও নানাধর্মী লেখালেখি করে। এখানে এর বিস্তারিতে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। তবে এখানে এ সম্পর্কিত আমাদের প্রচ্ছদ কাহিনীর শিরোনামগুলো উল্লেখের প্রয়াস পাব। তা থেকে বাংলা কমপিউটিং আন্দোলনে আমাদের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু নিবিড় ছিল, তা আন্দাজ করা যাবে।
ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ সংখ্যা: কমপিউটারে বাংলা ব্যবহার, সর্বস্তরে আদর্শ মানচাই; জানুয়ারি ১৯৯৩: বাংলা একাডেমির হাতে বিপন্ন বাংলা; আগস্ট ১৯৯৩: বিসিসির পোস্টমর্টেম: বাংলাদেশের বাংলা ভারতের নিয়ন্ত্রণে;এপ্রিল ১৯৯৫: অনিশ্চয়তার পথে বাংাদেশের বাংলা; ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬: বাংলাদেশের বাংলা সফটওয়্যার, সফটওয়্যার বাণিজ্য; মে ১৯৯৬: কমপিউটার ও বাংলাভাষা; মার্চ ২০০১ : বাংলাভাষার বিশাল টাকার প্রযুক্তিবাজার; এপ্রিল ২০০১: ইউনিকোড ও বাংলাভাষা; ফেব্রুয়ারি ২০০৩: বাংলা কমপিউটিংয়ের দুরবস্থা এবং বায়োসের উদ্যোগ; ফেব্রুয়ারি ২০০৪: বাংলা আইসিটি; ফেব্রুয়ারি ২০০৫ : তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলা কমপিউটিং এবং একই সংখ্যায় একটি লেখা: ডিজিটাল বাংলা ২০০৫ ও ফেব্রুয়ারি মাতম; ফেব্রুয়ারি ২০০৬: কমপিউটারে বাংলাভাষা প্রয়োগ, প্রয়োজন আরও জোরালো গবেষণা; ফেব্রুয়ারি ২০০৭ : ডিজিটাল যন্ত্রে কেমন আছে বাংলাভাষা; ফেব্রুয়ারি ২০০৮: বাংলা কমপিউটিং ও আমরা; ফেব্রুয়ারি ২০০৯ : বাংলা কমপিউটিংয়ে গবেষণা; এছাড়া এ সংখ্যায় বাংলাভাষা ও প্রযুক্তি নিয়ে রয়েছে আরও দুটি লেখা: ‘কমপিউটারে বাংলা ধ্বনির প্রয়োগ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলাভাষার সঙ্কট’। ফেব্রুয়ারি ২০১০: আইসিটি ও আমাদের বাংলাভাষা; ফেব্রুয়ারি ২০১১: বাংলা কমপিউটিং ও কয়েকটি বাংলা সফটওয়্যার; ফেব্রুয়ারি ২০১৪: প্রযুক্তিতে পিছিয়ে বাংলাভাষার মেলবন্ধন; আগস্ট ২০১৪: ইউনিকোড বিজয় ও বাংলালিপির প্রমিতকরণ; ফেব্রুয়ারি ২০১৫: বাংলাভাষায় কমপিউটার প্রযুক্তি। ফেব্রুয়ারি ২০১৬: ডিজিটাল বাংলাদেশে উপেক্ষেত ডিজিটাল বাংলা।
আমরা শুনিয়েছি সম্ভাবনার কথা
আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তির নানা সম্ভাবনার কথা তুলে ধরার প্রশ্নটি বরাবর আমাদের সচেতন বিবেচনায় রেখেছি। তাই যখন যে সম্ভাবনার কথা আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি, তা জাতির সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। ডাটা এন্ট্রি ও সফটওয়্যার মার্কেটিং নিয়ে বাংলাদেশে যে সময়ে একদম কোনো আলোচনাই শোনা যেত না, সে সময়ে এই সম্ভাবনাকে সবার সামনে তুলে ধরার মিশনটি গ্রহণ করেগুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুটি জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনার জন্য কমপিউটার জগৎ-এ ব্যাপক লেখালেখি চলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি লেখা ও প্রতিবেদন হলো- ১৯৯১ সালের অক্টোবর সংখ্যায় ‘ডাটা এন্ট্রি: অফুরন্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ’; একই বছরের নভেম্বর সংখ্যায় ‘ডাটা এন্ট্রি: সমস্যা ও সম্ভাবনা’; একই বছরের ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত ‘ডাটা এন্ট্রি: গড়ে উঠুক নতুন শিল্প’; ১৯৯২ সালের এপ্রিল সংখ্যায় ‘ডাটা এন্ট্রি ও সফটওয়্যারের মধ্যবর্তী কাজ’; ১৯৯২ সালের জুলাই সংখ্যায় ‘ছয় লাখ টাকার সফটওয়্যার বাজার’; ১৯৯৪ সালের মার্চ সংখ্যায় ‘অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ’; একই বছরের মে সংখ্যায় ‘বিশ্ব সফটওয়্যার বাজার ও আমরা’।
শুধু ডাটা এন্ট্রিই নয়, প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রের সম্ভাবনার কথাও আমরা সমভাবে তুলে ধরতে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করিনি।
নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবি
আমরা ২০০৩ সালের দিকে এক অনুসন্ধানে জানতে পারি, শুধু আইএসপি ও প্রাইভেট চ্যানেলের সম্প্রচারে প্রতিমাসে বৈধ ও অবৈধ উপায়ে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নিজস্ব উপগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তুলে আমরা বাঁচাতে পারি এই অপচয়। একই সাথে আয় করতে পারি কোটি কোটি টাকা। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিতে হলে আমাদের প্রয়োজন নিজস্ব উপগ্রহ। আমাদের নিজস্ব উপগ্রহের প্রয়োজন বিশ্লেষণ করে আমরা কমপিউটার জগৎ-এর অক্টোবর২০০৩ সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন রচনা করি এই বিষয়ের ওপর। আর এর যথার্থ যৌক্তিক কারণে এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের একটি দাবিধর্মী শিরোনাম করি- ‘বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট চাই’।
এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা বলতে চাই, কেনো আমরা নিজস্ব স্যাটেলাইট চাই? এই প্রতিবেদনে আমরা উলস্নখ করি-‘বাংলাদেশের আদৌ কোনো স্যাটেলাইটের প্রয়োজন আছে কি না? এবং থাকলেই বা এর গুরুত্ব কতটুকু?স্যাটেলাইট কেনা না লিজ নেয়া, কোনটি বাংলাদেশের জন্য যুক্তিযুক্ত?’ এই প্রতিবেদনে আমরা উল্লেখ করি, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বৈধ আইএসপির সংখ্যা ৭০টি। এর মধ্যে প্রথমসারির দশটি আইএসপি ব্যবহার করে গড়পড়তায় ৩ এমপিবিএস(মেগাবিট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের চাহিদা সর্বনিমণ ৯০ এমপিবিএস এবং সর্বোচ্চ ১৫০ এমপিবিএস। আর এ সময়ে ১ মেগাবিট একমুখী ডাটা কিনতে খরচ হয় গড়ে মাসিক ৪ হাজার ইউএস ডলার। একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায়, প্রতিমাসে আমাদের এই গরিব দেশ থেকে এ খাতে বাইরে চলে যায় ৩,৬০,০০০ থেকে ৬,০০,০০০ ডলার। প্রতিবছর আমাদের দেশে ইন্টারনেটের চাহিদা যে হারে বেড়ে চলেছে, সে অনুযায়ী আগামী কয়েক বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আগামী পাঁচ বছরে আমাদের মাসিক গড়পড়তা চাহিদা যদি ২০০ এমপিবিএস ধরি, তবে মাসে খরচ হবে ৮,০০,০০০ ডলার। পাকিস্তানের পাঁচ বছরে লিজ নেয়া স্যাটেলাইটের জন্য মোট খরচ ৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ যদি পাকস্যাট-১-এর মতো একটি স্যাটেলাইট পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেয়, তবে শুধু আইএসপি খাতে হিসাব করলে স্যাটেলাইটের মোট মূল্য পরিশোধ হতে সময় নেবে ৩৭.৫ মাস বা প্রায় তিন বছর। বাকি দুই বছরআমাদের কোনো ইন্টারনেট চার্জ দিতে হবে না। এতে সাশ্রয় হবে কোটি কোটি টাকা।
এছাড়া আমরা এই প্রতিবেদনে নিজস্ব উপগ্রহ স্থাপনের সুবিধাজনক দিকটি তুলে ধরেছি। সে যা-ই হোক, সরকার বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
ই-কমার্স প্রসারের আন্দোলনে
আমাদের নিয়মিত পাঠকরা নিশ্চয় লক্ষ করে থাকবেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আমাদের সর্বসাম্প্রতিক আন্দোলনের একটি ক্ষেত্র হচ্ছে বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় ই-কমার্সের প্রসার। একটা সময়ে এসে আমরা উপলব্ধি করি, বাংলাদেশে ই-কমার্সের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রয়েছে নানা বাধা। এর মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন চালু না হওয়া একটি অন্যতম বাধা। তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টারনেটের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর অনুমতি দিলে দেশে ই-বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা দূর হয়। তবে আমরা লক্ষ করি, ই-বাণিজ্যের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে না পারলে এর প্রসারে গতি আসবে না। জনসচেতনতার অভাবে বাংলাদেশের মানুষ ইন্টারনেটে কেনাকাটায় ততটা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। সে উপলব্ধি থেকেই আমরা কমপিউটার জগৎ-এর ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সংখ্যাটির প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের বিষয় করি। অপরদিকে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষে্য আমরা ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে ই-বাণিজ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলার পরিকল্পনা করি। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা ২০১৩ সালের ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি আয়োজন করি দেশের প্রথম তিন দিনব্যাপী ই-বাণিজ্য মেলা। এ মেলায় দেশের ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য প্রদর্শন করে। ‘ঘরে বসে কেনাকাটার উৎসব’ সেস্নাগান নিয়ে আয়োজিত এ মেলা সার্বিক বিবেচনায় যথার্থ অর্থেই ছিল একটি সফল প্রযুক্তিমেলা। ঢাকায় আয়োজিত এই মেলার সাফল্যসূত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নেই ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে এই ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজন অব্যাহত রাখতে। সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিভাগীয় শহর সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে আয়োজন করি ই-বাণিজ্য মেলা।
এক সময় আমরা উপলব্ধি করি, বিদেশে রয়েছে প্রচুরসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী। তাই দেশের বাইরেও অপেক্ষা করছে আমাদের সম্ভাবনাময় ই-বাণিজ্য বাজার। তাই প্রবাসীদের মাঝে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারকে সম্যক তুলে ধরতে ২০১৩ সালের ৭, ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর তিনদিনব্যাপী প্রথম ইউকে- বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার। এরই সাফল্যসূত্রে ২০১৫ সালের ১৩-১৪ নভেম্বর আয়োজন করি দ্বিতীয় ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার।
সবচেয়ে যাকে বেশি মনে পড়ছে
আজ কমপিউটার জগৎ-এর এই ২৫ বছর পূর্তিতে যাকে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে, তিনি হলেন অধ্যাপক মরহুমমো: আবদুল কাদের। তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ। তিনি এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক অভিধায়ও বিভিন্ন মহলে অভিহিত হয়ে থাকেন। তারই চিন্তা-চেতনা ও মেধা-মননের ফসল আমাদের কমপিউটার জগৎ। তারই নীতি-আদর্শের প্রতিফলন রয়েছে কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিটি প্রতিবেদন আর লেখালেখিতে। ১৯৯১ সালে তার হাতেই কমপিউটার জগৎ-এর জন্ম ও বিকাশ।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশকে কাঙিক্ষত লক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক দিক-নির্দেশনা নির্ধারণে আমরা সফলতা দেখাতে পারিনি। ফলে জাতি হিসেবে আমরা লক্ষেত অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। ফলে আমাদের জাতীয় দৈন্য কাটিয়ে উঠতে পারিনি। জাতীয় অর্থনীতি হয়ে পড়ে পরনির্ভরশীল। অথচ সঠিক দিকনির্দেশনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা খোলা ছিল আমাদের সামনে। প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাবে সেই সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। বিষয়টি খুবই পীড়াদায়ক ছিল এ দেশের দেশপ্রেমিক দূরদর্শী কিছু মানুষের কাছে। মরহুম আবদুল কাদের ছিলেন তাদেরই একজন। তিনি যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন- বাংলাদেশের মতো একটি দেশকে এগিয়ে নিতে মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপযুক্তিকে হাতিয়ার করেই বাংলাদেশ পারে এর কাঙিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করতে। সে উপলব্ধি নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সত্যিকারের একটি আন্দোলন গড়ে তোলার মানসেই সূচনা করেন মাসিক কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার।
১৯৯১ সালে সূচনা হয় কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার। আর ২০০৩ সালের ৩ জুলাই আমরা হারাই অধ্যাপক আবদুল কাদেরকে। তিনি অনেকটা হঠাৎ করেই যেনো চলে গেলেন না-ফেরার জগতে। কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার পর থেকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি কমপিউটার জগৎকে লালন করেছেন নিজের সন্তানের মতো। পত্রিকাটিকে ব্যবহার করেছেন আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে। বললে ভুল হবে না- তার হাত ধরেই এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সাংবাদিকতার যেমন বিকাশ, তেমনি এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনেরও বিকাশ। তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক গণমাধ্যমের সূচনা। আসলে তিনি ছিলেন মনে-প্রাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিপ্রেমী এক মানুষ। সেই সূত্রেই স্কুলজীবনেই তিনি সম্পাদনা শুরু করেছিলেন ‘টরেটক্কা’ নামে একটি বিজ্ঞান পত্রিকা, যদিও পত্রিকাটির অকালমৃত্যু ঘটেছিল। হতে পারে সে দুঃখবোধই তাকে কমপিউটার জগৎ প্রকাশে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
সরকারি কলেজের মৃত্তিকাবিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি তার ছিল অসাধারণ টান। কারণ, তার সম্যক উপলব্ধি ছিল বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিই হতে পারে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায়। সে যা-ই হোক,প্রচারবিমুখ এই মানুষটি আজকের প্রজন্মের কাছে যেনো অপরিচিতই থেকে গেছেন। কারণ, জাতীয় উন্নয়নে তার অনন্য অবদান থাকলেও জাতি হিসেবে আমরা এখনও তাকে যথাযোগ্য সম্মান দেখাতে পারিনি। জাতি হিসেবে এ আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা আমরা কখন কাটিয়ে উঠব, সেটাই এই সময়ের প্রশ্ন।
আমাদের অঙ্গীকার
কমপিউটার জগৎ এই ২৫ বছরের পথ চলেছে অধ্যাপকমরহুমআবদুল কাদেরের দেখানো পথে। তার রেখে যাওয়া নীতি-আদর্শের মহাসড়ক ধরে পথ চলে। ইতিবাচক সাংবাদিকতাকে সমুন্নত রেখে। জাতীয় স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দিয়ে। কমপিউটার জগৎ-এর এই ২৫ বছর পূর্তির দিনেকমপিউটার জগৎ পরিবার আগের মতোই এ ব্যাপারে থাকবে আপসহীন, রক্ষা করবে২৫ বছরের অর্জিত সুনাম, সমুন্নত রাখবে অধ্যাপক আবদুল কাদেরের নীতি-আদর্শ।