• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সৃজনশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি বিপ্লব
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সৃজনশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ

আমরা আগামী দিনের বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে উপস্থাপন করছি। এই উপস্থাপনার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ২০২১ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। বলা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে সেটিই আমাদের স্বপ্ন। আমরা এরই মাঝে এই ঘোষণার জন্য প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি। বিষয়টি আমাদের সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়েও আছে। সরকার ও এর নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি তাৎপর্যের সাথে নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে একটি তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালাও প্রণীত হয়েছে। সেই নীতিমালার অংশ হিসেবে ৩০৬টি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছেও ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি তুলে ধরেছেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ রোডম্যাপ দেখিয়েছেন বিনিয়োগকারীদেরকে। এই কর্মযজ্ঞ বা মহাযজ্ঞে শুধু আমরাই যুক্ত নই, দুনিয়ার প্রায় সব দেশ এই রূপান্তরের জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এরই মাঝে ব্রিটেন নিজেকে ডিজিটাল ব্রিটেন বানানোর ঘোষণা দিয়েছে ও সেই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দসহ জরুরি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। মালয়েশিয়া পা বাড়িয়েছে মাল্টিমিডিয়ার সুপার পাওয়ার হবার জন্য। তাদের ‘সাইবার জায়া’ দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের এ খাতে কাজ করার দশক পার হয়েছে। ভিয়েতনাম চেষ্টা করছে গেমিং জগতের উঁচু আসনটি নেবার জন্য। এরা এমনকি এটিও বলছে, এশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি মানবসম্পদ যোগান দেবে ভিয়েতনাম। সিঙ্গাপুর এরই মাঝে ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে। কোরিয়া ‘ই’ বলার সময় পার করে এখন সর্বত্র (ইউবিকুটাস) ডিজিটালপ্রযুক্তির জন্য কাজ করছে। শ্রীলঙ্কা এখন কাজ করছে ই-শ্রীলঙ্কার জন্য। এসেত্মানিয়া হয়ে যাচ্ছে ই-সেত্মানিয়া। অথচ এসব ‘ই’ বা ‘ডিজিটাল’ কিছু না বলে থাইল্যান্ড বলছে ‘ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড’ গড়ার কথা।

আমরা অনেকেই ছিলাম সেদিন। বাংলাদেশ থেকে একটি বিশাল প্রতিনিধি দল এবং থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের তথ্যপ্রযুক্তি জাতীয় সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ সেখানে জড়ো হয়েছিলাম। এসোসিও’র বড় বড় নেতা মালয়েশিয়ার লী এবং থাইল্যান্ডের বুনরাকের সাথে জাপান থেকে লুকাস লিমও এসেছিলো। ব্যাঙ্ককের অভিজাত নভোটেল সিয়াম হোটেলের সম্মেলন কক্ষটি উৎসবের আমেজে সাজানো ছিল।

২০০৯ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে এসোসিও (এশিয়ান-ওশেনিয়ান কমপিউটিং ইন্ডাস্ট্রিজ অর্গানাইজেশন) নামের একটি আঞ্চলিক তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ব্যাঙ্কক বিজনেস ভিজিট নামের একটি অনুষ্ঠানে আমরা ব্যাঙ্ককের নভোটেল সিয়াম হোটেলে জড়ো হয়েছিলাম। আমার সাথে ছিলেন আমার বন্ধু ও এসোসিও’র ভিপি আব্দুল্লাহ এইচ কাফি। আমার সমিতির পরিচালকরাও ছিলেন- শফিক ভাই, সাইদ মুনির, ইউসুফ আলী শামিম, আশরাফ প্রমুখ।

সেখানেই প্রথম শুনলাম এক নতুন ও অভিনব ভাবনার কথা। ভাবনাটির নাম ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড।

কারও জন্য এটি বিস্ময়ের ছিল কি না সেটি জানি না, তবে সত্যি সত্যি আমি অবাক হয়েছিলাম যখন থাইল্যান্ডের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সিপার প্রধান তার বক্তব্যে ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড কর্মসূচির কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বললেন। আমাদের ব্যাঙ্কক বিজনেস ভিজিটের অন্যতম আয়োজক এই সরকারি সংস্থার প্রধান খুব সহজে এমন একটি নতুন ধারণা পেশ করলেন, যা সত্যি সত্যি নতুন গন্তব্য ও প্রক্রিয়ার সন্ধান দেয়। থাইল্যান্ডের সেই কর্মসূচি তখন অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। কারণ, থাইল্যান্ড তাদের সৃজনশীলতাকে কিভাবে কোথায় ব্যবহার করতে চায় সেটি হয়তো সবার কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তবে ৩১ আগস্ট ২০০৯ থাই প্রধানমন্ত্রী অভিসিত শেটি খুবই স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘‘The Creative Thailand policy seeks to increase the value of Thai products and services from history, culture and traditions, wisdom, and innovations. This concept is in line with sustainable development and the environment-friendly economy. If creative thinking were added to its production and industry, Thailand would be able to increase enormously the value of its agricultural and industrial products, as well as services. He cited Thai food and handicrafts as examples in which uniqueness and creativity could be used to create greater value, based on the Thai identity, rich in artistic and aesthetic traditions.’’

আমরা যদি থাই প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলোর সাদামাটা ব্যাখ্যা করি, তবে এটি স্পষ্ট হবে, এই জাতি থাইল্যান্ডের পণ্যের সাথে তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবিষ্কারকে যুক্ত করে সেই সব পণ্যের উপযোগিতা বাড়াতে চায়। বাংলাদেশের সম্মানিত অর্থনীতিবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক, আমলা, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ যদি এটি অনুভব করতো তবে আমরা আমাদের বন্ধ্যা অর্থনীতিকে পাল্টে দিতে পারতাম।

এবারের ঈদের কেনাকাটা করা ও দেখার জন্য আমি দু’দিন ঢাকার বাজারে গিয়েছিলাম। একটি বড় বাজারে দেখলাম দেশের দশটি পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান একসাথে ‘দেশী দশ’ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এক সময়ে এমন প্রতিষ্ঠানের কথা আমরা ভাবতেই পারতাম না। বরং ভারতের কাপড়, বিশেষত শাড়ি না এলে বাঙালী রমণীর ঈদ হতো না। অথচ আমরা এখন যেসব প্রতিষ্ঠানকে দেশীয় কাপড় তৈরির জন্য চিনি তাদের প্রায় সবই দেশী দশ উদ্যোগের মাঝে আছে। ওখানে প্রচন্ড ভিড় দেখলাম। শত শত মানুষকে হাজার হাজার টাকার পণ্য কিনতে দেখলাম। আরেক দিন একটি বাজারে গেলাম পরিবারের জন্য কিছু কাপড় কেনার জন্য। একটি দেশী কাপড়ের দোকান থেকেই আমি মেয়েদের শাড়ি, ছেলেদের ফতুয়া ও পাঞ্জাবি কিনতে পারলাম এবং এগুলো দেখতে এত সুন্দর যে আমি অভিভূত হলাম। কেউ যদি এসব কাপড়ের গজ হিসেবে দাম এবং এর বিক্রয়মূল্য তুলনা করেন তবে দেখবেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সৃজনশীল মানুষ কতটা নতুন উপযোগ যুক্ত করেছে। কোনো কোনো কাপড়ে এই উপযোগ যুক্ত করার পরিমাণ চারগুণের মতো। কারণ, দুইশ’ টাকার কাপড় এক হাজার টাকায় আমি কিনছি। এটি আমরা আমাদের কৃষি ও শিল্প পণ্যে ব্যাপকভাবে করতে পারি। ঢাকার কার্জন হলের সামনে, সাভারে জয় রেস্তরাঁর পেছনে বা দেশের আনাচেকানাচে আমাদের সৃজনশীল মানুষেরা যেভাবে তাদের প্রাণের পরশ ও প্রযুক্তিকে যুক্ত করছে, তার কোনো তুলনা নেই। আড়ং নামের যে বিশাল চেইনটি এখন দেশকে বিশ্বজোড়া প্রতিনিধিত্ব করে বা বিবি রাসেল যে আমাদের গামছার ডিজাইনকে বিশ্বজুড়ে বিসত্মৃত করছেন, এই সৃজনশীলতার মূল্য দিতে না পারলে আমরা অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারব না। আমাদের জামদানি, আমাদের নকশীকাঁথা, আমাদের কাঠ, বাঁশ, বেতের ডিজাইন যেমন সৃজনশীলতাকে প্রতিনিধিত্ব করে তেমনি ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি করা নছিমন-করিমনও আমাদের শিল্পদক্ষতা ফুটিয়ে তোলে। এমনকি আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যে দেশীয় ছাপ আনতে পারে নতুন উপার্জনের পথ।

থাই প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, এর ফলে থাইল্যান্ড তার কৃষি, শিল্প ও সেবা পণ্যের উপযোগ একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে। একে এরা সৃজনশীল অর্থনীতি বলেও অভিহিত করছে। থাই সরকার তাদের ২০১২-১৬ মেয়াদী একাদশ পরিকল্পনা অর্থাৎ ক্রিয়েটিভ থাইল্যান্ড কর্মসূচি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এজন্য থাই সরকার এরই মাঝে ২০টি সৃজনশীল প্রকল্পে মোট ৩৮০ কোটি বাথ (থাই মুদ্রা) ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০১২ সালের মাঝে সৃজনশীলতা থেকে মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ২০ ভাগ উপার্জন করা। ২০০৬ সালে এরা এ খাতে শতকরা ১০-১২ ভাগ আয় করেছে। থাই প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেন, তার সরকার চারটি খাতে সৃজনশীলতাকে সহায়তা করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক. সৃজনশীল অবকাঠামো, খ. সৃজনশীল শিক্ষা ও মানবসম্পদ, গ. সৃজনশীল সমাজ ও প্রণোদনা এবং ঘ. সৃজনশীল বাণিজ্য উন্নয়ন ও বিনিয়োগ। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, থাইল্যান্ডের মেধাসম্পদ সুরক্ষার বিষয়টিও এতে গুরুত্ব পাবে।

বাংলাদেশে যারা কপিরাইট বা মেধাসম্পদ সম্পর্কে খবর রাখেন তারা জানেন এই সৃজনশীলতার জন্য আমি ১৯৮৮ সাল থেকেই যুদ্ধ করে আসছি। এজন্য আমি বিজয় কীবোর্ডের কপিরাইট পাই ১৯৮৯ সালে। আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সে মামলায় জয়ী হই। এরপর ক্রমান্বয়ে ডিজাইন, ট্রেডমার্ক ও প্যাটেন্ট অর্জনের লড়াইয়ে আমি জয়ী হই। এমনকি এখন আমি প্যাটেন্ট প্রয়োগের লড়াইয়েও জয়ী হয়েছি। বাংলাদেশের আর কেউ মেধাসম্পদের প্যাটেন্ট অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে বলে আমি এখনও জানি না।

এসব ভাবনাতেই আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচিতে খুবই স্পষ্টভাবে বলেছি, বর্তমানের বস্ত্তগত সম্পদ দিনে দিনে মেধাসম্পদে পরিণত হবে এবং অর্থনীতি হবে মেধাসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। ‘২০২১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় দুই হাজার ডলারে উন্নীত করতে হবে। ধীরে ধীরে জিডিপির বৃহৎ অংশ মেধাজাত সম্পদ থেকে উৎপন্ন করতে হবে।’ থাইল্যান্ড যে তার সৃজনশীল কাজের উৎস্য থেকে জাতীয় আয়ের শতকরা ২০ ভাগ ২০১২ সালে আয় করতে চায় তার সাথে আমার ভাবনাটি কতটা মিলে সেটি আগের লাইনটি থেকেই উপলব্ধি করা যায়। আরও স্পষ্ট হয় যদি পরের একটি লাইন আমরা পাঠ করি। আমি লিখেছি- ‘বাংলাদেশের শিল্পসমূহ কৃষিভিত্তিক, ভোক্তা বা লাইফ স্টাইলভিত্তিক এবং জ্ঞানভিত্তিক হিসেবে বিবেচিত হবে।’ এর পর আমি আরো স্পষ্ট করে লিখেছি- ‘জ্ঞানভিত্তিক শিল্প ও সেবার ভিত্তি হবে মেধাভিত্তিক। পূর্বোক্ত খাতসমূহে প্রযুক্তি সরবরাহ, উচ্চতর প্রযুক্তির জন্য গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিরোধ ছাড়াও রফতানি আয় এই খাতের অন্যতম লক্ষ্য হবে। মেধা সৃষ্টি ও সুরক্ষার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’

থাইল্যান্ড তাদের সৃজনশীল থাইল্যান্ড ঘোষণা দিয়ে আমার সেই ভাবনাটির একটি বাস্তবতাকেই স্বীকার করল। প্রশ্ন হতে পারে, শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেই কি আমরা থাইল্যান্ড যা ভাবছে, তাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি? আমার জবাব হলো, অবশ্যই। কারণ, আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচিতে সৃজনশীলতা ও মেধাজাত সম্পদের গুরুত্বকে ব্যাপকভাবে চিহ্নিত করেছি।

সবচেয়ে বড় যে কথাটি আমি বলতে চাই, সেটি হলো- একটি সৃজনশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমার ক্ষুদ্র ক্ষমতার উদ্যোগটি আমি অনেক আগেই নিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তির সাথে যুক্ত হবার দিন থেকেই একে আমি সৃজনশীলতার হাতিয়ার হিসেবে দেখতে চেয়েছি, ব্যবহার করতে চেয়েছি এবং ব্যবহারকারী তৈরির চেষ্টা করেছি। আনন্দ মাল্টিমিডিয়া, আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও বিজয় ডিজিটাল স্কুল- এসব সেই সাক্ষ্যই বহন করে। এবার আমি এই সৃজনশীলতার দ্বিতীয় স্তরে কাজ করার প্রয়াস নিয়েছি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ময়মনসিংহে ১১২ জন সুবিধাবঞ্চিত তরুণীকে ডিজিটাল আর্ট তথা অ্যানিমেশনে প্রশিক্ষণ দেবার সূচনা থেকে এর একটি বড় স্তর আমি অতিক্রম করেছি। ১১২ জন মেয়ের মধ্য থেকে আমরা ৬৩ জন মেয়েকে বাছাই করে গত ১ অক্টোবর ২০০৯ থেকে আকঁতে শেখার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করছি। এরা কাগজে-পেন্সিলে-তুলিতে অাঁকতে শিখবে। ময়মনসিংহের পাঁচজন চারুকলা শিক্ষক এখন এদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আমরা আশা করি, প্রথম ৮টি ক্লাসের পর আমরা এই দল থেকে অন্তত জনাচল্লিশেক মেয়েকে অঙ্কন শেখার চূড়ান্ত প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করতে পারব। এর মধ্য থেকে অন্তত জনাবিশেক মেয়েকে আমরা ডিজিটাল আর্টের জগতে নিতে পারব। এই ডিজিটাল শিল্পীরা অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ও প্রকাশনার কাজে দক্ষ হবে। আমি কামনা করি, এই দলটি বাংলাদেশের সৃজনশীলতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। একইভাবে আমরা ময়মনসিংহ বা খুলনার একটি সৃজনশীল সঙ্গীত দল তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। সেই দলটি ডিজিটাল ইন্টারেকটিভ জগতে ডিজিটাল সঙ্গীতের নতুন মাত্রা যোগ করবে। এমন উদ্যোগ প্রতি জেলায় হতে পারে, অনেকেই এমন উদ্যোগ নিতে পারেন। এই প্রক্রিয়া থেকেই আমরা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির জনসম্পদ পাব। আবার ওরাই আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবে। আমাদের কাপড়সহ অন্যান্য পণ্যে ওরাই দেবে আমাদের মেধা ও সৃজনশীলতার নতুন আঙ্গিক।

আমরা কমপিউটার সমিতির পক্ষ থেকে এরই মাঝে কালিয়াকৈরে কোরিয়ার সহায়তায় একটি সৃজনশীল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। সেটিও এই খাতে বিপুল জনশক্তির যোগান দেবে। আমাদের সাধারণ ও কমপিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে, যা শেখা যায় না এই প্রতিষ্ঠানে তাই শেখানো হবে। হতে পারে ডিজিটাল সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হবে সেটি। সৃজনশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার এই উদ্যোগ সফলতা পাক সেই কামনা আমার। একই সাথে আমি আহবান জানাই কেবল ডিজিটাল বাংলাদেশ নয়, আসুন সৃজনশীল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা