কমপিউটার জগৎ-ডি.নেট-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উদ্যোগে : কমপিউটার লার্নিং সেন্টার খোলার কর্মসূচি শুরু
মাসিক কমপিউটার জগৎ, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সেবা প্রতিষ্ঠান ডি.নেট ও এদেশের অন্যতম ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘কমপিউটার লার্নিং সেন্টার’ তথা সিএলসি খোলার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। কার্যত এ সিএলসি খোলার কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক শুরু গত ১২ মে, ২০১০-এ। ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে চালু করা হয় ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কমপিউটার লার্নিং সেন্টার। এ সেন্টারের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম, ইনস্টিটিউটের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনসুর মুসা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সৈয়দ পিয়ার মাহমুদ, ডি.নেটের প্রধান নির্বাহী ড. অনন্য রায়হান ও মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সম্পাদক গোলাপ মুনীর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বর্তমান সময়ে কোনো শিক্ষার্থীই কমপিউটার ছাড়া চলতে পারে না। এখন অ. আ. ক. খ. পড়তেও কমপিউটার প্রয়োজন। ব্যাপক জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য চাই কমপিউটার। তাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের যথাসম্ভব সর্বাধিক হারে কমপিউটার যোগানো ও ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মাসিক কমপিউটার জগৎ, ডি.নেট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ১০টি কমপিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কমপিউটার লার্নিং সেন্টার খোলায় তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সম্পাদক গোলাপ মুনীর বলেন, মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদের একটি ভিশন-মিশন নিয়ে কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনা শুরু করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার যথা উপলব্ধি ছিল : জনগণের হাতে কমপিউটার পৌঁছে দিতে হবে। তাই তিনি ১৯৯১ সালের মে মাসে কমপিউটার জগৎ-এর প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশ করেন ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ শীর্ষক প্রচ্ছদ কাহিনী নিয়ে। পাশাপাশি তিনি ডিঙি নৌকায় করে বুড়িগঙ্গার ওপারে গ্রামে গেছেন কমপিউটার নিয়ে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কমপিউটার দেখানোর জন্য। কমপিউটার যেসব চমকপ্রদ কাজ করে তা দেখানোর জন্য। এরপর তিনি এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে নানাভাবে কাজ করে গেছেন। কখনো আয়োজন করেছেন কমপিউটার মেলা, কখনো প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, কখনো সংবাদ সম্মেলন বা সেমিনার। কখনো সশরীরে তাগিদ নিয়ে হাজির হয়েছেন রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ও নীতি-নির্ধারকদের কাছে। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবার মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছেন। যুগিয়েছেন প্রেরণা। কমপিউটার জগৎ তার সেই প্রেরণাকে লালন করে আজ ডি.নেট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সাথে মিলে সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপিউটার লার্নিং সেন্টার খোলার কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে ডি.নেট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে সাথে পাওয়ায় তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ পিয়ার মাহমুদ বলেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে ডি.নেট ও কমপিউটার জগৎ-এর সাথে এই কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, এ কর্মসূচির মাধ্যমে এই ব্যাংক তার ই-বর্জ্য অপসারণের একটা সহজ সুযোগ লাভ করল। এজন্য তিনি কমপিউটার জগৎ ও ডি.নেটকে ধন্যবাদ জানান।
সবশেষে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠানে সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তার আগে অধ্যাপক মনসুর মুসাও এ কমপিউটার লার্নিং সেন্টার খোলার জন্য কমপিউটার জগৎ, ডি.নেট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে কমপিউটার লার্নিং সেন্টারটি খোলার পর পরবর্তী ধাপে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে দেশের আরো ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৪টি কমপিউটার লার্নিং সেন্টার খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত করে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য গত ৩০ মে বাছাই করা ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ জন শিক্ষককে ঢাকায় নিয়ে এসে ৭ দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করা হয়। এ প্রশিক্ষণে যৌথভাবে সার্বিক সহযোগিতা যোগায় ডি.নেট এবং ‘অঙ্কুর’ নামের একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে মাসিক কমপিউটার জগৎ, ডি.নেট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয় ডি.নেট কার্যালয়ে। এই প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ শেষে তাদের প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপিউটার লার্নিং সেন্টারের জন্য ৫টি করে কমপিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দেয়া হবে। যে ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধাপে কমপিউটার লার্নিং সেন্টার খোলা হচ্ছে সেগুলো হলো : মুন্সী কাদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়, শিবচর, ঢাকা; ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা; অলুয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, কুমিল্লা; নবাবগঞ্জ আদর্শ ইসলামিয়া মাদ্রাসা, লালবাগ, ঢাকা; দক্ষিণ নাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নাজিরপুর, বরিশাল; গোপালপুর হায়দার আলী উচ্চ বিদ্যালয়, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী; রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর; সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নড়াইল; বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নড়াইল; নলদী বি.এস.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লোহাগড়া, নড়াইল; জিসান রিড মেমোরিয়াল স্কুল, ঈশ্বরদী, পাবনা; চন্ডিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া; জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া এবং বাঘড়া স্বরূপচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ।
ডি.নেট কার্যালয়ে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ডি.নেটের প্রধান নির্বাহী ড. অনন্য রায়হান ও মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সম্পাদক গোলাপ মুনীর। এছাড়াও ডি.নেট কর্মকর্তা অজয় বসু এবং মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সহযোগী সম্পাদক মইন উদ্দীন মাহ্মুদ ও সহকারী সম্পাদক এম.এ. হক অনু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কজ ওয়েব