লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
ই-কমার্সই-পার্লামেন্ট,
সম্পাদকীয়
স্বাগতম ই-কমার্স এবং কাঙ্ক্ষিত ই-পার্লামেন্ট
প্রযুক্তি এসে বার বার আমাদের দরজায় ঠুকা মারছে। কিন্তু আমরা বরাবরই যথাসময়ে দরজা খুলে দিয়ে প্রযুক্তিকে আহবান করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছি। কিন্তু প্রযুক্তির এ আসা এতটাই সদর্প যে, এক সময় সে দরজা খুলে প্রযুক্তিকে আহবান জানাতেই হয়। ফলে প্রযুক্তির ব্যবহারটা শুরু করতে আমাদের বিলম্ব ঘটে। সাবমেরিন ক্যাবল চালু থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রাযুক্তিক পদক্ষেপে আমাদের রয়েছে ক্ষমাহীন বিলম্ব। ই-কর্মাসের জয়মান উদাহরণটা এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। প্রযুক্তি-কাঠামো ও ই-কমার্স পরিচালনার মতো প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে এদেশে ই-কমার্স চালুর কোনো অনুমোদন ছিল না। অনেক ঘাটের পানি ঘোলা করে শেষ পর্যন্ত গত ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এদেশে ই-কমার্স চালুর বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। বলা যায়, এ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করল ই-কমার্সের যুগে। অনেক দেরিতে হলেও বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এটি একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ করল, এজন্য সরকার নিশ্চিতভাবেই মোবারকবাদ পাবার দাবি রাখে। তাছাড়া বাংলাদেশের এই ই-কমার্সের যুগে প্রবেশ বর্তমান সরকার ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
ই-কমার্স তথা অনলাইনে কেনাকাটার এই সুযোগ বিশ্বের অনেক দেশে বহু আগে থেকেই চালু হয়েছে। আমরা সবেমাত্র তা চালু করলাম। ফলে পণ্য পছন্দ ও পণ্যের দাম পরিশোধের কাজটি সম্পন্ন করতে পারব অনলাইনে। এখন ব্যাংকগুলোও তাদের ব্যাংকিং সেবা যোগান ও ব্যাংকিং পণ্য কেনাবেচার কাজটি সম্পন্ন করবে অনলাইনে। অর্থাৎ আমরা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের যুগেও একই সাথে প্রবেশ করলাম। এ মাসেই দেশের একটি ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করেছে। কয়েকটি ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন পেয়েছে। সেসব ব্যাংকও এই ইন্টারনেট ব্যাংকিং খুব শিগগির চালু করতে যাচ্ছে। ফলে এখন বিভিন্ন ধরনের সেবা-পরিষেবার বিল পরিশোধসহ ক্রেডিট কার্ডে চলবে নানামাত্রিক লেনদেন। আশা করছি, শিগগির আমরা দেশে গড়ে তুলতে পারব একটি শক্তিশালী ই-কমার্স ব্যবস্থা। এটি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের অগ্রগতি। এভাবে একের পর এক অগ্রগতির ধাপ পেরিয়ে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করব প্রযুক্তির মহাজগতে।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মতো আমাদের দেশের অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার অভাব। সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার বিষয়টি আমাদের সবার চাওয়া। আমরা স্বাভাবিকভাবেই চাই দেশে সুষ্ঠু রাজনীতির অনুশীলন নিশ্চিতভাবে চলুক। সেই সাথে সাধারণ মানুষ তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার অবাধে ভোগ করুক। রাজনীতিতে অপতৎপরতা-অপচর্চা কমে যাক। মানুষের অধিকার নিয়ে রাজনীতিবিদদের ছিনিমিলি খেলা বন্ধ হোক। নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রতিনিধি ও নির্বাচকমন্ডলী তথা ভোটার সাধারণের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কমে আসুক। তাদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া অবাধ হোক। যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে একজন সাধারণ ভোটার যেনো একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে, তা নিশ্চিত হোক। রাজনীতিতে সুষ্ঠুতা ফিরিয়ে আনা, জনপ্রতিনিধিদের কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কার্যকর করা ছাড়া আমাদের এসব প্রত্যাশা পূরণ হবার যে নয়, সে ব্যাপারে বিতর্ক তোলার কোনো অবকাশ নেই।
রাজনীতিবিদ তথা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্মকান্ডে সুষ্ঠুতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কার্যকর করতে চাইলে শুধু চাওয়াটাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এজন্য চাই কার্যকর একটি টুল। সুখের কথা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির তথা আইসিটি’র যুগে আমাদের বসবাস। অতএব এক্ষেত্রে আইসিটি হচ্ছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত টুল। আমাদের সংসদ সদস্যদের কর্মকান্ড ও তাদের সমন্বয়ে গঠিত অনন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় সংসদের’ সার্বিক কর্মকান্ডে সুষ্ঠুতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং পাশাপাশি কার্যকারিতা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাতে চাইলে একমাত্র আইসিটিই হতে পারে আমাদের নির্ভরযোগ্য টুল। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এমনটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। আর এই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়েই ইতোমধ্যে ‘ই-পার্লামেন্ট’ নামের একটি ধারণার জন্ম নিয়েছে এবং এ ধারণাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কার্যত এগিয়ে যাচ্ছে ই-পলিটি’র দিকেই। আমাদেরও উচিত ই-পার্লামেন্ট বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া। সেদিকটির প্রতিফলন ঘটিয়েই তৈরি করা হয়েছে আমাদের এবারের তিনটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।