শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো : মাইক্রোসফট-সিএসই কার্নিভাল-২০১০
গত ৮ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মাইক্রোসফট-সিএসই কার্নিভাল-২০১০। তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সফটওয়্যার প্রদর্শনী, জাতীয় কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘এনসিপিসি’, ওয়ার্ল্ড সাইবার গেমসের সিলেট রাউন্ডের বাছাই পর্ব, ল্যাপটপ ফেয়ার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো: সালেহ উদ্দিন, কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মাইক্রোসফটের পাবলিক সেক্টর ম্যানেজার কে.এম. ইমরান আল আমিন, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেটের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান রোমেল এম এস রহমান পীর এবং দৈনিক উত্তরপূর্বের সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী।
প্রধান অতিথি জাতীয় উন্নয়নের একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিকে উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্বাসী এবং সর্বদা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মডেল হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি আশাবাদী এর সফল বাস্তবায়ন আমার সময়েই দেখতে পাব।’
কার্নিভালের আহবায়ক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘সিএসই কার্নিভাল আয়োজন করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমি চাই সবার উপস্থিতি ও সহযোগিতায় কার্নিভালের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।’
প্রথমদিন থেকেই শুরু হয় সফটওয়্যার প্রদর্শনী। এ প্রতিযোগিতায় ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক ড. রেজা সেলিম ও মো: খায়রুল্লাহ, গ্রামীণফোনের প্রতিনিধি সনৎ পাল চৌধুরী এবং ওয়েবক্রাফটের জাকারিয়া চৌধুরী। সফটওয়্যার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিউদ্দিন। যেকোনো ইমার্জেন্সি নিউজ জেনারেশন ও মোবাইল বেইজড ইনফরমেশন শেয়ারিংয়ের সুবিধা রয়েছে এ সফটওয়্যারে। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন দেবজ্যোতি আইচ। তার ‘শুভচর’ নামের সফটওয়্যারে বাংলা লিখে দিলে উচ্চারণ করতে পারবে। তৃতীয় স্থান অধিকার করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিবর আহমেদ, ‘e-campus’ সফটওয়্যারের জন্য। এই সফটওয়্যারটি কার্নিভালে ব্যবহার করা হয় NCPC-তে সেট করা ক্যামেরায় ভিডিও ব্রডকাস্টিংয়ের মাধ্যমে আপডেট ফল গ্রহণের জন্য। বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এমআর মুকিত তার ‘অ্যাকাউন্টিং কিট’ সফটওয়্যারের জন্য। ‘Online campus radio’ সফটওয়্যারটির জন্যও বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন সিলেট প্রকৌশল কলেজের পার্থ সারথী কর। এ সফটওয়্যারটির সাহায্যে ওয়েবসাইটে রেডিও শোনা যাবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের মূল আকর্ষণ ছিল ওয়ার্ল্ড সাইবার গেমসের দশ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত গেমিং কনটেস্টে ফিফা-১০-এর সিলেট রাউন্ডের বাছাই পর্ব। নক আউট ভিত্তিতে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শতাধিক প্রতিযোগী। ফিফা-১০ ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করেন মুনতাসীর মাহতাব প্রিয়ম (ইসলামিক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন মো: সাদাত হোসেন খান (সিলেট প্রকৌশল কলেজ) এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মো: রাশেদুল হাসান (শাবিপ্রবি)। গেমিং কনটেস্টের স্পন্সর ছিল ইন্টেল করপোরেশন, স্যামসাং, গিগাবাইট, স্মার্ট টেকনোলজিস এবং এফ ওয়ান আইটি।
কার্নিভালের তৃতীয় দিনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল জাতীয় কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা তথা এনসিপিসি। এ প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক ছিলেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ৮৮টি দল অংশ নেয় এ প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতায় মোট ৯টি সমস্যার জন্য ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ ছিল সব প্রতিযোগীর জন্য। এবারের এনসিপিসিতে শীর্ষস্থান অর্জন করে বুয়েট। ছয়টি সমস্যার সমাধান করে বুয়েটের চ্যাম্পিয়ন দল শিম্পাঞ্জী। এ শীর্ষ দশে থাকা দলগুলো হলো : প্রথম- বুয়েটের শিম্পাঞ্জী, দ্বিতীয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিইউ রেজোনেন্স , তৃতীয়-বুয়েট অ্যাভেঞ্জার্স, চতুর্থ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমপাল্স, পঞ্চম- সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাতসুকি, ষষ্ঠ- বুয়েটের যাচ্ছেতাই, সপ্তম- শাবিপ্রবির মেসেঞ্জার্স, অষ্টম- শাবিপ্রবির বিদ্রোহী, নবম- ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ট্রিপল হেফি ও দশম- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইমস।
কার্নিভালের তৃতীয় দিনের অন্য একটি প্রধান আকর্ষণ ছিল ওয়ার্ল্ড সাইবার গেমসের এনএফএস মোস্ট ওয়ান্টেড এবং কাউন্টার স্ট্রাইকের গেমিং কনটেস্ট। এনএফএস মোস্ট ওয়ান্টেডে বিজয়ী হয়েছেন আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলিফ রহমান চৌধুরী। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছেন বাংলাদেশ লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা সাবরিন আল আজাদ এবং তৃতীয় হয়েছেন মো: শাহীন হাসেম। অন্যদিকে ৫ জনের দল করে অংশ নিতে আসা কাউন্টার স্ট্রাইক গেমে তন্ময়-এর দল প্রথম স্থান অধিকার করে এবং রানারআপ হয় প্রিয়ম-এর দল।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো: সালেহ উদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের সচিব এনামুল কবির, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, আইবল কানাডার সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ সাহাদাত হোসেন, লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য কবির হোসেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. কায়কোবাদ, টেলিটক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক মুনির হাসান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
সর্বশেষে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় তিনদিনের এ বর্ণাঢ্য আয়োজন। কবিতা আবৃত্তি, গান, নাচ সবকিছু মিলিয়েই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আরও একটি সফল কার্নিভালের শুভ সমাপ্তি ঘটে।
কজ ওয়েব