আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যবসায়ের উন্নতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠানে অনেক ধরাবাধা নিয়মকানুন অনুসরণ করে। ব্যবসায়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামোর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। গত ১০ বছরের হিসেবে দেখা গেছে, সারা বিশ্বের অনেক কোম্পানিই তাদের ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠানে খুব দ্রুত কম দামী হার্ডওয়্যার সংযোজন করেছে। পাওয়ার, কুলিং এবং ফ্লোর স্পেসের ভিত্তিতে ডাটা সেন্টারগুলোর সামর্থ্য বাড়ার সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামোর আধুনিকায়নের দিকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। আইডিসির (ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন-একটি বাজার গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং ভোক্তা প্রযুক্তির ওপর) গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ব্যবহারকারী ও অ্যাপ্লিকেশনের সাপোর্টের জন্য প্রতি ডলার হার্ডওয়্যার খরচের সাথে সাথে আরো ৫০ সেন্ট খরচ হয় বর্তমান হার্ডওয়্যারের পাওয়ার ও কুলিংয়ের জন্য। যেহেতু ডাটা সেন্টারগুলো পাওয়ার ও কুলিং ক্যাপাসিটির দিক দিয়ে উঁচু সীমায় পৌঁছেছে, তাই বর্তমানে কর্মদক্ষতাই এর মূল বিষয়বস্ত্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সব প্রতিষ্ঠানের সার্ভারসহ তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামোগুলো আরো সজীব করে তোলা দরকার, যাতে এগুলো থেকে আরো বেশি পারফরম্যান্স ও কর্মদক্ষতা পাওয়া যায়। ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজ বর্তমান বা নতুন ডিজাইন করা ডাটা সেন্টারগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ভিত্তি সরবরাহ করে যাতে কম শক্তি ও জায়গা খরচ করে বেশি পারফরম্যান্স পাওয়া যায় এবং নাটকীয়ভাবে ডাটা সেন্টারগুলোর অপারেটিং খরচ কমে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে এসেছে ইন্টেলের এই প্রসেসর। বিপ্লব সৃষ্টিকারী এই সার্ভার প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাবলী আলোচনা করা হয়েছে এ নিবন্ধে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ইন্টেল মাইক্রোআর্কিটেকচার :
ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজ তৈরি করা হয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাইক্রোআর্কিটেকচারে যাতে এটি যেকোনো কাজের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে এবং বেশি পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রসেসর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে পারে।
ইন্টেল টার্বো বুস্ট টেকনোলজি :
ইন্টেলের এই সার্ভার প্রসেসর তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ইন্টেল টার্বো বুস্ট টেকনোলজি যা প্রসেসর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর মাধ্যমে এবং দ্রুতগতির মাধ্যমে ভালো পারফরম্যান্স প্রদান করে।
ইন্টেল ইন্টেলিজেন্ট পাওয়ার টেকনোলজি :
ইন্টেলের ইন্টেলিজেন্ট পাওয়ার টেকনোলজিতে তৈরি ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজ ব্যবহারে কম বিদ্যুৎ খরচ হয়। এই পাওয়ার টেকনোলজি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রসেসর এবং মেমরিতে সবচেয়ে কম পাওয়ার স্টেটে রাখে। উল্লেখ্য, এ টেকনোলজি এ কাজটি করে পারফরম্যান্সের ওপর খুব কম প্রভাব ফেলার মাধ্যমে।
ইন্টিগ্রেটেড পাওয়ার গেট :
ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজে ব্যবহৃত পাওয়ার গেটগুলো ইন্টিগ্রেটেড। অন্য অপারেটিং কোরগুলোর ওপর কোনোরকম নির্ভরশীলতা ব্যতীত আলাদা আলাদাভাবে কোরগুলোর পাওয়ার কমে শূন্যতে নেমে আসতে পারে।
ইন্টেল ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি :
ইন্টেলের এই সার্ভার প্রযুক্তি নির্মাণে ব্যবহৃত ইন্টেল ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি বিভিন্ন প্রজন্মের ইন্টেল জিওন প্রসেসরভিত্তিক সার্ভারগুলোকে একই পুলে ভার্চুয়ালাইজ করতে পারে। ফলে বেশি ব্যবহারের সময় এটি সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স সরবরাহ করতে পারে এবং কম ব্যবহারের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনতে পারে।
ইন্টেল ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি ফ্লেক্সমাইগ্রেশন :
ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজ তৈরিতে ব্যবহৃত ইন্টেল ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি ফ্লেক্সমাইগ্রেশন বিভিন্ন প্রজন্মের ইন্টেল জিওন প্রসেসরভিত্তিক সার্ভারগুলোকে সমন্বিত করে। ফলে নমনীয়তা, ব্যালেন্স লোডিং এবং রিকভারি ক্ষমতা বাড়ে।
ইন্টেল ৬৪ আর্কিটেকচার :
ইন্টেল ৬৪ আর্কিটেকচার ৬৪-বিট এবং ৩২-বিট অ্যাপ্লিকেশন এবং অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বেশ নমনীয়। আর এ আর্কিটেকচার ব্যবহার করা হয়েছে ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ তৈরিতে।
১৩৩৩ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ডিডিআর থ্রি মেমরি সাপোর্ট : ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজ ১৩৩৩ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ডিডিআর থ্রি মেমরি সাপোর্ট করে। এটি ৬৪ গি.বা./সেকেন্ড পর্যন্ত মেমরি ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে, যা পূর্ববর্তী মেমরি টেকনোলজির তুলনায় ৩ গুণ। এটি ডাটা-ইনটেনসিভ অ্যাপ্লিকেশনগুলোর উচ্চতর পারফরম্যান্সের জন্য ১৪৪ গি.বা. পর্যন্ত সাপোর্ট দেয়।
ইন্টেল আইও অ্যাক্সেলারেশন টেকনোলজি :
ইন্টেল আইও অ্যাক্সেলারেশন টেকনোলজি ব্যবহারে নির্মিত ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজ দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের জন্য ডাটাগুলো খুব ভালোভাবে স্থানান্তর করে। এটি তাৎপর্যপূর্ণভাবে সিপিইউর ওপর বাড়তি চাপ কমায় এবং অপেক্ষাকৃত বেশি কঠিন কাজগুলোর জন্য রিসোর্স ফ্রি করে।
এনহ্যান্সড রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড ম্যানেজ্যাবিলিটি :
ইন্টেল জিওন প্রসেসর ৫৫০০ সিরিজের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এরর কারেক্টিং কোড সিস্টেম বাস, নিউ মেমরি মিররিং এবং ইনপুট/আউটপুট হট-প্লাস। এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য এ প্রসেসরের নির্ভরযোগ্যতা এবং ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা অনেক বেশি।
এতক্ষণ আমরা বাংলাদেশের বাজারে আসা ইন্টেলের সর্বশেষ সার্ভার প্রসেসর ইন্টেল জিওন ৫৫০০ সিরিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাবলী নিয়ে আলোচনা করলাম। এসব আলোচনা থেকে সহজেই বোঝা যায়, যেকোনো ডাটানির্ভর প্রতিষ্ঠান খুব সহজেই এ প্রসেসর ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : polash271@gmail.com