লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ব্যাটলফিল্ড গথিক আরমাডা
ছোটকাল থেকেই আমরা সবাই দেখে আসছি বাইরে থেকে ভয়ঙ্করদর্শী এলিয়েনরা এসে আমাদের পৃথিবী দখল করে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষের এলিয়েনদের গ্রহে গিয়ে এই দখলকাজ চালানোটা নতুন। প্রত্যেকেই অবাঞ্ছিত বিপদ এড়িয়ে চলতে চায়। তবুও গেমারদের মধ্যে যারা অতি উৎসাহী এই বিষয়ে, তারা খুব আনন্দ সহকারে বসে পড়তে পারেন ব্যাটলফিল্ড গথিক আরমাডা নিয়ে।
সাধারণ কাজের মধ্যেও যারা অ্যাডভেঞ্চার খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত, তাদের জন্য একেবারে মনমতো একটি গেম হবে এই ব্যাটলফিল্ড গথিক আরমাডা। গেমটির গেমফিল্ড হচ্ছে আজ পর্যন্ত তৈরি হওয়া গেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফিস্টিকেটেড আর বাস্তবসম্মত, যাকে গেমারেরা ওয়াকথ্রু দিয়ে বর্ণনা করেও পুরোপুরি বোঝাতে ব্যর্থ হবেন। আর এত কিছুর পরেও যেটা সমস্যা হবে- অজানা গ্রহে আঘাত হানতে গিয়ে গেমার নিজের পায়ে হয়তো নিজেই কুড়াল মেরে বসবেন। গেমপ্লে অদ্ভুতভাবে আকস্মিক, যেকোনো ধরনের ধারাবাহিকতাবিহীন। অনন্যসাধারণ এক টার্নভিত্তিক স্ট্র্যাটেজি গেম, যা দিয়ে ২০০ থেকে ৬০০ ঘণ্টার গেমপ্লে সহজেই বেরিয়ে আসবে।
ব্যাটলফিল্ড গথিক আরমাডাতে গতির সাথে আছে মাল্টি ডিরেকশনাল যুদ্ধ ও যুদ্ধাস্ত্র, যা গেমারের অভিজ্ঞতায় শিহরণ জাগাবে। সাথে আছে সবার প্রিয় টেলিপোর্টেশন সিস্টেম, যা দিয়ে নিমিষেই অতিক্রম করা যাবে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে অনতিক্রম্য দূরত্ব, যাওয়া যাবে বহু অদ্ভুত অজানা গ্যালাক্সিতে। হিরোস অব বিগ স্টর্মের মতো গেমের পর ব্যাটলফিল্ড গথিক আরমাডা না খেললেই নয়। প্রথম দেখাতে গেমটিকে আর দশটা সাধারণ ইনোভেশন গেমের মতো মনে হবে না। দেখে মনে হবে একটি ফ্যান্টাসি জনরার মডেল ওয়ার্ল্ড, যেখানে গেমারকে একের পর এক শত্রুর বিভিন্ন ধরনের ফরমেশন ভেদ করে এগিয়ে যেতে হবে আর যতদূর এগোনো যাবে শত্রুরাও তত আগ্রাসী হয়ে উঠবে। তবে এর স্টোরিলাইনের মাঝে আছে অসম্ভব বুদ্ধিমান কিছু টুইস্ট আর মেশিন অ্যালগরিদমিক গেমপ্লে। সব মিলিয়ে গেমারকে অনেকখানি বুদ্ধিমত্তা আর গেমিং স্কিল খরচ করতে হবে গেমটির পেছনে। তবে একটি কথা স্বীকার না করলেই নয়, গেমটি যথেষ্ট কঠিন এবং খুব সহজে একের পর মিশনভিত্তিক গেমপ্লে হিসেবে চালিয়ে দেয়া যাবে না। এই পারফেক্ট লিভিং ওয়ার্ল্ডের পেছনে ছোটার কাহিনিটা বেশ লম্বা। তাই অনেকক্ষণ ধরে এলিয়েন নিধন করতে করতে ধৈর্য ভেঙেও যেতে পারে। তবে এর জন্যও আছে সমাধান, আছে অসাধারণ মাল্টিপ্লেয়ার গেমিংয়ের ব্যবস্থা। দূর-দূরান্তের বন্ধু, নিত্যনতুন স্ট্র্যাটেজি আর কল্পনাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : কোরআই৩ বা তদূর্ধ্ব, র্যা ম : ৬ গিগাবাইট উইন্ডোজ ৭/১০, ভিডিও কার্ড : ১ গিগাবাইট, হার্ডডিস্ক : ২৫ গিগাবাইট
রিনয়ার
পৃথিবীতে কোনো সরকার ব্যাবস্থা নেই, সবকিছু চলে বিশাল বিশাল কিছু কর্পোরেশন কোম্পানির ইঙ্গিতে। তারা নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্র, সামরিক শক্তি। সবকিছুতেই তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু এই গেমটিতে ফোকাস করা হয়েছে এর চেয়েও পুরনো একটি ইস্যুকে, সেটি হলো ধর্ম। প্রাচীন গ্রিসের মানুষের বিশ্বাস আর তাদের দেবদেবীদের অবস্থান নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অ্যাপথিওন। গেমের প্রতিটি অংশের মাঝে একজন করে মিথিকাল ক্যারাক্টার আসবে এবং তাদের নিজস্ব কুচক্রের মাধ্যমে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করবে।
গেমারকে দেয়া হবে কিছু অতিমানবিক শারীরিক ক্ষমতা। তিনি দেবতাদের মতোই তার আকৃতির পরিবর্তন করতে পারবেন। এর ফলে গেমারের নড়াচড়া, হাঁটাচলা সবকিছুই নতুন গতিপ্রাপ্ত হবে। অসম্ভব দ্রুতগতিতে ছুটে যেতে পারবেন রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। স্পাইডারম্যানের চেয়েও বহু উঁচুতে উঠে যেতে পারবেন। ভাবছেন এত উঁচুতে উঠে গেলে নামবেন কি করে? অনেক উঁচু থেকে হেলার লাফ দিলেও মুহূর্তেই নিচে নেমে আসবেন, চারপাশের রাস্তাঘাট চৌচির হয়ে যাবে তবু গেমারের গায়ে এতটুকু অাঁচর লাগবে না।
এরপর কি হলো না হলো তার খবর আমি এখানে আর ফাঁস করব না। আসলে করার উপায়ও নেই। কারণ, এই থার্ড পারসন ফুল অ্যাকশন স্ট্র্যাটেজি গেমের পর কোন ঘটনার মোড় কোনদিকে যাবে, তার সম্পূর্ণটাই গেমারের গেমিং স্ট্র্যাটেজি, অন্যান্য মানুষ- না শুধু মানুষ নয়, মহাবিশ্বের বহু অজানা থেকে আসা বহু ধর্মের বহু ধরনের পুরনো দেবতাদের সাথে গেমার কি ধরনের আচরণ করেন, কীভাবে তাদের বিশ্বাস জয় করে সবকিছুর ওপরেই পরবর্তীতে সারা মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এরকম গেমিং জনরা গেমিং বিশ্বে সবার প্রথমে নিয়ে এসেছে অ্যাপথিওন, যা গেমিংকে নতুন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : ৭ বা তদূর্ধ্ব, সিপিইউ : কোরআই৩/এএমডি সমমানের, র্যা ম : ২ গিগাবাইট, ভিডিও কার্ড : ১ গিগাবাইট, হার্ডডিস্ক : ২ গিগাবাইট, সাউন্ড কার্ড, কিবোর্ড ও মাউস
ওয়াকিং ডেড : টেলটেইল গেমস
পৃথিবী বিখ্যাত টিভি সিরিজ ওয়াকিং ডেড যেমন মিডিয়া জগতে বিপ্লব এনেছে, তেমনি তার স্টোরিলাইন গেমিং জগতেও বেশ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে তা এর ইনস্টলমেন্ট ফোর হান্ড্রেড ডেজ দেখেই আন্দাজ করে নেয়া যায়। প্রথমে কমিক, এরপর টিভি সিরিজ, এরপর গেমিং- যারা একেবারে কমিককাল থেকেই ওয়াকিং ডেডের ভক্ত তারা হয়তো খানিকটা হতাশই হবেন। কারণ, গেম কমিকের তুলনায় শুরু হওয়ার আগেই শেষ, তবে এতদিন ধরে দেখে আসা প্রিয় চরিত্রগুলোর ভয়ভীতি জীবনাচরণ নিজ থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার চেয়ে মজার আর কিছুই নেই। ওয়াকিং ডেড সবচেয়ে অদ্ভুত সৌন্দর্য দেখিয়েছে এর গ্রাফিক্সের কারিগরিতে আর শব্দকৌশলে। গেমটির সম্পূর্ণ অদ্ভুত আবহ তৈরি হয়েছে এর হৃদয়বিদারক ঘটনাপ্রবাহ আর গেমারের প্রতি পদক্ষেপে নেয়া সিদ্ধান্তের সাথে চরিত্রগুলোর মাইনিউট জীবন পরিবর্তনের সাথে। সব মিলিয়ে সিরিজের পুরনো অনুরাগী কিংবা আগন্তুক দুই ধরনের গেমারই বেশ আনন্দ ও শিহরণ অনুভব করবেন ওয়াকিং ডেড : ফোর হান্ড্রেড ডেজ গেমটিতে।
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, পুরো গেমটি বিভিন্ন মিনি এপিসোড নিয়ে তৈরি হয়েছে আর প্রত্যেকটি মিনি এপিসোডের আছে নিজস্ব স্বকীয়তা, যা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নিত্যনতুন চমকের উপহার দিয়েছে। আর চমকের সাথে সাথেই আছে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর ভয়াবহ চিত্ররূপ, মৃত প্রকৃতির ভয়ঙ্কর আকুতি, যা দেখে গা শিউরে উঠবে যেকোনো জীবিত আত্মার। প্রতিটি এপিসোডে গেমারকে নিতে হবে ক্ষমার অযোগ্য, হৃদয় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা সিদ্ধান্ত, যার একটি আরেকটিকে ছাড়িয়ে গেছে নিষ্ঠুরতায়, শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে সাথে আরও জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। গেমারকে সবসময় লক্ষ রাখতে হবে কার সাথে রয়ে যাওয়া ক্ষয়িষ্ণু জীবনের বাকি পথটুকু চলা সহজ হবে।
এখন ভেতরের কথাগুলো বলে নেয়া যাক, গেমটি ছোট ছোট গল্পে বিভক্ত। প্রত্যেকটি গল্প একটির চেয়ে আরেকটির সৌন্দর্যের ভয়াবহতাকে ফুটিয়ে তুলেছে। এই প্রচ-তার সবকিছু শেষ করে ফেলা যাবে মাত্র একটি ফুটবল ম্যাচ দেখতে যতক্ষণ লাগে ততক্ষণের মধ্যেই। আর এই দ্রুতলয়ের গেমিং গেমারকে তার সর্বোচ্চ শক্তির শেষটুকু ব্যবহার করতে বাধ্য করবে আর গেমার পাবেন ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল দেখার মতোই উত্তেজনা।
গেমারেরা হয়তো এখন ভাবছেন এত তাড়াহুড়ো আর উত্তেজনার মাঝে গেমটার অনেক অংশই ঠিকমতো বুঝে ওঠা যাবে না। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক এর উল্টো। গেমের প্রত্যেকটি চরিত্রের চারিত্রিক গভীরতা সম্পূর্ণতা নিয়ে গেমের প্রত্যেকটি অংশকে সৌন্দর্যপূর্ণ করে গড়ে তুলেছে। নিখুঁত স্টোরিলাইন, হৃদয় অাঁকড়ানো রোল প্লেয়িং- সব মিলিয়ে গেমটি ‘ওর্থ দ্য টাইম’। এখানে প্রত্যেকটি এপিসোডের মধ্যে ওপরে বলা বিষয়গুলো ছাড়াও আর একটা মজার ব্যাপার আছে- গেমটির প্রত্যেকটি এপিসোডের মৌলিকতা ভিন্ন। প্রত্যেকটি এপিসোড মানব মনের ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতিকে বের করে নিয়ে আসে। আর প্রত্যেক অনুভূতি তার মানবিক চূড়াকে স্পর্শ করে যায়। সুতরাং গেমার ও সিরিজপ্রেমীরা আর দেরি না করে এখনই বসে পড়ুন ওয়াকিং ডেড : ফোর হান্ড্রেড ডেজ নিয়ে নির্ঘুম কয়েক রাত কাটানোর জন্য।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : কোরআই৩ বা তদূর্ধ্ব, র্যা ম : ৪ গিগাবাইট উইন্ডোজ ৭/১০, ভিডিও কার্ড : ১ গিগাবাইট, হার্ডডিস্ক : ৬ গিগাবাইট