লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
স্ট্রিটস অব রেজ, স্পেস মার্শালস
স্ট্রিটস অব রেজ
যারা কনসোল গেমভক্ত তারা স্ট্রিটস অব রেজ গেমটির নাম শুনে থাকবেন। বর্তমানের পিসি গেমারদের অনেকেই এই দুর্দান্ত গেম সিরিজটির সাথে পরিচিত নন। গেমটি মূলত সাইড স্ক্রোলিং বিট ‘এম আপ’ ধাঁচের। বিভিন্ন সময়ে গেম সিরিজটির পর্বগুলো ডেভেলপ করেছে আলাদা ডেভেলপার কোম্পানি, যাদের মধ্যে রয়েছে সেগা এএম৭, এনশিয়েন্ট, লিজার্ডকিউব, গার্ড ক্রাশ গেমস এবং ডোটেমু। গেমগুলো পাবলিশ হয়েছে সেগা ও ডোটেমুর মাধ্যমে। গেমটি এত জনপ্রিয় ছিল যে, সেই সময়ে সব ধরনের গেম কনসোলের জন্য গেমগুলো রিলিজ করা হয়েছিল। গেমটির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হচ্ছেÑ সেগা জেনেসিস, গেম গিয়ার, মাস্টার সিস্টেম, সেগা সিডি, আর্কেড, উইই, নিনটেন্ডো গেমকিউব/সুইচ/থ্রিডিএস, এক্সবক্স ৩৬০/ওয়ান, প্লেস্টেশন ৩/৪, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, লিনআক্স, ম্যাকওএস, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস। গেমটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯১ সালে বিশ্বখ্যাত গেম ডেভেলপার ও পাবলিশার সেগার ব্যানারে। এরপর গেমটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব আসে যথাক্রমে ১৯৯২ ও ১৯৯৪ সালে। তারপর প্রায় দুই যুগ পরে ২০২০ সালের এপ্রিলের ৩০ তারিখ মুক্তি পেল এই সিরিজের চতুর্থ গেম।
স্ট্রিটস অব রেজ গেম সিরিজের মূল দুই চরিত্রের মধ্যে প্রধান হচ্ছে সোনালি চুলের এলেক্স স্টোন নামের পুলিশ ডিডেকটিভ। এলেক্স জাপানিজ মার্শাল আর্ট কারাতেতে পারদর্শী। এলেক্স স্পিড ও পাওয়ারের একটি ব্যালেন্সড ক্যারেক্টার। তার স্পেশাল পাওয়ার হচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রি ফ্লেমিং পাঞ্চ বা ড্রাগন উইং এবং পাঞ্চ/আপারকাট কম্বো বা ড্রাগন স্ম্যাশ। বেøজ ফিল্ডিং নামের সুন্দরী তরুণী গেমটির আরেক মূল চরিত্র যে এই সিরিজের সব পর্বেই ছিল। বেøজের পাওয়ার কম কিন্তু স্পিড ও জাম্প ক্যাপাবিলিটি এলেক্সের তুলনায় অনেক বেশি। গেমের প্রথম পর্বে থাকা অ্যাডাম হান্টারের কিশোরী চেরি হান্টারকে দেখা যাবে চতুর্থ পর্বে নতুন দুই ক্যারেক্টারের একজন হিসেবে। নতুন পর্বে যুক্ত হওয়া আরেকজন ক্যারেক্টার হচ্ছে ফ্লয়েড ইরাইয়া নামের সাইবারমেটিক হাতযুক্ত সাইবোর্গ। এই সিরিজের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ক্যারেক্টারের মধ্যে রয়েছে ম্যাক্স থান্ডার, রো, ইডি স্কেট হান্টার এবং ড. গিলবার্ট জ্যান। গেম সিরিজের মূল ভিলেন হচ্ছে মি. এক্স।
ক্রিমিনাল মাস্টারমাইন্ড মি. এক্সের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় গেমের তৃতীয় পর্ব। এই পর্বের কাহিনীর দশ বছর পর থেকে চতুর্থ পর্বের কাহিনী শুরু হবে। মি. এক্সের উত্তরাধিকারী যমজ ভাইবোন মি. ওয়াই এবং মিস ওয়াই এই গেমের প্রধান ভিলেন। তারা দুই ভাইবোন মিলে হিপনোটিক মিউজিকের মাধ্যমে শহরের সবার ব্রেনওয়াশ করার পরিকল্পনা আঁটে। তাদের পরিকল্পনায় বাধ সাধতে বেøজ তার পুরনো সাথী এলেক্স, অ্যাডাম, চেরি ও ফ্লয়েডকে একত্র করে একযোগে নেমে পড়ে। গেমে একেক ক্যারেক্টারের পাওয়ার, স্পিড ও স্কিল আলাদা হওয়ায় গেমটি ভিন্ন ক্যারেক্টার নিয়ে খেলার সময় বেশ ভালোই লাগবে। আগের গেমগুলো ছিল ১৬-বিটের তাই নতুন গেমের গ্রাফিক্স আগের তুলনায় অসাধারণ মনে হবে। গেমটি টুডি কমিক আর্ট টাইপের গ্রাফিক্স দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। তাই কিছুটা ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যাবে। গেমের গ্রাফিক্স দেখতে শ্যাঙ্ক নামের টুডি গেমের মতো কিন্তু গেমপ্লে ক্যাডিলাকস অ্যান্ড ডাইনোসরস (মোস্তফা গেম) বা ক্যাপ্টেন কমান্ডোজ গেমের মতো। গেমটি সিঙ্গেল ও মাল্টিপ্লেয়ার মোডে খেলা যায়, তাই করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে লকডাউনে থেকে বন্ধুদের সাথে মিলেও গেমটি উপভোগ করতে পারবেন।
নতুন গেমটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, নিনটেন্ডো সুইচ, প্লেস্টেশন ৪ ও এক্সবক্স ওয়ানের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। পিসিতে গেমটি খেলার ন্যূনতম সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট হচ্ছে উইন্ডোজ ৭ বা তার পরের ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম ভার্সন, ইন্টেল কোর টু ডুয়ো ই৮৪০০ বা এএমডি ফেনম ২ এক্স৪ ৯৬৫ প্রসেসর, ৪ গিগাবাইট র্যাম, এনভিডিয়া জিফোর্স জিটিএস ২৫০ বা এএমডি রাডেওন এইচডি ৬৬৭০ এবং ৮ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক স্পেস।
স্পেস মার্শালস
মহাকাশ নিয়ে অনেক ধরনের সায়েন্স ফিকশন মুভি ও গেম রয়েছে। স্টারওয়ারস, স্টারটেক, স্টারশিপ ট্রুপারস, ওয়ারহ্যামার ৪কে ইত্যাদি আরো কত কী? এ রকমই আরেকটি স্পেসভিত্তিক সায়েন্স ফিকশন হচ্ছে স্পেস মার্শালস। এটি মূলত টপ ডাউন থার্ড পারশন শুটার স্টিলথ ধাঁচের গেম। এতে গেমের ক্যামেরা প্লেয়ারের পেছনের বদলে কিছুটা ওপরে থাকে। এই ধাঁচের আরো কয়েকটি বিখ্যাত গেম হচ্ছে কমান্ডোস, ডেসপারাডোস, হেলডোরাডো, রবিনহুড-দ্য লিজেন্ড অব শেরউড, শিকাগো ১৯৩০, হার্ড ওয়েস্ট, শ্যাডো ট্যাকটিক্স-ব্লেডস অব শোগান ইত্যাদি। স্পেস মার্শালস গেমটির ডেভেলপার এবং পাবলিশার হচ্ছে পিক্সেলবাইট। গেমটির প্রথম পর্ব বের হয়েছিল আইওএসের জন্য ২০১৫ সালের প্রথমরদিকে এবং গেমটির অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন বের হয়েছে একই বছরের এপ্রিলে। গেমটির দুই ভার্সনই গেম ক্রিটিকদের কাছ থেকে বেশ ভালো রিভিউ পায়। প্রথম পর্বের দারুণ সফলতার রেশ ধরে গেমটি দ্বিতীয় পর্ব বের হয় পরের বছর ২০১৬ সালের আগস্টে। গেমটির তৃতীয় পর্ব কবে নাগাদ বের হবে তার আভাস পিক্সেলবাইট এখনো দেয়নি। গেমটি সিঙ্গেল প্লেয়ার মোডের গেম এবং এতে মাল্টিপ্লেয়ার মোড নেই।
গেমটিতে বুনো পশ্চিম ও স্পেস সায়েন্স ফিকশনের দারুণ এক সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। গেমের মূল চরিত্র হচ্ছে সাবেক স্পেস মার্শাল বারটন। এক মিশনে আগ্নেয়াস্ত্রের অপব্যবহারের কারণে তাকে পদচ্যুত করা হয় এবং একটি স্পেসশিপের জেলে বন্দি করে রাখা হয়। সেই স্পেসশিপে প্রিজন ব্রেকআউট হয়ে সব ক্রু ও গার্ড মারা পড়ে এবং সেই সুযোগে বারটন ও তার দুই সাথী মুক্ত হয়ে যায়। এরপর তারা তিন সাথী টিএএমআই বা ট্যামি নামের এক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (আয়রনম্যানের জারভিস বা ফ্রাইডের মতো এআই) সহায়তায় লড়াইয়ে নেমে পড়ে গ্যালাক্সির সন্ত্রাসীদের দমন করে গ্যালাক্সি অপরাধমুক্ত করতে। গেমটির প্রথম পর্ব স্পেস মার্শালস মাইক্রোসফট স্টোরেও ৪.৯৯ ডলার, গুগল প্লেস্টোরে ৪.৯৯ ডলার এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে ৩.৯৯ ডলারে পাওয়া যাবে। কিন্তু স্পেস মার্শালস ২ গেমটি আইওএসের জন্য ৪.৯৯ ডলারে, গুগল অ্যান্ড্রয়েডের জন্য প্লেস্টোর থেকে বিনামূল্যেই ডাউনলোড করা যাবে। মাইক্রোসফট স্টোরে গেমটির দ্বিতীয় পর্ব এখনো সংযোজিত হয়নি। গেমটি অ্যান্ড্রয়েডে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা গেলেও গেমটিতে ইন-গেম আপগ্রেড হিসেবে বিজ্ঞাপনমুক্ত ও কিছু বিশেষ ফিচারযুক্ত প্রিমিয়াম ভার্সন টাকা দিয়ে কিনে নেয়া যাবে। এছাড়া এই গেমে আভা নামের আরেক গেম ক্যারেক্টারের স্টোরিলাইন কিনে নেয়া যাবে, যাকে নিয়ে খেলার কলাকৌশল বারটনের চেয়ে অনেক আলাদা।
প্রথম গেমে ২৮টি ও দ্বিতীয় গেমে ২০টি মিশন রয়েছে। গেমে প্লেয়ার একসাথে চার ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এক হাতে চালানোর মতো হালকা অস্ত্র, যেমন রিভলবার বা পিস্তল এবং দুই হাতে চালানোর মতো ভারী অস্ত্র, যেমন শটগান, রেইডগান, মেশিনগান ইত্যাদি। ছুড়ে মারার জন্য দুই ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারবে, যার মধ্যে রয়েছে পাইপ বোম্ব, হট কোলস, রক ইত্যাদি। গেমে আর্মোর হিসেবে নানান রকমের পোশাক ও স্টাইলের জন্য বেশ কয়েক ধরনের হ্যাট আছে। গেমটি ট্যাকটিক্যাল স্টিলথ গেম, তাই খুব সাবধানে ধীরে-সুস্থে অনেক কৌশলে শত্রুপক্ষকে কুপোকাত করতে হবে। গেমে অস্ত্রের গোলাবারুদ সীমিত, তাই খুব হিসাব করে খরচ করতে হবে।
গেমের গ্রাফিক্স বেশ ভালোমানের এবং শব্দশৈলীও বেশ চমৎকার। গেমে ডুয়াল স্টিক কন্ট্রোলার থাকায় গেমটি খেলার স্বাদ অসাধারণ। মোবাইল ডিভাইসে গেমপ্যাড লাগিয়েও গেমটি উপভোগ করা যাবে। গেমে প্রায় ৭০ ধরনের অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। গেমে পারফরম্যান্স অনুযায়ী রিওয়ার্ড পাওয়া যাবে এবং তা দিয়ে প্লেয়ার আপগ্রেড করে পরের লেভেলে আরো ভালো পারফরম্যান্স অর্জন করা যাবে। গেমে ট্যামি মিশন সম্পর্কিত নানান ধরনের খবরাখবর দেবে, তাই গেমটি খেলতে বেশ ভালো লাগবে।
ফিডব্যাক : shmahmood@live.com