• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইউনিবিজয়-বিজয় নিয়ে সাম্প্রতিক প্রাযুক্তিক বিতর্ক
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: অনিমেষ চন্দ্র বাইন
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
বিতর্ক
তথ্যসূত্র:
বিতর্ক
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইউনিবিজয়-বিজয় নিয়ে সাম্প্রতিক প্রাযুক্তিক বিতর্ক
বিজয়-অভ্র সফটওয়্যার, বিজয়-ইউনিবিজয় কীবোর্ড নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছুই নয়, অন্তত যারা এ খাতে কাজ করছেন তাদের সবারই এ বিতর্কটি জানা। তবে বিগত এক মাস ধরে বিজয় ও ইউনিবিজয় কীবোর্ড নিয়ে দেশে প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকাগুলো, অনলাইনের বিভিন্ন মিডিয়া, যেমন- কমিউনিটি বস্নগ, সোস্যাল নেটওয়ার্ক ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় জায়গায় বাংলা কীবোর্ড লেআউট, কপিরাইট, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক সংক্রান্ত বাংলা কমপিউটিংয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, যুক্তি-তর্ক এবং প্রত্যেক পক্ষ তাদের সমর্থনে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অন্য পক্ষকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।

দুটি সফটওয়্যারেরই গঠন পদ্ধতিতে রয়েছে কিছু পার্থক্য। একটি আসকি, অন্যটি ইউনিকোডভিত্তিক মুক্ত সফটওয়্যার। আসকিভিত্তিক হওয়ায় বিজয় ইন্টারনেটে বাংলা কমপিউটিংয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। আর বিজয়ের সীমাবদ্ধতাসমূহ দূর করে ইন্টারনেট বাংলার সলিউশন নিয়ে আসে মুক্ত সফটওয়্যার অভ্র। তবে একথা অনস্বীকার্য, পাবলিশিংয়ের ক্ষেত্রে এখনো বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। অভ্রও একইভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায়। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বাংলায় কমিউনিটি বস্নগগুলো ও ফনেটিক কীবোর্ড।

তবে কমপিউটারে বাংলা টাইপিং নিয়ে সমস্যার তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয়টি ডেস্কটপ পাবলিশিং নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার অধিকারী। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বিজয় সফটওয়্যার তৈরি হওয়ার ফলে এ বিষয়টি অত্যন্ত সহজ হয়েছে আর এখন পর্যন্ত প্রকাশনার সব কাজকর্ম বিজয়েই সম্পন্ন হয়। আশির দশকের শেষদিকে তৈরি হওয়া সলিউশন বাংলা কমপিউটিংয়ের ইতিহাসে যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে বলা যায়। একই সাথে ইন্টারনেটে বাংলার পদচারণার জন্য অভ্রের অবদান অনস্বীকার্য।

সে যা-ই হোক, সম্প্রতি ইউনিবিজয় নিয়ে একটি দ্বন্দ্ব চলছে আনন্দ কমপিউটার্সের প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জববার ও অভ্র সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অমিক্রনল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের মধ্যে। পত্রপত্রিকায় বিতর্কের ঝড় তোলার পর বিতর্কটিতে এরই মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ইউনিকোডে বাংলা লেখার ফ্রি সফটওয়্যার অভ্রের বিরুদ্ধে পাইরেসির লিখিত অভিযোগ তুলে মোস্তাফা জববার কপিরাইট অফিসে চিঠি দিয়েছেন। কপিরাইট অফিস এ ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে মেহদী হাসানকে। এ নোটিসের জবাবের অপেক্ষায় কপিরাইট অফিস। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দুজন কী বলছেন তাদের স্বপক্ষে। তা জানাতেই এ প্রতিবেদন।

মেহদী হাসান খানের বক্তব্য



ইউনিবিজয় ও বিজয় কীবোর্ড নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়টি সম্পর্কে মুক্ত সফটওয়্যার অভ্রের নির্মাতা মেহদী হাসান খানের মন্তব্য জানার জন্য আমরা তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি ঢাকার বাইরে থাকায় তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফলে বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ করে মেহদী হাসান খানের অভিমত চেয়ে তার কাছে একটি ই-মেইল পাঠানো হয়। জবাবে তার লেখা একটি প্রবন্ধের কপি আমাদের কাছে তিনি পাঠান। তার আলোকে আলোচ্য বিতর্কের প্রশ্নে তার বক্তব্য এখানে উপস্থাপিত হলো।

গত ৪ এপ্রিল, ২০১০-এ ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা : একুশ শতক’ শিরোনামে মোস্তাফা জববার দৈনিক জনকণ্ঠে একটি লেখা ছাপেন, যার মূল বক্তব্য সাম্প্রতিক অনেক সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা নিয়ে। কিন্তু সুকৌশলে তিনি এ লেখায় ইউনিবিজয় কীবোর্ড তৈরির ক্ষেত্রে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন বিনামূল্যে বাংলা লেখার সফটওয়্যার অভ্র কীবোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। এর আগেও তিনি জনকণ্ঠে অভ্রকে সরাসরি ‘চুরি করা সফটওয়্যার’ বলে অভিহিত করেন। আমরা প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছিলাম, জনকণ্ঠ সেটা ছাপায়নি। বাংলা কমপিউটিং নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য এটা স্বাভাবিক একটা অভিজ্ঞতা। উকিল নোটিস, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে হয়রানির হুমকি- এসব উপেক্ষা করেই তারা কাজ করেন। আমরাও তাই করে আসছিলাম, তিনি একেকটা মিথ্যাচার প্রচার করেন, আমরা জবাব দিই আমাদের কাজ দিয়ে। জেদ নিয়ে পড়ে থাকি বাংলা লেখালেখিকে কিভাবে আরো সহজ করা যায়, আরো ব্যবহারবান্ধব করে তোলা যায় এবং সর্বোপরি সেটা কিভাবে বিনামূল্যে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়- এসব নিয়ে। আমরা বিরক্ত হই, নিজেদের অসহায়ত্ব দেখে দুঃখিত হই, আবার একইসাথে মোস্তাফা জববারের প্রতিক্রিয়া দেখে টের পাই, ঠিক পথেই এগুচ্ছি।

কিন্তু এবার একটা অভাবনীয় ব্যাপার ঘটল। আমি দেখলাম, শত শত মানুষ কিভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদে। ব্লগ থেকে ব্লগে, ফেসবুকে, মেইলে কিভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে সেই প্রতিবাদ। বাংলা কমিউনিটি ব্লগগুলো তাদের ব্যানার পরিবর্তন করে অভ্রর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে, ব্লগাররা যুক্তি দিয়ে মানুষের বিভ্রান্তি কাটাতে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক ব্লগ। ফেসবুকে নতুন গ্রুপ খোলা হচ্ছে। বাংলা ফোরামগুলো নতুন নতুন থ্রেড খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মানুষ এমনকি ব্যক্তিগতভাবে মেইল করে মোস্তাফা জববারকে বুঝাতে চেষ্টা করছেন।

বসে বসে সবার লেখা পড়া আর প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা ছাড়া করার কিছুই ছিল না। সে উত্তর খুঁজে পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। একটু ভাবলেই বোঝা যায়, সবাই লড়ছেন একটা স্বপ্নের জন্য, যে স্বপ্নে নিজের ভাষায় লিখতে কারো কাছে হাত পাততে হবে না। যে স্বপ্নে বাংলায় লিখলে কেউ খড়গ হাতে তেড়ে এসে জানতে চাইবে না, লেখার আগে আপনি টাকা দিয়ে লেখার অধিকার কিনেছেন কি না। মুক্ত সফটওয়্যারের ধারণাটি নতুন নয়, কিন্তু বাংলাভাষার জন্য স্বপ্নটি সবাইকে প্রথমবার দেখিয়েছিল এই অভ্র। ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’ কথাটা শুধু অভ্রের স্লোগান নয়, এটা একটা অধিকার প্রতিষ্ঠার আশ্বাস। মোস্তাফা জববার যখন জেনেশুনে সেই অধিকারটা কেড়ে নিতে চান, মানুষ কেনো চুপ করে থাকবেন? স্বাধীনতার ডাক বড় খারাপ বিষয়, দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে না।

মোস্তাফা জববার তার লেখায় ঢালাওভাবে পুরো অভ্র কীবোর্ডকেই ‘পাইরেটেড’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অভিযোগটা গুরুতর, একটা জাতীয় দৈনিকে অভিযোগটা কেউ করলে আমরা অবশ্যই ধরে নেব, তিনি যা লিখছেন বুঝেশুনে লিখছেন। মজার ব্যাপার হলো, মানুষ প্রশ্ন তোলে, অভ্র কিভাবে পাইরেটেড? প্রশ্নটা করে তাকে চেপে ধরার পর তিনি বললেন- অভ্র নিয়ে তার আপত্তি নেই, অভ্রতে ইউনিবিজয় নামে যে কীবোর্ড লেআউট আছে ওটা তার বিজয় লেআউট থেকে চুরি করা। আসুন দেখি কী করলে একটা কপিরাইটেড/প্যাটেন্টেড লেআউট অথবা এর প্রয়োগ চুরির অভিযোগ আমরা দিতে পারি।

০১. অবিকল লেআউট স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে :

২০০৩ সালে অভ্র ডেভেলপের পরিকল্পনা করার সময় আমি ফোনে মোস্তাফা জববারের কাছে বিজয় লেআউট ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিলাম। তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছিল, সফটওয়্যারটি যেকেউ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবে। বিজয় তখনও ইউনিকোড সমর্থন করত না, ইউনিকোড সমর্থন দেয়ার কোনো পরিকল্পনাও তার ছিল না। এই সফটওয়্যারটি ইউনিকোড সমর্থিত হবে, সুতরাং তিনি বিজয় ফন্টের অপব্যবহারের চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন, শুধু লেআউট একই। এ ছাড়া সফটওয়্যার দুটোতে কোনো মিল থাকবে না।

তিনিও তার জবাব জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাকে টাকা না দিলে তিনি অনুমতি দেবেন না। বেশ ভালো কথা, আমিও বিজয় কীবোর্ড অভ্রের সাথে দিইনি।

ইউনিবিজয় আর বিজয় কোনোদিনই এক কীবোর্ড লেআউট ছিল না, এখনো নেই। যেখানে একটা কী-এর মাধ্যমে পার্থক্য একটা আলাদা লেআউটের জন্ম দেয়, ইউনিবিজয়ের সাথে বিজয়ের সেখানে অন্তত ৮টি কী-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

০২. ফিজিক্যাল লেআউট অনুমতি ছাড়া বিতরণ করলে :

এ ধরনের বিতরণের প্রশ্নই আসে না। অভ্র কীবোর্ড একটা সফটওয়্যার মাত্র, এর সাথে বিজয় লেআউট ছাপানো কোনো কীবোর্ড আমরা বিতরণ করি না।

০৩. কীবোর্ড ইন্টারফেস প্রোগ্রামের কোড অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে :

আবারো বলি, এই যুক্তিও খাটে না। বিজয় ক্লোজড সোর্স, যার সোর্স থেকে অভ্র ডেভেলপ করা সম্ভব নয়।

০৪. ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন করলে :

বিজয় শব্দটি রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক। সেটি যাতে লঙ্ঘন করা না হয় এবং ইউনিবিজয় যে স্পষ্টভাবে আলাদা একটা লেআউট সেটা বোঝাতেই এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা কোনোদিনই অভ্রের সাথে বিজয় নামে কোনো লেআউট ব্যবহার করিনি। উদাহরণ দিয়ে যদি বলি, ‘স্লাইড শো’ শব্দটা মাইক্রোসফটের রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক অন্য একটা প্রতিষ্ঠান যখন DVD SlideShow Builder (http://www.photo-to-dvd.com/dvd-slideshow-builder.html নামে একটা সফটওয়্যার বানায়, তখন মাইক্রোসফটের লেজে কামড় বসানো হয় না। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, ইউনিবিজয় বা ইউনিজয় লেআউটগুলো বের হয়েছে ২০০৩ সাল বা তারও আগে। ১৯৮৭ সালে ডিজাইন করা হলেও আপনি বিজয়ের প্যাটেন্ট পেয়েছেন ২০০৮/২০০৯ সালে। সেক্ষেত্রে প্যাটেন্টের আগে থেকেই থাকা এই লেআউটগুলো কিভাবে প্যাটেন্টবিরোধী হয়ে গেল আমাদের বোঝাবেন?

অভ্র একটি মুক্ত সফটওয়্যার। মুক্ত সফটওয়্যার এবং মুক্ত সোর্স সফটওয়্যার নিয়ে সাধারণের এই বিভ্রান্তির অবসান হওয়া প্রয়োজন। অভ্রের লিনআক্স সংস্করণের সোর্সকোড ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই গুগলকোডে তুলে দেয়া হয়েছে লাইসেন্স GNU-GP L v2-এর আওতায়। উইন্ডোজ সংস্করণের কোড এখনও উন্মুক্ত করা হয়নি।

কোনো কীবোর্ড লেআউটই আমরা বাণিজ্যিকভিত্তিতে ব্যবহারের চেষ্টা করিনি, তাই প্যাটেন্ট নিয়েও উৎসাহী ছিলাম না। এখনো উৎসাহী নই। অমিক্রনল্যাব কোনোদিন বাণিজ্যিকভিত্তিতে সফটওয়্যার বিতরণ করেনি, করবেও না।

শুধু একটি কী’র মধ্যে পার্থক্য হলেই নতুন লেআউটের জন্ম দেয়।

১৮৭৩-এর নভেম্বরে ক্লাফ-ম্যাকেন্ড্রির প্যাটেন্ট করা লেআউট
2 3 4 5 6 7 8 9 - , _
? Q W E R T U I O P Y :
? ? A S D F G H J K L M
? & Z C X V B N ? ; . ‘

১৮৭৪-এর এপ্রিলে শোলজের প্যাটেন্ট করা লেআউট
2 3 4 5 6 7 8 9 - , _
? Q W E R T Y U I O P :
? ? A S D F G H J K L M
? & Z C X V B N ? ; . ও

১৮৭৮-এর জানুয়ারিতে শোলজের আরেকটি কীবোর্ড
2 3 4 5 6 7 8 9 -
? q w e r t y u i o p
? a s d f g h j k l m
? z c x v b n , ; !

১৮৮২-সালে যখন রেমিংটনের কর্ণধার হয়ে দাঁড়ান ওয়াইকফ, সীম্যানস আর বেনেডিক্ট, তখন শোলজের প্যাটেন্টের ঝামেলা এড়ানোর জন্য তারা ব্যবহার করেন নিচের লেআউট
? 2 3 4 5 6 7 8 9 -
? q w e r t y u i o p
? a s d f g h j k l ;
? z x c v b n m , !

ওয়াইকফদের লেআউটে শোলজের লেআউটের সাথে পার্থক্য শুধু m x c ; এর অবস্থানে। এর মূল কারণ লেআউট প্যাটেন্টের ঝামেলা এড়ানো।

মোস্তাফা জববার যা বলেন



বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় বাংলা সফটওয়্যার ও কীবোর্ড ‘বিজয়’-এর নির্মাতা মোস্তাফা জববারের সাথে। তিনি আলোচ্য বিতর্ক নিয়ে আমাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। আমাদের দেয়া প্রশ্নের মোস্তাফা জববারের দেয়া জবাবগুলো উপস্থাপিত হলো :

০১.
ইউনিবিজয় ও বিজয় কীবোর্ড নিয়ে বর্তমান বিতর্কে আপনার মতামত কী?

ইউনিবিজয় ও বিজয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। বিতর্ক হচ্ছে সেই বিষয় নিয়ে, যা মীমাংসিত নয়। কিন্তু বিজয়ের বিষয়টি মীমাংসিত। এখন যা হচ্ছে তা এক ধরনের অযৌক্তিক চর্চা। আমি বলেছি, অভ্র নামের একটি সফটওয়্যারে বিজয় কীবোর্ড লেআউটকে ইউনিবিজয় নামে আমার অনুমতি ছাড়া বেআইনীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভ্রর অমিক্রন ল্যাব নামের একটি ওয়েবসাইটে বিজয়ের একাধিক হুবহু লেআউটও বিতরণ করা হচ্ছে। আইন বলে, কারো মেধাস্বত্ব তার অনুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যায় না। বিজয় কীবোর্ড লেআউটের কপিরাইট ও প্যাটেন্ট রয়েছে। বিজয় শব্দটির ট্রেডমার্ক রয়েছে। ফলে যিনি বা যারা বিজয় কীবোর্ড সম্পূর্ণ বা আংশিক অন্তর্ভুক্ত করে কোনো সফটওয়্যার তৈরি করছেন বা যারা বিজয়ের উদ্ভাবনকে নকল করছেন কিংবা যারা বিজয়ের ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন করছেন, তারাই পাইরেসির দায়ে অভিযুক্ত। অভ্র বিজয় কীবোর্ডকে অতি নগণ্য হেরফের করে ইউনিবিজয় নামে তাতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। শুধু তাই নয়, তাদের ওয়েবসাইট থেকেও বিজয়ের অবিকল নকল বিতরণ করা হচ্ছে। অভ্র ও অমিক্রনল্যাব ওয়েবসাইট বিজয়ের প্যাটেন্ট অধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং এমনকি ট্রেডমার্কও লঙ্ঘন করেছে। আমি বিজয়ের কপিরাইট লঙ্ঘনকে পাইরেসি বলছি। এজন্য দেশের প্রচলিত কপিরাইট আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত), প্যাটেন্ট আইন ১৯১১ এবং ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ দেখা যেতে পারে। এতে বিতর্কের কিছু নেই। কোনো বিষয়ে মেধাস্বত্ব দাবি করলেই সেটি বিতর্ক হবে কেনো? অভ্র ও আরো অনেক সফটওয়্যারের এ ধরনের লঙ্ঘনকে আমি এর আগেও পাইরেসি বলেছি। ভবিষ্যতেও বলবো।

০২.
অভ্র নির্মাতা সাধারণত বলে থাকেন, ইউনিবিজয় কখনো বিজয় কীবোর্ডের অনুরূপ ছিল না, এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

জন্ম থেকেই ইউনিবিজয় বিজয়কে শতকরা ৯৯ ভাগ নকল বলে প্রচার করছে। তারা শুধু কপিরাইট লঙ্ঘন না হবার জন্য কিছু অদলবদল করেছে। এতে কপিরাইট লঙ্ঘন থেকে তারা বাঁচতে পারেনি। আমি এই বিষয়ে আইনগত বিষয়টি এখানে উল্লেখ করতে চাই।

প্রথমত পাঠ করুন অমিক্রন ল্যাব নামের ওয়েবসাইটে ইউনিবিজয় নামের কীবোর্ড লেআউট যে বিতরণ করা হয় সেখানে কী লেখা আছে। তাতে লেখা, Keyboard layouts those are added with the current release are - UniBijoy (99% match with popular Bijoy keyboard layout), ৩ মে ২০১০ অমিক্রন ল্যাবের ওয়েবসাইট থেকে এই লাইনটি উদ্ধৃত করা হয়েছে। এরপর কি এই প্রশ্ন থাকে, ইউনিবিজয় বিজয়ের নকল কি না?

অভ্রের নির্মাতা মেহদী হাসান খান লিখেছেন, অভ্র সফটওয়্যারে ইউনিবিজয় লেআউট নামে যে লেআউট যুক্ত করা হয়েছে তাতে নাকি ৮টি পার্থক্য আছে। কেউ যদি ইউনিবিজয় লেআউট দেখেন তবে দেখতে পাবেন যে, তাতে পেটকাটা ব (অহমিয়া র) ও র (অহমিয়া ব), বিসর্গ, চন্দ্রবিন্দু, খন্ড ত এমন সব প্রায় অব্যবহৃত বাংলা বর্ণকে বিজয় লেআউটের সাথে ভিন্ন করা হয়েছে। বাংলা মূল বর্ণগুলো যার ব্যবহার শতকরা ৯৯ ভাগ, তার কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এটি এজন্য যে, এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা হলে বিজয় কীবোর্ডে অভ্যস্ত ব্যবহারকারীরা এটি ব্যবহার করতে পারবে না।

০৩.
বিজয় কর্তৃপক্ষ আদালতের আশ্রয় নিয়ে বিতর্কিত বিষয়টির সমাধানের পদক্ষেপ নেবে কি না?

আমার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই কপিরাইট রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। কপিরাইট রেজিস্ট্রার মেহদী হাসান খানকে আমার অভিযোগের জবাব দেবার জন্য নোটিস দিয়েছে। ৯ মে সেই জবাব দেবার শেষ দিন ছিল। কপিরাইট রেজিস্ট্রারের মতামতের পরে আমি সিদ্ধান্ত নেবো এই বিষয়ে কপিরাইট আইনে কী করা হবে। এছাড়া প্যাটেন্ট ও ট্রেডমার্ক আইনেও আমি ব্যবস্থা নিতে পারি।

০৪.
বিজয় ও ইউনিবিজয় দুটি সফটওয়্যারের টাইপিং স্টাইল সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত দিন?

টাইপিং স্টাইল বলতে কি বোঝানো হয়েছে সেটি আমি বুঝি না। বিজয়ের বাংলা লেখার একটি প্রক্রিয়াকে প্যাটেন্ট করা হয়েছে। ইউনিবিজয় সেই পদ্ধতি বা প্রক্রিয়াটিকেই নকল করেছে। অভ্র কেন, অন্য কোনো কীবোর্ডে কি করেছে সেটি আমার দেখার বিষয় নয়।

০৫.
বিজয়ের লিনআক্স ভার্সন ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এবং এর ইউনিকোড ভার্সনটি বিজয় বায়ান্নোর মতো কম দামে ছাড়ার পরিকল্পনা আছে কি না?

বিজয়ের লিনআক্স সংস্করণ ছাড়া হতে পারে। তবে আমরা যেহেতু বাণিজ্যিক সফটওয়্যার তৈরি করি, সেহেতু বাজারটিই আমাদের কাছে অনেক বড়। এখনও লিনআক্সের ব্যবহারকারীর সংখ্যা আমাদের বাংলা সফটওয়্যারের বাজারকে প্রভাবিত করার পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে আমরা কোনো অপারেটিং সিস্টেমকেই বিজয়ের আওতার বাইরে রাখতে চাই না। আমাদের একটি দল লিনআক্স নিয়ে কাজ করছে।

বিজয়ের সব সংস্করণই ইউনিকোড সাপোর্ট করে। ২০০৪ সাল থেকে বিজয় ইউনিকোড সমর্থন করে। বিজয় বায়ান্নোও ইউনিকোড সাপোর্ট করে। ফলে নতুন কোনো সংস্করণ ছাড়ার প্রয়োজন হবে না।

০৭.
বিজয় ১৯৮৭ সালে ডিজাইন করা হলেও বিজয়ের প্যাটেন্ট হয়েছে ২০০৮-২০০৯ সালে। সে ক্ষেত্রে প্যাটেন্ট হওয়ার আগে থেকেই থাকা এই লেআউটগুলো কিভাবে প্যাটেন্টবিরোধী হয়?

বিজয়ের প্যাটেন্ট হবার আগে বা পরে বিজয় ছাড়া অন্য কোনো লেআউট জন্ম নিয়ে থাকলে সেই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। বিষয়টি শুধু প্যাটেন্টসংশ্লিষ্টও নয়-এর সাথে কপিরাইট বিষয়টি জড়িত। বিজয় প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৮ সালে। কোনো মেধাস্বত্বের প্রকাশকালই কপিরাইটের সূচনাকাল বলে গণ্য করা হয়। ফলে বিজয়ের কপিরাইট চ্যালেঞ্জ করতে হলে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগে প্রকাশিত ও নিবন্ধিত কোনো মেধাস্বত্বের কথা বলতে হবে। মনে রাখুন, নিবন্ধনটি বাড়তি সুবিধা মাত্র। ফলে বিজয়ের কপিরাইট ১৯৮৮ সাল থেকে। এর কপিরাইট নিবন্ধন হয়েছে ১৯৮৯ সালে। ফলে কেউ ওই সময়ের পরে কোনো পণ্য তৈরি করলে বিজয় আগে প্রকাশিত হবার অগ্রাধিকার পাবে। তাছাড়া বিজয়ের কপিরাইট, প্যাটেন্ট বা ট্রেডমার্ক যথাসময়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি বা আপত্তি উত্থাপন করেনি। এখন বিষয়টি চূড়ান্ত। ফলে এখানে বিজয়কে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই।

আইন কী বলে?

অভ্র কীবোর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, বাংলা মূল বর্ণ ৫০টির মাঝে শুধু ৎ,ঃ ও চন্দ্রবিন্দুর স্থান বদল করা হয়েছে। দেখার বিষয় হচ্ছে, আইনে কি একে গ্রহণযোগ্য পরিবর্তন বলে মনে করা হয়। আইন বলে কপিরাইটের হুবহু বা অংশবিশেষ পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার করলে তা কপিরাইটের লঙ্ঘন হবে।

ক. কপিরাইট :
কপিরাইট আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) অনুসারে, ধারা ২(৮)(ঙ)তে কপিরাইট লঙ্ঘনকারী অনুলিপির এই সংজ্ঞায় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো কমপিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সেই প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ পুনরায় উৎপাদন করলে বা ব্যবহার করলে সেটি কপিরাইট লঙ্ঘনকারী অনুলিপি হবে। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, বিজয় কীবোর্ড কমপিউটার প্রোগ্রাম কি না। এই প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, বিজয়ের কপিরাইট। বিজয়ের প্রায় সব সংস্করণের কপিরাইট আছে এবং তার অনেকই অভ্র জন্ম নেবার আগের। ফলে বিজয় সফটওয়্যারের অংশ হিসেবে বিজয় কীবোর্ড একটি কমপিউটার প্রোগ্রাম। এ ক্ষেত্রে অভ্র বিজয়ের অংশবিশেষ পুনরুৎপাদন করছে এবং নির্বাচন কমিশনসহ যারা অভ্র ব্যবহার করছে, তারা কপিরাইট লঙ্ঘন করছে। আইনে কমপিউটার প্রোগ্রামের সংজ্ঞাও দেয়া আছে। এতে বলা আছে, কমপিউটার প্রোগ্রাম অর্থ পাঠযোগ্য মাধ্যমে যন্ত্রসহ, শব্দ, সঙ্কেত, পরিলেখ অথবা অন্য কোনো আকারে প্রকাশিত নির্দেশাবলী, যা দিয়ে কমপিউটারকে কোনো বিশেষ কাজ করানো বা বাস্তবে ফলদায়ক করানো যায়।

খুব সঙ্গত কারণেই আইনানুগভাবে বিজয় কীবোর্ডকে ইউনিবিজয় নামে অভ্র সফটওয়্যারে ব্যবহার করা আইনসঙ্গত নয়।

যেহেতু বিজয়ের কীবোর্ড ও সফটওয়্যার নিবন্ধিত, সেহেতু এটি আদালতের সাÿ্য হিসেবেও গণ্য হবে। আইনের ধারায় এভাবে তা বলা আছে। ‘ধারা ৬০(২) কোন কর্মের কপিরাইটের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট উক্ত কর্মের কপিরাইট থাকার বিষয়ে পর্যাপ্ত সাÿ্য হিসাবে গণ্য হইবে এবং সার্টিফিকেটে যে ব্যক্তিকে কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী হিসাবে দেখানো হইয়াছে তিনি ঐরূপ কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী।’

অন্যদিকে অভ্র ছাড়া আর যেসব সফটওয়্যার যেমন লেখনী, প্রশিকা, প্রবর্তন, ফাল্গুন ইত্যাদি কোনো পরিবর্তন ছাড়াই বিজয় কীবোর্ড সরাসরি ব্যবহার করেছে।

আইনে কমপিউটার প্রোগ্রামের কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান এভাবে দেয়া আছে, ‘ধারা ৮৪, যদি কোন ব্যক্তি (ক) কোন কমপিউটার প্রোগ্রাম-এর লংঘিত কপি অনুলিপি করিয়া যে কোন মাধ্যমে প্রকাশ, বিক্রয় বা একাধিক কপি বিতরণ করেন তাহা হইলে তিনি অনুর্ধ চার বৎসর কিন্তু অন্যূন ছয় মাসের কারাদন্ডে এবং অনূর্ধ চার লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন এক লক্ষ টাকার অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। (খ) কমপিউটারে কোন লংঘিত কপি ব্যবহার করেন তাহা হইলে তিনি অনুর্ধ তিন লক্ষ টাকা কিন্তু অন্যূন এক লক্ষ টাকার অর্থদন্ডে দন্ডণীয় হইবেন।’ প্রথমোক্ত দফায় যদি অভ্রকে অভিযুক্ত করা যায় তবে দ্বিতীয় দফায় অভিযুক্ত করা যায় ইলেকশন কমিশনকে। আরো একটি দফা আছে, যাতে ইউএনডিপিকে অভিযুক্ত করা যায়।

খ. প্যাটেন্ট :
বিজয়ের বাংলা লিখন পদ্ধতির প্যাটেন্ট রয়েছে। এই প্যাটেন্ট অনুসারে বিজয় দিয়ে যেভাবে বাংলা লেখা হয়, সেটি নতুন আবিষ্কার হিসেবে গণ্য হয়েছে। ১৯১১ সালের প্যাটেন্ট ও ডিজাইন আইন মতে বিজয়ে ব্যবহৃত বাংলা লেখনপদ্ধতি অভ্র ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু অভ্রতে ব্যবহৃত ইউনিবিজয় কীবোর্ড লেআআউটে সেই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে সেহেতু এটি প্যাটেন্ট আইনেরও লঙ্ঘন। বাজারে আগে উলিস্নখিত যেসব বাংলা সফটওয়্যার রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে ও প্যাটেন্ট আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ করা সম্ভব। কারণ, এরা শুধু যে লেআউট নকল করেছে তা নয়, এরা বিজয়ের বাংলা লেখার পদ্ধতিও নকল করেছে।

এখানে আরো উল্লেখ করা দরকার, আইনে প্যাটেন্ট বলবৎ হওয়ার বিষয়েও বিধান আছে।

এ আইন মতে যেদিন বিজয়ের প্যাটেন্ট অধিকার চাওয়া হয়েছে সেদিন থেকেই প্যাটেন্ট অধিকার রয়েছে। ফলে ২০০৭-০৮ সালের কথা বলে পার পাবার কোনো উপায় নেই।

গ. ট্রেডমার্ক :
বিজয় একটি ট্রেডমার্ক করা শব্দ। এই সম্পর্কে বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থার বক্তব্য হচ্ছে : Trademark owners have right to prevent others from using the same or confusingly similar mark but cannot prevent others from making or selling the same good (obviously not yet patented) under a non confusing mark.

এখানে ইউনিবিজয় একটি বিভ্রান্তিকর শব্দ, যা দিয়ে বিজয়ের কপিরাইট ও প্যাটেন্ট লঙ্ঘন করার পাশাপাশি ট্রেডমার্কও লঙ্ঘন করা হয়েছে। অন্য সফটওয়্যার নির্মাতারা তো বিভ্রান্তিকর নয়, সরাসরি ট্রেডমার্ক আইন লঙ্ঘন করেছে।

কপিরাইট অফিসের বক্তব্য



বিজয় ও ইউনিবিজয় কীবোর্ড নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়ে রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট মো: মনজুরুর রহমান কমপিউটার পণ্যের বিষয়টি কপিরাইট আইনের কোন ধারায় কি কি বিষয় উল্লিখিত আছে তার উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে প্রচলিত কপিরাইট আইনেই বিজয় ও ইউনিবিজয় নিয়ে চলমান বিতর্কের সমাধান হবে বলে আমি মনে করি।

বিজয় ও ইউনিবিজয় দু’টি কীবোর্ডে শুধু ৮টি কী-র মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এতে কপিরাইটের কতটা লঙ্ঘিত বা মেনে চলা হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতটুকু মেনে চলা হয়েছে বা হয়নি সেদিকে যাব না। তবে কপিরাইট আইনে যে কথাটি উল্লেখ আছে, ‘কমপিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে কোনো কমপিউটার প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষের পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার করাই হচ্ছে পাইরেসি’।

২০০০ সালের যে কপিরাইট আইন রয়েছে তা সংশোধন হয়েছে ২০০৫-এ এবং এ আইনের ২ (৮) (ঙ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, ‘কমপিউটার প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে, কোনো কমপিউটার প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষের পুনরুৎপাদন বা ব্যবহার কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ, লিখিতভাবে মোস্তাফা জববার একটি অভিযোগ করেছেন। এখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার কাছে কারণ জানতে চাইবো। কারণ জানার পর সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে শুনানি হবে। আশা করি, এরপর একটা সমাধানে আসা যাবে।

বিসিসির বক্তব্য



বিসিসির সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট তারেক বরকতউল্লাহ্, যিনি জাতীয় কীবোর্ডের লেআউট ও বিজয় কীবোর্ড বিতর্ক নিরসনের জন্য কাজ করছেন, তিনি বিজয় ও ইউনিবিজয় কীবোর্ড নিয়ে চলমান বিতর্ক সম্পর্কে একটি সুসংবদ্ধ ধারণা দেন। জাতীয় কীবোর্ডের সাথে বিজয়ের যে বিতর্ক রয়েছে এবং এটি কিভাবে সমাধান হচ্ছে, সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, কমপিউটারে বাংলাভাষা ব্যবহার প্রমিত করার জন্য জাতীয় কমিটি আছে। বিভিন্ন কীবোর্ড নিয়ে চলা সম্প্রতি যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, কপিরাইট বিষয়ে এধরনের সমস্যা মীমাংসার জন্য এ কমিটির অধীনে এ বিষয়ক একটি সাব-কমিটি করা আছে। সেখানে এসবের সঠিক সমাধানের বিষয়টি দেখা যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মো: মনজুরুর রহমান, ব্যারিস্টার তানজিবুল ইসলাম, মো: নূরুল হুদা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই কপিরাইট নিয়ে বিরোধ হয় এবং তা সঠিকভাবে নিরসনও হয়। আমি আশা করি, আমাদের দেশে চলমান বিতর্কের একটা সঠিক সমাধান হবে। আর এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন, তাদের সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নেবো।

শেষ কথা

মোস্তাফা জববারের অভিযোগের ভিত্তিতে রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট মো: মনজুরুর রহমানের সই করা একটি চিঠিতে মেহদী হাসান খানকে উপযুক্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। একই সাথে কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে। মেহদী হাসান খানও আইনজীবীর মাধ্যমে যথাযথ জবাব দেবেন বলে জানা গেছে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : animesh@etbd.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
১৬ জুন ২০১০, ১:০৬ AM
ভালো লাগলো।
০১ জুলাই ২০১০, ৩:০৭ AM
আসল কথা হলো আমরা বাঙ্গালীজাতি তো তাই সহযোগীতা তো দুরের কথা কি ভাবে নতুন প্রজন্ম অথবা নতুনকিছু তৈরি হয়ে যাতে আমার পুরাতন সনাতন টা মুচড়ে না পরে তারই চেষ্টা মাত্র,,,,,,,,,,,,,
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস