• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কমপিউটার ব্যাংকিং
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নাজমুল হুদা
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ব্যাংক অটোমেশন
তথ্যসূত্র:
ব্যাংকিং
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কমপিউটার ব্যাংকিং

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির অনন্য পণ্য হচ্ছে সফটওয়্যার। তা দিয়ে যেকোনো সাধারণ শিক্ষিত-জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ দক্ষ ব্যক্তির চেয়ে বেশি স্বচ্ছ, নিপুণ এবং দ্রুততার সাথে পূর্বনির্ধারিত ক্ষেত্রে যেকোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া ও নিখুঁতভাবে তা সম্পাদন করতে সক্ষম। এ সফটওয়্যারের ওপর বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রতিদিনের কাজ।

এ নিরিখে সব ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা- ইসলামী, প্রচলিত, সাধারণ ও বিশেষ ধরনের ব্যাংক ব্যবসায়ে Transaction Processing System (TPS) সংক্রান্ত সব কাজ অর্থাৎ ০১. প্রক্রিয়াকরণ, ০২. যথাস্থানে এগুলো সংরক্ষণ এবং ০৩. এরপর এসব তৈরি করা সংশ্লিষ্ট তথ্য ব্যক্তি, ব্যাংক, প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্রুত বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ও প্রধান কার্যালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে আইসিটি টুল হিসেবে যথাক্রমে Digital Data Processing Software (DDPS), Digital Data Storing Software (DDSS) ও Digital Data Corresponding Software (DDCS) ব্যবহার করছে।

উল্লিখিত ব্যাংকিং সেবা শুধু ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ভালোভাবে দেয়া সম্ভব। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ব্যাংকিং পণ্য ও কর্মক্ষেত্র, যা ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে চলছে এর সামগ্রিক কর্মপরিধি। শুধু তাই নয়, সেই সাথে এর কর্মসম্পাদন পদ্ধতিকেও করে তুলেছে খুবই জটিল। এ নিয়ে বর্তমান ব্যাংকাররা রয়েছেন গভীর সমস্যায়। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ব্যাংককাররা সবসময়ই খুঁজছেন এমন এক ডিজিটাল ব্যাংকিং সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে উল্লিখিত সমস্যাগুলো চিরতরে সমাধান করা যায়।

প্রসঙ্গত, মো: সরোয়ার উদ্দিন (পিএইচডি গবেষক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা এবং সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা) ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা’র ৮৯তম সংখ্যায় ‘বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লেনদেনে সফটওয়্যারের ব্যবহার’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। এ প্রবন্ধে তিনি এমন এক ধরনের ব্যাংকিং সফটওয়্যার তৈরি ও ব্যবহারের সুপারিশ করেছেন, যার মাধ্যমে সব ধরনের ব্যাংক ব্যবসায়ের Transaction Processing Work (TPW) সংক্রান্ত কাজ এর শাখা, কেন্দ্রীয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যায়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।



ইতোমধ্যে এ মৌলিক গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এ গবেষক সাউথ এশিয়ান কালচারাল সোসাইটি’র পক্ষ হতে ‘মাদার তেরেসাঁ আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক-২০০৯’ ও ‘অনারারি ফেলোশিপ’ লাভ করেছেন। তার এ গবেষণা মডেলের উল্লিখিত দিক হলো :

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালু শাখাগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকসেবা গ্রাহকদের দিয়ে আসছে। এজন্য এসব শাখায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক ব্যবসায় চালু করা হয়েছে। এসব ব্যাংক ব্যবসায় ভিন্ন প্রকৃতির ব্যাংক ব্যবসায়ে ইসলামী, প্রচলিত সাধারণ প্রকৃতি হওয়ায় এগুলোর প্রক্রিয়াকরণের কাজও ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সব বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজেদের ব্যবহৃত ব্যাংকিং মোড অনুযায়ী এগুলোর টিপিডব্লিউ সম্পন্নের জন্য কমপিউটার কোম্পানি বা ভেন্ডরদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি ও ব্যবহার করছে।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারিত না থাকায় সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সফটওয়্যার (ভেন্ডর) কোম্পানি তাদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা সফটওয়্যার দিয়ে এ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আইটেমের প্রসেসিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন করছে এবং এর প্রতিটি সফটওয়্যার একটি থেকে অন্যটি পুরোপুরি স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও আলাদা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বহন করে।

গবেষণায় উদ্ধৃত মডেল অনুযায়ী সব ধরনের ব্যাংকিং রিপোর্ট, বিবরণী, তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি করা এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর তা অনলাইনের মাধ্যমে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা থেকে এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয়ের সমন্বয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহার করা সব ধরনের ব্যাংকিং রিপোর্ট প্রণয়নসহ এগুলোকে আবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, এরপর এর শাখাসমূহে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় অনলাইনের মাধ্যমে পাঠাতে পারবে।

এ সফটওয়্যার তৈরিতে ‘Down To Up’ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার জন্য এ গবেষণা প্রবন্ধে সুপারিশ রয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে এ সফটওয়্যারের যেকোনো অংশ পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন বা আপডেট করার সুযোগ থাকায় তা সবসময় সব ব্যাংকে ব্যবহার উপযোগী। তাছাড়া এর সাথে যেকোনো ধরনের ব্যাংকিং আইসিটি উপকরণ খাপ খাইয়ে চলতে সক্ষম।

প্রত্যেক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও এর শাখাসমূহ শনাক্তকরণের জন্য ‘Litho Code’ সম্বলিত আইডি নাম্বার ব্যবহার করার ওপর জোর দেয়া হয়। এর ফলে কমপিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সঠিকরূপে শনাক্ত করতে সক্ষম হবে। ব্যাংকের লেনদেনের সব কাজ সম্পূর্ণ ছাপানো ফর্মের পরিবর্তে কমপিউটারাইজড ফর্মে এবং সেই সাথে এর প্রতিটি CF-এ ‘বাংলা’ ও ‘ইংরেজি’ উভয় ভাষা ব্যবহার করা, ব্যাংকের মালিকানাভেদে বিভিন্ন ধরনের পৃথক রং ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মনোগ্রাম ব্যবহার, ক্লায়েন্টসহ সব ধরনের লেনদেনের টাকার পরিমাণ ও হিসাব নম্বরের ক্ষেত্রে ওএমআর পদ্ধতি অনুসরণ, ওয়েব পেজের মাধ্যমে সব গ্রাহকের সাধারণ তথ্য, যেমন : নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, পেশা, বয়স, ছবি ইত্যাদি সংগ্রহ, সব ধরনের কাগজি নোট পৃথকীকরণ, গণনা ও এর প্রকারভেদ অনুযায়ী স্থিতি ও এর সর্বমোট পরিমাণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে Computerized Numeric Control (CNC)-এর আওতায় বার কোড ওএমআর, অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনাইজড (ওসিআর), ম্যাগনেটিক ইঙ্ক রিকগনাইজড ক্যারেক্টার (এমআইআরসি), কালার, সাইজ, বিট, বাইট ইত্যাদি শুধু ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব।

ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে ক্লায়েন্টের সব ধরনের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিবরণী গোপন রাখার জন্য শুধু লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমকে সিকিউরিটি সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয়েছে এ গবেষণা মডেলে। শুধু ৮ ধরনের ব্যাংকিং আইটেমের তথ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখাসমূহকে অনলাইনের মাধ্যমে এসব তথ্য দেয়া-নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণায়। যেকোনো শাখায় ব্যাংকিং আইটেমসমূহ প্রক্রিয়াজাত হওয়ার সাথে সাথে তা সংশ্লিষ্ট শাখা ও এর নিজ প্রধান কার্যালয়ের সেন্ট্রাল ডিবিএমএস সার্ভারে সংরক্ষণ ল্যান ও ওয়ানের মাধ্যমে দেয়া-নেয়া এবং এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩টি ব্যাকআপে তা সংরক্ষণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক ইত্যাদি মেয়াদ শেষে শুধু যেসব ব্যাংকিং আইটেমগুলোর রিপোর্টসহ অন্যান্য স্টেটমেন্টসংশ্লিষ্ট প্রধান কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয়/বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য কোথাও পাঠানো বাধ্যতামূলক হলে বা বিধান থাকলে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল ডাটা প্রসেসিং সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগুলো তৈরি করবে এবং নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যার সাথে সাথে অনলাইনের মাধ্যমে তা পাঠাতে সক্ষম। সর্বাধিক ব্যবহার্য, টেকসই পরিচালনা ও মেরামত সহজ এবং দামে সস্তা ও সরবরাহ নিয়মিত শুধু এরূপ ব্যাংকিং হার্ডওয়্যার ব্যবহারের জন্য এ গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে।

ব্যাংকিং সফটওয়্যারগুলোর আধুনিকীকরণ ও পুনঃস্থাপনসহ বর্তমান ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষ আইসিটিকর্মী নিয়োগের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এর সব টুল ও ডিভাইস যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষার্থে বিভিন্ন ধরনের নিয়মনীতি সম্পর্কিত পুস্তক, সাময়িকী কেনায় বিশেষ বরাদ্দ রাখা এবং প্রয়োজনীয় কঠোর আইন প্রণয়নসহ অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দান বা যেকোনো রকমের অবহেলার কারণে এর কোনোরূপ ক্ষতিসাধিত হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের বেতন থেকে কেটে রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে এ গবেষণা প্রবন্ধে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস