• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভারতের সি-ড্যাক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
ফিচার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভারতের সি-ড্যাক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ

ইদানীং আমরা সবাই বলছি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা। সন্দেহ নেই আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ডিজিটাল দেশ গড়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাদের এই অগ্রগমন এখনো অব্যাহত। এজন্য এরা যথাযথ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে উৎকর্ষ মানের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ডিজিটাল সমাজ গড়ার পথে গতি আনার জন্য। তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের সি-ড্যাক একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। এটি ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে অগ্রসর কমপিউটিংয়ের অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। আমাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে সি-ড্যাক-এর আদলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সে উপলব্ধিতেই সি-ড্যাক সম্পর্কে এ লেখায় আলোকপাত করছি।

সি-ড্যাক অর্থাৎ C-DAC, পুরো কথায় ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব অ্যাডভান্সড কমপিউটিং’। ভারতের অনন্য সফল এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন শেষে এখন এর অগ্রযাত্রা রচনা করে চলেছে ই-গভর্নেন্স, সাইবার সিকিউরিটি, সাইবার ফরেনসিক, প্রফেশনাল ইলেক্ট্রনিক, অ্যারিয়া ট্র্যাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম ও হেলথ ইনফরমেটিকসের ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যেই সি-ড্যাক ও সুপার কমপিউটিং নামটি ভারতে সমার্থক হয়ে উঠেছে। সুপার কমপিউটিং অথবা হাই পারফরমেন্স কমপিউটিং (এইচপিসি)-এর ক্ষেত্রে এর অগ্রযাত্রা অসমান্তরাল। এটি অগ্রসর কমপিউটিংয়ের অনন্য এক প্রতিষ্ঠান। নীতিগতভাবে অগ্রসর তথা ‘অ্যাডভান্সড কমপিউটিং’ এমন একটি কমপিউটিং এনভায়রনমেন্টকে বুঝায়, যেখানে শুধু হাইস্পিডই নয় বরং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার, এই উভয় খাতেই অগ্রসর টুলের ব্যবহার চলে।

ভারতে ১৯৮৮ সালের মার্চে সে দেশের এইচপিসি সিস্টেম ডেভেলপ করার একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে গড়ে তোলা হয় সি-ড্যাক। বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য উন্নয়ন সমস্যার ক্ষেত্রে হাইস্পিড কমপিউটেশনের চাহিদা মেটানো এর লক্ষ্য। সেদেশের SAC-PM তথা ‘সায়েন্স অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল টু দ্য প্রাইম মিনিস্টার’-এর সুনির্দিষ্ট সুপারিশ সূত্রে ভারতের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন তৎকালীন ইলেক্ট্রনিকস ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে এই সি-ড্যাক। উল্লেখ্য, এই ইলেক্ট্রনিকস ডিপার্টমেন্ট এখন পরিবর্তিত ‘ডিআইটি’ বা ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি’ নামে সুপরিচিত। একটি বৈজ্ঞানিক সমিতির পাশাপাশি এটি অপরিহার্যভাবে একটি গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানও। সি-ড্যাক এরই মধ্যে ১৯৯০-এর দশকেই এর প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করেছে। সে লক্ষ্যটি ছিল এক গিগা অথবা একশ’ কোটি ফ্লপ (1 Gflops=One giga বা 1 billion floating operations per second) ক্ষমতাসম্পন্ন সুপার কমপিউটার ডেভেলপ করা। সি-ড্যাক PARAM 8000 নামের একটি প্ল্যাটফরম স্থাপন করে এইচপিসি সিস্টেমের প্যারালাল কমপিউটারের সামগ্রিক সিরিজের জন্য। এই সিরিজের নাম দেয়া হয়েছে PARAM সিরিজ। এতে আছে PARAM 2000 অথবা PARM Padma। এর মাধ্যমে কয়েক বছর কাজ করে ২০০২ সালে এটি সুপার কমপিউটারে teraflop (thousand billion flops) ক্ষমতাসীমা ছাড়িয়ে ১ টেরাফ্লপ (Tflop) গতিক্ষমতা অর্জন করে। এ সিরিজের সর্বশেষটির নাম দেয়া হয়েছে PARAM Yuva, যা ডেভেলপ করা হয় ২০০৮ সালে এবং ২০০৮ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিনে অনুষ্ঠিত সুপার কমপিউটিং কনফারেন্সে প্রকাশিত ‘সেরা ৫০০’ তালিকায় ৬৮তম স্থান দখল করে। সি-ড্যাক বিজ্ঞানীদের মতে, ২০১২ সালের মধ্যে ‘সি-ড্যাক’-এর এইচপিসি রোডম্যাপ অনুযায়ী peraflops (million billion flops) কমপিউটিং স্পিড অর্জনের ক্ষেত্রে এ সিস্টেমটি হচ্ছে একটি মাইলস্টোন।

এর অংশ হিসেবে সি-ড্যাক পুনেতে স্থাপন করেছে একটি ‘ন্যাশনাল পরম সুপার কমপিউটিং ফ্যাসিলিটি’ বা এনপিএসএফ। ‘সি-ড্যাক’-এর সদর দফতর সেখানেই। এনপিএসএফ সুযোগ করে দেবে কমপিউটার ইনটেনসিভ সমস্যা সমাধানে গবেষকরা যেনো এইচপিসি সিস্টেমে ঢুকতে পারেন। এই কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সি-ড্যাকের উদ্যোগের ফলে কিছু বাছাই করা উন্নত দেশের পাশাপাশি ভারতও বিশ্ব সুপার কমপিউটিং মানচিত্রে এর স্থান করে নিয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশের ভেতরে ও বিদেশে চালু করা হয়েছে ৫২টি ‘পরম সিস্টেম’। এর মধ্যে ৮টি চালু হয়েছে রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও কানাডায়। গুচ্ছ কমপিউটিং সিস্টেমের এই ‘পরম সিরিজ’ ‘ওপেন ফ্রেম আর্কিটেকচার’ভিত্তিক। বিশেষ করে PARAM Yuva ব্যবহার করে PARAM Net-3 নামের ১০ গিগাবাইট/সেকেন্ড সিস্টেম নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক বিগত তিন বছরে প্রাইমারি ইন্টারকানেক্ট হিসেবে সি-ড্যাক দেশীয়ভাবে তৈরি করেছে। এই এইচপিসি গুচ্ছ কমপিউটিং সিস্টেমটি তৈরি হয়েছে সেই সব নোড দিয়ে, যেগুলোর নকশা করা হয়েছে ‘স্ট্যাট-অব-দ্য-আর্ট’ আর্কিটেকচারের মাধ্যমে, যা কোয়াড কোর প্রসেসরভিত্তিক x-86 নামে পরিচিত। সব পরম যুব-তে পুরো কনফিগারেশনে রয়েছে ৪,৬০৮ ইন্টেল জিওন ৭৩ এক্সএক্স প্রসেসরের কোর, যার নাম টাইগারটন। এর ক্লকস্পিড ২.৯৩ গিগাহার্টজ। এই সিস্টেমটির টেকসই পারফরমেন্সের পরিমাণ ৩৭.৮ টেরাফ্লপস এবং পিকস্পিড ৫৪ টেরাফ্লপস।

পরম যুব’র একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর রিকনফিগারেবল কমপিউটিং (আরসি), যা এইচপিসি অ্যাপ্লিকেশনের স্পিড বাড়ানোর একটি উদ্ভাবনামূলক উপায়। আরসি হার্ডওয়্যার অপরিহার্যভাবে পাওয়ার ও স্পেস সেভ করার সময় স্পিড উল্লেখযোগ্য বাড়ানোর জন্য এক্সটার্নাল অ্যাড-অন হিসেবে অ্যাক্সেলারেশন কার্ড ব্যবহার করে। ভারতে প্রথমবারের মতো রিকনফিগারেবল হার্ডওয়্যার রিসোর্স ধারণার ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সি-ড্যাক একটি।

বিভিন্নধর্মী উদ্যোগ

সি-ড্যাক-এর কর্মকান্ড শুধু এইচপিসি ডোমেইনে সীমাবদ্ধ নয়। আসলে এর প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণের পর সি-ড্যাক-এর কমপরিধি আরো বিস্তার করেছে এই নামের সাথে মিশে থাকা ‘অ্যাডভান্সড কমপিউটিং’ শব্দ দুটিকে সত্যিকার অর্থে অর্থবহ করে তোলার জন্য। বিগত বছরগুলোতে এই কেন্দ্র বৈচিত্র্য এনেছে বেশকিছু আইটি-এনাবলড টেকনোলজিস, প্রোডাক্ট ও সার্ভিসে। আসলে এ কেন্দ্র বেশকিছু ক্ষেত্রে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছে। প্রকৃতিগতভাবে এসব ক্ষেত্র ভারতের জাতীয় উন্নয়ন প্রেক্ষাপটসংশ্লিষ্ট, যেসব ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত সাধারণত কাজ করছে না। এই কেন্দ্রের মুখ্য বা কাটিং-এজ-টেকনোলজির ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে এইচপিসি ছাড়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে গ্রিড কমপিউটিং, ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনোলজি ও মাল্টিলিঙ্গুয়ালি কমপিউটিং, ফ্রি অ্যান্ড ওপেন সফটওয়্যার সলিউশনসহ (Foss) সফটওয়্যার টেকনোলজি, ভেরি লার্জ সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন (ভিএলএসআই), এমবেডেড ও রিয়েল-টাইম সিস্টেম (আরটিএস) এই দুই দশক ছিল সি-ড্যাকের উদ্ভাবনের সময়। এ সময়ে সি-ড্যাক আরো কাজ করেছে ই-গভর্নেন্স, সাইবার সিকিউরিটি ও সাইবার ফরেনসিক, প্রফেশনাল ইলেক্ট্রনিকস, অ্যারিয়া ট্র্যাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম (এটিসিএস) ও হেলথ ইনফরমেটিকসে। সি-ড্যাক-এর সাম্প্রতিক অতি সফল উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে ব্যবহারের গ্রিড কমপিউটিং ও বান্ডলড ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। অধিকন্তু শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সি-ড্যাক কর্মকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হয়ে উঠেছে।

এই বিভিন্ন বিচিত্র ক্ষেত্রে সি-ড্যাক-এর বেশকিছু প্রযুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট পণ্য ও সেবা উদ্ভাবন করা গেছে। আর এগুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে, যেমন বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য-সেবা, কৃষি, শিল্প নিয়ন্ত্রণ, সম্প্রচার, বিনোদন শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক শাসনের ক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহার হচ্ছে।

সি-ড্যাক এরই মধ্যে ভারত সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এর একটি আলাদা বাণিজ্যিকায়ন ও বিপণন শাখা চালু করার ব্যাপারে। এর মাধ্যমে সি-ড্যাক-এর বৈচিত্র্যময় পণ্য, সলিউশন ও সার্ভিসের বাণিজ্যিকায়ন ও বিপণন করতে চায়। সি-ড্যাক ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর অভ্যন্তরীণ দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে এ দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞতা। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যথাযোগ্য কর্মসম্পাদনের সূত্রে সি-ড্যাক-এর সামনে সময় এসেছে একটি মেগা আরঅ্যান্ডডি ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলার। এসব ইনস্টিটিউট একটি ব্যাপকভিত্তিক দক্ষতা গড়ে তোলার পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় মাপের ভৌগোলিক পদচিহ্ন সৃষ্টি করেছে। এখন সি-ড্যাক-এর রয়েছে ১১টি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র রয়েছে পুনে, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, হায়াদ্রাবাদ, কলকাতা, মোহালি, মুম্বাই, নয়াদিল্লি, নইদা ও থিরুবাননথমপুরমে। এগুলোতে কাজ করছেন ২৫০০ দক্ষ গবেষণাকর্মী।

সি-ড্যাক-এর এইচপিসিসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে ‘ন্যাশনাল কমপিউটিং গ্রিড ইনিশিয়েটিভ’। এর নাম দেয়া হয়েছে Garuda। এটি ভারতব্যাপী গ্রিড কমপিউটেশনাল নোড, মাস স্টোরেজ ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সহযোগিতার ক্ষেত্র। গারুদা গ্রিড এরই মধ্যে এর প্রফ অব কনসেপ্ট (PoC) স্তরটি সম্পন্ন করেছে, সম্পন্ন করেছে এর ফাউন্ডেশন স্তরও। আরো অ্যাপ্লিকেশন এবং নতুন টেকনোলজি ও আর্কিটেকচার, যেমন- গ্রিড কমপিউটিংয়ের সার্ভিস ওরিয়েন্টেড আর্কিটেকচার (এসওএ) নিয়ে পরীক্ষা-পর্যালোচনা করা হবে খুব শিগগির। গারুদা ১৭টি নগরীর ৪৫টি ইনস্টিটিউশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। এর পিক ক্যাপাসিটি ২.৪৩ জিবিপিএস। এই নেটওয়ার্ককে দেখা হচ্ছে আগামী প্রজন্মের দেশব্যাপী এইচপিসি রিসোর্স সমৃদ্ধ অ্যারিয়া নেটওয়ার্ক এবং নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতামূলক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বৈজ্ঞানিক ইনস্ট্রুমেন্টের অগ্রগামী হিসেবে। গারুদায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যথাযথ যন্ত্রপাতি মিডলওয়্যার স্থাপন, যাতে করে গ্রিডজুড়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে অ্যাপ্লিকেশন চালু রাখা যায়। এ লক্ষ্যে ও প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য সি-ড্যাক গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে সিমেনটিক গ্রিড সার্ভিস, মোবাইল এজেন্ট, ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট, নেটওয়ার্ক সিমুলেশন ও গ্রিড ফাইল সিস্টেমের ওপর। এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে অভ্যন্তরীণভাবে ও পাশাপাশি অন্যান্য ইনস্টিটিউশন, যেমন- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, মাদ্রাজ; স্পেস অ্যাপ্লিকেশন্স সেন্টার, আহমেদাবাদ; ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, ব্যাঙ্গালোর ইত্যাদির সহযোগিতাও নেয়া হয়েছে। সি-ড্যাক সহযোগিতা দিচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-ইন্ডিয়া গ্রিড প্রজেক্টেও। এর মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের গবেষকরা ‘ইউরোপিয়ান এনাবলিং গ্রিড ফর ই-সায়েন্স’ (ইজিইই) ও গারুদার ওপর গবেষণার সুযোগ পাবেন।

গারুদা পদক্ষেপ

ভারতে অগ্রসরমানের গ্রিড টেকনোলজি গ্রহণের ক্ষেত্রে গারুদা পদক্ষেপ একটা অনন্য উদাহরণ। যেমন- মাল্টিগিগাবাইট ন্যাশনাল নলেজ নেটওয়ার্কের ওপর গারুদাকে বসিয়ে দেয়ার বিষয়টি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা সহযোগিতার ওপর। বিশেষ করে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উত্তরণ হচ্ছে সম্প্রতি ইন্ডিয়ান গ্রিড সার্টিফিকেশন অথরিটি (আইজিসিএ) চালু করা। এটি হবে সি-ড্যাক-এর আওতায় কমপিউটেশনাল গ্রিডের ক্ষেত্রে একটি সার্টিফিকেট কর্তৃপক্ষ। এটি এখন স্বীকৃতি পেয়েছে ‘এশিয়া প্যাসিফিক গ্রিড পলিসি ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ (APGrid PMA)-র। এর ফলে ভারতীয় গবেষকরা বিশ্বব্যাপী গ্রিডে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। আইজিসিএ ইন্ডিয়ান গ্রিডের নিরাপত্তার বিষয়গুলোও দেখাশোনা করার পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ও আন্তর্জাতিক গ্রিডের মধ্যকার আমত্মঃপরিচালনার বিষয়টিও দেখাশোনা করবে।

সি-ড্যাক-এর ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনোলজি মিশন চালু করা হয়েছিল একটি ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য, যাতে করে বিভিন্ন জীবিত ভাষাকে সহায়তা দেয়া যায় স্ট্যান্ডার্ড কমপিউটারে এর বহুমুখী লেখালেখিসহ। ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনোলজির ক্ষেত্রে সি-ড্যাক-এর উদ্ভাবনা শুরু বহুল প্রশংসিত। জিআইএসটি তথা ‘গ্রাফিক্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স বেসড স্ক্রিপ্ট টেকনোলজি’র মাধ্যমে। এর উদ্ভাবক এটির উদ্ভাবন শুরু করেন আইআইটি, কানপুরে। এরপর তিনি যোগ দেন ১৯৯০-এর দশকে সি-ড্যাক র্যাবঙ্কে। আসলে, এর মধ্য দিয়ে সি-ড্যাকে গড়ে ওঠে একটি জিআইএসটি গ্রুপ। এ গ্রুপ জিআইএসটি ব্যবহার করে বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন উদ্ভাবন করে। এ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটানো হয় এতে মাল্টিমিডিয়া ও মাল্টিলিঙ্গুয়াল কমপিউটিং সলিউশন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। যাতে করে এতে থাকে পাবলিশিং, প্রিন্টিং, ওয়ার্ড প্রসেসিং, বিভিন্ন অপারেটিং প্লাটফরমে জনপ্রিয় তৃতীয়-পক্ষ সফটওয়্যারের জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারফেসসহ অফিস অটোমেশন স্যুট, ইলেক্ট্রনিক মেইল, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পস্ন যন্ত্রপাতির সাহায্যে ভাষা শিক্ষা ও অনুবাদ ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশন। এ ক্ষেত্রে সি-ড্যাকের অব্যাহত পদক্ষেপ আজকের প্রেক্ষাপটে যথাযথ যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সম্ভবত G-CLASS (GIST Cross language search plug-ins suit) নামের একটি ক্রস-ল্যাঙ্গুয়েজ সার্চ ইঞ্জিন। সার্চ ইঞ্জিনগুলো প্রধানত পরিসংখ্যানগত প্রকৃতির এবং এগুলোর আছে নানা ফাঁক-ফোকর, ফলে প্রায়ই এতে মাল্টিপল কুয়েরিং বা নানামুখী খোঁজাখুঁজির প্রয়োজন হয়। ভারতীয় ভাষার ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি আরো বেশি জটিল। G-CLASS এ সমস্যা দূর করেছে অতি সাফল্যের সাথে। জি-ক্লাস ল্যাঙ্গুয়েজ টুলস স্যুটের মাধ্যমে, যেমন মাল্টিলিঙ্গুয়াল সার্চ ও সাইনোনিমিক সার্চের মাধ্যমে সার্চ সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলেছে। বর্তমান জি-ক্লাস সার্চ এখন সীমাবদ্ধ হিন্দি, মারাটি, গুজরাটি ও উড়িয়া ভাষার মধ্যে। বাংলা, মালয়ান ও পাঞ্জাবি ভাষা নিয়ে কাজ চলছে। তামিল, কোনকানি, কানাড়া ও অন্যান্য সরকারি ভাষা নিয়ে এর পর কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সি-ড্যাক একটি ভারতীয় ‘ল্যাঙ্গুয়েজ টুলস অ্যান্ড সলিউশনস’ উদ্ভাবন করেছে। এটি ফ্রি, ডাউনলোডযোগ্য এবং সিডিতেও পাওয়া যায়। ডেস্কটপ, মোবাইল, টেলিভিশন, ওয়েবসাইট ও ই-গভর্নেন্স অ্যাপ্লিকেশনসহ প্রায় সব প্ল্যাটফরমেই এটি উপযোগী। এগুলো চালু করা হয়েছে ১১টি ভাষার জন্য। এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে এর ৬ লাখ সিডি এবং প্রায় ৩০ লাখ ব্যবহারকারী তা ডাউনলোড করেছেন।

MANTRA রাজ্যসভা টুল হচ্ছে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অবদান। এটি ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে রাজ্যসভার লিস্ট অব বিজনেস ডোমেইনে টেবিলে আসা কাগজপত্র, বুলেটিন, বিতর্কের সংক্ষিপ্তসার, ইংরেজির অনুবাদ পাওয়া যাবে। ‘মন্ত্র’ যে অনুবাদ কৌশল গ্রহণ করেছে ‘ওয়ার্ড টু ওয়ার্ড’ বা ‘রুল টু রুল’ নয়, বরং ‘লেক্সিক্যাল ট্রি টু লেক্সিক্যাল ট্রি’। মন্ত্র’র সব প্রদর্শনের পর ‘ডিপার্টমেন্ট অব অফিসিয়েল ল্যাঙ্গুয়েজ’ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর নাম ‘কমপিউটার অ্যাসিস্টেড ট্রানস্লেশন সিস্টেম ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পারপাসেস’। এ প্যাকের নাম দেয়া হয়েছে ‘MANTRA-Rajbhasha’।

সি-ড্যাক সুযোগ সৃষ্টি করেছে গবেষণা ও শিক্ষার একটি যথাযথ পরিবেশ। সি-ড্যাক-এর রয়েছে আবহাওয়া ও জলবায়ু মডেলিং ও ফরকাস্টিং বিষয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের গবেষণার সুযোগ। এটি উদ্ভাবন করেছে Anuman’ নামের একটি ‘রিয়েল টাইম ওয়েদার সিস্টেম’ (আরটিডব্লিউএস)। এটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়, নমনীয়, বহনযোগ্য ওয়েবভিত্তিক ওয়েদার সিমুলেশন সফটওয়্যার। ‘অনুমান’-এর সার্ভিস ওরিয়েন্টেড আর্কিটেকচার (এসওএ) বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টিকারী ঘটনার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস