• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আসছে থ্রিডি টিভি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
থ্র্রীডি
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আসছে থ্রিডি টিভি

প্রতিদ্বন্দ্বী এলজি, প্যানাসনিক এবং সনিকে তাক লাগিয়ে গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ করেই বাজারে হাজির স্যামসাংয়ের থ্রিডি টিভি। ৯০ দশকের শেষ দিক থেকেই প্রকৌশলীরা থ্রিডি টিভি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। বিশেষ চশমা ব্যবহার করে থ্রিডি মুভি দেখা বা গেমস আগে থেকেই খেলা যাচ্ছিল। এখন চশমা ছাড়াই ঘরে বসে থ্রিডি টিভিতে দেখা যাবে মজার মজার সব মুভি।



দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং তার সি৭০০০ মডেলের থ্রিডি টিভি বিক্রি করছে ১ হাজার ৮০০ পাউন্ডে। এই টিভি জনপ্রিয় করতে এর বিজ্ঞাপনী বাজেট ৮০ লাখ পাউন্ড। অক্সফোর্ড স্ট্রিটের দোকানে প্রথম এই ৪০ ইঞ্চি টিভি বিক্রি শুরু হয়। পরে অন্যান্য স্থানেও পাওয়া যাবে। কোনো টেলিভিশন কেন্দ্র এখনো থ্রিডি অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু না করায় ক্রেতাদের থ্রিডি টিভি পাশাপাশি ৩৪৯ পাউন্ড দিয়ে একটি ব্লু-রে প্লেয়ার কিনতে হবে। যারা এ দুটিই কিনবেন তারা পাচ্ছেন দুই জোড়া বিশেষ চশমা এবং থ্রিডি ডিভিডি ‘মনস্টার ভার্সেস এলিয়েন’ ছবিটি।



থ্রিডি টিভি হচ্ছে অসম্ভব চাঞ্চল্যকর একটি প্রযুক্তি। স্যামসাং কর্তৃপক্ষ জানায়, একবার কেউ যদি এই টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখেন, তাহলে তার পক্ষে অন্যদিকে চোখ ফেরানো দায় হবে। মূলত থ্রিডি মুভিসহ যেকোনো অনুষ্ঠান দেখার উপযুক্ত প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটেছে এই টেলিভিশনে। এর রয়েছে স্টেরিওস্কোপিক ক্যাপচার, মাল্টি ভিউ ক্যাপচার এবং থ্রিডি ডিসপ্লে। এককথায় ত্রিমাত্রিক ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত অনুষ্ঠান দেখা যাবে এই টেলিভিশনে। দর্শকদের আকর্ষণ করার জন্য ৯০ দশকের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থ্রিডি মুভি বা সিরিয়াল তৈরি হতে শুরু করে এবং এগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়। গত বছর নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে চ্যানেল ৪ প্রথম স্বল্প আকারে থ্রিডি অনুষ্ঠান চালু করে। পরে এর ব্যাপ্তি বাড়ে। তখন সম্প্রচারিত হয় থ্রিডি অনুষ্ঠান ডেরেন ব্রাউন অ্যান্ড দ্য কুইন। গত ৩১ জানুয়ারি বিএসকেওয়াইবি বিশ্বে প্রথমবারের মতো ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এবং আর্সেনালের ফুটবল খেলা থ্রিডিপ্রযুক্তিতে সরাসরি সম্প্রচার করে। চলতি বছর গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডেও মাইকেল জ্যাকসনের স্মরণে একটি পর্ব থ্রিডি প্রযুক্তিতে সম্প্রচার করা হয়, এ কাজে ব্যবহার হয় অ্যানাগ্লিফ ফরমেট।



থ্রিডি টিভি একটি উদীয়মান প্রযুক্তি। এর মূল লক্ষ্য দর্শকরা যাতে ঘরে বসে ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং ভিডিও গেম উপভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করা। হোম থিয়েটারের জন্য বেশ কিছু কোম্পানি থ্রিডিপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে পারলেও থ্রিডি টিভি প্রযুক্তি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়তে আরো কয়েক বছর লেগে যাবে। কারণ পুরনো টেলিভিশনে চলবে না। গ্রাহককে কিনতে হবে নতুন টেলিভিশন যন্ত্রপাতি, যাতে রয়েছে থ্রিডি রেডি টিভি এবং থ্রিডি সক্ষম ব্লু-রে প্লেয়ার।

একটি ভালো খবর হচ্ছে, ব্লু-রে ডিস্ক অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি থ্রিডি কনটেন্ট অ্যানকোডিংয়ের স্ট্যান্ডার্ড অনুমোদন করেছে। তারা বলছে, প্যানাসনিক, সনি এবং স্যামসাংসহ বেশ কয়েকটি টিভি প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠান থ্রিডি টিভি তৈরি করতে শুরু করেছে। তবে তাদের প্রযুক্তির কোনো প্রমিত মান নেই। তাই কোন কোম্পানির থ্রিডি টিভি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে তা অনুমান করা সহজ নয়। ব্লু-রে থ্রিডি স্ট্যান্ডার্ড এক্ষেত্রে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে। যেকোনো কোম্পানির থ্রিডি সক্ষম সেটে থ্রিডি ব্লু-রে ডিস্ক কাজ করতে পারবে।

আপাতত যে প্রযুক্তির টেলিভিশন আসছে, তাতে থ্রিডি অনুষ্ঠান দেখতে হলে বিশেষ চশমা ব্যবহার করতে হবে। তবে কিছু কোম্পানি এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে যেখানে চশমা পরার প্রয়োজন হবে না। এমনিতে টিভি স্ক্রিনেই দেখা যাবে থ্রিডি অনুষ্ঠান। তবে সেটি না আসা পর্যন্ত চশমা পরেই দেখতে হবে। কনটেন্ট কম থাকার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। তবে আগামী ৩/৪ বছরে হয়তো এ সমস্যা আর থাকবে না।

থ্রিডি টিভির স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও গবেষণা চলছে। স্যামসাং ইতোমধ্যেই এই প্রযুক্তির টেলিভিশনের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা স্বীকার করেছে। তারা বলছে, শিশু এবং কিশোররা থ্রিডি অনুষ্ঠান দেখে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বেশি পড়তে পারে। তাই তারা যখন এই টেলিভিশন দেখবে তখন তাদের সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। উজ্জ্বল ছবি বা আলোকছটা দেখে মৃগিরোগ বা স্ট্রোকও হতে পারে কারো কারো।

স্যামসাং বলেছে, গর্ভবতী, বয়স্ক, মারাত্মক রকমের অসুস্থ, নিদ্রাহীনতা বা মাদকাসক্তদের থ্রিডি কার্যক্রম উপভোগ থেকে বিরত থাকাই উত্তম। থ্রিডি টিভি দেখার কারণে মোশন সিকনেস, চোখের ওপর চাপ তৈরিসহ নানা সমস্যার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।



এদিকে ইএসপিএন বলেছে, তারা চলতি বছর ফিফা বিশ্বকাপসহ ৭০ থেকে ১০০ ক্রীড়া অনুষ্ঠান থ্রিডি প্রযুক্তিতে সম্প্রচার করবে। কলেজ ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলাও এ প্রযুক্তিতে সম্প্রচার করা হবে।

বিজনেস উইকে ক্লিফ অ্যাডোয়ার্ডের লেখা এক নিবন্ধে সনি এবং থ্রিডি টিভি সম্পর্কে মজার তথ্য পাওয়া গেছে। সনি আশা করছে, ২০১৩ সালের মার্চের শেষ নাগাদ তাদের মোট টেলিভিশন উৎপাদনের অন্তত ৫০ শতাংশ হবে থ্রিডি টিভি, যদিও চলতি বছর তাদের এ ধরনের টেলিভিশন উৎপাদনই শুরু হয়নি।

হলিউড চলচ্চিত্র অ্যাভাটারের সাফল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে তারা এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই চলচ্চিত্রের সাফল্যের কারণে অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতারাও এখন ঝুঁকছেন থ্রিডির দিকে। অল ফিউচার ডিজনি এবং ড্রিমওয়ার্ক পিকচারও থ্রিডি নিয়ে কাজ করছে। এখন থেকে হয়তো সব চলচ্চিত্রেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার হতে দেখা যাবে।

বিশ্বের বৃহৎ কনজ্যুমার টেকনোলজি ট্রেডশো তথা সিইএস ২০০৯-এ সনি তার থ্রিডি টিভির প্রাথমিক সংস্করণ প্রদর্শন করেছে। সনি চাইছে চলতি বছরই থ্রিডি টিভি বাজারে ছাড়তে, যদিও তাদের আগেই স্যামসাং এ ধরনের টিভি বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন, ২০১২ সালের আগে কোনো কোম্পানির থ্রিডি টিভিই টেলিভিশনের মূল ধারায় আসতে পারবে না। তার পরও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অর্থাৎ স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ অন্যান্য কারণে এই টেলিভিশন আদৌ জনপ্রিয় হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তারা বলছেন, সময়ই বলে দেবে কি হবে থ্রিডি টিভির ভবিষ্যৎ।

হুন্দাই এবং মিতসুবিশি ইতোমধ্যেই এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে থ্রিডি রেডি টেলিভিশন বিক্রি শুরু করেছে। থ্রিডি টিভির সাথে এর পার্থক্য বিদ্যমান। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, ২০১৫ সাল নাগাদ টেলিভিশন বাজারের ৫০ শতাংশ দখল করে নেবে থ্রিডি টিভি। আবার কেউ কেউ বলছেন, থ্রিডি টিভি আদৌ বাজার পাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থ্রিডি টিভি প্রকল্পের কাজ শুরু করে। প্রকল্পের তহবিল দেয় ইউরোপীয় কমিশন। গবেষকরা থ্রিডি টিভিকে একটি সমন্বিত পর্যায়ে নিয়ে আসার কাজ করেন। তারা একটা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য গত বছর থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে টেলিভিশন প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস