• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ২০১১ সালকে বাংলাদেশ ডিজিটালবর্ষ ঘোষণার প্রস্তাব
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কামাল আরসালান
মোট লেখা:৫৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
২০১১ সালকে বাংলাদেশ ডিজিটালবর্ষ ঘোষণার প্রস্তাব

১২ আগস্ট হোটেল শেরাটনের বকুল কক্ষে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারের উদ্যোগে সম্প্রতি আয়োজিত হয় ‘রোডম্যাপ ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। গোলটেবিলে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। গোলটেবিলে আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিস সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আখতারুজ্জামান মঞ্জু, বিএনএনআরসি’র সিইও বজলুর রহমান, ইন্টেলের কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার জিয়া মনজুর, ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: সবুর খান, সাবেক বিসিএস প্রধান নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ফয়জুল্লাহ খান, ডাটা সফটের সিইও মঞ্জুর মাহমুদ, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের হাইটেক পার্কের পরিচালনায় নিযুক্ত শফিকুল ইসলাম, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের পাবলিক সেক্টর ম্যানেজার ইমরান আল আমিন, স্টার কমপিউটারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলী আকবর খান, এনসিসি ব্যাংকের আইটি ম্যানেজার তপন কান্তি সরকার, ইউনিভার্সিটি অব ব্র্যাডফোর্ডের ড. আলমগীর হোসেন, বিসিএসের প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা জববারের পক্ষে সিইও বীরেন্দ্রনাথ অধিকারী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মডারেটরের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান।

আড়াই ঘণ্টাব্যাপী গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বক্তাদের আলোচনা থেকে লক্ষ করা যায়, বর্তমান সরকারের ঘোষিত ‘২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ’ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ইকবাল সোবহান চৌধুরী তার বক্তব্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব রেখেছিলেন, যেনো ২০১১ সালকে ডিজিটালবর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। উপস্থিত সুধীবর্গ এ প্রস্তাবকে সমর্থন করে বক্তব্য রেখেছেন। গোলটেবিলের মূল আলোচনায় উঠে আসে হাইটেক পার্ক, ওপেন সোর্স ও লাইসেন্সড সফটওয়্যার, ইন্টারনেটের ফি কমানো ও ভ্যাট অপসারণ, ডিজিটাল অ্যাডভাইজার নিয়োগ, ডিজিটাল সেক্রেটারিয়েট গঠন ও মহাখালীতে আইটি পার্ক নির্মাণ, গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে বিরাজমান ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার উদ্যোগ, ইন্টেলিজেন্ট উপজেলা, ডিজিটাল উপজেলা, দ্বিতীয় ইনকিউবেটর স্থাপনের প্রস্তাবনা, সারাদেশে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন, অবিলম্বে আইসিটি ক্যাডার সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ প্রভৃতি।



মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ইমরান আল আমিন জানালেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মাইক্রোসফটও সহযোগিতা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাংলা ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজ ভিসতা অথবা অফিস ২০০৭-এ ফ্রি ডাউনলোডের মাধ্যমে মাইক্রোসফট ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক থেকে বাংলায় কাজ করতে পারবেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের সহযোগিতায় মাইক্রোসফট লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রামের আওতায় কাজটা করা হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় ব্যবহারকারীরা এখন থেকে মাতৃভাষাতেই উইন্ডোজে কাজ করতে পারবেন। সরকারি কর্মকর্তারাও তাদের দাপ্তরিক কাজে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ব্যবহারের সুবিধাগুলো পাবেন। এর ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সহজতর হবে।

ইনকিউবেটর স্থাপনের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন আলী আকবর খান। তিনি উল্লেখ করেন মহাখালীতে যে ৪৭ একর স্থান নির্ধারিত আছে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আইটি পার্ক নির্মাণের জন্য, সেখানেই দ্বিতীয় ইনকিউবেটর গড়ে তোলা যায়। এর ফলে অনেক তরুণ প্রতিভাবান সফটওয়্যার কুশলী ও বিনিয়োগকারীরা আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ পাবেন এবং দেশের সফটওয়্যার শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ফয়জুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে তৈরি করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা। তৃণমূল পর্যায়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে হবে। আর এর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমমানের মাদ্রাসাগুলোকে সর্বপ্রথমে ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতাধীন করতে হবে।

শিক্ষার সব ধাপে থাকতে হবে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ও তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকতে হবে পর্যায়ক্রমিক একটি ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা এবং তা মাদ্রাসা বোর্ডকেও অনুসরণ করতে হবে, তাদেরও সর্বোচ্চ সহায়তা করতে হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। সেজন্য একটি আইটি পার্ক বা আইটি ভিলেজ তৈরি করা যেতে পারে, যা বাংলাদেশের ডিজিটালপ্রযুক্তি উন্ন্য়নে সহায়তা করবে। কেননা, এই পার্কে একই ছাদের নিচে বসে বিশ্বের আন্তর্জাতিক মানের আইটি পেশাজীবীরা একে অন্যের সাথে মতবিনিময় করতে পারবেন। সাথে সাথে উন্নতি সাধিত হবে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজির। তবে এই ধারণাকে বাস্তবায়িত করার জন্য এর সাথে সম্পৃক্ত আরও কিছু ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- সেখানে হাই স্পিড ইন্টারনেটের পাশাপাশি কমপিউটারের সহজলভ্যতা থাকতে হবে, আর থাকতে হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।

বিশেষ অতিথি হাসানুল হক ইনু তার দীর্ঘ বক্তব্যে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ডিজিটাল ডিভাইড। এই বৈষম্য ধনী-গরিবের মধ্যে, গ্রাম-শহরের মধ্যে। বর্তমানে দেশের মাত্র ৩২ শতাংশের হাতে মোবাইল সেট আছে। তাই সংশোধিত বাজেটে অবশ্যই সেটের ট্যাক্স বাতিল করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক যেসব কার্যক্রম গ্রামের মানুষকে বেশি উপকৃত করবে সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে প্রণোদনা দিতে হবে। ইতোমধ্যে ভূমিব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি কমিউনিটি রেডিও ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। এর ফলে নিরক্ষরসহ কৃষক সমাজ বিশেষ উপকৃত হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ দেশের ৪০টি মন্ত্রণালয়ে কলসেন্টার চালু করার কথা বলেন। এর ফলে কৃষকসহ গ্রামের মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রামে বসেই সংগ্রহ করতে পারবে। তিনি দাবি করেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মাসিক হার খুব বেশি, সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইডথ ফির পরিমাণও বেশি। টেলিফোন যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রেও কর ধার্য করা আছে। ডিজিটাল ক্যামেরার ওপর উচ্চহারে কর বিরাজমান। এক্ষেত্রে কর শিথিল করলে বিপুল পরিমাণে তরুণ প্রজন্মের আর্থিক উপার্জনের পথ সুগম হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হলো বিদ্যুতের ব্যাপক অভাব। এর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ জনগণকে তথ্যসেবা দেয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত টেলিসেন্টারগুলোর কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সৌরশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলোর ওপরও বর্তমানে কর আরোপ রয়েছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই সংশোধিত বাজেটে ইন্টারনেটসহ উল্লিখিত সব ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর ট্যাক্স অনেক কমাতে হবে। তিনি গ্রামের স্কুল-কলেজের কমপিউটার ল্যাবের জন্য স্বল্পসুদে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করেন। হাসানুল হক ইনুও ২০১১ সালকে ডিজিটালবর্ষ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব করেন। তিনি আরো বলেন ডিজিটালবর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্ক অঞ্চলের মধ্যে ডিজিটাল সামিট আহবান করতে পারেন যেন এ অঞ্চলের ১৫০ কোটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের পথ বেগবান হয় তথ্যপ্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে।

তপন কান্তি সরকার বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি গোলটেবিলে উপস্থিত মাইক্রোসফটের বাংলাদেশী প্রতিনিধির কাছে অনুরোধ জানান, বাংলাদেশী ব্যবহারকারীদের জন্য সার্কের অন্যান্য দেশের মতো মাইক্রোসফট যেনো তাদের পণ্যের দাম প্রোডাক্টের মূল্য কমিয়ে দেয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি মাইক্রোসফটের পণ্যের দাম কমানো না হয়, তাহলে ওপেন সোর্সের দিকে ঝুঁকবে। তপন কান্তি আরো জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কর্মকান্ডে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর সবচেয়ে অগ্রগামী। প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে যেমন- এটিএম, পিওএস, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে রিয়েল টাইম অনলাইন সার্ভিস দিচ্ছে। এই সার্ভিস ক্রমান্বয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে ১২০০ এটিএম ও ১০,০০০ পিওএস কাজ করছে। কিছু ব্যাংক এসএমএস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সার্ভিসও চালু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস চালু করতে যাচ্ছে এ বছরের নভেম্বর মাসে। এই সাফল্য শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য একটি বিশেষ সংযোজন।

ইন্টেলের জিয়া মঞ্জুর এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইসিটির ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহিত করার জন্য সহজশর্তে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এসএমইগুলো অবশ্যই কমপিউটারাইজ্ড হওয়া আবশ্যক। তিনি আরো উল্লেখ করেন, আইসিটিতে একসেস বাড়ানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কমপিউটার লোন স্কিম চালু করা উচিত।

বিসিসির হাইটেক পার্ক কার্যক্রমের প্রধান শফিকুল ইসলাম বহুল আলোচিত হাইটেক পার্কের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। বর্তমানে ২৪০ একরবিশিষ্ট পার্কের মূল কাঠামোগুলো যেমন প্রশাসনিক ভবন, সীমানা দেয়াল, ফটক, ভেতরে চলাচলের রাস্তাসমূহ, দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, টেলিফোন সাব এক্সচেঞ্জ ইত্যাদির কাজ সমাপ্তির পথে। এখানে আইটি, আইটিইএস ইলেক্ট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি রফতানিমুখী শিল্পের উদ্যোক্তাদের আহবান করা হচ্ছে। উদ্যোক্তারা যদি প্লট নিয়ে নিজেরাই নিজেদের শিল্পের জন্য বিল্ডিং বানাতে চান তাদেরও সুযোগ দেয়া হবে। কোনো উদ্যোক্তা পার্কটির ডেভেলপার হিসেবে এগিয়ে আসলে পিপিপি প্রজেক্ট হিসেবেও করতে পারবেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করেন হাইটেক প্রজেক্টটি বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক হবে।

গোলটেবিলের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, আলোচিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে প্রথমেই ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু করতে হবে। সরকারি অফিসগুলোর কার্যক্রম, শিক্ষা কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, আইটি কার্যক্রম, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজ ইত্যাদি ডিজিটাইজ্ড করতে হবে। সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া আইসিটি নীতিমালায় ৩০৬টি কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর চিন্তাভাবনা করছে কোনগুলো আগে কতটুকু করতে হবে। এই পরিকল্পনায় বেশ সময়ের প্রয়োজন। তাই ২০০৯ সালে এই কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১০ সাল লেগে যাবে চূড়ান্ত রোডম্যাপ তৈরি করতে। তাই অর্থমন্ত্রী ২০১১ সালকে ডিজিটালবর্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন।

গ্রাম ও শহরের ব্যাপক ডিজিটাল ডিভাইডের ব্যাপারটা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মাত্র ৪% মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সারাদেশে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ে সাইবার কাফে বানানোর উদ্যোগের কথা জানান। সেখানে অত্যন্ত কম খরচে ইন্টারনেট সংযোগ (ঘণ্টায় ৫/১০ টাকা) দেয়া হবে। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষও ইন্টারনেট ব্যবহার বা ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা নিতে পারবে।

বেসিস সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাটি দেশের সবার মধ্যেই বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিশেষ উৎসাহের সঞ্চার করেছে। এখন প্রয়োজন হলো এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সুপারিশ করা কার্যক্রমগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। তিনি বলেন, জাতীয় আইসিটি পলিসি ২০০৯ এই লক্ষ্যেই প্রণীত হয়েছে। এখানে যেসব পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো নির্ধারিত রোডম্যাপ অনুযায়ী বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে মানুষ কিভাবে লাভবান হবে সে সম্পর্কে সবাইকে অবহিত রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

আখতারুজ্জামান মঞ্জু ডিজিটাল ডিভাইড দূর করে গ্রামীণ জনগণকে তুলে আনার জন্য তাদের কয়েকটি সাহসী পদক্ষেপের কথা উল্লে¬খ করেন। শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য তারা ঢাকার বাইরে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সার্ভিস দেবেন। প্রথম বছরে আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে। প্রথম সংযোগ দেয়া হয়েছে হাসানুল হক ইনুর এলাকার কলেজে। এখন এই সার্ভিস অত্যন্ত সফলভাবে কাজ করছে। ঈদের পর ঢাকার সোনারগাঁও, কুমিল্ল¬া, বরিশাল ইত্যাদি জায়গায় সংযোগ দেয়া হবে। ইন্টারনেট সংযুক্ত উপজেলাগুলোকে তারা ইন্টেলিজেন্ট উপজেলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সেই সঙ্গে তারা ১০০০ তরুণকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। লক্ষ্য করা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের দারুণ অভাব। তাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে শিক্ষকদের ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। আখতারুজ্জামান মঞ্জু আরো বলেন, ডিজিটাল ডিভাইড কমাবার জন্য তারা পল্লী¬ এলাকায় ২ পয়সা মিনিটে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের কনটেন্ট ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থা করেছেন।

সবুর খান বলেন, একটি উপজেলাকে কিভাবে ১০০% ডিজিটাল করা যায় সে ব্যাপারে তারা কাজ করছেন। তারা কার্যক্রমটি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে করছেন। সেখানে আইটি শিক্ষা, ইন্টারনেট ট্রেনিং, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। তিনি আশাবাদী একটি উপজেলাকে সফলভাবে ডিজিটাল উপজেলায় রূপান্তরিত করতে পারলে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য উপজেলাতেও তা প্রয়োগ করা যাবে।

গোলটেবিল আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ

২০১১ সালকে ডিজিটালবর্ষ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব
হাইটেক পার্কের বাস্তবায়ন
ইন্টারনেটের ফি কমানো ও ভ্যাট অপসারণ
ডিজিটাল অ্যাডভাইজার নিয়োগ
ডিজিটাল সেক্রেটারিয়েট গঠন
মহাখালীতে আইটি পার্ক নির্মাণ
গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে বিরাজমান ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার উদ্যোগ
ইন্টেলিজেন্ট উপজেলা
ডিজিটাল উপজেলা
দ্বিতীয় ইনকিউবেটর স্থাপনের প্রস্তাবনা
সারাদেশে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন
অবিলম্বে আইসিটি ক্যাডার সৃষ্টি
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ।


কজ ওয়েব

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস