• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-পার্লামেন্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ মিজান
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-পার্লামেন্ট
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-পার্লামেন্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

গণতন্ত্রে পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদ হচ্ছে প্রধান স্তম্ভ। গণতন্ত্র চর্চা এবং গণতন্ত্রের গুরুত্ব বাড়াতে পার্লামেন্ট প্রধানত তিন ধরনের ভূমিকা রাখে : আইন প্রণয়ন, প্রতিনিধিত্ব এবং সরকারের জবাবদিহিতা।

পৃথিবীর বিভিন্ন পার্লামেন্ট বা চেম্বারগুলোর জনপ্রতিনিধিরাই ই-পার্লামেন্টের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, পার্লামেন্টের প্রতিদিনের কর্মকান্ডে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিশ্বের সব জায়গায় সংসদগুলোতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। ই-পার্লামেন্ট হচ্ছে পার্লামেন্টারি প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রধান কর্মকান্ড পরিচালনার বিষয়গুলো সুদৃঢ় করা। তা ছাড়া গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে ই-পার্লামেন্ট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ই-পার্লামেন্ট যা ই-গভর্নমেন্ট ও ই-ডেমোক্র্যাসির সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। মূলকথা, সংসদের অভ্যন্তরীণ কর্মকান্ডের উন্নয়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি তথা আইসিটি’র ব্যবহারই হচ্ছে ই-পার্লামেন্ট।

জাতিসংঘ, দ্য ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন, দ্য ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর উদ্যোগে ৩-৫ নভেম্বর, ২০০৯ ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘বিশ্ব ই-পার্লামেন্ট সম্মেলন ২০০৯’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইতোপূর্বে ২০০৭ সালে সুইজারল্যান্ডে এবং ২০০৮ সালে ব্রাসেলসে বিশ্ব ই-পার্লামেন্ট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

যোগাযোগের মাধ্যম :

আইসিটি জনসাধারণকে সেই ক্ষমতা দেয়, যাতে সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ ও সংশ্লিষ্ট থাকার মাধ্যমে আরো সক্রিয়ভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। ইন্টারনেটের সাহায্যে তথ্য দেখানোর মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের ও নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্ক সহজসাধ্য করে তুলতে সাহায্য করতে পারে। সাধারণত সংসদ সদস্যরা জনগণের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিম্নোল্লিখিত ইলেকট্রনিক টুলগুলো ব্যবহার করে থাকেন।

ই-মেইল :

ই-মেইল এখন ইলেকট্রনিক টুল হিসেবে পার্লামেন্ট এবং পৃথকভাবে সংসদ সদস্যদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া মুঠোফোনকেও যোগাযোগের প্রধান ইলেকট্রনিক মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা যায়।

অনলাইন ডিসকাশন :

জনগণের সাথে মতবিনিময়ের জন্য অনলাইন ডিসকাশন পদ্ধতিও ইলেকট্রনিক টুল। এর মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা তাদের নির্বাচনী এলাকার জনগণের সাথে স্থানীয় অঞ্চলের সমস্যা, উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে মতবিনিময় করতে পারেন।

ওয়েবসাইট :

জনগণকে তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে একমুখী টুল হিসেবে ওয়েবসাইটের ব্যাপক প্রচলন আছে। এর মাধ্যমে পার্লামেন্ট এবং জনগণের মধ্যে প্রচুর আন্তঃআকর্ষণ বাড়ছে।

ব্রডকাস্টিং ওয়েবকাস্টিং :

ইলেকট্রনিক মাধ্যম তথা টেলিভিশন এবং বেতারের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের মতাদর্শ ও অন্যান্য বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজে উপস্থাপন করতে পারেন।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার :

জাতীয় সংসদ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সংসদ সচিবালয়সহ সব সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির কার্যালয়ে ইন্টারনেট কানেকশনসহ সর্বমোট ৫শ’ কমপিউটার, ১২টি সার্ভার, প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রিন্টার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কমপিউটারগুলো লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট www. parliament.gov.bd. চালু করা হয়, যাতে বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি, অন্যান্য সংসদের তথ্যাদি, সংসদের কার্যক্রম, লেজিসলেটিভ তথ্যকেন্দ্র, সংসদ সদস্যদের তালিকা, কমিটি সভার নোটিসসহ প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।



বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ২৪ সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে ২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে আইসিটি ককাস গঠিত হয়েছিল। মূলত এর লক্ষ্য ছিল :

উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। শাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন সহায়তা ও মানবাধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, নারীদের মূলধারায় নিয়ে আসা, যুবসমাজের ক্ষমতায়ন ও সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন চিহ্নিত করায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য।

নবম জাতীয় সংসদেও সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪৫ জনসহ মোট ৩৪৫ সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৪৫ সংসদ সদস্যের ই-মেইল নাম্বার রয়েছে এবং একমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে ওয়েবসাইট এখন তৈরির পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কর্মকান্ড জাতীয় সংসদের কমপিউটার সেল দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। মূলত ১ জন সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট, ১ জন সিস্টেম অ্যানালিস্ট এবং ১ জন কমপিউটার প্রোগ্রামার ও জনাকয়েক টেকনিশিয়ান দিয়ে জাতীয় সংসদের সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কর্মকান্ড পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

জাতীয় সংসদে ই-পার্লামেন্টের প্রয়োগ :

বর্তমান সরকার ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে আইসিটি’র প্রয়োগ, সম্প্রসারণ ও বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করা যায়। এ লক্ষ্যে নিম্নোল্লিখিত কার্যক্রম বা পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে :

০১. জাতীয় সংসদের সব সদস্যকে জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট থেকে ই-মেইল নম্বর দেয়া।

০২. প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যালয়ের জন্য জাতীয় সংসদের ওয়েব অ্যাড্রেস থেকে ই-মেইল নম্বর দেয়া।

০৩. প্রতিটি স্থায়ী কমিটির জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা। যেখানে কমিটির সদস্যদের তালিকা, অধীনস্থ মন্ত্রণালয়/দফতর/সংস্থার পরিচিতি, কমিটির কার্যক্রম ও সভার কার্যবিবরণী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

০৪. আলাদাভাবে সংসদ সদস্যদের জন্য একটি ইন্টারেকটিভ ওয়েবসাইট তৈরি করা।

০৫. জাতীয় সংসদের অধিবেশনের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের জন্য পৃথক টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেল স্থাপন করা।

০৬. জাতীয় সংসদের বিদ্যমান ওয়েবসাইটের আধুনিকায়ন করা, বিশেষত অডিও ভিজ্যুয়াল সন্নিবেশ করা।

০৭. সংসদ অধিবেশন চলার সময় দিনের কর্মসূচী ডিসপ্লে বোর্ডে দেখানোর ব্যবস্থা করা।

০৮. স্থায়ী কমিটির সভাগুলোর তারিখ, সময়, সভার স্থান ডিসপ্লে বোর্ডে দেখানোর ব্যবস্থা করা।

০৯. কমপিউটারভিত্তিক নথিভুক্ত ও তথ্যব্যবস্থা তৈরি করা।

১০. বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আইসিটিবিষয়ক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা।

১১. দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের কমপিউটার সেলকে আরো শক্তিশালী করা।

শেষ কথা :

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সংসদীয় কর্মকান্ডের উন্নতি ঘটানো, সংসদের কার্যকারিতা এবং প্রভাবের উন্নতির মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করায় ই-পার্লামেন্ট যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ই-পার্লামেন্ট বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে কিছু সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের বিশ্বাস। এর মধ্যে আছে : সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদদের কার্যকর তথ্য পরিষেবা দেয়া; রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং আইনী ব্যবস্থাকে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া অনুসরণ করার সুযোগ দেয়া এবং জনসাধারণের সামনে প্রশাসনের স্বচ্ছতা বাড়ানো।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mizan010168@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
২২ ডিসেম্বর ২০০৯, ৪:১২ PM
i like i tভাল লাগে
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস