এটা খুব স্বাভাবিক, ব্যবসায় সম্প্রসারণের সাথে সাথেই এর শাখা বা ব্রাঞ্চের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে। এতে করে সফলভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করা যায়। ব্রাঞ্চ অফিসগুলো তাদের প্রতিদিনের কাজ পরিচালনার জন্য প্রধান অফিসে সংরক্ষিত তথ্যের ওপর নির্ভর করে থাকে। তথ্য প্রধানত ওয়েব বা ফাইল সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। প্রধান অফিসের এসব তথ্যে অ্যাক্সেস দেয়ার জন্য প্রয়োজন হয় নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটির। প্রধান অফিসের সাথে ব্রাঞ্চ অফিসের ডাটা ট্রান্সফার গতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রধান অফিসের সীমিত নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইডথ যখন অনেক ব্রাঞ্চ অফিস একই সময়ে শেয়ার করতে থাকে তখনই নেটওয়ার্ক গতি কমে আসে। আর ফাইলের আকার বড় হলে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ এবং উইন্ডোজ ৭ যুক্ত করেছে বিশেষ ফিচার।
উইন্ডোজ ৭ ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেমের ব্রাঞ্চক্যাশ (BranchCache) ফিচারকে কাজে লাগিয়ে ব্রাঞ্চ অফিসের কর্মীরা প্রধান অফিসের ওয়েব কনটেন্ট বা ফাইল তাদের কমপিউটার ক্যাশ বা জমা করতে পারেন। মাইক্রোসফট উদ্ভাবিত এ নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে উইন্ডোজ ৭ ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার অনায়াসে উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ বা এ ধরনের ওয়েব সার্ভারের সাথে খুব সহজেই কাজ করতে পারে। ব্রাঞ্চ অফিস সার্ভার বা ক্লায়েন্ট কমপিউটারে সংরক্ষিত বা ক্যাশ হওয়া কনটেন্ট অ্যাক্সেসের জন্য নিচের তিনটি প্রটোকল ব্যবহার করা যাবে :
* SMB 2.0 (Server Message Blocks)
* HTTP (Hypertext Transfer Protocol)
* BITS (Background Intelligent Transfer Service)
বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার হচ্ছে এমন সব এনক্রিপশন স্কিমের সাথে ব্রাঞ্চক্যাশ অনায়াসে কাজ করতে পারে। যেমন, প্রধান অফিসের সার্ভারের ওয়েব কনটেন্ট হোস্ট করার জন্য এসএসএল সিকিউরিটি স্কিম ব্যবহার করা হয়েছে, ব্রাঞ্চ অফিসের উইন্ডোজ ৭ ক্লায়েন্ট কমপিউটার কোনো ধরনের অতিরিক্ত কনফিগারেশন ছাড়াই ওই সার্ভারের কনটেন্ট এক্সেস করতে পারবে। একইভাবে কোনো ওয়েব সার্ভারে যদি আইপিসেক (IPsec) সিকিউরিটি প্রোটোকল ব্যবহার করা হয়, ব্রাঞ্চক্যাশ এ সার্ভারের কনটেন্টে অ্যাক্সেস পেতে কোনো অসুবিধা হবে না।
ব্যবহারের জন্য সার্ভার ও ক্লায়েন্ট উভয় কমপিউটারেই প্রথমে ব্রাঞ্চক্যাশ সক্রিয় করতে হবে। ব্রাঞ্চক্যাশ সক্ষম কোনো ফাইল বা ওয়েব সার্ভারে কখনোই কোনো ইউজার অ্যাক্সেস নিতে চাইলে, তাকে নিয়মিত নিরাপত্তা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ইউজারের অথেনটিকেশন পরীক্ষার বিষয়টি সার্ভারে ব্রাঞ্চক্যাশের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপরে নির্ভর করে না। ইউজার অথেনটিকেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরই সার্ভারের কনটেন্টে অ্যাক্সেস পাবেন।
নিচের যেকোনো একটি পদ্ধতিতে কাজ করানোর জন্য ব্রাঞ্চক্যাশকে কনফিগার করা যায় :
* হোস্টেড মোড (Hosted Mode)
* ডিস্ট্রিবিউটেড মোড (Distributed Mode)
ব্রাঞ্চ অফিসে যখন ৫০-এর অধিক ক্লায়েন্ট থাকে, তখন হোস্টেড মোডে ব্রাঞ্চক্যাশ ফিচারকে কনফিগার করা হয়। হোস্টেড মোডে ব্রাঞ্চ অফিস কমপিউটারগুলোর একটিকে FQDN (Fully Qualified Domain Name) হিসেবে কনফিগার করা হয় যা ব্রাঞ্চক্যাশ সার্ভার (BranchCache Server) হিসেবে কাজ করে। যখনই ক্লায়েন্ট কমপিউটার প্রধান অফিসের ব্রাঞ্চক্যাশ সক্ষম ওয়েব বা ফাইল সার্ভার থেকে কোনো কনটেন্ট পাবে, তখন সে ব্রাঞ্চ অফিসের ব্রাঞ্চক্যাশ সার্ভারকে কনটেন্ট পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেবে। এ পর্যায়ে ব্রাঞ্চক্যাশ সার্ভার ক্লায়েন্ট কমপিউটার থেকে ওই কনটেন্টটি ডাউনলোড করে নেবে এবং তা ব্রাঞ্চ অফিসের অন্যান্য ক্লায়েন্ট কমপিউটারের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে। অর্থাৎ একই কনটেন্ট ডাউনলোড করার জন্য ব্রাঞ্চ অফিসের ক্লায়েন্টদের আর প্রধান অফিসের সার্ভারে যেতে হবে না।
উইন্ডোজ ২০০৭ ক্লায়েন্ট এই ব্রাঞ্চক্যাশ সুবিধার কারণে কোনো ব্রাঞ্চ অফিসের একটি ক্লায়েন্ট যদি প্রধান অফিস থেকে কোনো কনটেন্ট ডাইনলোড করে তাহলে সে কনটেন্টটি ব্রাঞ্চ অফিসের অন্যান্য ক্লায়েন্টের জন্য সহজে অ্যাক্সেস করা যাবে। ব্রাঞ্চ অফিসের প্রতিটি ক্লায়েন্টকে আর প্রধান অফিসের সার্ভারে যেতে হয় না। ব্রাঞ্চ অফিসের কোনো ক্লায়েন্ট কমপিউটার যখন তার নিজস্ব ব্রাঞ্চ অফিস সার্ভার থেকে ডাউনলোড করে তখন সে ল্যান সংযোগের সুবিধা নেবে, ওয়ানের নয়। বলা বাহুল্য, ল্যান সংযোগ সবসময় ওয়ান সংযোগের তুলনায় বেশি গতিসম্পন্ন হয়।
অপরদিকে উইন্ডোজ ২০০৭-এর ব্রাঞ্চক্যাশ ফিচারের ডিস্ট্রিবিউটেড মোড তখনই ব্যবহার করা হয় যখন ব্রাঞ্চ অফিসে ক্লায়েন্টের সংখ্যা ৫০ এর কম হয়। এক্ষেত্রে ব্রাঞ্চ অফিসে কোনো ব্রাঞ্চক্যাশ সার্ভার ব্যবহার করা হয় না। এ ব্যবস্থায় ব্রাঞ্চ অফিসের ক্লায়েন্ট কমপিউটারগুলোই প্রধান অফিসের সার্ভার থেকে তাদের স্থানীয় হার্ডডিস্কে কনটেন্ট ক্যাশ বা জমা করে এবং তা ব্রাঞ্চ অফিসের অন্যান্য ক্লায়েন্ট কমপিউটারের জন্য অ্যাক্সেসেবল করে দেয়। বাই ডিফল্ট একটি উইন্ডোজ ৭ ক্লায়েন্ট কমপিউটারের হার্ডডিস্কের শতকরা ৫ ভাগ স্পেস কনটেন্ট ক্যাশ করার জন্য সংরক্ষিত থাকে। ব্রাঞ্চ অফিসের কোনো ক্লায়েন্ট যদি প্রধান অফিসের সার্ভার থেকে কোনো কনটেন্ট ডাউনলোড করে এবং ওই একই কনটেন্ট যদি ব্রাঞ্চ অফিসের দ্বিতীয় কোনো ক্লায়েন্ট প্রধান অফিসের সার্ভার থেকে পেতে চায়, তখন কনটেন্ট প্রধান অফিসের সার্ভারের পরিবর্তে ব্রাঞ্চ অফিসের ক্লায়েন্ট কমপিউটার থেকে আসবে। এর ফলে ব্রাঞ্চ অফিসের ক্লায়েন্টরা দ্রুত এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কনটেন্ট পেয়ে থাকেন।
ডিস্ট্রিবিউটেড মোডে ক্যাশ করা কোনো কনটেন্ট ক্লায়েন্টদের মধ্যে প্রচার করার জন্য মাল্টিকাস্ট প্রোটোকল (multicast protocol) ব্যবহার করা হয়। এজন্য ব্রাঞ্চ অফিসের সব ক্লায়েন্ট কমপিউটারকে একটি অভিন্ন নেটওয়ার্ক আইডি ব্যবহার করে একই মাল্টিকাস্ট রেঞ্জে থাকতে হয়। আর যদি কোন ক্লায়েন্ট কমপিউটার নেটওয়ার্কে নিষ্ক্রিয় বা বিচ্ছিন্ন থাকে তাহলে সে কমপিউটারে ক্যাশ করা কনটেন্ট অন্য ইউজাররা অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হবে না। তবে স্লিপ মোডে রয়েছে এমন কোনো কমপিউটারে যদি ক্যাশ করা কনটেন্ট অন্য কোনো কমপিউটার অ্যাক্সেস করতে চায়, তাহলে স্লিপ মোড থেকে ওই কমপিউটার পুরোপুরি সচল হবে।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ব্রাঞ্চ অফিসে একই ক্লায়েন্ট কমপিউটারকে হোস্টেড এবং ডিস্ট্রিবিউটেড মোডে কনফিগার করা যাবে না। যদি কোনো ক্লায়েন্ট কমপিউটারকে হোস্টেড মোডের জন্য কনফিগার করা হয়, তাহলে তার হার্ডডিস্কে স্থানীয়ভাবে কনটেন্ট ক্যাশ করার ক্ষমতা থাকবে না। যদি কোনো কমপিউটারকে ডিস্ট্রিবিউটেড মোডে কনফিগার করা হয়, তাহলে তা সরাসরি কনটেন্ট ডাউনলোড বা ক্যাশ করার জন্য স্থানীয় ব্রাঞ্চক্যাশ সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করবে না।
উইন্ডোজ ৭ প্লাটফর্মের যেকোনো অ্যাপ্লিকেশনই ব্রাঞ্চক্যাশসম্পন্ন সার্ভার থেকে এসএমবি ২.০ বা এইচটিটিপি ১.১ ব্যবহার করে সহজেই কনটেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারবে। অর্থাৎ উইন্ডোজ ৭-এর ব্রাঞ্চক্যাশ ফিচার সুবিধা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার, উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার নিতে পারবে। তবে যদি কোনো অ্যাপ্লিকেশন তার নিজস্ব এসএমবি ২.০ বা এইচটিটিপি ১.১ ব্যবহার করে, তাহলে ব্রাঞ্চক্যাশ ফিচারের সুবিধা নিতে পারবে না।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : kazisham@yahoo.com