গ্রাফিক্স প্রসেসর এবং কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে এটিআই একটি বিশ্বস্ত নাম। অ্যারে টেকনোলজিস ইনকরপোরেট তথা এটিআই নামের কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল লি কা লউ, বেনি লউ এবং কেঅয়াইহো-এর হাত ধরে। অ্যাডভান্সড মাইক্রো সিস্টেম তথা এএমডি ২০০৬ সালে কিনে নেয় এই জিপিইউ এবং মাদারবোর্ডের চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে। এটিআই নাম পাল্টে রাখা হয় এএমডি গ্রাফিক্স প্রোডাক্ট গ্রুপ। তবে এটিআই নামটি বর্তমানে তাদের গ্রাফিক্স কার্ডের ব্র্যান্ড নাম হিসেবে ব্যবহার করছে এএমডি।
২০০৯ সালে এএমডি এটিআই এইচডি ৫০০০ সিরিজ প্রথম বাজারে আনে। সিরিজটির সাঙ্কেতিক নাম ‘এভার গ্রিন’। এই জিপিইউগুলো তাদের কম দামের, সীমিত বিদ্যুৎ খরচ করে এবং মূল্যানুযায়ী ভালো পারফরমেন্সের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মাঝে জায়গা করে নিচ্ছে। বর্তমানে এটিআই এইচডি ৫০০০ সিরিজটির ১০টি জিপিইউ চিপসেট বিভিন্ন গ্রাফিক্সকার্ড প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্ডে ব্যবহার করছে। আর্কিটেকচারাল এবং ব্যবহারের ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে এ সিরিজটিকে ৬টি উপসিরিজে ভাগ করা হয়েছে। উপসিরিজগুলো হচ্ছে : রেডিয়ন ৫৯০০ (হেমলক), ৫৮০০ (সাইপ্রাস), ৫৭০০ (জুনিপার), ৫৬০০ (রেডউড), ৫৫০০ (রেডউড), ৫৪০০ (সেডার)।
আর্কিটেকচারাল ফিচার
সেকেন্ড জেনারেশন টেরাস্কেল ইঞ্জিন :
সাইপ্রাস ইঞ্জিনটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় এটিআই রেডিয়ন ৪০০০ সিরিজে। ইঞ্জিনটিতে ৮০০ স্ট্রিম প্রসেসিং ইউনিট আছে, যা জিপিইউর প্রসেসিং পাওয়ারের নির্ণায়ক। এটিআই এইচডি ৫০০০ সিরিজ স্ট্রিম কোরের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর ফলে এ সিরিজটির প্রত্যেকটি কার্ড আগের সিরিজগুলো থেকে বেশি প্রসেসিং ক্ষমতাসম্পন্ন।
এটিআই আইফিনিটি টেকনোলজি :
এএমডি এটিআই এইচডি ৫০০০ সিরিজে সর্বপ্রথম এটিআই আইফিনিটি টেকনোলজি ব্যবহার করেছে। এই টেকনোলজির মাধ্যমে ৩-৬ টি ডিসপ্লে (মনিটর) একসাথে ব্যবহার করা যায়। আইফিনিটি টেকনোলজি ইউজারকে একাধিক মনিটরকে একটি গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করে একটি হাই রেজ্যুলেশনের মনিটর হিসেবে ব্যবহার করার সুবিধা দেয়। এ সিরিজের প্রত্যেকটি কার্ড ৩টি করে ডিসপ্লের সংযোগ দিতে পারে। রেডিয়ন এইচডি ৫৮৭০ আইফিনিটি এডিশনের কার্ডটি ৬টি পর্যন্ত ডিসপ্লে সংযোগ দিতে পারে।
এটিআই স্ট্রিম টেকনোলজি :
এটি একটি হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারনির্ভর প্রযুক্তি, যা এটিআই গ্রাফিক্স কার্ডকে কমপিউটারের প্রসেসরের সাথে কাজ করার সুযোগ করে দেয়, গ্রাফিক্স পরিবেশনের পাশাপাশি গ্রাফিক্স অ্যাপ্লিকেশনের পারফরমেন্স বাড়ায়।
এটিআই ক্রসফায়ার এক্স :
ক্রসফায়ার এক্স টেকনোলজি দুই বা তার অধিক ভিন্ন এটিআই কার্ডকে একসাথে কাজ করার সুবিধা দেয়, যা সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশনের পারফরমেন্সকে অনেক বাড়ায়। এটিআই কার্ডের এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে চাইলে ক্রসফায়ার সাপোর্টেড মাদারবোর্ড আবশ্যক।
এটিআই ৪০ ন্যানোমিটার প্রসেস :
এটিআই এইচডি ৫০০০ সিরিজে ৪০ ন্যানোমিটারের চিপ ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্বল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার, অধিক স্পিড এবং সীমিত উৎপাদন খরচের মতো সুবিধা দিয়েছে।
এটিআই অ্যাভিভো এইচডি :
এটিআই অ্যাভিভো টেকনোলজি ব্লুরে প্লে ব্যাক, হোম থিয়েটার, HDMI সংযোগ, পোর্টেবল মিডিয়া ডিভাইসকে সরাসরি গ্রাফিক্স কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়।
এছাড়াও এটিআই এইচডি ৫০০০ সিরিজের জিপিইউগুলো ওপেন জিএল ৩.২-৪.০, ওপেন সিএল, ডাইরেক্ট এক্স ১১, পিক্সেল শেডার মডেল ৫.০, GDDR5-এর মতো নতুন প্রযুক্তিগুলো সাপোর্ট করে।
জিপিইউর রকমফের
রেডিয়ন এইচডি ৫৯০০ :
রেডিয়ন এইচডি ৫৯৭০ কার্ডটিই একমাত্র কার্ড যার মাঝে দুটি সাইপ্রাস সিরিজের জিপিইউ রয়েছে। এতে ৪৩০ কোটি ৪০ ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়েছে। কার্ডটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৭২৫ মে.হা.-এর ইঞ্জিন। এর মেমরি ক্লক স্পিড ১ গি.বা.। ৫৯৭০ কার্ডটি ৫১-২৯৪ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে। এ সিরিজের কার্ডগুলো সাধারণত এইচডি গেমিং, ব্লুরে ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
রেডিয়ন এইচডি ৫৮০০ :
২১০ কোটি ৪০ ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টরসমৃদ্ধ এ সিরিজের কার্ডগুলো হচ্ছে রেডিয়ন এইচডি ৫৮৭০, রেডিয়ন এইচডি ৫৮৫০ এবং রেডিয়ন এইচডি ৫৮৩০। ৫৮৭০ সিরিজের আইফিনিটি এডিশন কার্ডে ৬টি ডিসপ্লে সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। এ সিরিজের ৩টি কার্ডেই এটিআই আইফিনিটি সুবিধা থাকায় ব্যবহারকারীরা তাদের একাধিক ডিসপ্লে একটি গ্রুপ হিসেবে ব্যবহার করার সুবিধা পাবেন। ৫৮৭০, ৫৮৫০, ৫৮৩০-এর ইঞ্জিন ক্লক স্পিড যথাক্রমে ৮৫০ মে.হা., ৭২৫ মে.হা., ৮০০ মে.হা.। ৫৮৭০-এর মেমরি ক্লক স্পিড ১.২ গি.বা. হলেও ৫৮৫০ এবং ৫৮৩০-এর ১ গি.বা.। রেডিয়ন এইচডি ৫৮০০ সিরিজের কার্ডগুলো ২৫-১৮৭ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এই কার্ডগুলো সব ধরনের গেমিং ও প্রফেশনাল কাজের জন্য উপযোগী।
রেডিয়ন এইচডি ৫৭০০ :
এইচডি ৫৭০০ সিরিজের ৫৭৫০ এবং ৫৭৭০ কার্ড দুটি বাজারে পাওয়া যায়। মধ্যম শ্রেণীর এই কার্ডগুলোতেও আইফিনিটি, ক্রসফায়ার এক্স সুবিধা রয়েছে। ১২৮ বিট উইডথের বাসসমৃদ্ধ এই কার্ডগুলো ১০৪ কোটি ৪০ ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টর রয়েছে। ৭২০ মে.হা. এবং ৮০০ মে.হা. ক্লক স্পিডের ৫৭৭০ এবং ৫৭৫০-এর স্ট্রিম কোরের সংখ্যা যথাক্রমে ৮০০ এবং ৭২০। এই সিরিজের কার্ডগুলো ১৬-১০৮ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
রেডিয়ন এইচডি ৫৫০০ এবং ৫৪০০ :
DDR3/DDR5 মেমরি এবং ৬৫০ মে.হা. ক্লক সম্বলিত রেডিয়ন HD 5570, রেডিয়ন HD 5670-এর মতো একই জিপিইউ ব্যবহার করে। ৪০০ স্ট্রিম কোর এবং ৬২ কোটি ৭০ লাখ ৪০ ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টর এতে ব্যবহার করা হয়েছে। এটিআই এইচডি ৫০০০ সিরিজের অন্যান্য কার্ডের চেয়ে আকারে ছোট হওয়ায় রেডিয়ন এইচডি ৫৫৫০ কার্ডটি স্মল ফর্ম ফ্যাক্টর কেসিংয়ে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। ৬২৭ মিলিয়ন ৪০ ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টর সম্বলিত এই কার্ডটির ক্লক স্পিড ৫৫০ মে.হা.। এটি ১০-৩৯ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। রেডিয়ন এইচডি ৫৪০০ সিরিজটির সাঙ্কেতিক নাম সেডার। এই সিরিজের ৫৪৫০ কার্ডটিতে ৮০টি স্ট্রিম কোর ব্যবহার করা হয়েছে। কার্ডটির DDR2/DDR3 মেমরি সাপোর্ট, ওপেন জি. এল ৩.২ এবং ক্লক স্পিড ৬৫০ মে.হা. রয়েছে। রেডিয়ন এইচডি ৫৪০০ সিরিজের কার্ডটি ৬.৪-১৯.১ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
পরিশেষে এই সিরিজ সম্পর্কে এক কথায় বলা যায়, এটিআই-এর এ সিরিজটি বিশ্বের গ্রাফিক্স ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন ধারার পথ দেখিয়েছে। গেমার এবং প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের জন্য তৈরি এটিআইএইচডি ৫০০০ সিরিজের প্রায় সব কার্ড বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। ব্র্যান্ড অনুযায়ী কার্ডগুলোর দামে পার্থক্য থাকতে পারে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : tabirs@gmail.com