লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আইবিএম ৫ ন্যানোমিটারে পৌঁছতে পেরেছে ওয়েফারের আকার কতটুকু সরু হবে?
প্রসেসরের চিপ তৈরি হয় ওয়েফারের সাহায্যে। এ ওয়েফারের মধ্যে গুজে দেয়া হয় কোটি কোটি ট্রানজিস্টর। সাধারণত বালু থেকে সিলিকন ওয়েফার তৈরি করা হয়। ওয়েফারের আকার যত সরু হবে, ততই তা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও বহনযোগ্য হবে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হলে ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়বে। প্রতিটি চিপে উন্নত ফিচার যোগ করার জন্য ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কয়েক হাজার থেকে এখন বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ইন্টেল ক্রমাগত গর্ডন মুরের সূত্র অনুযায়ী তাদের চিপে বংশ পরম্পরায় দেড়গুণ বা দ্বিগুণ ট্রানজিস্টর বৃদ্ধি করে চলেছে। ১৯৭১ সালে ৪০০৪ চিপে যে ওয়েফার ব্যবহার হয়েছিল, তার আকার ছিল ১০ মাইক্রোমিটার। এরপর ১৯৭৪ সালে ৮০৮৫ চিপে ৬ মাইক্রোমিটার এবং ১৯৮৫ সালে ৮০৮৬ চিপে ১ মাইক্রোমিটার ওয়েফার ব্যবহার করেছিল। ওয়েফার ক্রমান্বয়ে সরু হতে হতে বর্তমানে কাবিলেক ১৪ ন্যানোমিটারে উত্তরণ ঘটেছে। এএমডির রাইজেন চিপ ওকোয়ালকমের সণ্যাপড্রাগন ৮৩৫ চিপও ১৪ ন্যানোমিটার ওয়েফার ব্যবহার করেছে।
তবে ব্যাপারটি এত সহজ নয়। মাইক্রোমিটারের থাকা অবস্থায় বিশুদ্ধতা তেমন কোনো বিষয় ছিল না, কিন্তু যখনই ন্যানোমিটারে পদার্পণ করল তখন বিশুদ্ধতা একটি বড় ব্যাপার হয়ে গেল। পরিচ্ছন্ন কক্ষ তৈরি করার লক্ষে্য ক্ষুদ্রতম কণাকে অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়ল। সেমিকন্ডাক্টর ফেসিলিটিতে কর্মীদেরকে এমন পরিচ্ছদ পরানো হয় যাতে চিপগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। এ ছাড়া ফেব্রিকেশন ফেসিলিটি পরিচালনা ‘অটোমেটেড’ হওয়ার ফলে এদের মূল্য আকাশচুম্বী হতে থাকল (রকের সূত্রানুযায়ী)। বর্তমানে ১৪ ন্যানোমিটার ফ্যাব (ফ্যাবরিকেশন) প্লান্ট রয়েছে মাত্র চারটি কোম্পানির। এরা হলো- ইন্টেল, স্যামসাং, গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ ও তাইওয়ানের টিএসএমসি। মজার ব্যাপার হলো, এ বছরে স্যামসাং তাদের এক্সিনোস চিপ ১০ ন্যানোমিটারে উৎপাদন করেছে এবং এটিই হচ্ছে প্রথম ১০ ন্যানোচিপ। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ৭ ন্যানোমিটারে চিপ উৎপাদন করার ঘোষণা দিয়েছে কতিপয় নির্মাতা। তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘোষণা এসেছে আইবিএমের পক্ষ থেকে। তাদের প্রকৌশলীরা ৫ ন্যানোমিটার চিপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন পরীক্ষামূলকভাবে। ইতোপূর্বে তারা গ্লো ফ্লো তথা গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ বিক্রি করে দিয়েছিল, তবে তারা এখনও তাদের চিপ গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ থেকে উৎপন্ন করে থাকে।
আইবিএমের যুগান্তকারী আবিষ্কার
ওয়েফারের ট্রানজিস্টর তৈরির বিভিন্ন ধাপ পেরোতে পেরোতে বর্তমানে ফিনফেটে এসে দাঁড়িয়েছে। মূলত দ্বিমাত্রিক অবস্থা থেকে বর্তমানে প্রচলিত ফিনফেটে উত্তরণের ফলেই কোটি কোটি তথা বিলিয়ন ট্রানজিস্টর ক্ষুদ্র ওয়েফারে ঠেসে ভরা সম্ভব হচ্ছে। তবে ৭ ন্যানেমিটারের চেয়ে ক্ষুদ্র তথা ৫ ন্যানোমিটারে ফিনফেটকে কার্যকরভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয় না। এরকারণ, ফিনের ফাঁকের দূরত্ব যথেষ্ট হ্রাস পেলে কাঙিক্ষত পারফরম্যান্স পাওয়া সম্ভব হবে না। এ অবস্থা দূরীকরণের লক্ষে্য আইবিএম ন্যানোশিট নকশা তৈরি করেছে, যা দিয়ে গেট অল এরাউন্ড ফেট (GAA FET) নামে নতুন এক ধরনের ট্রানজিস্টর আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। এ ট্রানজিস্টর অনায়াসে ৫ ন্যানোমিটারে নেয়া যাবে এবং চিপে ৩০ বিলিয়ন ট্রানজিস্টর জুড়ে দেয়া কঠিন ব্যাপার হবে না। বলাবাহুল্য, এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারিক নির্মাণে স্যামসাং ও গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজের বেশ ভূমিকা রয়েছে। ইতোপূর্বে আইবিএমের প্রকৌশলীরা ৭ ন্যানোমিটার চিপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল সফলভাবে। আইবিএম দাবি করছে, ৫ ন্যানেচিপ দিয়ে তৈরি স্মার্টফোন ও অন্যান্য ডিভাইস একক চার্জে বর্তমান সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ স্থায়িত্ব পাবে। সর্বোপরি ডাটাঘন অ্যাপিস্নকেশনে এবং কগনিটিভ (জ্ঞানভিত্তিক) কমপিউটিংয়ে তথা ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যাবে। ন্যানোমিটার তথা গাফেট সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ক্রমান্বয়ে ফিনফেটের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে বলে বিশেস্নষকদের ধারণা। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে কয়েকবছর লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আইবিএম/গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে ফ্যাব-৮ ফ্যাসিলিটিতে ৭ ন্যানোচিপের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। ওয়েফার প্রযুক্তিতে প্রাধান্য বজায় রাখার লক্ষে্য তারা অনতিবিলম্বে ৫ ন্যানোচিপের উৎপাদন তৈরি করবে। আইবিএম দাবি করেছে, ৫ ন্যানোচিপ ১০ ন্যানোর তুলনায় ৪০ শতাংশ পারফরম্যান্স উন্নয়ন প্রদান করবে অথবা ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। ৫ ন্যানোচিপের বাণিজ্যিক উৎপাদন ২০২০ বা ২০২১ সালে হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। দুই বছর আগে ৭ ন্যানোপ্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলেও আমরা সবেমাত্র ১০ ন্যানো পাচ্ছি এ বছরে (২০১৭)। ৭ ন্যানোচিপ ২০ বিলিয়ন ট্রানজিস্টর ধারণ করতে সক্ষম হবে।
সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ফ্যাব্রিকেশনের ইতিহাস
প্রথমেই বলা যাক, সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ফ্যাব্রিকেশন কী? এটি হচ্ছে এমন একটি প্রসেস, যা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট নির্মাণে ব্যবহার হয়। বর্তমানে প্রচলিত সব ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক পণ্যে/ ডিভাইসে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) ব্যবহার হয়। এ প্রসেস হচ্ছে বহু ধাপবিশিষ্ট ফটো লিথোগ্রাফিক ও রাসায়নিক প্রসেসিংয়ের ক্রমধারা, যার মাধ্যমে বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টিং দ্রব্য দিয়ে নির্মিত ওয়েফারে ইলেকট্রনিক সার্কিট তৈরি করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিলিকনই ব্যবহার হয়, তবে বিশেষায়িত অ্যাপিস্নকেশনের ক্ষেত্রে যৌগ সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার হয়ে থাকে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে অর্থাৎ শুরু থেকে প্যাকেজড চিপ পর্যন্ত ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় লেগে যায় এবং যে বিশেষ ফ্যাসিলিটিতে এ কর্ম সম্পাদন হয়, তাকে বলা হয় ফ্যাব (Fab)।
ষাটের দশকে টেক্সাস (টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস) ও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সূচিত সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস নির্মাণ কৌশল ইউরোপসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে বর্তমানে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে এর বিস্তার ঘটেছে। অগ্রজ সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতাদের ফ্যাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। যেমন সর্ববৃহৎ নির্মাতা ইন্টেলের ফ্যাসিলিটি সারাবিশ্বেরই রয়েছে। অন্যান্য শীর্ষ নির্মাতা হচ্ছে- তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি, ইউনাইটেড মাইক্রোইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন (তাইওয়ান) এসটি মাইক্রোইলেকট্রনিক্স (ইউরোপ), এনালগ ডিভাইসেস (ইউএস), এটমেল (ইউএস/ইউরোপ), ফ্রিস্কেল সেমিকন্ডাক্টর, স্যামসাং, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস, আইবিএম (ইউএস), গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ (জার্মানি/সিঙ্গাপুর/ইউএস), তোশিবা (জাপান), এনইসি (জাপান), ইনফিনিয়ন, রেনেসাস, ফুজিৎসু, মাইক্রন টেকনোলজি, হাইনিক্স (কোরিয়া) ও এসএম আইসি (চীন)।
ওয়েফার: অত্যন্ত বিশুদ্ধ সিলিকন ঘটানো হয় ৩ সেমিমিটার ব্যাসের মনোক্রিস্টালাইন সিলিন্ড্রিকেল ইনগটে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এসব ইনগটকে টুকরো টুকরো করে ওয়েফারে পরিণত করা হয়, যার পুরুত্ব ০.৭৫ মিমি এবং একে মসৃণ করে ফ্লাট সারফেসে উন্নীত করা হয়।
প্রক্রিয়াকরণ/প্রসেসিং : সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ফ্যাব্রিকেশনে প্রসেসিংকে চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। এগুলো হচ্ছে- ০১. ডিপোজিশন, ০২. রিমুভাল, ০৩. প্যাটারনিং ও (৪) তড়িৎ ধর্মের সংশোধন।
ফ্রন্ট এন্ড অব লাইন (FEOL) প্রসেসিং : এটি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সিলিকনে সরাসরি ট্রানজিস্টর গঠন করা হয়। এপিটেক্সি নামের একটি পদ্ধতিত্রেম্নটিমুক্ত সিলিকন স্তর তথা অতি-বিশুদ্ধ গ্রোথ তৈরি করা হয় কাঁচা ওয়েফারের জন্য। তবে বর্তমানে যে চিপ তৈরি হচ্ছে, তাতে বিভিন্ন কৌশলে পারফরম্যান্স উন্নত করা হয় ট্রানজিস্টর নির্মাণের জন্য এবং এ কৌশল এপিটেক্সি পদ্ধতি প্রয়োগের আগেই ব্যবহার হয়। একটি কৌশল হচ্ছে ‘স্ট্রেইনিং স্টেপ’ এবং অন্যটি হচ্ছে ‘সিলিকন অন ইন্সুলেটর’। এর ফলে প্যারাসাইটিক প্রভাব হ্রাস করা যায় এবং ট্রানজিস্টরের পারফরম্যান্স বাড়ানো সম্ভব হয়। এরপর গেট অক্সাইড ও ইমপ্লান্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে ‘গেট ডাইইলেকট্রিক’ উদ্ভব করা হয়।
ব্যাক এন্ড অব লাইন (BEOL) প্রসেসিং : বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস তৈরির পর ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নির্মাণের জন্য ওই ডিভাইসগুলোর ইন্টারকানেকশন প্রয়োজন হয়। প্রচুর সমন্বিত প্রক্রিয়াকরণ ধারা ওয়েফারে সংঘটিত হয়, যাকে ব্যাক এন্ড অব লাইন প্রসেসিং বলা হয়। আমত্মঃসংযোগ তথা ইন্টারকানেকশনের জন্য অ্যালুমিনিয়ামতার ব্যবহার হয়। বর্তমানে আধুনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপে প্রচুর ইন্টারকানেক্ট প্রয়োজন হয়। ফলে ‘সময় বিলম্ব’ একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়, যখন অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার হয়। সেজন্য এখন তামার তার ব্যবহার হয়।
এরপর পর্যায়ক্রমে ওয়েফার টেস্ট ও ডিভাইস টেস্ট করা হয়। টেস্টে যেগুলো ব্যর্থ হয়, সেগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য রঙ (ডাই) ব্যবহার হয়। বর্তমানে কমপিউটার ডাটাবেজের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ডাইমার্কিং সম্ভব হচ্ছে চিপগুলোকে প্যাকেজিংয়ের পরেও টেস্ট করা হয়। একে বলা হয় ‘ফাইনাল টেস্ট’।
টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পর ভালো চিপসমূহকে ডাইসিং (টুকরো টুকরো) করে স্বতন্দ্র ডাইসে বা ছকে পরিণত করা হয়। এরপর আসে প্যাকেজিংয়ের পালা। প্লাস্টিক বা সিরামিক দ্রব্যাদি দিয়ে ছককে (ডাই) বসিয়ে প্যাকেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। ডাই প্যাডের সাথে প্যাকেজের পিনের সংযোগের জন্য স্বর্ণের তার ব্যবহার হয়। এ ছাড়া ‘চিপ স্কেল প্যাকেজ’(CSP) নামে আরেক ধরনের প্যাকেজিং প্রযুক্তি আছে, যাতে ডাইয়ের (ছক) আকৃতি প্রায় চিপের আকৃতির সমান। এতে ওয়েফারকে ডাইসিং বা টুকরো করার আগেই CSP তৈরি করা যায়। প্যাকেজ করার পর পুনরায় টেস্ট করে দেখা হয় প্যাকেজিংয়ের সময় কোনো চিপ ড্যামেজ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর লেজার রশ্মির সাহায্যে চিপের নাম ও সংখ্যা ইত্যাদি খোদাই করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি রোডম্যাপের সেমিকন্ডাক্টর (আইটিআরসি)
চিপ তৈরিতে ব্যবহার হয় প্রচুর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেমন- ফটোলিথোগ্রাফি, এচিং, মেটাল ডিপোজিশন ইত্যাদি। শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে এ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা হয় বিশেষায়িত যন্ত্রের মাধ্যমে, যেগুলো নির্মিত হয়ে থাকে বিবিধ বাণিজ্যিক কোম্পানি দিয়ে। এ বিশেষায়নের ফলে শিল্প বিকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কারণ এক কোম্পানি যখন নতুন পণ্য বিশেষায়িত বাজারে আনে, তখন অন্যান্যপ্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি একই সম্বন্ধে না থাকার ফলে শিল্প হোঁচট খায়। এর নিরসনকল্পে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞরা একটি আন্তর্জাতিক রোডম্যাপ (পথনকশা) তৈরি করেছেন। বিভিন্ন দেশ যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, দক্ষক্ষণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি সমিতির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। চিপ ফ্যাব্রিকেশন প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখার ১৫ বছরের টাইম লাইনকে সামনে রেখে এই ডকুমেন্ট তথা রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এদিকে দৃষ্টি রেখে নির্মাতা সরবরাহকারীরা যাতে তাদের টাগেট দিনক্ষণ ঠিক করতে সমর্থ হয়, তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বহু বছর ধরে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি সমিতি (এসআইএ) যুক্তরাষ্ট্রকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল, যার ফলে জন্ম নিয়েছিল ‘ন্যাশনাল টেকনোলজি রোডম্যাপ ফর সেমিকন্ডাক্টরস’ (এনটিআরএস)। ১৯৯৮ সালে SIA বিশ্বের সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে ITRS গ্রুপ তৈরি করে, তাতে সহস্রাধিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। ইতোমধ্যে ২০১৪ সালের এপ্রিলে রোডম্যাপের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সব প্রক্রিয়াকরণকে ১৭টি টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপে এবং সাতটি মূল বিষয়ে (Fours Topics) ম্যাপ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, আউটসাইড সিস্টেম কানেকটিভিটি ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়া মুরের সূত্রকে রক্ষার জন্য CMOS-কে সঙ্কোচনের প্রস্তাব রয়েছে।
১৯৯৩ সালে SIA প্রবর্তিত প্রথম রোডম্যাপ
টেবিল-১
বৈশিষ্ট্য ১৯৯২ ১৯৯৫ ১৯৯৮ ২০০১ ২০০৪ ২০০৭
ফিচার আকার (মাইক্রন) ০.৫ ০.৩৫ ০.২৫ ০.১৮ ০.১২ ০.১০
ওয়েফার প্রসেসিং ব্যয় ($/Cm) $৪.০০ $
৩.৯০ $৩.৮০ $৩.৭০ $৩.৬০ $৩.৫০
ওয়েফার ব্যাস (mm) ২০০ ২০০ ২০০-৪০০ ২০০-৪০০ ২০০-৪০০ ২০০-৪০০
ইন্টারকানেক্ট পর্যায় (Per logic) ৩ ৪-৫ ৫ ৫ ৫-৬ ৬-৭
সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ (Watts/die) উচ্চ দক্ষতা ১০ ১৫ ৩০ ৪০ ৪০-১২০ ৪০-২০০
বহনযোগ্য ৩ ৪ ৪ ৪ ৪ ৪
পাওয়ার সাপ্লাই ভোল্টেজ ডেস্কটপ ৫ ৩.৩ ২.২ ২.২ ১.৫ ১.৫
বহনযোগ্য ৩.৩ ২.২ ২.২ ১.৫ ১.৫ ১.৫
অস্তমিত মুরের সূত্রকে স্মরণে রেখে ITRS বর্তমানে IEEE-এর রিবুটিং কমপিউটিং উদ্যোগের মাধ্যমে নতুনভাবে পদযাত্রা শুরু করেছে ইন্টারন্যাশনাল রোডম্যাপ ফর ডিভাইসেস অ্যান্ড সিস্টেমস (IRDS)নামে ২০১৬ সালের মে মাসে।
ওয়েফারের আকারের ক্রমধারা
১৯৭১ সালে ১০ মাইক্রোমিটার ওয়েফার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল প্রথম মাইক্রো প্রসেসর চিপ ৪০০৪। এরপর চড়াই উতরাই পার হয়ে ২০১০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩২ ন্যানোমিটারে। এবার দেখা যাক সংক্ষক্ষপ্ত আকারে সে তালিকা।
৩২ ন্যানোমিটার চিপসমূহ:ইন্টেল কোরআই৩ ও কোরআই৫ ২০১০ সালের জানুয়ারিতে অবমুক্ত এএমডির এফএক্স ধারার প্রসেসর ২০১১ সালের অক্টোবরে অবমুক্তি ঘটেছিল।
২২ ন্যানোমিটার চিপসমূহ : ২০১২ সালে অবমুক্ত তৃতীয় প্রজন্মের কোরআই৫ ও ৭ তোশিবার ফ্ল্যাশ মেমরি ন্যান্ড(NAND) ডিভাইস।
১৪ ন্যানোমিটার চিপসমূহ :জানুয়ারি ২০১৫ সালে অবমুক্ত ষষ্ঠ প্রজন্মের ইন্টেল কোরআই৫ ও ৭। এএমডির জেন স্থাপত্যের রাইজেন প্রসেসর।
১০ ন্যানোমিটার চিপসমূহ:স্যামসাং তাদের এক্সিনস ৮৮৯৫ চিপের মাধ্যমে এ মাইলস্টোন অর্জন করেছে। কোয়ালকমের সণ্যাপড্রাগন ৮৩৫ তাদের প্রথম ১০ ন্যানোসিস্টেম অন চিপ বাজারে ছেড়েছে বলে জানা যায়।
টেবিল-২
১৯৭১ ১৯৭৪ ১৯৭৭ ১৯৮২ ১৯৮৫ ১৯৮৯ ১৯৯৪ ১৯৯৫ ১৯৯৭ ১৯৯৯ ২০০১ ২০০০ ২০০৬ ২০০৮ ২০১০
১০ মাইক্রো ৬ ৩ ১.৫ ১ ৮০০ ন্যানো ৬০০ ৩৫০ ২৫০ ১৮০ ১৩০ ৯০ ৬৫ ৪৫ ৩২
মাইক্রোমিটার ন্যানোমিটার
উপসংহার
চিপে ব্যবহার ওয়েফারের আকার যত সরু হবে, ততই আমরা দীর্ঘস্থায়ীভাবে আমাদের বহনযোগ্য পণ্য বিশেষ করে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারব শান্ত মনে (Peace of Mind)। আর এর সাথে পাব উল্লেখযোগ্য গতি ও ফিচার, যা আমাদের মন ভরে দেবে। আইবিএমের যুগান্তকারী আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তির গতিধারাকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হবে একথা বলাই বাহুল্য। অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও বিশেষায়িত বিধায় ইতোমধ্যে বহু ফ্যাব্রিকেশন কোম্পানি ঝরে পড়েছে ব্যয় সঙ্কুলান না করতে পেরে। ফলে, ব্যয়ের ব্যাপারটিও একটি ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যদিও স্মার্টফোনের বিশাল বাজারের কথা স্মরণে এলে মনে হয় এটি পুষিয়ে যাবে অচিরেই অর্থাৎ এটি তখন তেমন বড় ব্যাপার হবে না। ভবিষ্যতে দেখা যাবে কতদূর আমরা যেতে পারি?
সূত্র :ইন্টারনেট
ফিডব্যাক:itajul@hotmail.com