লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সম্পাদকীয়
তথ্যপ্রযুক্তি ও সাম্প্রতিকের আমরা
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমাদের অতীত সরকারগুলোর সীমাহীন অবহেলার কারণে আমরা জাতীয়ভাবে এগিয়ে যাবার অনেক সুবর্ণ সুযোগ হারিয়েছি৷ মুখোমুখি হয়েছি অপূরণীয় ক্ষতির৷ বার বার নানা মহল থেকে নানা তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও এক্ষেত্রে অতীত সরকারগুলোর ভূমিকা ছিল অনেকটা কুম্ভকর্ণের মতো৷ যদিও বা কখনো কখনো ঠেলা দিয়ে ধাক্কা মেরে তাদের সজাগ করা হয়েছে, তবুও তাদের অব্যাহত সজাগ রাখা সম্ভব হয়নি৷ ফলে বরাবর আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চলেছে একটা ধীরগতি৷ পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মকাণ্ডে ছিল স্বচ্ছতার অভাব৷ ফলে সরকারি-বেসরকারি নানা মহলের কাছে মার খেয়েছে আমাদের অনেক জাতীয় স্বার্থ৷ ভিওআইপি নিয়ে লুকোচুরি এমনি একটি উদাহরণ৷
সুখের কথা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারি পর্যায়ের তত্পরতায় সম্প্রতি একটা গতি আসার বিষয় আমরা লক্ষ করছি৷ পাশাপাশি এ খাতে স্বচ্ছতা আনার ব্যাপারেও সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ লক্ষণীয়৷ আমরা আশা করবো ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে বর্তমান সরকারের সূচিত গতিশীলতা ধরে রাখবে এবং এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বিধানের বিষয়টিও নিশ্চিত করবে৷
প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ গেটওয়ের লাইসেন্স গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া হয়েছে৷ দেশে প্রথমবারের মতো এই লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে৷ একটানা ২৬ ঘণ্টা নিলাম চলার মাধ্যমে এ লাইসেন্স পায় নভোটেল, বাংলাট্র্যাক ও মীর টেলিকম৷ টেলিযোগাযোগ খাতের কোনো লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রকাশ্য নিলামের ঘটনা আমাদের দেশে এই প্রথম৷ এ লাইসেন্সের জন্য বিটিআরসির কাছে ৪২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে৷ প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে ১১টি প্রতিষ্ঠান৷ বাকি ৩১টি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নেয়ার সুযোগ পায়৷ নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ৩টিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়৷ নতুন লাইসেন্স পাওয়া এ তিনটি প্রতিষ্ঠান আগামী ৬ মাসের মধ্যে তাদের গেটওয়ে চালু করবে৷ একই সাথে বিটিটিবির গেটওয়ে চালু থাকবে৷ নতুন গেটওয়েগুলো চালু হলে ভিওআইপি কল বৈধভাবে চলবে৷ এতে টেলিযোগাযোগ খাতে সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়বে তেমনি আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আরো কম খরচে টেলিযোগাযোগ করতে পারবো৷ বিটিআরসির এই স্বচ্ছ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই৷ পাশাপাশি আমরা বিটিআরসির প্রতি তাগিদ রাখছি, এ স্বচ্ছতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এ সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়নের৷ আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের যাবতীয় লাইসেন্স এমনিভাবে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমেই দেয়া হবে৷
বিটিআরসি আমাদের আরেকটি সুসংবাদ এরই মধ্যে জানিয়েছে৷ বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঞ্জুরুল আলম বলেছেন, দেশের জন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের জন্য এই মার্চেই প্রস্তাব আহ্বান করা হবে৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর তা পর্যালোচনার মাধ্যমে নিলামের আয়োজন করে কার্যাদেশ দেয়া হবে৷ এছাড়া ওয়াইম্যাক্স আইপি টেলিফোনি ও মোবাইল অপারেটরদের জন্যও পর্যায়ক্রমে নিলাম হবে৷ এছাড়া নতুন একাধিক সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযোগের চিন্তাভাবনা চলছে সরকারি মহলে৷ এটি নিঃসন্দেহে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য আরেকটি সুসংবাদ৷
এদিকে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরেকটি ইতিবাচক উদ্যোগ হচ্ছে বিটিটিবি-পিজিসিবি চুক্তি৷ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ তথা পিজিসিবির সাথে সম্প্রতি বিটিটিবির যে চুক্তি হয়েছে, তার আওতায় আগামী ৩ বছর বিটিটিবির ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে পিজিসিবির ফাইবার অপটিক ক্যাবল৷ দেশের ভেতরে বার বার ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সমস্যা দূর করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ এ চুক্তির ফলে কখনো যদি বিটিটিবির নিজস্ব অপটিক্যাল ফাইবার কাটাও পড়ে, তখন আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন হবে না৷ সহজেই আশা করা যায়, এর মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিত হবে৷
বর্তমান সরকার আরেকটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে৷ সরকার তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে গঠন করতে যাচ্ছে তথ্য কমিশন৷ ইতোমধ্যেই এই কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশের খসড়া প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা হয়েছে৷ তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ ২০০৮ শীর্ষক এ অধ্যাদেশের আওতায় গঠিত হবে এ কমিশন৷ অন্যসব প্রচলিত আইন ও বিধিবিধানে নাগরিক সাধারণের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে যা কিছু বাধা থাক না কেনো, প্রস্তাবিত তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য পাওয়ার অধিকার বাধ্যতামূলক করা হবে৷ তবে জানা গেছে, তথ্য না দেয়ায় যাতে কোনো অপরাধ না হয়, সেরকম কিছু ফাঁক রয়েছে প্রস্তাবিত এ আইনে৷ তবে কোনো নাগরিককে তথ্য না দেয়া ও ভুল তথ্য দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকাসহ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷ ছোটখাটো সংশোধনী সাপেক্ষে এই আইন চালু হলে নাগরিক সাধারণের তথ্য অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা একধাপ এগিয়ে যাবো৷ ই-গভর্নেন্স চালুর ক্ষেত্রেও তা হবে একটি অগ্রগমন৷
আমাদের চলতি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে মোবাইল ফোন কনটেন্ট শিল্পের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে৷ বিশ্বব্যাপী এ শিল্পের বিকাশ ঘটছে৷ বাংলাদেশেও এ শিল্পের প্রসার ঘটছে৷ সঠিক নীতি-কৌশল নিয়ে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি তবে এ শিল্পের সম্ভাবনাকে যথার্থভাবে কাজে লাগানো যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস৷ তাই আমাদের তাগিদ এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা যেনো আমরা না করি৷