লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি ধারা
পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিক পণ্য
আপনার শরীরে পরিধানযোগ্য নতুন কিছু কি হতে পারে? প্রশ্নটা বেশ অদ্ভুত মনে হচ্ছে তাই না! হবেই বা না কেন! আমরা প্রচলিত যে বস্ত্ত পরিধান করি, তার বাইরে যাওয়ার চিমন্তা আমরা করি না বললেই চলে। গতানুগতিক জীবনধারায় আমরা অভ্যস্ত। স্মার্ট (সুচতুর) শব্দটা হাল আমলে বেশ আসন গেড়ে বসেছে বলে মনে হয়। জানা গেছে, বাংলাদেশে ৫/৬ কোটি মানুষ হাল আমলে স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। স্মার্টফোনে ভয়েস ফোনের পাশাপাশি আমরা ডাটা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র অ্যাপ্লিকেশনে সফটওয়্যার বা অ্যাপসকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ফায়দা ভোগ করছি। এ ব্যাপারে স্কাইপ, ভাইবার এবং ফেসবুক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সম্প্রতি অ্যাপল পরিধানযোগ্য স্মার্টওয়াচ বা স্মার্টঘড়ি বাজারে ছাড়ার পর বেশ হইচই পড়ে যায়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঘড়ি ব্যবহার করলেও এ স্মার্টঘড়ি যে কতটা ভিন্ন প্রকৃতির, তা প্রত্যক্ষ না করলে বুঝা যাবে না। বহু দিক থেকে এ স্মার্টঘড়ি যে স্মার্টফোনের একটি সম্প্রসারণ তা বলার অপেক্ষারাখে না।
মোবাইল ডিভাইস তথা স্মার্টফোনের সাথে তারহীন ব্লুটুথের মাধ্যমে এ স্মার্টঘড়ির যোগাযোগ সংঘটিত হয়। যেমন- নতুন প্রজ্ঞাপন অথবা কল বা ব্যক্তিগত তথ্যের উপস্থাপনসহ বিভিন্ন অ্যাপসের পরিচালন এ স্মার্টঘড়ির মাধ্যমে করা যায়। এজন্য আপনাকে ব্যাগ বা পকেট থেকে বারবার মোবাইল ডিভাইস বা স্মার্টফোন বের করার প্রয়োজন হবে না। আপনি টেক্সট মেসেজ, ই-মেইল এমনকি ভয়েস কল হাতের কব্জি থেকেই উত্তর দিতে পারবেন। এছাড়া সময় দেখার পাশাপাশি আবহাওয়া বার্তা এবং আসন্ন অ্যাপয়েন্টমেন্ট (নিয়োগকৃত সময়) দেখতে পাবেন। এছাড়া উন্নত বিশে^ ইউবার ডাকা বা জিপিএসের বাঁক অন্তর বাঁক গতিমুখ প্রাপ্তির সুবিধা তো রয়েছেই।
তবে সব স্মার্টঘড়ি একই ফাংশন বা কার্যক্রমে কাজ করে না। যেমন- অ্যাপলের স্মার্টঘড়ি এবং স্যামসাংয়ের টিজেন শুধু ভয়েস কল রিসিভ করার সুবিধা দেয়। আবার অ্যান্ড্রয়িড ওয়্যার এবং টিজেন পুরো ই-মেইল পাঠ করার এবং প্রতিউত্তর দেয়ার সামর্থ্য রাখে। স্মার্টঘড়ির ক্ষমতা মূলত নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন তার ওপর।
অ্যাপলের স্মার্টঘড়ি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে ন্যূনতম আইফোন ৫ বা তার ঊর্ধ্ব ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে স্যামসাংয়ের স্মার্টঘড়ি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে গ্যালাক্সি মডেলের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে, যাতে অ্যান্ড্রয়িড ৪.৩ ভার্সন এবং নিদেনপক্ষে ১.৫ গিগাবাইট র্যা ম রয়েছে। তবে বাজারে অ্যান্ড্রয়িড ওয়্যার নামে যে স্মার্টঘড়িটি রয়েছে, তা যেকোনো অ্যান্ড্রয়িড ফোনের সাথে কাজ করতে সক্ষম শুধু ৪.৩ ভার্সন হলেই চলবে। এদিকে অ্যাপল এবং অ্যান্ড্রয়িড প্লাটফর্মের সমন্বয়কারী একটি নতুন মঞ্চ বাজারে ছাড়া হয়েছে পেবল (চবননষব) নামে, যা বৃহত্তর সাযুজ্যতা প্রদান করে।
স্মার্টঘড়ির উল্লেখযোগ্য কতিপয় মডেল নিমেণ উপস্থাপন করা হলো :
০১. মোটো ৩৬০ : এটিকে ঠিক গোলাকার ঘড়ির আকৃতি দেয়া হয়েছে। মোটো ৩৬০-কে টেক্সসে ইনস্ট্রুমেন্টের ওম্যাপ-৩ প্রসেসর এবং ৩২০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার হাওয়ার (সঅঐ) ব্যাটারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মজার ব্যাপার, এটিকে তারহীন চার্জিং করা যায় প্রদত্ত ডকের সাহায্যে। ব্লুটুথের পাশাপাশি এতে ওয়াইফাই সক্ষমতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে ব্লুটুথের দূরত্ব অতিক্রম করতে ওয়াইফাই দিয়ে তা চালানো যায়।
০২. পেবল টাইম : চতুস্কোণ আকারের ঘড়ির আদলে এটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ব্যবহার হয়েছে পেবল অপারেটিং সিস্টেম বা পেবল মঞ্চ। এটি কী প্রসেসর বা ব্যাটারি ক্যাপাসিটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। এটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এতে ই-পেপার ডিসপ্লে দেয়া হয়েছে, তবে এর সবচেয়ে চমৎকার ফিচার হচ্ছে এটি একবার চার্জ করার পর এক সপ্তাহ টিকে থাকতে পারে। এছাড়া পেপল, এভারনোট ও ট্রিপ অ্যাডভাইজারসহ আট হাজার অ্যাপস এতে চলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দাম ধরা হয়েছে ২০০ মার্কিন ডলার। তবে এ গেজেটে ওয়াইফাই, জিপিএস বা হার্ট-রেট মনিটর সক্ষমতা দেয়া হয়নি।
০৩. অ্যাপল ওয়ার্চ : এটিকে বেশ দর্শনীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। এতে রয়েছে স্টেনলেস স্টিলের কেস, স্যাপায়ার ক্রিস্টাল পর্দা এবং স্টেনলেস স্টিলের ব্রেসলেট। ওজন মাত্র ২৫ গ্রাম। ৩৮-৪২ মিমি রেটিনা ডিসপ্লেসমৃদ্ধ এ পণ্যে অ্যাপলের এস১ প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট স্টোরেজ সংযোজন করা হয়েছে। ব্লুটুথ ছাড়াও এতে ওয়াইফাই এবং হার্ট-রেট মনিটর রয়েছে। দাম ৪৯৯ মার্কিন ডলার বা তদুর্ধ।
০৪. এলজি ওয়াচ আরবেন : কোরিয়ান নির্মাতা এলজি এটি তৈরি করেছে ৩২০ বাই ৩২০ পি-ও লেড ডিসপ্লে দিয়ে। যার ফলে এতে প্রাণবন্ত রংয়ের পাশাপাশি বৃহদাকার দৃষ্টিকোণের চমৎকার সম্মিলন ঘটেছে। অ্যান্ড্রয়িড ওয়্যার জাতীয় এ স্মার্টঘড়িতে ১.২ গিগাহার্টজ ডুয়াল কোর প্রসেসর, ৫১২ মেগাবাইট র্যা্ম এবং ৪ গিগাবাইট স্টোরেজ হয়েছে। ৬৬.৫ গ্রামের এ স্মার্টঘড়িতে ব্লুটুথের পাশাপাশি ওয়াইফাই এবং হার্ট-রেট মনিটর রয়েছে। দাম ৪৫৯ মার্কিন ডলার।
০৫. স্যামসাং গিয়ার এস : ২ ইঞ্চি বক্র পর্দার এ গিয়ারে পুরো ই-মেইল পড়া সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়। এতে ন্যানো সিম জুড়ে দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা এর অনন্য বৈশিষ্ট্য। ফলে ভয়েস কল বিনিময় করা, টেক্সট বার্তা পাঠানো এবং থ্রিজি মোবাইল ডাটা আহরণ করা সম্ভব হবে স্মার্টফোনের সাথে সংযোগ ব্যতিরেকে। অ্যামোলেড টাচস্ক্রিনসমৃদ্ধ এ গিয়ারে থ্রিজি ছাড়া ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, মাইক্রোফোন, স্পিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আদি সেটআপের জন্য স্যামসাং গ্যালাক্সির প্রয়োজন হবে। এছাড়া ই-মেইল পুরোপুরি ব্যবহার করতে হলেও তা লাগবে। এতে ১.২ গিগাহার্টজ ডুয়াল প্রসেসর, ৫১২ মেগাবাইট র্যােম, ৪ গিগাবাইট স্টোরেজ রাখা রয়েছে। ৬৬ গ্রামের এ গিয়ারের দাম ৪৪৯ মার্কিন ডলার।
০৬. সনি স্মার্টওয়াচ ৩ : ইস্পাতের তৈরি এ স্মার্টঘড়িকে ব্রেসলেটের আকারে তৈরি করা হয়েছে। ৪৫ গ্রামের এ ঘড়ির বৈশিষ্ট্য হলো- এতে জিপিএস সক্ষমতা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়িড ওয়্যাচ জাতীয় এ গিয়ারে ১.২ গিগাহার্টজ প্রসেসর, ৫১২ মেগাবাইট র্যা ম এবং ৪ গিগাবাইট স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়েছে। ব্লুটুথ ছাড়াও এতে রয়েছে ওয়াইফাই এবং এনএফসি সুবিধা। ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৪২০ এমএএইচ এবং ব্যাটারি চার্জের জন্য প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড মাইক্রো ইউএসবি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এতে হার্ট-রেট মনিটর রাখা হয়নি। ডিসপ্লেতে পুরনো ট্রান্সরিফ্লেটিড এলসিডি ব্যবহার করার ফলে কিছুটা গতি হারিয়েছে। এর দাম ৩৯৯ মার্কিন ডলার।
আর্মব্যান্ড
এদিকে কব্জি ঘড়ির পাশাপাশি কতিপয় প্রতিষ্ঠান স্মার্ট আর্মব্যান্ড বাজারে ছেড়েছে। এগুলোর মূল উদ্দেশ্য শরীর সুস্থ রাখার জন্য সহায়তা করা অর্থাৎ এগুলো হচ্ছে ফিটনেস ব্যান্ড (Fitness Band)। ২৮ বাই ৭ বা সর্বদা শারীরিক সুস্থতাকে ট্র্যাক করার জন্য এ আর্মব্যান্ডগুলো নির্মিত হয়েছে। কারণ স্মার্টওয়াচের রয়েছে ভিন্ন উদ্দেশ্য। স্মার্টঘড়ি দিয়ে যেখানে স্মার্টফোনের যাবতীয় বিষয় অথবা অধিকাংশ বিষয় করা যায় এবং যেখানে ব্যাটারির স্থায়িত্ব একটি সীমাবদ্ধতা আরোপ করে, সেখানে স্বাস্থ্যগত উপাদানগুলোর সার্বক্ষণিক পরিধারণ বা ট্র্যাকিং করা দুঃসাধ্য। যেমন- ঘুস ট্র্যাকিংয়ের কথা বলা যায়, যা বর্তমান স্মার্টঘড়িতে পাওয়া সহজসাধ্য নয়। সার্বক্ষণিক ফিটনেস ট্র্যাকার এ কাজটি করার জন্য পর্দা সঙ্কুচিত করার পাশাপাশি অন্যবিধ ব্যবস্থা নেয়। ফিটনেস বা আর্মব্যান্ড উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করছে। বায়ো-ইম্পিডেন্স ট্র্যাকার এবং হার্ট-রেট সেন্সরসহ বহুবিধ উপাদান দিয়ে একে সাজানো হচ্ছে, যাতে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সহজে পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ডাটা আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন তা আপনার নিজস্ব ব্যাপার। এবার কয়েকটি আর্মব্যান্ডের উদাহরণ দেয়া হলো :
০১. ফিটবিট চার্জ এইচআর : ২০১৪ সালে আবির্ভূত ফিটবিট পালস বাজারে ছাড়ার পর কতিপয় সমস্যা দেখা দেয়ার পর কোম্পানি চার্জ এবং চার্জ এইচআর নামে দুটো ভার্সন বাজারে ছাড়ে, যা উন্নতমানের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০ মার্কিন ডলারে এ পণ্যটি সার্বক্ষণিক পদক্ষেপ ট্র্যাকার হিসেবে কাজ করবে, যা শুধু প্রতিটি পদক্ষেপ বা নিদ্রার ট্র্যাক নয় বরং সিঁড়ি দিয়ে কতটি পদক্ষেপ নিয়েছেন বা কতটুকু ক্যালরি খরচ করেছেন অথবা আপনার হার্ট-রেট কত ইত্যাদি ডাটা প্রদান করবে। ব্যাটারি স্থায়িত্ব পাঁচ দিন। এ পণ্যটি সর্বদা আপনার হার্ট-রেট রেকর্ড করবে, এমনকি আপনি ঘুম থেকে ওঠার পর দেখতে পাবেন হার্ট-রেটের ওঠা-নামা কী পর্যায়ে ছিল! আপনার প্রাতঃকালীন কফি বা চা সেবন আপনার হার্টবিট কতটুকু বাড়িয়েছে, তা নিরুপনের জন্য আপনাকে ফিটবিট অ্যাপস ব্যবহার করতে হবে। চার্জ এইচআরের সুবিধা হচ্ছে এটিতে ওলেড (Oled) পর্দা রয়েছে যাতে সময়সহ যাবতীয় তথ্য/উপাত্ত আপনাকে প্রদর্শন করবে। ফিটবিট অ্যাপস ব্যবহার করলে এ পণ্যের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।
০২. শিয়াওসি মি ব্যান্ড : ক্ষুদ্রাকৃতির চীনা এ পণ্যটি ফিটনেস ব্যান্ড হিসেবে তেমন আহামরি কিছু নয়, তবে এটি অত্যন্ত সস্তা। অর্থাৎ ৩০ মার্কিন ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যান্ডটি সেটআপ করা কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ হলেও একবার সেটআপ করলে তা চলতে থাকে। জঙ্গলসদৃশ এ গেজেটে কোনো বাটন বা টার্চ সেন্সর নেই। ফলে সবকিছুই অ্যাপসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এতে শুধু তিনটি এলইডি বাতি রয়েছে সম্মুখভাবে। এ তিনটি বাতি আপনাকে জানিয়ে দেবে আপনার ফিটনেস লক্ষে কেমন এগোচ্ছেন এবং সে অর্থে ব্যাটারি কেমন পারফর্ম করছে। পূর্ণ ফিচার সংবলিত না হলেও অন্যান্য ব্যান্ডের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে এর ডাটা সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য। চমকপ্রদ ফিচার হচ্ছে ব্যাটারির স্থায়িত্ব প্রায় এক মাস, যা লোভনীয়।
০৩. ফিটবিট সার্জ : ঘড়ির মতো দেখতে এ পণ্যটি যে ফিটনেস ব্যান্ড তা অনেকের বিশ^াস না-ও হতে পারে। ফিটনেস ব্যান্ড হিসেবে সেরা আর্মব্যান্ড উপহার দেয়ার মানসিকতা থেকে
ফিটবিট কোম্পানি এ পণ্যটি তৈরি করেছে এবং এতে এরা সক্ষম হয়েছে বলেও ধারণা করা যায়। এ পণ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন খেলাধুলা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়ার পরিধিকে বাড়ানো হয়েছে। যেমন- হাঁটা বা দৌড়ানো- ওজন, ঘূর্ণন, যোগ ব্যায়াম, সিঁড়ি আরোহণ, বুট ক্যাম্প, কিক বক্সিং, টেনিস, গলফ এমনকি মার্শাল আর্টের ব্যাপ্তি ঘটানো হয়েছে। এছাড়া হার্ট-রেট মনিটর তো রয়েছেই। বড় পর্দায় প্রকৃত সময়ের পাশাপাশি সমন্বিত জিপিএস সেন্সর বসানো হয়েছে। ফিটবিট সার্জের বাইরের চেহারা অ্যাপল ওয়াচের মতো না হলেও এটি স্মার্টফোনের আগত বার্তা এবং ফোনকলকে প্রদর্শন করতে পারে শুধু তা-ই নয়, রিমোট মিউজিককে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
০৪. গারমিন ডিভোফিট২ : গারমিন নির্মিত এ পণ্যে মূলত দুটো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একটি হচ্ছে বছরব্যাপী ব্যাটারি স্থায়িত্ব এবং অন্যটি পানিরোধক ক্ষমতা। এটি তেমন ব্যবহারবান্ধব নয় এবং ভৌতিকভাবে কাঠখোট্টা অর্থাৎ পরিধানও আরামদায়ক নয়। একটি বাটন দিয়ে সব ফিচার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া একটি মাত্র অ্যাপস এ পণ্যের সাথে খাপ খায়। ফলে সীমাবদ্ধতা রয়েই গেছে। এ পণ্যের উন্নয়নের লক্ষে গারমিনকে আরও প্রচেষ্টা চালাতে হবে বলে বিশেস্নষকেরা মনে করেন। দাম ১৩৯ মার্কিন ডলার।
০৫. জবোন ইউপি৩ : এ পণ্যটিকে ফিটনেস ট্র্যাকার নয় বরং ফ্যাশন স্ট্র্যাপ মনে হয়। ছিমছাম গঠনাকৃতির এ পণ্যে অনেকগুলো সেন্সর ঠেসে ভরা হয়েছে। যেমন- স্টেপ ট্র্যাকিং, হাট-রেট মনিটর, থার্মোমিটার এবং বায়োইম্পিডেন্স ইত্যাদি। এ পণ্যের জন্য যে অ্যাপস রয়েছে তা বেশ কার্যকর ও দক্ষ। পূর্ববর্তী সংস্করণ ইউপি২৪-এর তুলনায় এতে স্পর্শ সংবেদনশীল ইন্টারফেস রয়েছে, তবে কার্যকারিতার দিক দিয়ে এটি কিছুটা পিছিয়ে আছে বলে প্রতীয়মান হয়। ব্যাটারির ব্যাপারটি চমৎকার স্থায়িত্ব পাঁচ দিন। তবে এ গেজেটের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এটি অ্যাপস থেকে বারবার বিযুক্ত হয়ে যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হতে পারে না। এর দাম ২৪৯ মার্কিন ডলার, যা যুক্তিযুক্ত মনে হয় না।
০৬. মিসফিট শাইন : এ পণ্যকে অলঙ্কারের মতো বানানো হয়েছে। যদিও এটির মূল উদ্দেশ্য শারীরিক সক্ষমতা ট্র্যাক করা। এ পণ্যকে আপনি যেকোনো অর্থে উপযুক্ত অ্যাটাচমেন্ট লাগিয়ে পরতে পারবেন। গোলাকৃতি চেহারার এ ডিভাইসে ১২টি ক্ষুদ্র লেড বাতি বসানো হয়েছে। এতে একক ঘড়ি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে, যা চার মাস অনায়াসে স্থায়ী হতে পারে। ব্যাপারটি সুখকর হলেও এর সফটওয়্যারগত অসঙ্গতি বিদ্যমান থাকার কারণে এটি দারুণভাবে মনোযোগ কাড়তে পারেনি। আরেকটি ব্যাপার হলো- এটি পদক্ষেপের মাপ, অতিক্রান্ত দূরত্ব এবং পোড়া ক্যালরির হিসাব পরিমাপ করে ভিন্ন এক পদ্ধতিতে, যাতে আসল হিসাবের পরিবর্তে আপেক্ষিক হিসাব দেয়া হয়। নিদ্রার ব্যাপারটি মোটামুটি সঠিকভাবে ট্র্যাক করতে পারে। যাহোক, ফ্যাশন পণ্য হিসেবে যতটা আকৃষ্ট করেছে এ পণ্যটি তেমনটি কার্যকারিতার দিক থেকে নয়। দাম ১৩০ মার্কিন ডলার।
০৭. সনি স্মার্টব্যান্ড টক : ইলেকট্রনিক কালির ডিসপ্লে দিয়ে ফিটনেস ট্র্যাকারের কথা কেউ না ভাবলেও সনি এ কাজটি করেছে। ডিসপ্লে পরিবর্তনের সময় ইলেকট্রনিক কালি বেশ চাপ দেয় ব্যাটারির ওপর। সূর্যের আলোতে এটি চমকপ্রদ প্রদর্শন করে। তবে তিন দিন ট্র্যাক করার পর একে আবার চার্জ করতে হবে, যা খুবই বিরক্তিকর। এটি চালানোর জন্য সনি ‘লাইফলগ’ নামে অ্যাপস সন্নিবেশিত করেছে, যা শুধু অ্যান্ড্রয়িডনির্ভর। তবে এ অ্যাপস দিয়ে পদক্ষেপ বা নিদ্রা শুধু নয় বরং ফোনে গেমসের, মিউজিকের, ফটো তোলার সময়ও নির্ধারণ করা যায়। এ অ্যাপসের মাধ্যমে এক্সপেরিয়া সেটের সাথে জুড়ে দিলে আরও কতিপয় ফিচার পাওয়া যায়। ১৯৯ মার্কিন ডলারের সনির এ পণ্যটি ব্যাটারি স্থায়িত্বের ব্যাপারে নৈরাশ্যজনক এবং শুধু অ্যান্ড্রয়িডনির্ভর হওয়ার ফলে ভোক্তাদের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলতে পারছে না বলে বিশেস্নষকদের অভিমত। পরিশেষে ক্রেতাদের সুবিধার্থে কতিপয় টিপ দেয়া হলো, যা পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিক পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
০১. কী ধরনের ফিটনেস ট্র্যাকার আপনার বেশি প্রয়োজন! পদক্ষেপ, নিদ্রা বা উভয়ই ইত্যাদি।
০২. সফটওয়্যার অ্যাপসের কার্যকারিতা সীমিত না ব্যাপক। ডাটা কীভাবে প্রদর্শন করে ইত্যাদি।
০৩. স্মার্টওয়ার্চের ক্ষেত্রে আপনার স্মার্টফোনের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ কিনা দেখে নিন। ভবিষ্যতে আসা স্মার্টফোনের সাথে এটি তাল মিলিয়ে চলতে পারবে কি না।
০৪. কল বিনিময়ের ক্ষেত্রে হ্যান্ডস-ফ্রি (মুক্ত হস্ত) সুবিধা দেয কি না।
০৫. হাত বা কব্জিতে ধারণ করতে আরামদায়ক মনে হয় কি না।
০৬. হার্ট-রেট মনিটর হিসেবে আপনি যেভাবে চাচ্ছেন তা ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না। পরখ করে দেখার কারণ- বিভিন্ন ডিভাইস বিভিন্ন পর্যায়ে হার্ট-রেট মেপে থাকে!
০৭. স্মার্টওয়ার্চ বা রিস্ট/আর্মব্যান্ডের ক্ষেত্রে ব্যাটারি স্থায়িত্ব একটি বড় ফ্যাক্টর বা নিয়ামক। স্মার্টওয়ার্চের তুলনায় আর্মব্যান্ডের স্থায়ী কয়েকগুণ বেশি হওয়া প্রয়োজন।
০৮. ঘর্মাক্ত শরীরে পানি নিরোধক কতটুকু কার্যকর তা পরখ করে দেখা যেতে পারে।
০৯. দাম যাচাই করে দেখা ইত্যাদি।
ভবিষ্যতে এ পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যগুলো বেশ সাশ্রয়ী হবে বিধায় এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বেশ বাড়বে বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোনের চাহিদা যেভাবে বেড়েছে, তাতে মনে হয় পরিধানযোগ্য এসব পণ্যও ক্রমান্বয়ে জায়গা দখল করে নেবে সস্তা এবং কার্যকর হলে!
সৌজন্যে : টেকলাইফ