লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
আইসিটিসম্পাদক,
সম্পাদকীয়
এ কোন আইসিটি রোডম্যাপ?
আমরা এদেশে সর্বপ্রথম তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা পাই ২০০২ সালের অক্টোবরে৷ সে নীতিমালা মোটামুটিভাবে একটি ভালো আইসিটি নীতিমালা বলেই সব মহলে গ্রহণযোগ্য-বিবেচিত ছিল৷ কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবায়নে যথার্থ কৌশল সরকারি পর্যায়ে অবল িম্বত না হওয়ায় এ নীতিমালার পুরোপুরি সুফল জাতি হিসেবে আমরা ঘরে তুলতে পারিনি৷ এ নীতিমালায় কিছু লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমায় অনেক লক্ষ্যই অর্জিত হয়নি৷ যেমন নীতিমালায় প্রতিশ্রুতি ছিল, ২০০৬ সালের মধ্যে দেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক তথ্যসমাজ গড়ে তোলার৷ কিন্তু তা অর্জনে আমরা ব্যর্থ হয়েছি৷ ফলে ২০০২ সালে প্রণীত আইসিটি নীতিমালা পর্যালোচনার প্রয়োজন দেখা দেয়৷ সেজন্য ২০০৮ সালের মে মাসে বর্তমান সরকার একটি আইসিটি নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে৷ এ কমিটি প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা শেষে সম্প্রতি ‘খসড়া আইসিটি নীতিমালা ২০০৮’ প্রণয়ন কছে৷ একটি খসড়া রোডম্যাপ বা অ্যাকশন প্লানও প্রণীত হয়েছে৷ উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গভ থ্রি-কে এই আইসিটি রোডম্যাপ প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল৷ ‘ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম’ তথা ইএমটিএপি’র আওতায় বাংলাশে কমপিউটার কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনাধীনে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় এ সরকার এই আইসিটি রোডম্যাপ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই রোডম্যাপ সাধারণ্যে প্রকাশ করা হয়৷
আইসিটি রোডম্যাপ সাধারণ্যে প্রকাশ করার সাথে সাথে তা প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে৷ স্টেক হোল্ডাররা ইতোমধ্যেই অভিযোগ করেছেন, এই খসড়া প্রস্তাবিত রোডম্যাপে এমন সব প্রস্তাব আছে, যা আমাদের জাতীয় অনেক আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷ পাশাপাশি এসব প্রস্তাব আমাদের জাতীয় সংহতি বিনাশেও অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে৷ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এই খসড়া রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে অযৌক্তিকভাবে আড়াই কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে৷ বিদেশে আইসিটি পরিদর্শনের নামে খরচ করা হয়েছে বিপুল অর্থ৷ তা ছাড়া এই খসড়া রোডম্যাপে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, প্রতিটা বিভাগে কিংবা সরকার বিভাগকে ফেডারেল স্টেটে উন্নীত করলে প্রতিটা ফেডারেল স্টেটে একটি করে হাইটেক পার্ক হবে, এর চারপাশে থাকবে একগুচ্ছ উচ্চ প্রবৃদ্ধির আইসিটি কোম্পানি৷ এখানে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, বিভাগকে ফেডারেল স্টেটে উন্নীত করে দেশের প্রশাসনিক সংহতি বিনাশের এ উদ্ভট চিন্তা রোডম্যাপ প্রণেতাদের মগজে ঢুকল কী করে? এটি একটি চরম ধৃষ্টতা বই কিছু নয়৷ আরো অবাক হওয়ার ব্যাপার হলো, এ ধৃষ্টতার মাত্রা আরো একধাপ বাড়িয়ে এই রোডম্যাপ নামের দলিলে ‘পার্লামেন্টকে অকার্যকর’ বা নন-ফাংশনাল বমে উল্লেখ করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে : Parliament is non-functional, so weaker democratic legitimacy behind the government initiatives৷ জানিনা, এ ধরনের উল্লেখ কী দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার কোনো ষড়যন্ত্র সংশ্লিষ্ট কি না৷ তাই সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, এ আইসিটি রোডম্যাপ বাংলাদেশকে এক গন্তব্যহীন পর্যায়ে নিয়ে যাবে৷ রোডম্যাপের প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, বেশ কিছু জোরদার সরকারি কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে আইসিটি রোডম্যাপকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ নিয়োগ দেয়া হবে একজন পূর্ণকালীন ‘চীফডিজিটাল অ্যাডভাইজার’৷ এই ডিজিটাল অ্যাডভাইজার সরাসরি রিপোর্ট করনে আইসিটি টাস্কফোর্স ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে৷ যেখানে আইসিটি মন্ত্রণালয় রয়েছে, সেখানে এ ধরনের চীফ ডিজিটাল অ্যাডভাইজার নিয়োগের কোনো যৌক্তিক কারণ আমাদের বোধগম্য নয়৷ বলা হয়েছে এই চীফ ডিজিটাল অ্যাডভাইজার কমপক্ষে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবেন৷ ২০১৩ সালকে কেনইবা এজন্য নির্ধারণ করা হলো, তা আমরা বুঝে উঠতে পারি না৷ এই আইসিটি রোডম্যাপ নিয়ে আরো অনেক সমালোচনাই উঠে আসছে৷ এতে দক্ষ আইসিটি জনশক্তি গড়ে তোলার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই, এ রোডম্যাপ প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট রিসোর্স পার্সনদের সংশ্লিষ্ট করা হয়নি৷ তাছাড়া যেখানে আমাদের আইসিটি নীতিমালাই এখনো পর্যালোচনার অধীন, সেখানে এই রোডম্যাপ প্রণয়ন কেনো প্রবর্তন করা হলো? এটা যেনো ঘোড়ার আগে গাড়ি কেনার মতো হয়ে গেলো৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা জাপান আজ এক সমৃদ্ধ দেশ৷ দেশটি অন্যান্য কিছুর মাঝে আইসিটি খাতেও ঈর্ষণীয় উন্নতি লাভ করেছে৷ দেশটি দিন দিন এর অফশোর আউটসোর্সিং তথা দেশের বাইরে এর তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট আউটসোর্সিং জোরালোভাবে চলেছে৷ জাপানের এই সম্ভাবনাময় অফশোর আউটসোর্সিংয়ে আমাদের প্রবেশের সমূহ সুযোগ রয়েছে৷ সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে, আমরা এ থেকে বিপুলভাবে অর্থনৈতিক সুফল পেতে পারি৷ সে দিকটির ওপর আলোকপাত করেই এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন৷
সবশেষে আমাদের লেখক, পাঠক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি রইল কমপিউটার জগৎ পরিবারের পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা৷ আগামী দিন সবার ভালো কাটুক মহান আল্লাহর কাছে রইল এ প্রার্থনা৷