কমপিউটার ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েন। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করা হয় ভালো মানের বিভিন্ন ধরনের টিউনিং টুল। এসব টিউনিং টুলের কোনো কোনোটি পিসির বিদ্যমান সমস্যার সমাধান দিতে পারে, কোনোটি আবার পিসির স্টোরেজ স্পেস ব্যাপকভাবে বাড়াতে পারে এবং বাড়তি ইউটিলিটি ব্যবহারের সুযোগ দেয়, যার ফলে উইন্ডোজে কাজ করতে সহজ হয়। বর্তমানে শত শত ফ্রি এবং বাণিজ্যিক প্রোগ্রাম রয়েছে, যার মধ্যে সীমিতসংখ্যক প্রোগ্রামই ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় সব চাহিদা মেটাতে পারে। এ সংখ্যায় ব্যবহারকারীর পাতায় বর্তমানে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের টিউনিং টুলের মধ্য থেকে সেরা ছয় ধরনের টিউনিং টুলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাঠকদের উদ্দেশে নিচে তুলে ধরা হয়েছে।
টিউনআপ ইউটিলিটিস ২০০৯
গত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে টিউনআপ ইউটিলিটিস। এ স্যুট সব ধরনের টিউনিং ইউটিলিটির চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং আপনার সিস্টেম সেটিংকে রিসর্টিং করার জন্য প্রয়োজনীয় ফিচার অফার করে, যা রেসকিউ সেন্টার নামে পরিচিত। এ স্যুট অনভিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ উভয় ধরনের ব্যবহারকারীর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফিচার অফার করে। যদি আপনি ম্যানুয়ালি মেইনটেনেন্সের কাজ করতে না চান, তাহলে ‘1-click Maintenance’ ফিচারের ওপর ন্যস্ত করতে পারেন, যা এক ক্লিকে মেইনটেনেন্সের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। টিউনআপ ইউটিলিটিস মেইনটেনেন্সের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতি সপ্তাহে করে, ইচ্ছে করলে এ কাজটি আপনার পছন্দমতো সময়ে করার জন্য ম্যানুয়ালি সময় নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন।
টিউনআপ ইউটিলিটিস স্যুটের অন্তর্গত টিউনআপ রেজিস্ট্রি ডিফ্র্যাগ ও রেজিস্ট্রি ক্লিনার মডিউল ব্যবহার করা যায় রেজিস্ট্রি ক্লিন ও অপটিমাইজেশনের কাজে। যদিও অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীরা পছন্দ করেন টিউনআপ রেজিস্ট্রি এডিটর ফিচার যা হলো ম্যানুয়ালি রেজিস্ট্রি এডিটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত টুল রেজিএডিট-এর বিকল্প। টিউনআপ ইউটিলিটি দিয়ে খুব সহজেই রেজিস্ট্রির পরিবর্তনকে ট্র্যাক করা যায়। এই ইউটিলিটির নতুন বুট স্ক্রিন ও আইকন ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবেন www.tuneup.com সাইট থেকে।
সিক্লিনার
ডিস্কস্পেস রিকোভারের জন্য সেরা টুল হিসেবে বর্তমানে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সিক্লিনার (ccleaner) টিউনিং টুল, যা ইন্টারনেট থেকে ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। এ টুল খুব দ্রুতগতিতে এবং অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে টেম্পোরারি ফাইল যেমন অপসারণ করতে পারে, তেমনি পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ডাটাও অপসারণ করতে। এই টুল বিভিন্ন কম্পোনেন্ট যেমন টেম্পোরারি ইন্টারনেট ফাইল, ব্রাউজার হিস্টোরি (ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, ফায়ারফক্স, অপেরা, গুগল ক্রোম এবং এপল সাফারি) ক্লিপবোর্ড, সাম্প্রতিক ডকুমেন্ট, হিস্টোরি রান, মেমরি ডাম্প ইত্যাদি পরিষ্কার অর্থাৎ ক্লিন করতে পারে। এ টুল রেজিস্ট্রি রিপেয়ার যেমন করতে পারে তেমনি পারে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামসমূহকে সফলতার সাথে আনইনস্টলও করতে। সিক্লিনার টুল তার সব কাজই করে বেসিক সেটিংয়ে। তাই ক্লিনিংয়ের কাজ শুরু করার আগে সব কুকিজ বাদ রেখে এ কাজটি করতে হবে। কেননা, এগুলো সচরাচর ভিজিট করা ওয়েবসাইটে লগিংয়ের জন্য দরকার হয়, যা Settings>Cookies ব্যবহার করে সেট করা হয়। ক্লিনিং প্রসেস শুরু করার আগে Analyse বাটনে ক্লিক করলে জানতে পারবেন কতটুকু স্টোরেজ স্পেস খালি করা যাবে। সিক্লিনার অ্যানালিস্ট ন্যূনতম ১৫০ মে.বা. ডিস্ক স্পেস খালি করতে পারে। ওয়েবসাইট : www.ccleaner.com/download
রেজিস্ট্রি সিস্টেম উইজার্ড
আমরা প্রায় সবাই জানি, রেজিস্ট্রি থেকে অসঙ্গতিপূর্ণ আইটেম বা এন্ট্রি যেগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই, সেগুলোকে অপসারণ করলে সিস্টেম কার্যকরভাবে পারফরম করবে। আর ঠিক এ ধরনের কাজ করে রেজিস্ট্রি সিস্টেম উইজার্ড (RSW)। উইন্ডোজ টিউনিংয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি উইজার্ড ইউটিলিটি বা আরএসডব্লিউ স্টার্ট হবার পর WinFAQ-এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রদর্শন করে উইন্ডোজ টোয়েকিংয়ের পরামর্শ। ব্যবহারকারীকে প্রথমে উইন্ডোজের ভার্সন সিলেক্ট করতে হয় এবং তারপর কাঙ্ক্ষিত প্যারামিটার পরিবর্তন করে নিতে হবে। এর ফলে ইনফরমেশন উইন্ডোতে সিলেক্ট করা টোয়েকের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদর্শিত হবে (ওয়েবসাইট : www.winfaq.de)। আরএসডব্লিউ ব্যবহার করে আপনি রেজিস্ট্রি কী ভিইউ ও এডিট করতে পারবেন, নেটওয়ার্কজুড়ে মডিফাই, রেজিস্ট্রি ব্যাকআপ, রিস্টোর ও সার্চ করতে পারবেন কী ওয়ার্ড ব্যবহার করে।
এ ইউটিলিটির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো এর ইন্টারফেস ইংলিশ ভাষায় নয়। আর এ কারণে এ টুলের বর্ণনাকে জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করতে হবে অনলাইন ট্রান্সলেশন টুল ব্যবহার করে।
টেরাকপি
প্রচুর পরিমাণে পুরু ডাটার খন্ড যেমন মুভি বা পুরো পার্টিশন উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারে কপি করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ। টেরাকপি (TeraCopy) নামের ইউটিলিটি বিপুলায়তনের ডাটা অতিদ্রুতগতিতে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে খুব সহজে স্থানান্তর করতে পারে। যদি সফটওয়্যার কোনো করাপ্ট করা অথবা ব্যবহৃত কোনো ফাইলের মুখোমুখি অপ্রত্যাশিতভাবে হয়, তাহলেও এই সফটওয়্যার ফাইল কপি করার কার্যক্রম বন্ধ না করে সেসব ফাইল এড়িয়ে গিয়ে তার কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
যদি দুটি ভিন্ন ড্রাইভার ব্যবহার হয়, তাহলে কপি করার প্রসেসটি অ্যাসিনক্রোনাসভাবে হয় এবং এক্ষেত্রে ডায়নামিক মেমরি বাফার ব্যবহার করার ফলে ল্যাটেনসি কমে যায়।
টেরাকপি ইনস্টলেশনের পরে কনটেক্সট মেনুতে যুক্ত করে নতুন এন্ট্রি। ফাইল কপি করতে চাইলে ফাইলে রাইট ক্লিক করে TeraCopy > Copy to অপশন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর ব্রাউজার ব্যবহার করে টার্গেট ফোল্ডার সিলেক্ট করলে ফাইল কপি হয়। একইভাবে Move to অপশন ব্যবহার করে ফাইল স্থানান্তর বা মুভ করতে পারবেন। যদি আপনি বিভিন্ন ফোল্ডার থেকে সিঙ্গেল লোকেশনে ফাইল কপি করতে চান, তাহলে প্রথমে ‘Add’ ফাংশন ব্যবহার করে সেসব ফাইল টেরাকপি লিস্টে যুক্ত করতে হবে। ফাইল ও ফোল্ডার ড্র্যাগিং করেও এ লিস্টে যুক্ত করতে পারবেন। ফ্রি ভার্সন পাওয়া যাবে www.codesetor.com সাইট থেকে।
ইবুস্টার
হার্ডডিস্ক থেকে ডাটা লোড করানোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে অধিকতর দ্রুতগতিতে ডাটা লোড করানো যায় র্যাম থেকে। এটি বাস্তব সত্য। আর এ সুবিধাটি পুরোমাত্রায় গ্রহণ করেছে ইবুস্টার (eBooster) নামের সফটওয়্যারটি। এর ফলে অ্যাপ্লিকেশনের স্টার্টআপ সময় ব্যাপকভাবে কমে যায় ক্যাশিং (caching) সিস্টেমের কারণে। এ সফটওয়্যারটি ইবুস্টার চালু করে কাজ করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে ক্যাশ মেমরি হিসেবে র্যাম বা এক্সটারনাল স্টোরেজ ডিভাইসকে সেট করতে হবে এবং স্লাইডার ড্র্যাগিংয়ের মাধ্যমে ক্যাশ মেমরির সাইজ নির্দিষ্ট করতে হবে। ক্যাশ মেমরির সাইজ নির্ভর করে ইনস্টল করা র্যাম বা স্টোরেজ ডিভাইসের ক্ষমতার ওপর। এই ফিচারটি উইন্ডোজ ভিসতার রেডিবুস্ট (ReadyBoost)-এর ফিচারের মতো কিন্তু অ্যাপ্লিকেশন এক্সেলারেশনের জন্য শুধু ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ এবং উইন্ডোজ স্টার্টআপ ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি ইবুস্টার সর্বোচ্চ চারটি সংযুক্ত ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবেন। ইবুস্টারের মূল উইন্ডোজের নোটিফিকেশন অঞ্চলে এর আইকনে ডাবল ক্লিক করে সহজে এক্সেস করা যায়। এই সফটওয়্যার ক্যাশ তৈরি করতে যে সময় নেবে ততক্ষণ আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। যখন স্ট্যাটাস সক্রিয় হবে, তখন এক্সেসের স্পিডের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। কেননা ক্যাশিংয়ের জন্য র্যাম ব্যবহার হয়। এর ফলে কমপিউটারের এক্সেস স্পিড ২৭ মে.বা./সে. হতে ৮৬৩ মে.বা./সে.-এ উন্নীত হয়।
ইবুস্টার উইন্ডোজ এক্সপিতে অনেকটা ভিসতার সুপারফেচ (SuperFetch) ফিচারের মতো আরচণ করে। যেসব প্রোগ্রামে নিয়মিতভাবে এক্সেস করা হয় সেসব প্রোগ্রামের এবং স্টার্টআপ আইটেমের ওপর নোট তৈরি করে এবং বুট প্রসেসকে এমনভাবে অপটিমাইজ করে যেন মনে হবে, এ প্রোগ্রামগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভিসতা ব্যবহারকারী ইবুস্টার ব্যবহার করতে পারবেন ভিসতার রেডিবুস্ট ফিচারকে অপটিমাইজ করার জন্য। এই ইউটিলিটির ফ্রি ভার্সন শুধু দু’ ঘণ্টার জন্য ব্যবহার করা যাবে। ওয়েবসাইট- http:www.ebooster
রিভাটিউনার
গ্রাফিক্স প্রসেসর ইউনিট বা জিপিইউ-কে ওভারক্লক করা যায়, তবে এ কাজটি বেশ ঝুকিপূর্ণ। আর এ কারণে এনভিডিয়া এবং এটিআই উভয়ই ওভারক্লকিং অপশনকে তাদের ড্রাইভারের গভীরে লুকিয়ে রেখেছে। যাই হোক, রিভাটিউনার (RevaTuner) ব্যবহার করে কোর সেটিং এবং মেমরি স্পিড সেটিংয়ে এক্সেস করতে পারবেন। এই সফটওয়্যার জিপিইউ ওভারক্লকিংয়ের দুটি মোড অফার করে। অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছে সেটিং লিস্ট আর নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য ট্যাব-এর সুবিধা যাতে তারা নিরাপদে কাজ করতে পারে। এ মোডে শুধু রেজিস্ট্রি ও ড্রাইভারের সেটিং পরিবর্তন করা যায়।
জিপিইউ ওভারক্লক করতে চাইলে- ‘RivaTuner\NVIDIA\Overclocking\Current device’ সেকশনে নেভিগেট করুন এবং সিলেক্ট করুন প্রিসেট অপশন। আপনি ইচ্ছে করলে ফ্যান স্পিডকেও টোয়েক করতে পারবেন যার জন্য নেভিগেট করতে হবে ‘RivaTuner\NVIDIA\Fan\Current device’. যদি জিপিইউ ওভারক্লকিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তাহলে ‘Driver settings’ ফিল্ডের ড্রপডাউন লিস্টের ‘Customize’-এ ক্লিক করুন এবং সিলেক্ট করুন ‘System settings’ অপশন। এর ফলে একটি সিস্টেম টোয়েকের ডায়ালগ বক্স আবির্ভূত হবে যেখানে পাবেন কোর সেটিং ও মেমরি স্পিড সমন্বয়ের সুবিধা। www.guru3d.com সাইড থেকে এ সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যায়।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com