লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
তাসনুভা মাহমুদ
মোট লেখা:১০৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ফেব্রুয়ারী
লেখার ধরণ:
ফাইল ম্যানেজমেন্ট
ফাইল ফরমেট : কী, কেন এবং কিভাবে
ওয়ার্ড প্রসেসরে তৈরি করা ডকুমেন্ট থেকে শুরু করে ডিজিটাল ক্যামেরায় ক্যাপচার করা ফটোগ্রাফ পর্যন্ত সব ধরনের কাজকে কমপিউটার ব্যবহারকারীরা ফাইল হিসেবে চেনে থাকেন। বর্তমানে শত শত ধরনের ফাইল রয়েছে। আপনি যত অল্প সময়ের জন্য পিসি ব্যবহার করেন না কেন, একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন, সব ফাইল একইভাবে তৈরি হয় না, যদিও সেগুলো বাহ্যত দেখতে একই রকম মনে হয়।
উদাহরণস্বরূপ- শত শত ফাইল ফরমেটের মধ্যে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকুমেন্ট হলো একটি ফরমেট। যদি সঠিক ভার্সনের ওয়ার্ড না হয়, তাহলে আপনি এর কনটেন্ট ভিউ ও এডিট করতে পারবেন না সঙ্গত কারণে। একইভাবে বলা যায়, বেশিরভাগ ডিজিটাল ক্যামেরা ফটো সেভ করে JPEG ফাইল ফরমেটে। ডিজিটাল ইমেজ অন্য ফরমেটেও স্টোর হতে পারে। প্রত্যেক ফরমেটেরই রয়েছে সুবিধা ও অসুবিধা।
লক্ষণীয়, বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ফাইল ফরমেট নিয়ে মাথা ঘামান না। কেননা, ফাইলে ডবল ক্লিক করলেই সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনে তা ওপেন হয়। এ কথা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, অনেক ব্যবহারকারী আছেন যারা কমপিউটারে কাজ করেন ঠিকই, কিন্তু ফাইল ফরমেট সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। এ ধরনের ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে এবার পাঠশালা বিভাগে উপস্থাপন করা হয়েছে ফাইল ফরমেট কী, পিসির কাজকে ফাইল ফরমেট কিভাবে প্রভাবিত করে এবং অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে তা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় ইত্যাদি।
কেনো এত ফরমেট?
বর্তমানে হাজার হাজার ফাইল ফরমেট চালু রয়েছে। কমপিউটিং বিশ্বে হাজার হাজার ফাইল ফরমেট ব্যবহার হচ্ছে, তা বিস্ময়কর হলেও সত্য। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেননা সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো মনে করে, বিদ্যমান সফটওয়্যারের ফাইল ফরমেট সর্বতোভাবে ঠিক নেই বা আরো সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিত। এসব সফটওয়্যার তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত নয় তাই এরা নিজেদেরটি উদ্ভাবন করেছে, যার ওপর নিজেদের স্বত্বাধিকার ক্ষমতা রয়েছে। এসব কারণে ফাইল ফরমেট অনেক বেড়ে গেছে এবং কমপিউটিং বিশ্বকে আরো জটিল করে তুলেছে। এছাড়া রয়েছে নিজের খেয়ালখুশি মতো তৈরি করা ফাইল ফরমেট, যা মোটামুটিভাবে প্রচলিত রয়েছে সঙ্গত কারণে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, GIF (Graphics Interchange Format) ফাইল টাইপ প্রথম আবিষ্কার করে কম্পুসার্ভ নামের এক অনলাইন কোম্পানি। এই ফরমেট ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ফরমেট এখনো ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। কেননা, GIF ফরমেট ইমেজে ২৫টির বেশি শ্যাড ব্যবহার করা যায় ও চমৎকার কম্প্রেসন সুবিধা রয়েছে এর। GIF ফরমেট ইমেজকে অ্যানিমেট করা যায়।
ফরমেটের জগাখিচুড়ি
ন্যূনতম সঙ্গত কারণে অন্যান্য ফরমেট এখনো টিকে আছে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, DOC ফাইল ওয়ার্ড প্রসেসিং ডকুমেন্টের সমার্থক। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ড প্রসেসর ব্যবহার করে আসছে তাদের নিজস্ব DOC ফরমেট ভার্সন। বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই জানেন DOC ফরমেট মাইক্রোসফটের স্বত্বাধিকারভূত ফাইল টাইপ এবং পুরোপুরি মাইক্রোসফট নিয়ন্ত্রিত।
মাইক্রোসফট প্রথমদিকে তার DOC ফরমেটকে এমন জটিলভাবে তৈরি করেছিল যে অন্যান্য সফটওয়্যার কোম্পানি এটি ব্যবহার করতে পারত না। কিন্তু, বর্তমানে প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। ওয়ার্ড প্রসেসর অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যাপকভাবে আধিপত্য বিস্তার করায় এখন এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব পরিহার করেছে এবং অন্যান্য কোম্পানির অ্যাপ্লিকেশনকে DOC ফরমেটের কম্প্যাটিবল হিসেবে তৈরি করার অনুমতি দিয়েছে।
অতি সম্প্রতি মাইক্রোসফট DOC ফাইল ফরমেটকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে যেকেউ তাদের প্রোগ্রামে DOC ফাইলকে সমন্বিত করতে পারবে বিনা অনুমতিতে।
মাইক্রোসফট অফিস ২০০৭-এর সাথে চালু করে অফিসওপেনএক্সএমএল (OfficeopenXML) নামের এক ফাইল ফরমেট। লক্ষণীয়, এখানে মাইক্রোসফটের ফাইল ফরমেটের শেষে একটি এক্স (X) যুক্ত করা হয়েছে। যেমন- DOC ফরমেট হবে DOCX, এক্সেল স্প্রেডশিট ফাইল XLS হবে XLSX.
অফিসওপেনএক্সএমএল একটি ফ্রি ফাইল ফরমেট হওয়ায় যেকেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে কমপিউটার ব্যবহারকারীদের আরো বেশি ফাইল ফরমেট নিয়ে বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে। বিষয়টি সহজে বোঝার জন্য এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে- আপনি একজন অফিস ২০০৩ ব্যবহারকারী, আপনাকে একজন মেইল করলেন, যিনি ব্যবহার করেন অফিস ২০০৭ যার ফাইল ফরমেট DOCX, যেহেতু আপনি অফিস ২০০৩ ব্যবহারকারী, তাই DOCX ফরমেটের ফাইল ওপেন করতে পারবেন না।
ফাইল এক্সটেনশন
কোনো ফাইল ওপেন করার আগে আমাদেরকে জানতে হবে বিভিন্ন ধরনের ফাইলের মধ্যে পার্থক্য, বুঝতে হবে ফাইলের ধরন। ফাইল ফরমেট সম্পর্কে ধারণা না থাকলে যথাযথ ফাইল ওপেন করা সম্ভব হবে না সঙ্গত কারণে। ধরুন, আপনাকে স্প্রেডশিটের একটি ফাইল দেয়া হলো, ফাইল ফরমেট কিভাবে আইডেন্টিফাই করতে হয়, সে সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আপনার পক্ষে সেই ফাইল ওপেন করা সম্ভব হবে না। এজন্যই আপনাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে ফাইল এক্সটেনশন।
ফাইল এক্সটেনশন হলো সংক্ষিপ্ত লেটার স্ট্রিং বা নাম্বার, যা আবির্ভূত হয় ফাইল নেমের পরে একটি ফুল স্টপ দিয়ে। সাধারণভাবে বলা যায়, ফাইল নেম হয় তিন ক্যারেক্টরের এক্সটেনশন সহযোগে। এক্সটেনশন দেখেই আমরা বুঝতে পারি ফাইলটি কোন অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রাম দিয়ে তৈরি বা ফাইলটি ওপেন করতে কোন প্রোগ্রামের দরকার। ধরুন, আপনি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে একটি ফাইল তৈরি করে ABC নামে সেভ করলেন। এক্ষেত্রে ফাইল নেম হবে ABC.doc. `.doc’ অংশটি হলো ফাইল এক্সটেনশন। অনুরূপভাবে এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্টে তৈরি ডকুমেন্টের এক্সটেনশন হবে যথাক্রমে .xls, ‘ppt’ ইত্যাদি। সাধারণত এক্সটেনশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বসে যায়। এজন্য বলা হয়, ফাইলের ধরন তথা কনটেন্ট বুঝার চমৎকার নির্দেশক হলো এক্সটেনশন।
এক্সপিতে ফাইল এক্সটেনশন ডিসপ্লে করাতে চাইলে Start মেনু থেকে My Computer ওপেন করে সিলেক্ট করুন ToolsFolder, আর ভিসতা ব্যবহারকারীরা StartComputerOrganizeFolder and Search Options.
এবার এক্সপি বা ভিসতায় Folder Options ডায়ালগ বক্সের View ট্যাবে ক্লিক করুন। এবার স্ক্রল ডাউন করে Advanced Settings-এ গিয়ে `Hide Extensions for Known file types’ অপশনে ক্লিক করুন টিকচিহ্ন অপসারণ করার জন্য। এবার Ok-তে ক্লিক করুন। এর ফলে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারে ফাইল এক্সটেনশন দেখা যাবে।
মিসিং এক্সটেনশন
সেটিং পরিবর্তন করার মাধ্যমে সবসময় জানতে পারবেন না ফাইলটি কোন ফরমেটের অথবা কোন প্রোগ্রামে ফাইলটি ওপেন করা উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফাইল এক্সটেনশন ঠিকই থাকে। তবে কখনো কখনো ব্যতিক্রম হতে পারে। ফলে ফাইল এক্সটেনশনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কখনো এক্সটেনশন ঠিক থাকার পরও সেই ফাইলের কনটেন্ট এডিট বা ভিউ করার জন্য ডবল ক্লিক করলে অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাপ্লিকেশন চালু হয়।
ঐতিহাসিক ও টেকনিক্যাল কারণে অ্যাপল ম্যাক কমপিউটার ফাইল এক্সটেনশন নিয়ে তেমন উৎসাহী নয়। কোনো কোনো ম্যাক প্রোগ্রামে যুক্ত করা হয়েছে সাধারণ ফাইল এক্সটেনশন, তবে সেগুলো অপারেটিং সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। সুতরাং ম্যাক ব্যবহারকারীর কাছ থেকে পাওয়া ফাইলে এক্সটেনশন খুঁজে না পাবার সম্ভাবনাই বেশি।
এ ধরনের অবস্থায় আপনার জন্য উচিত হবে ফাইল প্রদানকারীকে জিজ্ঞেস করা যে ফাইলটি কী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে বা কোন প্রোগ্রামে তৈরি করা হয়েছে। ধরুন, এর উত্তর ছিল মাইক্রোসফট ওয়ার্ড। সুতরাং পিসিতে ফাইলটিকে রিনেম করা উচিত ফাইল নেমের সাথে .doc এক্সটেনশন যুক্ত করে। এজন্য উইন্ডোজ এক্সপি বা ভিসতায় ফাইলে বাম ক্লিক করুন এবং F2 ফাংশন কী চাপুন। অথবা ডান ক্লিক করে পপআপ মেনু থেকে সিলেক্ট করুন Rename। এরপর ডান অ্যারো কী একবার চাপুন বা ফাইল নেমের শেষে .doc টাইপ করুন।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mohmood_sw@yahoo.com