লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ফিফা ১৭ : গেম রিভিউ
ফিফা ১৭ : গেম রিভিউ
মনজুর আল ফেরদৌস
গেমিং ভালোবাসেন কিন্তু ফিফা সিরিজ চেনেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব বলা যায়। ফিফা ৯৬ কিংবা ফিফা ৯৮-এর কথা মনে পড়ে। দেখতে দেখতে ফিফা গেমিং সিরিজ ২০১৬-এর শেষে নিয়ে এলো ফিফা ১৭। তবে খেলা শুরুর আগে এ ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নেই।
ঠিক যেমনটা আশা করা হচ্ছিল, এবারের ফিফা আগের মৌসুমের ফিফা গেমগুলোর চেয়ে অনেকটা ভালো হয়েছে। ফিফা ১৬-এর চেয়েও ভালো। গেমের শুরু থেকে গ্রাফিক্স, গেমপ্লেসহ সব দিকেই আগের চেয়ে সুন্দর আর ভালো এবারের ফিফা।
যারা ঘরে বসে একাকী খেলেন তাদের জন্য ব্যতিক্রমী এক অনুভূতি এনে দেবে স্টোরি মোড। গেমের ‘দি জার্নি’ অংশে যেখানে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে কিশোর ফুটবলার এলেক্স হান্টারকে নিয়ে। অনূর্ধ্ব-১১ কাপের ফাইনাল থেকে শুরু করে তার খেলোয়াড়ি জীবনকে আপনি এগিয়ে নেবেন সুউচ্চ প্রিমিয়ার লিগ পর্যন্ত। বিভিন্ন সংলাপের ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি তৈরি করবেন তার ব্যক্তিত্ব, সমাধান করবেন তার খেলোয়াড়ি এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা সমস্যা, নেবেন দেনা-পাওনা সম্বন্ধীয় সিদ্ধান্ত এবং ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বাঁকে আপনার হাত ধরেই মোড় নেবে তার জীবন। বলতেই হবে, ফিফা সিরিজে দারুণ এক সংযোজন।
অনলাইনে গেমের বেচাকেনা বাড়ছে। আর তাতে যোগ হচ্ছে নতুন রোমাঞ্চ। আগের সিরিজগুলোতে পার করে দেয়া হাজার হাজার মিনিটের বিনিময়ে আপনি অনেকটা এগিয়ে থাকবেন নতুন একজন খেলোয়াড়ের চেয়ে। পাবেন বেশ কিছু ফ্রি আনলক, যার ভেতর থাকবে স্টার প্লেয়ার লোন, এট্রিবিউট বুস্ট এবং আরও অনেক কিছু।
আগের মতোই থাকছে পাসিং, শুটিং আর ড্রিবলিং। কিন্তু বদলে গেছে খেলার বাকি অংশের অনেকটাই! আগের চেয়ে বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে সবকিছু। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দারুণ প্রয়োগ গেমজুড়েই দেখতে পাবেন। ট্যাকলিং আগের মতো শুধু ধারণার ওপর নির্ভর করে হচ্ছে না। সঠিক সময়মতো ট্যাকলিং করতে পারলে বলটাও জিতে নেবেন আর আপনার খেলোয়াড় নিজের শরীরের ব্যালান্সটাও দ্রুত ফিরে পাবে, যা আপনাকে দারুণ সুবিধা এনে দেবে কাউন্টার অ্যাটাকের ক্ষেত্রে। ফিফা ১৬-তে যা ছিল না। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের শরীরী ক্ষমতা বেড়েছে অনেকটাই, যা তাদেরকে আক্রমণের সাথে সাথে বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। সেট পিসের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন, যেখানে আপনি পছন্দ করে নিতে পারবেন ঠিক কোন জায়গাটাতে আপনি বলকে পাঠাতে চান। তবে এই ফিচারটি চাইলে বন্ধ করে দিতে পারেন, যদি আপনার বন্ধুর কাছ থেকে এই অপশনটির ক্রমাগত ব্যবহার আপনাকে বিরক্ত করে তোলে আর সে প্রতিবারই তার শট কস্তার কপাল বরাবর তাক করে। একেক দলের খেলার ধরনেও থাকছে অনেক পরিবর্তন।
কঠিন লেভেলপগুলোতে একবার যদি গোল খেয়ে বসেন তো সেখান থেকে খেলায় ফিরে আসাটা কঠিন হয়ে যাবে। আর ফিফা ১৭-এর নতুনত্বে খেলার শেষ দিকে গোলসংখ্যায় এগিয়ে থাকা দলটি নার্ভাস হয়ে থাকবে, যা পিছিয়ে থাকা দলটিকে সুযোগ করে দেবে কিছু একটা করার।
আপনি যদি টিভিতে দেখা মাঠগুলোর অনুভূতি চান, তো আপনার জন্য সুখবর এই, ফিফা ১৭-এ প্রিমিয়ার লিগের মাঠগুলো দারুণ নৈপুণ্যের সাথে রেপ্লিকা করে বানানো, যা খেলায় ভিন্ন আমেজ এনে দেবে।
অনলাইন সিজন, প্রো ক্লাব আর অনেক টুর্নামেন্ট মিলিয়ে আপনাকে পিসিতে বুঁদ করে রাখার সব উপাদান নিয়েই হাজির হয়েছে এবারের ফিফা।
খেলোয়াড়দের নিখুঁত চেহারা, ব্যতিক্রমী স্টাইল, কিটসসহ অন্য অনেক দিক দিয়েই সমসাময়িক অন্য ফুটবল গেমগুলোর চেয়ে এগিয়ে ফিফা ১৭। আর এখন পর্যন্ত যেহেতু ফিফা তার ভক্ত এবং খেলোয়াড়দের ক্রমাগত দিয়েই চলেছে, সেহেতু চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়, ফিফাই সেরা
ফিডব্যাক :
monzuralferdous@gmail.com
ফোরজাহরাইজন ৩
দুর্গম বনের মধ্য দিয়ে দুর্ধর্ষ গতিতে ছুটে চলেছে ঝকঝকে পোরশে, পেছনে পেছনে ভয়াল দর্শন পুলিশের গাড়ি। এই ভয়ঙ্কর সুন্দর কার চেসিং সিনারিও চিমত্মা করতে গেলে একটা গেমের কথাই মাথায় আসবে- নিড ফর স্পিড। আর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রেসিং গেম সিরিজ ফোরজাহরাইজন এবার নিয়ে এসেছে ফোরজাহরাইজন ৩। হঠাৎ করে সার্চলাইট আর প্রচ- বাতাস- সবকিছু ওলটপালট করে হেলিকপ্টার, চেসিং সিনে এসে পড়লেই বুঝা যাবে আসলে গ্রাফিক্স ও সাউন্ড ফিকশন যুগের সাথে সাথে কতখানি এগিয়ে গেছে। এবারের গেমটির ডেভেলপার ঘোস্ট গেমস। তারা হটপারস্যুটের ক্ল্যাসিক চেসার-রেসার ডায়নামিকের সাথে যোগ করেছে মোস্টওয়ান্টেডের ফ্রিওয়ার্ল্ড রোমিং, যা সিরিজের এই গেমটিকে অন্যগুলোর চেয়ে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
ফোরজাহরাইজন ৩-এর কাহিনী শুরু হয় কাউন্টি থেকে, যেখানে দেখানো হয়েছে এখন পর্যন্ত গেমিং জগতের সবচেয়ে বৈচিত্র্য মাইজিওগ্রাফি। স্বপ্ন থেকে বাস্তব সবকিছুকে মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এই শহর। আছে নিত্যনতুন প্রণোদনা, উন্মাদনা আর রেসিং। নিড ফর স্পিড এবার নিয়ে এসেছে ফটো-রিয়ালিস্টিক গ্রাফিক্স, যা গেমারকে এখন পর্যন্ত বাস্তবের সবচেয়ে কাছের স্বাদ এনে দেবে। দেখা যাবে বাস্তবের কাছাকাছি বৃষ্টি, রোদ, তুষার- যা গেমিংয়ের ওপর বাস্তবের কাছাকাছি প্রভাব ফেলবে। আছে বজ্র, কুয়াশা, চনমনে রাত আর সব ধরণের রেসিং কারস। আর ভালো কথা, এবার আইনের কোন পাশে গেমার থাকতে চান তা গেমার নিজেই ঠিক করে নিতে পারবেন। খেলা যাবে কপ অথবা রেসারের চরিত্রে, আর যেই চরিত্রই থাকুক না কেন, সব সময়ই চারপাশে থাকবে রাইভালস, যারা প্রতিটি মুহূর্ত উন্মাদনাময় করে নিতে ভুলবে না।
ফোরজাহরাইজন ৩-এর ম্যাপস পূর্ববর্তী সব ম্যাপ থেকে আকারে বিশাল বড়। সুতরাং শুধু ঘুরে কাটালেও মন্দ লাগবে না। রেসিংয়ের মাঝে মাঝে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়াটা অবশ্য এর মন্দ দিকের মধ্যে একটা। অ্যাস্টন মার্টিন থেকে ফেরারি পর্যন্ত সব ধরনের গাড়ি, সাথে স্ট্রিপস অ্যান্ড মাইন, শকওয়েভ, টার্বো বুস্ট সবকিছু মিলিয়ে রমরমা অবস্থা একেবারে। রেসিংয়ের সাথে সাথে আনলক হবে নিত্যনতুন আপগ্রেড। আর মাল্টিপ্লেয়ার খেলতে গেলে কপ হয়ে বন্ধুদের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া করতেও আনন্দ কম হবে না। সব মিলিয়ে ফোরজাহরাইজন ৩ সম্পূর্ণ সিরিজের এক নতুন অধ্যায়কে সম্পূর্ণ করে তোলে, রেসার জীবনের দুটি দিককেই প্রত্যক্ষ করার এক অনন্য সুযোগ। সবকিছু মিলিয়ে অনেকের কাছেই প্রথম অনেকখানি খেলে ফেলার পর গেমটিকে অতখানি অপ্রত্যাশিত মনে হবে না। তবুও পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজের নতুন ধারায় জুটি হতে দোষ কি! তা ছাড়া গেমটির মধ্যে এমন কিছু আছে, যা গেমারের মধ্যে এনে দেবে আচমকা অ্যাড্রেনালিনরাশ, চনমনে উত্তেজনা- যা জীবনকে জাগিয়ে তুলবে এক অদ্ভুত দৃঢ়তায়। তাই রেসারদের উচিত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোরজাহরাইজন ৩-এর জগতে ঢুকে পড়া।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : ৭/৮/১০, সিপিইউ : কোর সিরিজ/এএমডি অ্যাথলন, র্যা ম : ৮ গিগাবাইট উইন্ডোজ, ভিডিও কার্ড : ২ গিগাবাইট, হার্ডডিস্ক : ৩০ গিগাবাইট, সাউন্ডকার্ড, কিবোর্ড ও মাউস
মারভেল ভার্সাস ক্যাপকম ৩
সব ভয়ঙ্কর ভিলেনেরা যখন একসাথে হয়ে পৃথিবীর অস্তিত্ব নিয়ে ডাঙ্গুলি খেলা শুরু করে, তখন ব্যাপারটা তেমন সুখকর দেখায় না। পৃথিবীকে তাদের ভয়ঙ্কর সব পরিকল্পনা থেকে বাঁচাতে গেমারকে কয়েকজনের ছোট একটি দল নিয়ে সুপার ভিলেনদের সেসব দলের সাথে লড়তে হবে। নস্যাৎ করতে হবে তাদের জটিল সব পরিকল্পনা। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই রিমিক্সের যুগে মারভেল হিরোস আর ক্যাপকম গেমস এবং কমিকপ্রেমী গেমারদের জন্য এনেছে একবারে অরিজিনাল কমিক স্টোরি লাইন, যা কমিকপ্রেমীদের গেমিং এক্সপেরিয়েন্স আর গেমারদের কমিক এক্সপেরিয়েন্সকে আরও আনন্দপূর্ণ করে তুলবে। গেমটি অসম্ভব সুন্দর একটি প্লট উপহার দেবে গেমারকে, যা গেমারকে তার পছন্দের হিরোর সাথে নিয়ে যাবে মারভেল কমিক জগতের অপূর্ব সব মিথলজির মধ্য দিয়ে, যেগুলোর প্রতিটির আছে ভিন্ন ভিন্ন রঙ, ধরন আর বিচিত্রিতা। আর মারভেল সবচেয়ে তারুণ্য প্রণোদিত কাহিনী, যা নিঃসন্দেহে মারভেলের বাকি গেমগুলোর স্টোরিলাইনকে ছাড়িয়ে গেছে। মুন ড্রাগন থেকে শুরু করে টনি স্টার্ক পর্যন্ত যাকে দরকার, তাকেই পাওয়া যাবে মারভেল হিরোসে। প্রথম হিরো অবশ্যই ফ্রি। ক্যাপ্টেন আমেরিকা, আয়রনম্যান, স্পাইডারম্যান আর উলভারিনের যেকোনো একজনকে নিয়ে গেমারকে তার যাত্রা শুরু করতে হবে। এদের প্রত্যেকেরই বাকি সবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আর ভিন্নতর স্কিল সেট আর ফাইটিং টেকনিক আছে, যেগুলোর স্বকীয়তা গেমারকে মুগ্ধ করবে। হক আই একজন দূরবর্তী রেঞ্জের যোদ্ধা আর অদ্ভুত জাদুশক্তি আর উইচক্র্যাফটের যোদ্ধা স্কারলেট উইচ। আর বিভিন্ন যুদ্ধে জমা করতে থাকা পয়েন্ট পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা যাবে বিভিন্ন আপগ্রেড ক্রয় করতে। সম্পূর্ণ নতুন পাওয়ার কিনতে বা নতুন হিরো আনলক করতেও পয়েন্টগুলো ব্যবহার করা যাবে। আর সবচেয়ে দুর্দান্ত ব্যাপার হচ্ছে- হিরোদের পাওয়ার বার পুরোপুরি রিচার্জ হতে বেশ অল্পই সময় লাগে। তাই গেমারদের টানটান উত্তেজনাপূর্ণ পাওয়ার গেমিং নিয়ে মোটেও চিমত্মা করতে হবে না। আর খুব দ্রুতই একটি থেকে আরকেটি মুভে ট্রান্সফার করা যায়, তাই মারভেলের অন্য গেমগুলোর চেয়ে ইন্টারচেঞ্জেবল অ্যাবিলিটি মারভেল হিরোসে আরও সহজ ও উপভোগ্য ভঙ্গিতে ব্যবহার করা যাবে। আর এটা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, প্রতিমুহূর্তে গেমারকে অসংখ্য ছোট ছোট ভিলেন এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গদের সাথে যুদ্ধ করে এগোতে হবে। তাই গেমটি নিয়ে বসলে পানি পিপাসা না পেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তবে একটা জিনিস আগে থেকেই বলে নেয়া ভালো- ভিলেনদের পেছনে ছোটার এই কাহিনীটা বেশ লম্বা। তাই অনেকক্ষণ ধরে দুষ্টদের নিধন করতে করতে ধৈর্য ভেঙেও বসতে পারে। তবে এর জন্যও আছে সমাধান- আছে অসাধারণ মাল্টিপ্লেয়ার গেমিংয়ের ব্যবস্থা। দূরদূরামেত্মর বন্ধু, নিত্যনতুন স্ট্র্যাটেজি আর কল্পনাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার গেম নিয়ে বসে পড়ুন এখনই আর যদি একটু টাকা খরচ করতে ইচ্ছে থাকে, তাহলে সহজেই পেতে পারেন মারভেলের দুর্দান্ত সব প্রিমিয়াম কমিক স্টাফ, যা আপনার কালেকশনকে করবে আরও সমৃদ্ধ, আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : ৭/৮/১০, সিপিইউ : কোর সিরিজ/এএমডি অ্যাথলন, র্যা ম : ৮ গিগাবাইট উইন্ডোজ, ভিডিও কার্ড : ২ গিগাবাইট, হার্ডডিস্ক : ৩০ গিগাবাইট, সাউন্ডকার্ড, কিবোর্ড ও মাউস