লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
নতুন প্রযুক্তি
প্রযুক্তি বিশ্বের আলোড়ন সৃষ্টিকারী কয়েকটি পণ্য
গিগা : ইন্টারনেটের নতুন প্রটোকল
ইন্টারনেটের ডাউনলোড এবং স্ট্রিমিং তথা প্রবাহগতিকে প্রচলিত ধারা থেকে উঁচুমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন এক প্রটোকল উদ্ভাবন করেছে নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠান ‘আকামাই’।
প্রচলিত ধারা কী?
প্রচলিত ধারা হচ্ছে টিসিপি তথা ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রটোকল- যে ভাষায় ইন্টারনেট কথা বলে। মোদ্দাকথা, টিসিপি হচ্ছে যোগাযোগের নিয়ম-নীতির এমন একটি পদ্ধতি, যা ডাটাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেটে রূপান্তর করে এবং তারপর আইপি অ্যাড্রেস অনুযায়ী গন্তব্যে পাঠায়। একটি মাত্র রুটে না গিয়ে এ প্যাকেটগুলো বিভিন্ন রুট নির্বাচন করে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ প্যাকেটগুলোর কিছু অংশ এক রুটে এবং অপর কতিপয় অংশ অন্য আরেকটি রুটে চলাচল করতে পারে। প্যাকেটগুলো একাধিকভাবে ভাগ হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রুটে একই গন্তব্যেও পৌঁছতে পারে। ইন্টারনেটের উদ্ভাবন এবং প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে টিসিপি/আইপি খুব সফলভাবে একথা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তবে এ প্রটোকল উদ্ভাবিত হয়েছে ১৯৭৪ সালে বব ক্যান এবং ভিন্টন কার্ফ এর মাধ্যমে। সেজন্য বব ক্যান এবং ভিন্টন কার্ফকে ইন্টারনেটের জনক বলা হয়। এছাড়া প্যাকেট সুইচিংয়ের আবিষ্কারক পল ব্যারান এবং ডোনাল্ড ডেভিসকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
টিসিপি প্রটোকলটি ৪২ বছরের পুরনো বিধায় এর উন্নত প্রতিস্থাপনের জন্য আকামাই বেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, গুগলও একটি বিকল্প প্রতিস্থাপনা তৈরি করে ক্রোমে ব্যবহার করা শুরু করেছে। ফলে এ বছরের জানুয়ারিতে আকামাই যে বিকল্প প্রটোকলটি জনসমক্ষে হাজির করেছে, তা টিসিপির তুলনায় ৩০ শতাংশ দ্রুতগতির। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘গিগা’।
গিগা কী?
টিসিপির মতো গিগাও ডাটাকে টুকরো টুকরো করে প্যাকেটে পরিণত করে এবং আইপি অ্যাড্রেস অনুযায়ী গন্তব্যে পাঠাতে পারে। তবে এর মূল লক্ষ্য ধরা হয়েছে অডিও এবং ভিডিও স্ট্রিমিং। বিশেষভাবে বলতে গেলে, কনজেশন কন্ট্রোলকে উন্নত করা হয়েছে টিসিপির তুলনায়। যেমন ট্রানজিট পথে কতিপয় ডাটা বা প্যাকেট হারিয়ে গেলে পুনঃপ্রেরণের জন্য টিসিপি ব্যবস্থা নেয়, এ ক্ষেত্রে তা দরকার হবে না। কারণ, ডাটাকে বুদ্ধিমত্তা সহকারে এমনভাবে কোডেড করা হবে যাতে এ প্রক্রিয়া আর প্রয়োজন না হয়। এতে করে পারফরম্যান্স তথা দক্ষতা বেড়ে যাবে নিঃসন্দেহে এ তথ্যটি জানিয়েছেন আকামাইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিট নক্স।
আকামাই জানিয়েছে, গিগা টিসিপির তুলনায় গড়ে ৩১.৩ শতাংশ গতি-দক্ষতা দেখাতে পেরেছে, যদিও নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর ওপর এটি বেশ নির্ভরশীল। এমনও দেখা গেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। দেখা গেছে, গিগা প্রটোকল দীর্ঘ আকৃতির কনটেন্টে ভালো ফল দিয়েছে, যেমন ভিডিও স্ট্রিমিং। এদিকে ক্ষুদ্রাকৃতির কনটেন্টে ভালো ফল দেয়ার জন্য গুগল গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে ‘কুইস’ Quick UDP Interconnections (QUIC) নামে টিসিপির বিকল্প প্রটোকল চালু করেছে। গুগল সার্চ এবং ইউটিউবের বাফারিংয়ের জন্য এটি এরা ব্যবহার করছে।
গিগা আসবে কবে?
সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত ফরম্যাট দিয়ে আকামাই অচিরেই একে সর্বসাধারণের জন্য অবমুক্ত করে দেবে, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন হবে হার্ডওয়্যার সমর্থন। ভোক্তার পণ্য থেকে সার্ভার অবধি যেখান থেকে ডাউনলোড ডাটা প্রবাহিত হবে- যথাযথ হার্ডওয়্যার থাকতে হবে, যা হতে সময় লাগবে প্রচুর এবং এটা নিশ্চিত করে বলা বেশ কঠিন ‘কখন হবে’। তবে গুগল তাদের ‘কুইস’ প্রটোকল গত বছর প্রমাণ সংস্থায় (স্ট্যান্ডার্ড বডি) জমা দিয়েছে এবং গুগলের সমস্ত পণ্যে এটিকে ব্যবহার করছে। প্রটোকলকে টিসিপির মতো বিশ^জনীন করতে হলে সবাইকে তা গ্রহণ করতে হবে- একথা বলাই বাহুল্য
গুগলের ক্রোমকাস্ট-২
গুগল যখন ক্রোমকাস্ট স্টিক বাজারে ছাড়ে, তখন সবাই ধরে নিয়েছিল নিঃসন্দেহে এটি বাজিমাত করবে। নিরেট পুরনো টিভিকে এটি একটি স্মার্টটিভিতে পরিণত করার মজা। শুধু নয়, বরং এটি দামে ছিল বেশ সস্তা। মাত্র ৫০ ডলার বা এর নিমণমূল্যে এ পণ্যটি মানুষকে চমক দেখাবে এটাই যেন স্বাভাবিক। তিন বছর আগে প্রথম যখন ক্রোমকাস্টের ঘোষণা দেয়া হয়, তখন এটি শুধু ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তাই নয়, বরং এরা এটি লুফে নিয়েছিল এ কারণে যে, এটি তাদের চাহিদাকে চমৎকারভাবে পূরণ করেছিল। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, গুগল যেন পরিতৃপ্ত ছিল না। তাই তারা এবার ক্রোমকাস্ট-২ বাজারে ছেড়েছে। এবার দেখা যাক, এরা কী কী উন্নয়ন ঘটিয়েছে এদের নতুন এ পণ্যে।
প্রথমেই এরা নান্দনিকতার দিকে নজর দিয়েছে। ক্রোমকাস্ট-১ যেখানে ইউএসবি স্টিকের মতো ছিল, বর্তমানে তাকে পরিণত করা হয়েছে গোল ডিস্কের মতো এবং একে ছাড়া হয়েছে কালো, লাল এবং হলুদ এই তিনটি রংয়ে। ছোট্ট তার দিয়ে এইচডিএমআই (HDMI) সংযোজনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঘন এইচডিএমআই পোর্টগুলোতে যাতে স্বচ্ছন্দে লাগানো যায়, সে ব্যবস্থা রাখার জন্যই এটা করা হয়েছে এবং একটি ক্ষুদ্র চুম্বক ডিভাইসে সন্নিবেশিত হয়েছে, যাতে পরিবহন সহজতর হয়।
তবে শুধু আকৃতি বদল নয়, অভ্যন্তরীণভাবে সংস্কার করা হয়েছে। এটি এখন হালে প্রচলিত নতুন ওয়াই-ফাই স্ট্যান্ডার্ড ৮০২.১১ এসিকে ধারণ করছে। ফলে এটি সুবিধা অনুযায়ী ২.৪ গিগাহার্টজ বা ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি সুইচ করতে পারে, যাতে শ্রেষ্ঠ সংযোগ পাওয়া যায়। ক্রোমকাস্ট-১ শুধু ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যবহার করে ওয়াই-ফাই এন সংযোগ প্রদান করত। নতুন এ গেজেটটি পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে বেশ অগ্রসর হয়েছে, যেখানে প্রথমটি উইটিউব স্টিমের জন্য বাফারিং করতে হতো, সেখানে নতুন এ পণ্যটির তা দরকার হবে না। আগের মতো এটিতেও রিমোট নেই। এটি সেটআপ করা বেশ সহজ। শুধু ক্রোমকাস্ট অ্যাপ ডাউনলোড করে ক্রোমকাস্ট নির্বাচন করে ওয়্যারলেস লগইন তথ্যগুলো দিলেই চলবে। নতুনভাবে ‘গেস্ট মোড’ বা ‘অতিথি মোড’ রাখা হয়েছে, যাতে বন্ধুরাও প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করতে পারে। এদিকে গুগল অ্যান্ড্রয়িড এবং আইওএসের জন্য ক্রোমকাস্ট অ্যাপকে আপডেট করেছে, যাতে সহজে এটিকে আবিষ্কার করা যায়।
ক্রোমকাস্টের মূল ব্যবহারই হলো এটি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকে কাস্ট বা নিক্ষেপ করে টিভিতে প্রদান করবে, যাতে বড়পর্দায় ভিডিও স্ট্রিমিং উপভোগ করা যায়। ফলে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের স্ক্রিন/পর্দা মিররিং হয়ে যাবে, অর্থাৎ বড়পর্দায় আপনি উপভোগ করবেন যাবতীয় বিষয়। তবে গেমিং ক্রোমকাস্টে তেমন ভালোভাবে আসবে না। কারণ গেম ডেভেলপারেরা ক্রোমকাস্ট অনুযায়ী অ্যাপ এখন তৈরিতে তেমন আগ্রহী হয়ে ওঠেননি। দাম ১০ ডলার বাড়ালেও এটি যথাযথ বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করেন
নতুন ধরনের মেমরি : থ্রিডি ক্রসপয়েন্ট
ইন্টেল এবং মাইক্রন নতুন ধরনের এক মেমরি তৈরি করেছে, যা প্রচলিত ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমরির তুলনায় ১০০০ গুণ দ্রুতগতির হবে। এটি শিগগিরই বাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ মেমরির নাম দেয়া হয়েছে থ্রিডি ক্রসপয়েন্ট। এটি ১৯৮৯ সালের পর থেকে ‘মেইনস্ট্রিম মেমরি’ হিসেবে আবিষ্কৃত বর্তমান মেমরি প্রক্রিয়াকরণ (প্রসেসিং) র্যা ম (উজঅগ) এবং স্টোরেজ মধ্যকার বটলনেক সমস্যা দূর করবে। ডিআরএএম ব্যয়বহুল এবং উদ্বায়ী অর্থাৎ বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ করার পরপরই তথ্য মুছে যায়। সলিড স্টেড ড্রাইভে (SSD) যে ন্যান্ড র্যালম ব্যবহার হয় তা সস্তা এবং স্থায়ী (উদ্বায়ী নয়)। তবে এটি ডিআরএএমের তুলনায় ১৫০০ গুণ ধীরগতির। অপরদিকে ‘থ্রিডি ক্রসপয়েন্ট’ মেমরি ন্যান্ডের তুলনায় হাজারগুণ দ্রুতগতির। আর এর সুবিধা হলো এটি সস্তা এবং ন্যান্ডের মতো অউদ্বায়ী।
কীভাবে ক্রসপয়েন্টে কাজ করে
অসংখ্য ক্ষুদ্র ‘ফুট প্রিন্ট’-এর মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে করে প্রত্যেকটি সেল ট্রানজিস্টর ছাড়াই গ্রহণ করা যায়। থ্রিডি ক্রসপয়েন্ট কলাম দিয়ে তৈরি হয়, যাতে একটি মেমরি সেল থাকবে এবং একটি সিলেক্টর ‘নির্বাচক’ থাকবে, যা সেলটি ‘পড়া’ (Read) বা ‘লেখা’ (Write) সম্পর্কিত তথ্য দেবে। প্রত্যেক কলাম ক্রিস-ক্রসিং তার দিয়ে সংযুক্ত হবে, যার অর্থ প্রতিটি ‘সেল’ যুগপৎ উপর ও নিমণস্থ তার দিয়ে নির্বাচিত হবে। দক্ষতা বাড়াবার জন্য এগুলোকে উলস্নম্বভাবে (Ventically) স্থাপন করা হবে এবং ডিআরএএমের তুলনায় এটি দশগুণ তথ্য ধারণ করতে পারবে। লেখার জন্য শুধু তারগুলোর ভোল্টেজ বদলাতে চলবে।
ন্যান্ডের তুলনায় শ্রেয়
প্রচলিত ন্যান্ড মেমরি ট্রানজিস্টের ওপর নির্ভরশীল বিধায় ডাটা ব্লক অনুযায়ী লিখতে হয়। অন্যদিকে থ্রিডি ক্রসপয়েন্ট প্রত্যেক মেমরি সেলকে অ্যাড্রেস করতে পারে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডাটা ধারণ করতে পারে। সুতরাং এটি বেশ দ্রুত গতিসম্পন্ন।
প্রচলিত পিসি মেমরিকে প্রতিস্থাপন করবে কি না এ ব্যাপারে ইন্টেল জানিয়েছে- সম্ভবত ‘না’। বরং এটি প্রচলিত মেমরির পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে দক্ষতা বা পারফরম্যান্স বাড়ানো যায়। কমপিউটার প্রোগ্রাম অগ্রিমভাবে থ্রিডি ক্রসপয়েন্টে ডাটা নিয়ে রাখবে, যাতে দ্রুততরভাবে ডি-র্যা মে লোড করা যায়। এতে করে সলিড স্টেট ড্রাইভ বা হার্ডড্রাইভ থেকে র্যািমে স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে না। এতে বিশেষ করে সুবিধা হবে তীব্র মেমরি ক্ষুধার্ত টাস্ক যেমন গেমিং, আল্ট্রা হাই-ডেফিনিশন ভিডিও এবং বিগ ডাটা বিশ্লেষণধর্মী কাজের। এছাড়া বুট সময় দ্রুত করার জন্যও এটি ব্যবহার হতে পারে।
কবে বাজারে আসবে থ্রিডি ক্রসপয়েন্ট
ইন্টেল এবং মাইক্রন জানিয়েছে, এই মেমরি উৎপাদন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং এই মেমরি সংবলিত পণ্য বাজারে আসবে। তবে এর দাম কেমন হবে, তা এরা জানায়নি। এ জাতীয় মেমরি প্রথমেই গেমিং মেশিনে আসবে বলে সবাই ধারণা করছে। পরবর্তী সময়ে ল্যাপটপে আসবে