• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আগামী দিনের ওয়েব ব্যবস্থা ওয়েব ২.০
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মর্তুজা আশীষ আহমেদ
মোট লেখা:৭৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইন্টারনেট
তথ্যসূত্র:
ইন্টারনেট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আগামী দিনের ওয়েব ব্যবস্থা ওয়েব ২.০

ওয়েবের জন্ম ইন্টারনেট থেকে। আর বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ছাড়া তথ্যসংশ্লিষ্ট কোনো ধরনের যোগাযোগ চিন্তাই করা যায় না। বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের এক অন্যতম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটকে পরিপূর্ণ করেছে ওয়েবপ্রযুক্তি। বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ ওয়েবসাইট হচ্ছে আগের প্রজন্মের ওয়েবসাইট, যাকে সচরাচর ওয়েব ১.০ প্রযুক্তি বলা হয়। আর এর পরের প্রজন্মের ওয়েবপ্রযুক্তি হচ্ছে ওয়েব ২.০, যাকে আগামী দিনের ওয়েব স্ট্যান্ডার্ড বলা হচ্ছে। এখন নতুন যেসব ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই ওয়েব ২.০ প্রযুক্তিভিত্তিক।



ইন্টারনেটের শুরুটা ছিল গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে। তখন দ্রুত যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল কানেক্টিভিটি। কানেক্টিভিটি হারানো মানে পুরো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্যই গড়ে ওঠে ইন্টারনেট। আমরা জানি, যখন দুই বা ততোধিক কমপিউটারের কানেকশন দেয়া হয়, তখন তাকে বলে কমপিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্ট্রানেট। এই ইন্ট্রানেট যখন বিশ্বব্যাপী কাজ করে তখন তাকে ইন্টারনেট বলে।



ওয়েব ২.০ আসলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের একটি নতুন ধারা ছাড়া আর কিছুই নয়। একে রিড-রাইট ওয়েব বা সামাজিক ওয়েবও বলা হয়। কেননা, এখানে ব্যবহারকারীর ফিডব্যাক দেবার সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ একই সাথে ওয়েব সার্ফার ওয়েব পড়তেও পারবেন এবং ওয়েবে লিখতেও পারবেন। এই নতুন ধারাটি গত কয়েক বছর থেকে প্রসার লাভ করেছে। এই ধারার মূল লক্ষ্য ওয়েবের সৃজনশীলতা, পারস্পরিক যোগাযোগ, নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদান, সহযোগিতা এবং কার্যক্ষমতা বাড়ানো। এই নতুন ধারা ওয়েবে বেশ কিছু নতুন সাংস্কৃতিক ও কারিগরি সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হোস্টিং সেবাও রয়েছে। এই নতুন সম্প্রদায় ও সেবাগুলোর মধ্যে আছে সামাজিক নেটওয়ার্কিংভিত্তিক ওয়েবসাইট, ভিডিও অংশীদারি ওয়েবসাইট, উইকি, ব্লগ।

কারিগরি দিক দিয়ে ওয়েব ১.০ আর ওয়েব ২.০-এর মধ্যে কোনোই পার্থক্য নেই। পার্থক্য আছে ব্যবহার এবং উপযোগিতায়। অর্থাৎ ইতোমধ্যে প্রায়োগিক দিক থেকে বিদ্যমান সফটওয়্যারগুলো কিভাবে এবং কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করেই ওয়েব ২.০-কে আলাদা করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে ওয়েব ২.০ কোনো প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ভিত্তিতে ওয়েবের কোনো শ্রেণীবিন্যাস নয়। ওয়েব ১.০-থেকে ওয়েব ২.০-তে ডেভেলপার পর্যায় থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের সম্পর্ক অনেক বেড়েছে। যেখানে ওয়েব ১.০-তে শুধু ওয়েব দেখা ছাড়া আর কোনো কাজই করা যেত না সেখানে ওয়েব ২.০-তে বহুমাত্রিক মাধ্যম দিয়ে যোগাযোগের পাশাপাশি ফিডব্যাক অর্থাৎ কারো ভালোলাগা, মন্দলাগা প্রভৃতিও ওয়েবে লেখা যায়। সেই সাথে বহুমাত্রিক মিডিয়ার মাধ্যমে অডিও-ভিডিও এবং ছবির জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা থাকে যার ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের ওয়েব ব্যবহারকারীদের খুব সহজেই ওয়েব কনটেন্ট বোঝার ব্যবস্থা করা যায়। এককথায় ওয়েব ২.০ কে সামাজিক ওয়েবসাইট বলা হচ্ছে যাতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমাজের মতামত আদান-প্রদান করা যায়।



ছবিতে আগের প্রজন্মের ওয়েব ১.০ ভিত্তিক ওয়েবসাইট এবং আধুনিক ওয়েব ২.০ ওয়েবসাইটের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। যেখানে ওয়েব ১.০ সাপোর্টেড সাইটে এককেন্দ্রিক যোগাযোগের পাশাপাশি ওয়েব ২.০ সাপোর্টেড ওয়েবসাইটে বহুমাত্রিক যোগাযোগের উদাহরণ দেখান হয়েছে। (চিত্র-১) ওয়েব ১.০ সাপোর্টেড ওয়েবসাইটে একদিক থেকে ওয়েব সার্ফারেরা ওয়েব ব্রাউজ করতো এবং ওয়েব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা ওয়েব মাস্টার সাইট ম্যানেজ করতো। কিন্তু ওয়েব ২.০ এতে এই সাইট ম্যানেজমেন্ট শুধু ওয়েব অ্যাডমিনকেন্দ্রিক নয়। এখানে রেজিস্টার্ড ব্যবহারকারীরাও তাদের মতামত জানাতে পারবে এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজ করার জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে সাহায্য করতে পারবে। এর পাশাপাশি ছবির বাম পাশে দেখানো হয়েছে ওয়েব ১.০-তে শুধুই তথ্যের সমাবেশ থাকতো। কিন্তু ওয়েব ২.০-তে তথ্যের পাশাপাশি ট্যাগিং (সাধারণত কোনো মিডিয়া বা কনটেন্টের নাম দেয়া এবং এটা ছবি, অডিও, ভিডিও যেকোনো মিডিয়া হতে পারে), রেটিং, কমেন্ট, ভৌগোলিক অবস্থান, মিডিয়া ইত্যাদি থাকবে।

আন্তর্জাতিকভাবেও এমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই যাতে ওয়েব ২.০ সাপোর্টেড ওয়েবে অবশ্য পালনীয় কোনো বিষয় থাকতেই হবে। তবে সাধারণত ওয়েব ২.০ সাপোর্টেড ওয়েবের প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে দেখা যায় তাতে আরএসএস ফিড (রিয়েলি সিম্পল সিন্ডিকেশন ফিডব্যাক অথবা রিচ সাইট সামারি ফিডব্যাক) থাকে, আলাদা ফটো গ্যালারি থাকে, ফিডব্যাক দেবার ব্যবস্থা থাকে, কাউকে লিঙ্ক মেইল করার ব্যবস্থা থাকে এবং সর্বোপরি ফোরামের ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে করে যোগাযোগ সহজতর হয়।

ওয়েব ২.০ সাপোর্ট করে এমন সাইটে এর পূর্ববর্তী প্রজন্মের ওয়েব ১.০ প্রযুক্তির টেকনিক্যাল যেসব পার্থক্য আছে তার চেয়ে বড় হচ্ছে এর ব্যবহারের ফলাফলে। এই ফলাফলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওয়েব ২.০ প্রযুক্তিতে ওয়েব সার্ফারদের সমাগম বেশি হয়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এখানে সরাসরি কারো ই-মেইলে খবর বা লিঙ্ক পাঠানো যায়। সেই সাথে এগুলোর কমেন্ট পাঠানো যায় এবং সরাসরি কমেন্ট করাও যায়। অর্থাৎ এখানে সরাসরি ফিডব্যাক বিনিময় করা যায়। সেই সাথে এখানে আরএসএস ফিড দেবার ব্যবস্থাও থাকবে। ব্লগিংয়ের সুবিধাও ওয়েব ২.০-এর একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই সাথে ওয়েবে ইন্টার্যা কটিভ গ্রাফিক্সের পাশাপাশি সহজেই লিঙ্ক খুঁজে পাওয়া যায় এমন ব্যবস্থা থাকার কথাও বলা হয়েছে।

ওয়েব ২.০ তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এখানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ এবং ভাব বিনিময় হয় সহজেই। এখন ওয়েবের মাধ্যমে এই সামাজিক যোগাযোগ এবং ভাব বিনিময় করার মধ্য দিয়ে সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন করা সম্ভব। সামাজিকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা, চিকিৎসা, খবরাখবর, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রভৃতি করা যায় সহজে, দ্রুততার সাথে এবং কম খরচে। অর্থাৎ মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে ওয়েব ২.০ উল্লেখযোগ্য আবদান রাখতে পারে।

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য ওয়েব ২.০ বেশ কার্যকর। কারণ, ওয়েব ২.০-এর মাধ্যমে উন্নত অ্যাডভোকেসি এবং আধুনিক গভর্নেন্স পরিচালনা করা সম্ভব। তাই পুরো সামাজিক ব্যবস্থা পরিবর্তনে ওয়েব ২.০ কাযর্কর ভূমিকা রাখতে পারে। ওয়েব ২.০ সর্বক্ষেত্রে চালু করা গেলে ই-গভর্নেন্সের মতো কার্যক্রমে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। সেক্ষেত্রে জবাবদিহিতার ব্যাপার হয়ে যাবে মুখ্য। এ ধরনের জবাবদিহিতার ফলে পুরো সমাজব্যবস্থায় আসবে পরিবর্তন। সেই সাথে ডিজিটাল ডিভাইডও কমে আসবে। তাই এখন থেকে তৈরির অপেক্ষায় থাকা সব ওয়েবসাইট ওয়েব ২.০ সাপোর্টেড হোক সেই ব্যাপারে সবার সচেতনতার পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ নেবার সময় এসেছে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস