দেশের সাধারণ মানুষ কী ধরনের টেলিযোগাযোগ সুবিধা পাবে, ব্যয়ের আকার কেমন হবে, যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রাহক টেলিযোগাযোগ সুবিধা নেবে, তার মান খারাপ হলে করণীয় কী, দেশের বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সব ধরনের সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যেই ২০০১ সালের ৮ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১’ চালু হয়। এই আইন চালুর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তথা বিটিআরসি নামে একটি স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠা পায়। ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিটিআরসি কাজ শুরু করে। এ সময় টেলিযোগাযোগ আইন প্রয়োগ বেশ গতি পায় এবং এতে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয় ঠিকই, তবে ক্ষমতা প্রয়োগ করার মতো দক্ষতা ছিল না তখনকার বিটিআরসি’র। কিন্তু ২০০১ সালের টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধন করে এসব ক্ষমতা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হাতে নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সংশোধিত আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।
সাধারণত দেখা গেছে, স্বাধীন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি স্বচ্ছ ও গতিময় হয়। ফলে কাজের আউটপুট যেমন বেশি হয়, তেমনি সর্বসাধারণ এসব স্বাধীন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান থেকে উপকৃত হয় বেশি। আর সে কারণে সারাবিশ্বে এখন স্বাধীন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রবণতাও বেড়ে গেছে যথেষ্ট মাত্রায়। আর সে কারণেই বলা যায়, উন্নত বিশ্ব এবং বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে মোবাইল সেক্টরের সাবলীল বিকাশের পেছনে কাজ করে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। মোবাইল টেলিকমসহ আইসিটি খাতের বিকাশে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ে উঠা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তবে সম্প্রতি কিছু অদূরদর্শী লোকের কোপানলে পড়ে সরকার হাঁটতে যাচ্ছে উল্টোপথে। দুর্নীতি দমন কমিশনের মতোই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে আমলাতন্ত্রের লালফিতায় বাঁধার যাবতীয় আয়োজন শেষ করেছে সরকার। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে টেলিযোগাযোগ আইন পাস হলেই বিটিআরসি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হবে। অর্থাৎ বিটিআরসি আগামীতেও থাকবে, তবে টেলিকম সেক্টর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে।
সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে সংশোধিত এই টেলিযোগাযোগ আইন। এ নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের মধ্যেও এক আতঙ্ক কাজ করছে। কেননা নতুন সিম বিক্রিতেও কড়াকড়ি শর্তারোপ করা হচ্ছে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষের দিকে উচ্চহারের জরিমানার বিধান রেখে টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এখন সংশোধিত যে আইনটি পাস হতে যাচ্ছে, তাতে আপিলের সুযোগও রাখা হয়নি। এছাড়া রয়েছে টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত অপরাধের কারণে ৩০০ কোটি টাকা দন্ডের বিধান যা বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও নেই।
টেলিকম সেক্টরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন তথা বিটিআরসি’র কিছু কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের তেমন প্রাধান্য ছিল না অর্থাৎ বিটিআরসি’র কর্মকান্ডে তেমন খবরদারির ক্ষমতা ছিল না। বিগত কয়েক বছরে বিটিআরসি দেশের টেলিকম মার্কেটে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন লাইসেন্স ইস্যু করে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলেছে। এসব খাত থেকে বিটিআরসি সরকারকে প্রচুর রাজস্বও যোগাড় করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন, টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল স্থাপন, ভিওআইপি লাইসেন্স দেয়া, তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তিসহ বেশকিছু লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসি অনেকটা স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। এতে মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজেদের অবহেলিত বা গুরুত্বহীন মনে করেন ও অসন্তুষ্ট হন। তাদের অসন্তুষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর সংশোধনীর প্রস্তাবনায়। এর ফলে দেশের টেলিকম সেক্টরে বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থার লাইসেন্স দেয়া, নবায়ন, অনুমোদন হস্তান্তর, নিয়ন্ত্রণ, স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণসহ ট্যারিফ বা কলচার্জ নির্ধারণ এবং বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা জারিসহ গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুরই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হাতে। এতে বিটিআরসি’র ক্ষমতা খর্ব হয়ে যাবে। নতুন নিয়মে বিটিআরসি’র হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা রাখা হয়নি। বিটিআরসি’র হাতে কোনো ক্ষমতা না রেখে শুধু রাখা হয়েছে বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স ইস্যু ও নিয়ন্ত্রণ, বেতার ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করা ও স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা, মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আইনের বিধানাবলী পালন করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় বাস্তবায়ন আদেশ জারি করা, প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ ও আদায় এবং টেলিকম সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের কাজে সহায়তা দানের মতো কাজ।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ এবং প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনীর আইন ২০১০-এর তুলনামূলক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিটিআরসি-কে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ থেকে বিরত রেখে শুধু মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ একটি পঙ্গু কমিশনে পরিণত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনের প্রস্তাবনা অংশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কিছু ক্ষমতা, কার্যাবলী ও দায়িত্ব কমিশনের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দক্ষ নিয়ন্ত্রণ এবং টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এ সংশোধনী আইনের ধারা ২(২১)-এ টেলিযোগাযোগ সেবার ‘পারমিট’ দানের ক্ষেত্রে ‘সরকার বা সরকার কর্তৃক সম্মতিপ্রাপ্ত হইয়া কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স’ এবং ২(২৯)-এ ‘লাইসেন্স অর্থ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স’ উল্লেখ করার মাধ্যমে বিটিআরসি’র নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০০১ সালের আইনের ধারা ২৮-এর সংশোধনে বিটিআরসি’র বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল ‘মন্ত্রীর নিকট পেশ’ করার পরিবর্তে ‘মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ’ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এবং ধারা ৩০-এর (১)-তে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান নিয়ন্ত্রণ’-এর সাথে ‘নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের কাজে মন্ত্রণালয়কে সহায়তা প্রদান’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে এসব কিছুর চেয়ে কমিশনের ক্ষমতা সম্পর্কে প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনের ৩১ ধারার বিভিন্ন অনুচ্ছেদে দেশের টেলিকম সেক্টরের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র ক্ষমতা প্রায় সবটুকুই রদ করা হয়েছে। যদিও এই আইনের বিধানাবলী পালন করার বিষয় নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বাধ্যতামূলক বাস্তবায়ন (এনফোর্সমেন্ট) আদেশ জারি করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ ও আদায় করার ক্ষেত্রে বিটিআরসি-কে একক কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। এ ধারার (২) উপধারা (১)-এ বিটিআরসি ও সরকারের সুনির্দিষ্ট ক্ষমতাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর এই স্থানে (ক) উল্লেখ ছিল ‘কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফিস প্রদান সাপেক্ষে-(অ) টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থাপন, পরিচালনা বা টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান বা বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স এবং যথাযথ ক্ষেত্রে পারমিট বা কারিগরি গ্রহণযোগ্যতা সনদ ইস্যু করা।’ এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে (ক) সরকার বা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফিস প্রদান সাপেক্ষে শুধুমাত্র ‘বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স এবং যথাযথ ক্ষেত্রে পারমিট বা কারিগরি গ্রহণযোগ্য সনদ ইস্যু করা।’ (ই) ‘ইস্যুকৃত লাইসেন্স, পারমিট ও সনদ-এর নবায়ন, হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণ, স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণ’-এর ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে শুধু ‘বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য’ শব্দগুলো যুক্ত করা হয়েছে। তবে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করার বিষয়ের কোনো ক্ষেত্রেই ‘সরকার’ শব্দটি যুক্ত করা হয়নি। পাশাপাশি ২০০১ সালের আইনের ধারা ৩১-এর (২) উপধারা (১)-এ (ঙ)-তে উল্লেখ ছিল- ‘টেলিযোগাযোগ সেবার ব্যাপারে ট্যারিফ, কলচার্জ এবং অন্যান্য পরিচালনাকারী কর্তৃক উহা নির্ণয়ের পদ্ধতি নির্ধারণ।’ এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে ‘সরকারি কাজে সুপারিশ প্রদানসহ সরকারকে সহায়তা প্রদান’ শব্দগুলো যুক্ত করা হয়েছে।
২০০১ সালের আইনের সাথে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার তুলনামূলক চিত্রে আরো দেখা যায় ৩১(১)-এ আইনত ‘পরিধি’ শব্দের সাথে ‘বিধি’ শব্দটি সংযোজন করা হয়েছে। ধারা ২(ক) ‘কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ বা ‘কমিশন’ শব্দ দুটি যুক্ত করার মাধ্যমে দ্বৈত কর্তৃত্ব আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীর ধারা ৩৪-এর (ট)-এ বলা হয়েছে, ‘এই আইনের ৩১ ধারায় কমিশনকে প্রদত্ত ক্ষমতা সরকার সংরক্ষণ করে।’ মূলত এই উপধারাটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয় বিটিআরসি এবং দেশের টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর তাদের সর্বশেষ আঘাতটি করে। ইতোপূর্বে বিটিআরসি ও সরকারের দ্বৈত অংশগ্রহণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিটিআরসি’র কিছু ক্ষমতা দেয়া হলেও এ উপধারার মাধ্যমে তা রহিত করার একটি সুস্পষ্ট সুযোগ রাখা হয়েছে। এর পরের উপধারা (ঠ)-তে বলা হয়েছে, এ ধারার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ‘সরকার’ বলতে ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়’কে বুঝাবে এবং ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে এই ধারার বিধান প্রয়োগযোগ্য হবে।’ মূলত এভাবেই টেলিযোগাযোগ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীন টেলিকম সেক্টরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের হাতে নেয়া হচ্ছে এবং স্বাধীন কমিশন ও এ সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বিটিআরসি’র হাতে কিছু ক্ষমতা দেয়ার মাধ্যমে এটাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
৩৫ ধারায় আগে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা ছিল ১০ লাখ। এখন তা বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
সংশোধিত ৩৬ ধারায় লাইসেন্স দেয়ার পর এখতিয়ার সরকারের এবং লাইসেন্সের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
ধারা ৩৯-এ সবকিছু বিচার করে কমিশন প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে লাইসেন্স শর্তাবলি, প্রতিস্থাপন, সংযোজন, বাতিলকরণ বা সংশোধন করার কথা ছিল। এখন তা সরকার করবে বলা হয়েছে।
৪৬ ধারা সংশোধন করে প্রশাসনিক আদেশে লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করার ক্ষমতাও সরকারকে দেয়া হয়েছে।
৪৬-এর ৩ উপধারায় নতুন সংযোজন (চ)-এ বলা হয়েছে, সরকার কোনো লাইসেন্স স্থগিত করলে, লাইসেন্সের অধীনে সেবাদান অব্যাহত রাখা, উন্নয়ন ও যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে প্রশাসক বা রিসিভার নিয়োগ করতে পারবে। তবে গৃহীত ব্যবস্থার কারণে কোনো ধরনের ক্ষতির জন্য লাইসেন্সকারী কোনো ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারবে না।
টেলিকম খাতকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে জাতীয় টেলিকম পলিসি প্রণয়ন করে। পরে এই সরকারের পরিকল্পনা থেকেই ২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তথা বিটিআরসি গঠন করা হয়। যার ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে টেলিযোগাযোগসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেয়া, নবায়ন, স্থগিত ও বাতিল, লাইসেন্স ফি ও ট্যারিফ নির্ধারণ, জরিমানা, শাস্তি এবং এসবের জন্য নীতিমালা তৈরি করা। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধিত) আইন ২০১০ পাস হলে টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারাবে বিটিআরসি। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে টেলিকম খাতকে এগিয়ে নেয়ার যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে, তা অনেকাংশে ব্যাহত হবে বিটিআরসি-কে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা করা হলে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো বিগত সরকারের যাবতীয় পরিকল্পনা, কর্মকান্ড তা প্রশংসনীয় বা নিন্দনীয় বা জনহিতকর- যাই হোক না কেনো সরকার বদলের সাথে সাথে তার অপমৃত্যু ঘটা নিশ্চিত এবং আইন সংশোনের মাধ্যমে তা আবার নতুন নামে বা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন করে শুরু করা। এতে শুধু যে উন্নয়নের কাজে বাধাগ্রস্ত হয় তাই নয়, বরং বিপুল অঙ্কের অর্থের অপচয় ঘটে। হয়তো এমনটিই ঘটতে যাচ্ছে বিটিআরসি’র ক্ষেত্রে। বিটিআরসি প্রতিষ্ঠার পর প্রথমদিকে দক্ষ জনবলের অভাবে তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে না পারলেও পরবর্তী পর্যায়ে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়, এর মধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন, টেরিস্ট্রিরাল ক্যাবল স্থাপন, ভিওআইপি লাইসেন্স দেয়া অন্যতম। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত কাজ করতে পেরেছিল শুধু স্বাধীন কমিশনের কারণে। এতে হয়তো কেউ কেউ অখুশি হলেও কিছু কাজ তো হয়েছে, যা সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলে হয়তো হতো না। দেশের মানুষ চায়, তাদের সুযোগ-সুবিধা, উন্নয়নমূলক কাজ যা স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে সম্ভব, কেননা এখানে আমলাতন্ত্রের জটিলতা তুলনামূলকভাবে কম। সুতরাং স্বাধীন কমিশন তথা বিটিআরসি’র যেন অকাল মৃত্যু না ঘটে। প্রয়োজনে এ কমিশনকে শক্তিশালী করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আরো এগিয়ে যাবে। দলমত নির্বিশেষে সবকিছু ভুলে গিয়ে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেবে- কোন সরকার বা দলের উদ্যোগ সেটা বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয়, এটা আমাদের সবার প্রত্যাশা।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com