• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন ই-সংসদ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সৈয়দ তামজিদুর রহমান
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ৩
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন ই-সংসদ

জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশ ও যেকোনো বিষয়ে মতামত গ্রহণ ও বর্জন করার অধিকার তাদের আছে।’ একই ঘোষণার প্রতিফলন ঘটে ২১ অনুচ্ছেদে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশগ্রহণ এবং মতামত দেয়ার অধিকার রয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কার্যকর তথ্যপ্রবাহের গুরুত্ব খুবই জরুরি। কারণ, ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সম্পদের বণ্টন ও স্বার্থসংশ্লিষ্টতা ভিন্নতর। ফলে নীতি-নির্ধারণের মধ্যেই বৈষম্য/দ্বন্দ্ব থেকেই যাচ্ছে। স্বভাবতই এই দ্বন্দ্ব/সংঘাত নিরসন নির্ভর করছে কার্যকরভাবে নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টতার ওপর। দরিদ্র জনগোষ্ঠী সাধারণত অবহেলিত, তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নেই। আমরা অবশ্যই এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। এমন একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করতে চাই, যেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কার্যকরভাবে নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায়ই সংশ্লিষ্ট হবে।

সর্বজনীন সংসদ বা ই-সংসদ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট করাকে অধিক গুরুত্ব দেয়।

কার্যকরী ই-সংসদ সাধারণ জনগণের ইচ্ছে ও আকাঙ্খার প্রতিফলন এবং তাদের অংশগ্রহণ করার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাথে জনগণের সরাসরি মতবিনিময় এবং এলাকার সমস্যা উপস্থাপন, কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অগ্রগতির প্রচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

ই-সংসদ গণতন্ত্রের জন্য কতটা কার্যকর :

ই-সংসদ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ইলেকট্রনিক্স ইন্টারফেসের মাধ্যমে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংযুক্ত করে। এই ইন্টারফেস সংযুক্ত করে স্থানীয় আইন প্রণেতা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনকে। রাষ্ট্রের নাগরিকরাও চিহ্নিত করতে পারে গণতন্ত্রের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহ, যা একটি দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।

আমরা কেন এ ই-সংসদের কথা বলছি :

বর্তমান রাজনৈতিক-সংস্কৃতির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বিরাজমান তা চিহ্নিত করা অতি জরুরি এবং এক্ষেত্রে ই-সংসদের ভূমিকা কী হবে, নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিলে আমাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

ক. জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা :

গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী যারা নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে তারাই সরকার গঠন করবে। আমরা জানি, সাধারণত ভোট পেয়ে যারা নির্বাচিত হয়, রাষ্ট্র পরিচালনা করার দায়িত্বভার তারাই গ্রহণ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকার বিরোধী পক্ষের ওপর স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করে এবং একই সাথে তাদেরকে মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। অথচ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা সবই ভোগ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তখনই সুদৃঢ় হবে, যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ই-সংসদে জনপ্রতিনিধিরা/সাংসদদের স্বাধীন ও মুক্তভাবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে, শাসকগোষ্ঠী সেটি গ্রহণ করুক আর নাই করুক।

খ. দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ধরন :

গণতন্ত্রের বিশ্বায়ন শুধু গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং একে আরো কিভাবে গণমুখী করা যায়। সেজন্য গণতন্ত্র তখনই গণমুখী হবে, যখন অহিংস পদ্ধতিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন করা যাবে। চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধান সমস্যাগুলো নিরসন হয়

জনগণের অংশগ্রহণমূলক সরকার ব্যবস্থা

* জনগণের জন্য খোলামেলা ও দায়িত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া।
* সময়মতো ও যথোপযুক্তভাবে নির্বাচন করা।
* সংবিধান মোতাবেক আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া।
* জনগণের অংশগ্রহণে জনগণকে সহায়তা করা।
* এলাকার চিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয় কী ?
* আশপাশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে প্রতিনিধিদের অভিমত কী?
* আইনগত অধিকার সম্পর্কে অবহিত কি না?

ই-সংসদ যা করতে পারে : আইডিয়া জেনারেশন, সমস্যা সমাধান, যোগাযোগ, জ্ঞান ও তথ্যের বিনিময়, জনগণের সচেতনতা বাড়ানো এবং পরামর্শ দান ও জনমত গঠন।

নির্বাচন, সংসদীয় ভোট এবং আদালতের আদেশের মাধ্যমে। প্রায়ই পূর্বোল্লিখিত সমস্যা নিরসনের জন্য হিংসাত্মক কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়। যেমন- বোমা ফাটানো, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের পশ্চিম ইউরোপ ছিল যুদ্ধকবলিত এলাকা। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিম ইউরোপ পরিগণিত হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে প্রধান শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে। তারা দেখিয়েছে অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যুদ্ধের বিকল্প হিসেবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতটা কার্যকর হতে পারে।

গ. জাতীয় সমস্যা ও সমাধানের অন্তরায় :

এছাড়াও আরো যেসব কারণ ই-সংসদকে অকার্যকর করতে পারে, তা হলো দুর্নীতি, দারিদ্রে্যর নিম্নহার, সন্ত্রাস, অর্থনীতির নিম্নগতি; তথা তথ্যপ্রবাহের অবরুদ্ধতা।

আর কী কারণে ই-সংসদ ব্যর্থ হতে পারে? রাজনৈতিক অনিচ্ছা, এটিকে আন্তর্জাতিক সমস্যার সাথে সমন্বিত না করা এবং এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইনপ্রণেতাদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপারগতা। এ বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করতে পারে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের, মিডিয়া এবং জাতীয় আইনপ্রণেতাদের। ই-সংসদ সচেতনতা বাড়াতে পারে বিভিন্ন জটিল বিষয়ের। যেমন- রাজনৈতিক সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে।

ঘ. সমস্যার সমাধান ও চর্চা :

আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তঃবিভাগীয় সংস্থাগুলোর কার্যক্রম খুবই ধীরগতিসম্পন্ন ও খুব সহজেই যেকোনো বিষয়ে আটকে যায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি এবং অশুভ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে। যেকোনো কার্যক্রম গ্রহণের আগে বিভিন্ন কারণে কালক্ষেপণ হয়। যেমন- বিভিন্ন অধিদফতর ও সংস্থার সংশ্লিষ্টতা, এই সব কারণে রিসোর্স খুব কম থাকে। গণতান্ত্রিক আইনের অনুপস্থিত, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ইত্যাদি আমাদের পাহাড়সম জাতীয় সমস্যা। যদি জাতীয় সংসদ আনুষ্ঠানিকতাকে বাদ দিয়ে সমন্বয় ঘটাতে চায়, তাহলে অবশ্যই সেটা ভালো ফল নিয়ে আসবে। নির্বাচিত আইনপ্রণেতাই গণতান্ত্রিক প্রতিনিধি। সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে করদাতার টাকা কিভাবে খরচ হবে এবং তারাই আইন পাস করে। কিন্তু এখানেও কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন- রাজনৈতিক সংস্কৃতি, অহংবোধ, যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতা এবং জনগণের মধ্যে দূরত্ব। দুর্বল অংশগ্রহণ এবং সচেতনতার অভাব। ই-সংসদকে এমনভাবে ডিজাইন করা যে প্রচলিত বাধাগুলোকে অতিক্রম করে জনপ্রতিনিধিদের বিকল্প মতপ্রকাশের ক্ষেত্র তৈরি করা।

ঙ. সংসদ ও সংবিধানের মধ্যে যোগাযোগ :

বর্তমান যুগ হচ্ছে বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। সংসদ সদস্যরা প্রায়ই মুখোমুখি হন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ের নানা সমস্যার। এসব সমাধানের ক্ষেত্রেও অনেক পথ থাকে। তার মধ্যে কোনো একটি থাকে সবচেয়ে সঠিক। এটা খুবই আশ্চর্যজনক, একজন সংসদ সদস্য তার সাধারণ জনগণ সম্পর্কে খুবই কম ধারণা রাখেন। ব্যক্তি খাত, সুশীল সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। বিশ্বায়নের ফলেই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এটাকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সেই ১৯ শতকের আইনই রয়ে গেছে। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্র হলো সংসদ। অব্যাহত হালনাগাদ তথ্য, ধারণা, উদ্যোগ ও বাস্তবসম্মত সমাধান সম্পর্কিত আলোচনা করাই সংসদের কাজ। যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা থেকে থাকে, তবে সংসদ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্থানীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : tamjid@changemaker-bd.org
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা