লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ভেগা গ্রাফিক্সে এএমডির নতুন উপহার এনভিডিয়ার প্রাধান্যকে চ্যালেঞ্জ
এএমডি শুধু সিপিইউ বা প্রসেসর নিয়ে ইন্টেলের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে তাই নয়, বরং গ্রাফিক্স অঙ্গনে এনভিডিয়ার সাথেও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বলাবাহুল্য, গেমিং জগতে এনভিডিয়া ও এএমডি বেশ পরিচিত নাম। গ্রাফিক্স কার্ড বলতে এনভিডিয়া বা এএমডির গ্রাফিক্সের নাম চলে আসে সবার আগে। বর্তমানে এনভিডিয়া কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে গ্রাফিক্স জগতে। ইতোমধ্যে এরা ম্যাক্সওয়েল থেকে প্যাসকাল স্থাপত্যে উত্তরণ ঘটিয়েছে। হাল আমলের জিফোজ ১০৮০ বা ১০৮০ টিআই প্যাসকেল স্থাপত্য দিয়ে তৈরি। এদিকে এএমডি হাল আমলের গ্রাফিক্স কার্ড ‘গ্রাফিক্স কোর নেক্সট’ বা জিসিএন স্থাপত্য দিয়ে তৈরি করেছে এবং ক্রমান্বয়ে চতুর্থ স্তরে নিয়ে গেছে। তবে নতুন উন্নততর স্থাপত্যের নাম দিয়েছ ‘নেক্সট জেনারেশন কমপিউট ইউনিট’ বা এনসিইউ। এনসিইউ প্যাসকেলের সক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। ফলে প্রতি ক্লক সাইকেলে বেশি অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। আগের গ্রাফিক্স কার্ডে তা সম্ভব ছিল না। একে অনেকেই ভেগা গ্রাফিক্স স্থাপত্য নাম দিয়েছেন। তবে এই ভেগা কার্ড দিয়ে উচ্চতর বাজারে এনভিডিয়ার প্রাধান্যকে খর্ব করার জন্য এএমডি বেশ আটঘাট বেঁধে নামছে বলে জানা গেছে।
ভেগা কি ও কেন?
ভেগা হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের উচ্চতর গ্রাফিক্স স্থাপত্য, যার অন্যতম লক্ষ্য এনভিডিয়ার জিটিএস ১০৮০ ও ১০৮০ টিআইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়া। এটি আরএক্স ভেগা নামে পরিচিত হবে। এতে জ্যামিতি পাইপলাইন অন্তর্ভুক্ত হবে। এ বছরের প্রথমেই বাজারে অবমুক্ত হবে এটি। এই জিপিইউ কার্ডে পারফরম্যান্সের উন্নয়ন ও দক্ষতা উন্নয়নের সমাবেশ ঘটানো হবে। বিগত পাঁচ বছর ধরে ভেগা স্থাপত্যের ওপর গবেষণা ও উন্নয়ন চালিয়েছে এএমডি।
গ্রাফিক্স কার্ডের মাপকাঠি ও ভেগা
গ্রাফিক্স কার্ডের শক্তি মাপার মূল মাপকাঠি হচ্ছে টেরাফ্লপ। যদিও অন্যান্য কতিপয় মাপকাঠি রয়েছে। ধরা যায়, ১২.৫ টেরাফ্লপ ভেগা কার্ডে ৪০৯৬টি স্ট্রিম প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট এইচবিএম-২ (হাই মেমরি ব্যান্ডউইডথ-২) মেমরি থাকবে এবং ১৫০০ মেগাহার্টজ বা ততোধিক গতিতে চলবে।
ভেগা কার্ডে প্রযুক্তিগতভাবে যেসব উন্নয়ন ঘটানো হবে, তা হচ্ছে- ০১. অধিকতর দক্ষ পারফরম্যান্সের জন্য ‘টাস্ক বিতরণ’কে মসৃণ বা রিফাইন করা। ০২. কম চ্যালেঞ্জিং টাস্কে বিদ্যুৎ দক্ষতা বাড়ানো। ০৩. উচ্চতর টাস্কে কম তাপ উৎপাদন করা। ০৪. উচ্চতর কার্ডে অধিকতর মেমরি যোগ করা এইচবিএম-২ প্রযুক্তির মাধ্যমে। ০৫. খেলোয়াড় দেখতে পায় না এমন থ্রিডি রেন্ডারিং কমিয়ে ফেলা।
এএমডি বলছে, তাদের ভেগা গ্রাফিক্স অঙ্গনকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবে। কারণ, উপরোল্লিখিত যুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করার ফলে এটি দারুণ শক্তি ও ক্ষমতা অর্জন করবে। উদাহরণস্বরূপ, আগে সর্বোচ্চ চারটি ইঞ্জিনে ওয়ার্কলোড বিতরণ করা যেত, কিন্তু ভেগাতে অনেক বেশিসংখ্যক ইঞ্জিনে কাজ বিতরণ করা সম্ভব হবে। উচ্চতর ভেগা কার্ডসমূহ ১৫০০ মেগাহার্টজ বা ১৬০০ মেগাহার্টজে পরিচালিত হবে, যে এনভিডিয়ার প্যাসকেলের অনুরূপ, যা কাজ বিতরণকে অনেক সহজতর করে দেবে। পূববর্তী কার্ডে মাত্র ১০০০ মেগাহার্টজে সীমাবদ্ধ ছিল।
ভেগাতে আরেকটি পরিবর্তন ঘটানো হবে, সেটি হচ্ছে জ্যামিতি ইঞ্জিনের পুনঃনকশা। যার ফলে এটি পূর্ববর্তী জিপিইউর তুলনায় দ্বিগুণ বহুভূজকে প্রসেস করতে সক্ষম হবে। এটি একটি বিরাট উন্নয়ন। এর ফলে শক্তিশালী গেমে উন্নত ফ্রেমরেট দিয়ে মসৃণতা আরোপ করা যাবে। পূর্ববর্তী এএমডি কার্ডসমূহে এটি প্রকট ছিল, যা আর থাকবে না ভেগাতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো উন্নত এ বৈশিষ্ট্যগুলো ভেগা অর্জন করে কম বিদ্যুৎ খরচ করেই। এটি সম্ভব হয়েছে ১৪ ন্যানোমিটার ফিনফেট (FinFET) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে।
হাই মেমরি ব্যান্ডউইডথ
গ্রাফিক্স কার্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মেমরি। অর্থাৎ এর আকার ও গতির সীমাবদ্ধতা। এএমডি ও এনভিডিয়া উভয়েই ক্রমান্বয়ে অল্প অল্প করে গতি বাড়ানো এবং অ্যাক্সেস বাসকে প্রশস্ত করেছে। সবশেষে মেমরি প্রযুক্তি জিডিডিআর৫ প্রায় স্থবির হয়ে আছে। এ অবস্থার অবসানের জন্য ২০১৫ সালে এএমডি ‘এইচবিএম’ নামে একটি মেমরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যার নাম দিয়েছে হাই মেমরি ব্যান্ডউইডথ বা এইচবিএম। এতে গতি কমিয়ে দিয়ে বেশ প্রশস্ত বাস সন্নিবেশ করা হয়েছে। এটি ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তবে এর সীমাবদ্ধতা ছিল এটি শুধু ১ গিগাবাইট মডিউলে স্থাপন করতে হতো এবং এটি যেকোনো কার্ডে ৪ গিগাবাইট পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেত, অথচ শক্তিশালী গেমের জন্য উচ্চতর কার্ডে ৬ বা ৮ গিগাবাইট মেমরি এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ সমস্যার উত্তরণের জন্য এইচবিএমের দ্বিতীয় সংস্করণ উদ্ভাবন করেছে এএমডি। ফলে প্রতি মডিউলে ৮ গিগাবাইট পর্যন্ত মেমরি অন্তর্ভুন্ত করা যাবে। উপযুপরি এ মডিউলগুলো দ্বিগুণ ব্যান্ডউইডথ দিয়ে সক্ষম হবে। এতে ক্ষ্যান্ত হয়নি এএমডি। পারফরম্যান্স ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কন্ট্রোলার ও ক্যাশ নিয়োজিত করেছে, তবে গেম ডেভেলপারেরা এটি সমর্থন করলে প্রকৃত অর্জন হবে বলা যায়।
ভেগাতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হচ্ছে, এটি আগের মতো শুধু গ্রাফিক্স মেমরিতে ডাটা স্টোর করবে না, প্রয়োজনে মূল র্যাযমে এমনকি এসএসডিতে ডাটা রাখতে পারবে, বিষয়টি অভিনব ও এককথায় অসাধারণ। ফলে বিশাল ডাটা নিয়ে জিপিইউ কাজ করতে পারবে- ট্যারাবাইট ডাটা হলেও অসুবিধা নেই। ফলে গ্রাফিক্স কার্ডের দামও কমানো সম্ভব হবে। এতে আরও থাকছে আরপিএম বা র্যাবপিড প্যাক ম্যাথ নামের প্রযুক্তি, যা দিয়ে কমপিউটারের গতি দ্বিগুণ পাওয়া সম্ভব হবে।
এএমডি এরই মধ্যে কতিপয় গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে কারিগরি চুক্তি করেছে। যেমন- বেথেসডা কোম্পানির সাথে এ মর্মে চুক্তি হয়েছে যে, খোলা থ্রিডি গ্রাফিক্স প্রযুক্তি ভালকান দিয়ে তারা গেম নির্মাণ করবে, যা এএমডির ম্যান্টল এপিআইয়ের ওপর নির্ভরশীল ডাইরেক্স এক্স ১২-তে ভালকান থাকছে। ফলে কতিপয় গেম/টাইটেলে বাড়তি পারফরম্যান্স পাবে ভেগা। ভেগার সাহায্যে ক্লাউডভিত্তিক স্ট্রিমিং গেমস সার্ভিস দেয়ার লক্ষক্ষ্য এএমডি ‘লিকুইডস্কাই’ নামের কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া এইচটিসি ভাইডের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে ‘জাডার’ দূরীকরণার্থে, যাতে হেডসেট পরিহিত অবস্থায় যথার্থ ফ্রেমরেট না থাকার ফলে বমি-ভাবের উদ্রেক হয়।
এদিকে এএমডি জেন ও ভেগার সমন্বয়ে র্যা ভেন রিজ এপিইউ তৈরি করে বাজারে ছাড়ার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। ফলে ইন্টেল ও এনভিডিয়া উভয়ই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বলা যায়।
শেষ কথা
এ বছরটি গেমারদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বছর হবে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। এএমডির নতুন ব্র্যান্ড ভেগা গ্রাফিক্স কার্ড নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে সন্দেহ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যও হবে ধরাছোঁয়ার মধ্যেই। কারণ, বাজার দখল করতে মূল্যের ছাড় বিরাট ভূমিকা রাখে এ কথা এএমডি ভালোভাবেই জানে। এ ছাড়া মূল্য ধার্যের ব্যাপারে এএমডির উদারতা রয়েছে বরাবরই। আশা করি, এবারও তারতম্য হবে না এবং বাজার দখল করতে সমর্থ হবে
সূত্র : ইন্টারনেট
ফিডব্যাক : itajul@hotmail.com