লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: আবদুল ওয়াজেদ
মোট লেখা:২৮
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
প্রশিক্ষণ কোর্স
বিসিসি’র আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প
বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের ই-গভর্নেন্সের ওপর প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল তথা বিসিসি ২০০৮ সালের জুলাই মাস থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সূচনা করে। এ প্রকল্পের আওতায় সরকারের ২৫শ’ চাকরিজীবীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ২০০৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০০৯ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই পুরো কর্মসূচিটি ১২৫টি ব্যাচে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ব্যাচে ২০ জন সরকারি চাকরিজীবীর অংশ নেয়ার সুযোগ রাখা যায়।
কমপিউটারের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ হিসেবে প্রতিটি ব্যাচের অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় পাঁচ দিনব্যাপী। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তাদের শেখানো হয় মাইক্রোসফট অফিস : এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল, এমএস পাওয়ার পয়েন্ট; ইন্টারনেট : ই-মেইল, ব্রাউজিং, ভিডিও চ্যাট; ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ এবং আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার। এই প্রশিক্ষণসমূহে প্রশিক্ষক হিসেবে এইচবি কন্সালট্যান্টের প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম CMMI Level ও সফটওয়্যার কোম্পানি বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রেস লি.-এর সহযোগী কোম্পানি।
এই প্রকল্পের পরামর্শক সংস্থা ‘ওপেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া’র স্থানীয় কারিগরি সমন্বয়ক ফায়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের শিক্ষার বিষয়বস্ত্তগুলোকে একটি রঙিন মোড়কে আমাদের শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সাথে বিষয়গুলো শিখতে পারছেন। যেমন একজন সরকারি চাকরিজীবী যিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানতেন না, তিনি যখন ই-মেইল বা চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে তার প্রবাসী আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ করতে শিখছেন, তখন তা অবশ্যই তার কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিসিসির এই প্রশিক্ষণের শেষ ধাপ হলো ‘Training of Trainers’ তথা টিওটি কর্মসূচি। সাধারণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যারা অত্যন্ত ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছেন ও বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তারা যারা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন সেরকম ২৫০ জনকে নিয়ে আয়োজন করা হয় এই টিওটি কর্মসূচির। এই টিওটি কর্মসূচিটি ছিল ১০টি ব্যাচে বিভক্ত এবং প্রতিটি ব্যাচের জন্য একদিনে একটি আট ঘণ্টাব্যাপী ক্লাস নেয়া হয়।
টিওটি কর্মসূচিতে মূলত অংশগ্রহণকারীদের শেখানো হয় কিভাবে তারা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পের প্রশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত দু’জন হলেন মালয়েশিয়ার ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মাহেশ্বরী কানডাসামী এবং মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটির আইটি সার্ভিসেস ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ডেভিড আশীর্ভাথাম।
টিওটি কর্মসূচি সম্পর্কে প্রশিক্ষক মাহেশ্বরী কানডাসামী বলেন, আমরা এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পে যা শিখিয়েছি তা যেন এখানেই থেমে না যায়। এই প্রকল্পে যারা ভালো কর্মসাফল্য দেখিয়েছেন সেরকম কিছু ব্যক্তি যেন ভবিষ্যতে তাদের অফিসের সহকর্মীদের একইভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন সেটিই এই টিওটি কর্মসূচির লক্ষ্য।
বিসিসির এই পুরো প্রশিক্ষণ প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে প্রশিক্ষক ডেভিড আশীর্ভাথাম বলেন, এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা আমাদের প্রশিক্ষণকে খুবই আগ্রহের সাথে নেয়ায় আমি আনন্দিত। আমাদের এখানে এমন অনেক অংশগ্রহণকারী এসেছেন যাদের আইসিটি বা কমপিউটারের যাবতীয় ব্যবহার সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না, কিন্তু যে পদ্ধতিতে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তারা সেটাকে সানন্দে গ্রহণ করেছেন। এই প্রশিক্ষণে আমরা যে সহায়ক বইটি সবাইকে দিয়েছি, তা খুবই সহজবোধ্য। কিন্তু আমাদের এই প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয়। আমরা মূল বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছি, কিন্তু আইসিটি সম্পর্কে তাদের আরো অনেক কিছু জানার আছে। আমি আশা করবো, বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে আরো এগিয়ে আসবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আরো অনেক আইসিটির ওপর দক্ষ জনবল প্রয়োজন।
এই প্রকল্পের টিওটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের একজন হলেন মো: মাহাবুবুর রহমান। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ প্রকল্পটি প্রশংসনীয়। বিশেষ করে আমাদের যে দু’জন প্রশিক্ষক রয়েছেন তারা খুবই যোগ্যতাসম্পন্ন এবং প্রশিক্ষক হিসেবেও অতুলনীয়। আমি সাধারণ ট্রেনিং শেষে এখন ‘ট্রেনিং অব ট্রেইনার্স’-এ অংশগ্রহণ করছি। এই কর্মসূচিতে দুইটি অংশ রয়েছে-Methodologies এবং How to teach the content। এক দিনের ক্লাস এই টিওটি কর্মসূচি প্রশিক্ষণের জন্য যথেষ্ট নয়।
প্রায় একই অভিমত জানান এই প্রকল্পের আরো কিছু অংশগ্রহণকারী। তাদের মতে পুরো প্রকল্পটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং প্রশংসাযোগ্য হলেও টিওটি কর্মসূচির জন্য ন্যূনতম তিন দিনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাদের এই অভিমত থেকেই প্রকাশ পায় যে তারা এই প্রশিক্ষণ সম্পর্কে অত্যন্ত আগ্রহী এবং তারা শিক্ষণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান। আমরা আশা করি আমাদের সরকার এবং বিসিসি ভবিষ্যতে এরকম আরো উদ্যোগ নেবে এবং তা হবে আরো বড় পরিসরে।
কজ ওয়েব