• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এবারের বিশ্বকাপ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
বিশ্বকাপ ফুটবল
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এবারের বিশ্বকাপ



ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ২০১০। ১১ জুন দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হবে। শেষ হবে ১১ জুলাই। বিশ্বকাপ ফুটবলের উনিশতম আসর এটি। এ আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। গোটা বিশ্বের ফুটবল আমুদে মানুষের এ যেনো এক মহোৎসব। মহোৎসব তো বটেই, বত্রিশটি দেশের বত্রিশটি টিম এ খেলায় চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিচ্ছে দক্ষিণ আফিকায়। এ খেলাকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে চালানোর জন্য কাজ করবে ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী। ফিফা বিশ্বকাপ ২০১০-এ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে নিয়োজিত থাকবে ৪৫ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা। দক্ষিণ আফ্রিকার ১০টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের খেলাগুলো। এ দশটি স্টেডিয়ামে ৫ লাখ ৭০ হাজার দর্শকের জন্য আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বছরের বিজয়ী দল পাবে ৩ কোটি ডলার। বিশ্বকাপের এই চূড়ান্ত পর্বে ৩২টি দলে স্থান পেতে কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলায় অংশ নিয়েছে ২০৪টি দেশের ফুটবল দল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা স্বাগতিক দেশ হওয়ায় কোনো খেলা না খেলেই ৩২টি দলের একটি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে।

এই বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনকে ফুটবলপ্রেমী লাখো-কোটি মানুষের কাছে যথাযোগ্য আকর্ষণীয়ভাবে উপভোগ্য করে তুলতে প্রয়োজন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি অবকাঠামো। অতএব বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রযুক্তির ভূমিকা কী হবে? সে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টকে বিশ্ববাসীর কাছে আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য করে তোলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে প্রতিশ্রুতির সূত্র ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকা এজন্য আইসিটি অবকাঠামোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে। বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের স্বাগতিক দেশ হিসেবে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য সব দায়িত্বেরই একটি অংশ। এর আওতায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিশ্চিত করতে হয়েছে TelkomSA-এর সব পাবলিক টেলিযোগাযোগ একচেঞ্জগুলোর মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা। উল্লে¬খ্য, টেলকমএসএ হচ্ছে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় সমন্বিত কমিউনিকেশন কোম্পানি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেলিযোগাযোগ গড়ে তুলতে হয়েছে ১০টি স্টেডিয়াম ও সেই সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হয়েছে জোহান্সবার্গের উচ্চপ্রযুক্তির ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্ট সেন্টার তথা আইবিসি’র সাথে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথম ‘বিশ্বকাপ ফুটবল-২০১০’-এর খেলাগুলো সম্প্রচার হবে থ্রিডি তথা ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ‘সনি’ নামের একটি কোম্পানি। ২৫টি খেলা রেকর্ড করা হবে থ্রিডি ক্যামেরা দিয়ে। এই থ্রিডি টেকনোলজি সেটআপ ছবি তুলতে ব্যবহার করে দুটি ক্যামেরা সিস্টেম। একটি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি দর্শক দেখেন বাম চোখে আর অপরটি ডান চোখ দিয়ে। এসব ছবি দেখার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের পোলারাইজড চশমা। দর্শকেরা এ চশমা পরে থ্রিডি ছবি দেখেন।

বল

১৯৭৬ সালের পর থেকে প্রতিটি নতুন বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট সামনে নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ওয়ার্ল্ডকাপ ম্যাচ বল। এবং এর সব বলই তৈরি করেছে অ্যাডিডাস (adidas)। ২০০৬ সালে অ্যাডিডাস নিয়ে আসে Adidas Teamgiest- এটি ছিল প্রথম বল যার প্যানেলগুলো একসাথে জোড়া লাগানো হয়েছিল তাপ প্রয়োগ করে। অর্থাৎ এ বলটির প্যানেলগুলো ছিল থার্মালি বন্ডেড টুগেদার। এর আগে ফুটবলের প্যানেল বা বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগানো হতো প্রচলিত সেলাইয়ের মাধ্যমে। দুর্ভাগ্য থার্মালি বন্ডেড বল নিয়ে সমালোচনা এসেছিল কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়ের পক্ষ থেকে। এরা এ বলের পরিবর্তনশীল পারফরমেন্স নিয়ে কথা তোলেন। যখন বলটি ভিজে যায় তখন এর ওজন বেড়ে যায় এবং এয়ার রেজিস্ট্যান্স বা বায়ুবাধা কমে যায়। ফলে লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্পোর্টস টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর সেরা স্পোর্টস বোফিন তথা ক্রীড়াবিজ্ঞানীরা এসব সমালোচনার পথ বন্ধ করার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন বিশ্বকাপ-২০১০-এর বলের ক্ষেত্রে।



দক্ষিণ আফ্রিকায় যে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ যে বলটি ব্যবহার হবে এর নাম দেয়া হয়েছে Jabulani। এর অর্থ to celebrate। এ শব্দটি নেয়া হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভাষা isiZalu থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ১১টি রাষ্ট্রভাষার মধ্যে এটি একটি। এ ভাষায় সে দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ কথা বলে।



এই বলটির প্যানেলও থার্মালি বন্ডেড অর্থাৎ তাপ প্রয়োগ করে জোড়া লাগানো। এর আটটি অংশ বা প্যানেলের সবই গোলীয় আকারের এক-একটি অংশ। ফলে এ বলটি আগের যেকোনো ফুটবলের তুলনায় আরো মোলায়েম ও গোলাকার। পাশাপাশি ড. অ্যান্ড্রি হারল্যান্ড ও তার দল বলটির উপরিভাগে একটি সারফেস টেক্সার বা বয়নবিন্যাস সংযোজন করেছেন বল ট্রাকশনের রুট বাড়ানোর জন্য অর্থাৎ বল চলাচলকে আরো সহজ করে তোলার জন্য। এর নাম Grip N Groove। নবসংযোজিত এই ‘গ্রিপ অ্যান গ্রুভ’ প্রোফাইল বলটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল উড্ডয়নে সহায়তা করবে। ফলে খেলোয়াড়েরা এই বল সহজেই আঁকড়ে ধরতে পারবে। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ৮টি ত্রিমাত্রিক থার্মালি বন্ডেড প্যানেল দিয়ে এ বল তৈরি। ড. মার্টিনের পাসমুরের সাথে পরামর্শক্রমে লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোনটিক অ্যান্ড অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জনৈক এয়ারোনটিক বিশেষজ্ঞ জাবুলানি বলকে লাফবোরোর উইন্ড টানেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর এরা বলের উপরিভাগে aero groove সৃষ্টির ধারণা নিয়ে আসেন। এর আগে কোনো বলে তা ছিল না।



রোবটের পা দিয়ে বার বার লাথি মারিয়ে এ বল নিয়ে নানামাত্রার পরীক্ষা করা হয়। জাবুলানি এখন প্রস্ত্তত দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে নামার জন্য।

বুট

বিশ্বকাপ ফুটবলে বুট বেছে নেয়ার অপার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু একটি বুট এখন সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে। এই বুটটি তৈরি করেছে অ্যাডিডাস। বুটটির নাম দেয়া হয়েছে F50 adiZero। কেনো এই বুট নিয়ে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার এ সময়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে, তার কারণ অনেক। তবে একটি কারণ ‘ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ লিওনেল মেসি এ বুট পরে এবার মাঠে নামছেন।



‘অ্যাডিজিরো’ হচ্ছে অ্যাডিডাসের তৈরি বুটের মধ্যে সবচেয়ে হালকা বুট। এর একটি ইউকে সাইজ ৮.৫ বুটের ওজন মাত্র ১৬৫ গ্রাম। বুট যত পাতলা হবে, পায়ের ওজনও তত কম হবে। ফলে পা চলাচল হবে দ্রুততর। পায়ের এই গতির বিষয়টিই কাজ করছে এ ধারণার পেছনে। বুটের ওজন হালকা করার লক্ষ্য পূরণ করার জন্য সবকিছুতেই ছিদ্র সৃষ্টি করে। বুটের উপরের চামড়া তৈরি করা হয়েছে আল্ট্রা-লাইট তথা অতি-হালকা পলিইউরেথেইন মাইক্রো-ফাইবারের একক টুকরা দিয়ে। এর ইনসোল ছিদ্রযুক্ত। এর ফিতা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পায়ের একপাশে, যাতে পায়ের পাতার উপরিভাগ দিয়ে বলে লাখি মারা আরো আরামদায়ক হয়।

প্রযুক্তি এখনো খেলোয়াড়দের জন্য ঘাসের ওপর দিয়ে দ্রুততর গতিতে দৌড়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেনি। এক্ষেত্রে অ্যাডিডাস নিয়ে এসেছে রানিং স্পাইকের ধারণা। অ্যাডিডাস সৃষ্টি করেছে রাবারের পিন্ড থেকে তৈরি ত্রিভুজাকার কিছু গ্রিপ, তা লাগানো হয়েছে বুটের তলদেশে। এটি সহজে মাটিকে ছোঁয়, ফলে খেলোয়াড়রা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ত্বরিত গতিতে ছুটে চলার সুযোগ পায়, যা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় মোকাবেলার জন্য খুবই প্রয়োজন।

শার্ট

ইংল্যান্ডের স্টলওয়ার্ট শার্ট ডিজাইনার Umbro তাদের শার্টে প্রযুক্তি সংযোজন করতে ভুলেনি। তাদের শার্ট দেখতে অনেকটা পুরনো দিনের স্কুলের শার্টের মতোই। সোজাসাপটা প্লেইন সোজা কলারের এই শার্টে রয়েছে কিছু লুকানো জেম, যা খেলোয়াড়দের শরীর ঠান্ডা রাখবে, সেই সঙ্গে দেখতেও সুন্দর দেখাবে।



অনেক খেলোয়াড়ই আজকের দিনে আন্ডারশার্ট পরেন। এর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যে, গায়ের দুই পরত জামা-কাপড় দেখলে মনে হবে যেনো একটিই। আন্ডারশার্ট আপারশার্টের সাথে লেগে থাকে, যাতে গায়ে বাতাস ঢুকতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা এই শার্ট খেলোয়াড়দের দক্ষিণ আফ্রিকার খররোদের তাপ থেকে বাঁচাবে। এই শার্ট এমন মাইক্রোফাইবার দিয়ে তৈরি, যা শরীরের ভেতরে বাইরের বায়ু প্রবেশ করতে দেবে এবং ঠান্ডা বাতাস শুষে নিয়ে ভেতরে ঢুকাবে। এর কলারের আকারও বেছে নেয়া হয়েছে যৌক্তিকভাবে, যাতে করে বলে হেড মারার সময় কলার কোনো ধরনের বাধার কারণ না হয়।

সরাসরি সম্প্রচারে চারটি ইউটেলসেট উপগ্রহ



চারটি ইউটেলসেট উপগ্রহের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এসব উপগ্রহ পরিচালনা করবে Eutelset Communications। এসব উপগ্রহ খুবই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এর কভারেজের আওতায় আসবে। ইউটেলসেটের W2A, W3A, W4 এবং W7 নামের এসব উপগ্রহ স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অতিরিক্ত উৎস ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে। এসব উপগ্রহের সহায়তায় ৩০ দিনের এই বিশ্বকাপ খেলা গোটাবিশ্বে সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব হবে।

ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) ডব্লিউটুএ স্যাটেলাইটে অতিরিক্ত দুটি ৭২ মেগাহার্টজ ট্রান্সপন্ডার যোগ করে এর বিদ্যমান স্থায়ী ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তুলবে। এই উপগ্রহগুলোর মাধ্যমে খেলা দেখানো, সংশ্লিষ্ট খবর, উল্লেখযোগ্য অংশ ও সেরা বিষয়গুলো দেখানোর জন্য ইবিইউ একটি ব্রডকাস্ট সেন্টার খুলেছে সুইটোতে। ৭৫ জন ব্রডকাস্ট মেম্বার ও অন্যান্য আরো অনেক গ্রাহক নিয়োজিত করা হয়েছে সম্প্রসারিত ইউরোপে। ইবিইউ খেলার ছবি সরবরাহ করবে ইউরোপে ডব্লিউটুএ উপগ্রহের মাধ্যমে। অফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ছবি পাঠানো হবে ডব্লিউথ্রিএ-র মাধ্যমে।

যেসব গ্রাহক দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন, তারা ইউটেলসেটের স্যাটেলাইট লিঙ্কে ঢুকতে পারবেন। এর মাধ্যমে সরেজমিনে কর্মরত সাংবাদিকরা তাদের নিজ নিজ দেশের স্টুডিওতে সরাসরি সংযোগ গড়ে তুলতে পারবেন। গ্লোবকাস্ট, এপিটিএন, আরকিভা, টেলেনর ও টিভিআই-এর মতো গ্রাহকেরা পরিকল্পনা করছে ডব্লিউটুএ, ডব্লিউসেভেন ও ডব্লিউথ্রিএ-র মাধ্যমে তাদের রিসোর্সকে ট্রান্সমিশনের জন্য আরো জোরদার করে তুলতে।

ইউটেলসেটের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ডি রোজেন বলেছেন : ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য উনিশতম বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ইউটেলসেটকে সুযোগ করে দিয়েছে এর সর্বোচ্চ রিসোর্স দিতে, এর গ্রাহকদের সহায়তা যোগানোর, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদর্শকদের জন্য সরাসরি সম্প্রচার সুবিধা বাড়ানোর জন্য। বিশেষত বিগত ১২ মাসে আফ্রিকায় আমাদের ইউটেলসেট বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় উজ্জীবিত হয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে অংশ নিতে পেরে সন্তুষ্ট।’

রাজস্ব আয়ের দিক থেকে বিশ্বের তিনটি সুপরিচিত স্যাটেলাইট অপারেটরের মধ্যে সেরা হচ্ছে ইউটেলসেট। ইউটেলসেট বাণিজ্যিকভিত্তিতে ২৬টি উপগ্রহ পরিচালনা করে। ইউরোপের সব স্থান এই উপগ্রহের আওতায়। সেই সাথে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ভারত এবং আমেরিকা ও এশিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ এর কভারেজের আওতায়।

আইফোন অ্যাপ্লিকেশন



‘ফক্স সকার চ্যানেল’ এবং 2ergo Americas ফিফা’র বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা কভারেজ দেখার জন্য ফক্স সকার চ্যানেলের ‘টিকিট টু সাউথ আফ্রিকা’ আইফোন অ্যাপ্লিকেশনের ঘোষণা দিয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশন বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে অ্যাপলের App Store থেকে। এর মাধ্যমে যেসব ফুটবলপ্রেমী এখনো সশরীরে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা দেখতে সুযোগ পায়নি, তাদের আপডেট রাখতে সহায়তা করে এই আইফোন।

এ অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যাবে Audi-র সৌজন্যে। এতে ব্যাপকভাবে পার্সোনালাইজড কভারেজ পাওয়া যাবে, যা কাজ করবে ওয়ার্ল্ডকাপ সম্পর্কে একটি ওয়ান-স্টপ গাইড হিসেবে। এই বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ১১ জুন দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হবে। শেষ হবে ১১ জুলাই। এই অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে এখন বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত হচ্ছে চলমান ফক্স সকার চ্যানেল ও ওয়েবসাইট প্রচারণার মাধ্যমে। সর্বশেষ খবর, স্ট্যান্ডিংস, ফিক্সচার, ফটো গ্যালারি, খেলা অনুষ্ঠানের স্থানের তথ্য ও বিশ্বকাপের ইতিহাস এই অ্যাপ্লিকেশনে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। খেলা শুরু হওয়ার পর লাইভ স্কোরসহ একটি স্ক্রোলিং টিকার আইফোনের পর্দায় দেখা যাবে। এতে একটি ক্লিকের মাধ্যমে ঢোকা যাবে খেলার পরিসংখ্যান, প্লে-বাই-প্লে ইনফরমেশন ও ভিডিও ক্লিপে। এবারের বিশ্বকাপ খেলায় অংশ নেয়া ৩২টি টিম ছাড়াও আইফোন ব্যবহারকারীরা ক্রিয়েট করতে পারবেন ‘মাই টিমস’ লিস্ট, যাতে করে তারা তাদের পছন্দের দল সম্পর্কিত সংবাদ শিরোনাম ও অন্যান্য তথ্যে সহজে পৌঁছুতে পারেন। এরা এদের বন্ধুদের সাথে বিশ্বকাপ শিরোনাম বিনিময় করতে পারবেন ফেসবুক আপডেট করে।



ফক্স স্পোর্টস ইন্টারন্যাশনালের ‘ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভবেশ প্যাটেল বলেন, লোভী ফুটবলপ্রেমীরা ফক্স সকার চ্যানেল দেখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলার আসরের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কভারেজ উপভোগ করার জন্য। টুআরগোর মতো প্রোভাইডারের সাথে কাজ করে ফক্স সকার চ্যানেল এটুকু নিশ্চিত করে যে, ব্যবহারকারীরা কাটিং-এজ ইনফরমেশন সার্ভিস পাচ্ছে উন্নতমানের ব্যবহারবান্ধব আইফোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। প্যাটেল আরো বলেন, এরা লাখ লাখ ফুটপ্রেমীকে আইফোন সরবরাহ করছে তাদের বিশ্বকাপ সম্পর্কিত যাবতীয় চাহিদা মিটিয়ে। এরা কাস্টমাইজড ফরমেটে ব্যাপক কভারেজ দিয়ে খেলার বিশ্লেষণ তুলে ধরছে।

টুআরগো অ্যামোরকাস-এর বিপণনবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল স্কুলি বলেন, ফক্স সকার চ্যানেল একটি মূল্যবান সুযোগ সৃষ্টি করেছে নতুন দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য, সেই সাথে এই সুযোগ পুরনো দর্শকদের সাথে এর সম্পর্ক জোরদার করবে। এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় স্মার্ট আইফোন ও অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। তার মতে, ফক্স সকার চ্যানেলের সাথে মিলে কাজ করতে পেরে তারা বিস্মিত। এর ফলে বিশ্বব্যাপী আইফোন ইউজারদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পার্সোনালাইজড ফরমেটে ঢোকার সুযোগ দিচ্ছে ফক্স সকার চ্যানেল।

ইএসপিএন ব্যবহার করবে সিসকো টেলিপ্রেজেন্স



নেটওয়ার্কিং প্রোভাইডার সিসকো ঘোষণা করেছে, ESPN বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১০-এর লাইভ ও রেকর্ডেড কভারেজের জন্য ব্যবহার করবে Cisco TelePresence। এই সলিউশনকে কাজে লাগানো হবে বিশ্ব ফুটবল সমাজের কোচ, খেলোয়াড় ও টিমগুলোর মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলার জন্য।



সিসকো টেলিপ্রেজেন্স দিয়ে ইএসপিএন টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতে পারবে আরো কার্যকরভাবে ও কম খরচে। এর মাধ্যমে দর্শকরাও আরো উন্নততর দর্শন অভিজ্ঞতা লাভ করবে। ফেস-টু-ফেস ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতার জন্য সিসকো টেলিপ্রেজেন্স ব্যবহার করে হাইডেফিনিশন অডিও ও ভিডিওপ্রযুক্তি। এ ব্যবস্থা ইএসপিএনের ফুটবল ম্যাচের কভারেজের মান উন্নয়ন ঘটাবে ২০১০ সালের গোটা বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলাগুলো প্রদর্শনের ক্ষেত্রে।

বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় যে সিসকো ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক রয়েছে, তা ব্যবহার করে সিসকো ও ইএসপিএন পাল্টে দেবে গোটা স্পোর্টস টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকে, যেখানে পরিবেশন করা হবে আরো অধিক ওয়েল-টাইমড ভিডিও কনটেন্ট। এর ফলে ফুটবলপ্রেমীরা খেলার আরো উন্নততর বিশ্লেষণের সুযোগ পাবেন।



এই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট সম্প্রচারের জন্য সিসকো টেলিপ্রেজেন্স হাইডেফিনিশন রিয়েল-টাইম ভিডিও কমিউনিকেশন সলিউশন ব্যবহার করবে ইএসপিএন। সিসকো টেলিপ্রেজেন্স ব্যবহার করে ইএসপিএন রিমোট ইন্টারভিউ নেয়ার সুযোগ পাবে। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের নেতা, খেলোয়াড়, কোচ ও ফুটবল আমুদে মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এভাবে ফুটবলপ্রেমী মানুষ দূরে অবস্থান করেও এসব রিমোট ইন্টারভিউয়ে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। সিসকো টেলিপ্রেজেন্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইএসপিএনের সকার লাইটগুলোর মাধ্যমে এসব সাক্ষাৎ গৃহীত হবে।

অরুণা মিডিয়ার থ্রিডি ডিস্ট্রিবিউশন

সিনেমা ও বিশ্বব্যাপী স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সরাসরি তথা লাইভ থ্রিডি পরিবেশনের লক্ষ্যে অরুণা মিডিয়া এজি বেছে নিয়েছে SENS10-কে এর মূল লাইভ থ্রিডি ইভেন্টস টেকনোলজি পার্টনার হিসেবে। অরুণা স্বত্বাধিকারী হচ্ছে বিশ্বকাপের আউট-অব-হোম থ্রিডি হাইডেফিনিশন ব্রডকাস্টের।

সেন্সিও থ্রিডি প্রসেসর ব্যবহারকারীদের সুযোগ করে দেবে তাদের ব্যবহারের প্রজেক্টরে বাজারে পাওয়া অনেক থ্রিডি ভিডিও ফিল্ম দেখার। এরা শুধু থ্রিডি ভিডিও তাদের প্লেয়ারে ঢুকাবে এবং থ্রিডি প্রসেসর অ্যাক্টিভেট করবে, চশমা পরবে আর ঢুকে যাবে থ্রিডি’র জগতে।



তাছাড়া সেন্সিও থ্রিডি ব্যবহার করা যাবে উন্নতমানের প্রফেশনাল স্টেরিয়োস্কপিক সিগনাল প্রসেসিংয়ে। কারণ এটি একটি প্রোপ্রাইটরি ফ্রেম-কম্প্যাটিবল ফরমেট। এ প্রযুক্তি ১০ বছর আগে উদ্ভাবন করে সেন্সিও। ১০ বছর কাজ করে সেন্সিও এ প্রযুক্তিতে এনেছে যথার্থতা। এই পরিপক্ব প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে আসছে বেশিরভাগ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক লাইভ থ্রিডি ইভেন্ট প্রযোজনায়। ২০১০ সালের বিশ্বকাপ সেন্সিও সহায়তা দেবে লোকাল ডিজিটাল সিনেমা ইন্টিগ্রেটরদের- সিস্টেম ডিজাইন, টেস্টিং ও অরুণার টেকনিক্যাল স্টাফদের সাথে নিয়ে লাইভ থ্রিডি ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের জন্য।

সেন্সিও এর দশ বছরের ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অংশ নিয়েছে অনেক ঐতিহাসিক থ্রিডি ইভেন্ট প্রযোজনায়। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০-এর বিশ্বব্যাপী থ্রিডি ডিস্ট্রিভিউশন একটি অভাবনীয় বিষয় বলে উল্লেখ করেন সেন্সিও প্রেসিডেন্ট ও সিইও নিকোলাস রাউথিয়ার। বিশ্বব্যাপী থ্রিডি লাইভ ডিস্ট্রিভিউশন সুযোগ এনেছে অনন্য এক কারিগরি ও বাণিজ্যিক সুযোগ। এবং অরুণার সাথে কাজ করে সেন্সিও এই চ্যালেঞ্জটিই গ্রহণ করেছে।

অরুণা মিডিয়া এজি বিশ্বাস করে ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের লার্জ ভেন্যু লাইভ থ্রিডি ইভেন্ট কভারেজে সেন্সিও তাদের জন্য আদর্শ পার্টনার। এ কোম্পানি পরিকল্পনা করছে সেন্সিওকে সাথে নিয়ে থ্রিডি সিনেমা ব্রডকাস্ট করবে উন্নতমানের ইমেজ কোয়ালিটি বজায় রেখে।

স্মরণীয় কভারেজ

বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা যতই কাছে আসছে, টেলিভিশন কোম্পানিগুলো ততই প্রতিযোগিতা জোরালো করে তুলছে, যাতে করে শ্রোতা-দর্শকদের কাছে অবিস্মরণীয় এ খেলা প্রদর্শন করা যায়। যাতে করে এ খেলার প্রতিটি শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত টুকরো টুকরো করে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় করে দেখানো যায়।

ITVI হাই-ডেফিনিশন চ্যানেল এর ডিজিটাল টিভি গ্রাহকদের জন্য এর লাইনআপ উন্নত করেছে গত ২ এপ্রিল থেকে, যাতে করে নিরবচ্ছিন্ন ও পরিপূর্ণ কভারেজ তুলে ধরা যায় তাদের গ্রাহকদের সামনে। Vergen Media TV তাদের দর্শকদের কাছে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে কিছু অবিস্মরণীয় খেলা প্রদর্শনের জন্য। তারা বলছে, প্রতিটা শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত তারা তুলে ধরবে অবাক করা হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশনের মাধ্যমে।

ITVI হাই-ডেফিনিশন চ্যানেল তুলে ধরবে বিভিন্ন ধরনের হাই-ডেফিনিশন প্রোগ্রামিং। থাকবে উয়েফা লীগসহ এফএ কাপ ও ইংল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালস, পপুলার এইচডি ড্রামাস, ফ্যাকচুয়াল প্রোগ্রামিং, নতুন নতুন বিনোদন অনুষ্ঠান, যুক্তরাজ্যের কিছু জনপ্রিয় টিভি শো ও আসন্ন কিছু খেলার হাইলাইট। ভার্জিন মিডিয়ার ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট ডিরেক্টর সিন্ডি রোজ বলেন, এ বছরের বিশ্বকাপে থাকবে কিছু অবিস্মরণীয় খেলা এবং ভার্জিন টিভির দর্শকরা উপভোগ করতে পারবেন কিছু শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত। এগুলো পাওয়া যাবে ভার্জিন মিডিয়ার টিভি প্লাটফরমে। তাছাড়া কোনো অতিরিক্ত খরচ না করেই এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে অতিরিক্ত কিছু প্যাকেজ।

হাই-ডেফিনিশন টিভির সুবিধা অনেক। সাধারণ টিভির তুলনায় এর শার্পনেস দ্বিগুণ। ফলে এর ছবি খুবই স্পষ্ট। ছবি ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে যাবতীয় বাধা এতে দূর করা হয়েছে। হাই-ডেফিনিশন টিভির রয়েছে সুপিরিয়র কালার রেজ্যুলেশন। ডবল ইমেজ বা দ্বৈত-ছবি দেখা যাওয়ার কোনো সমস্যা এতে নেই। বড় পর্দায় দেখার সময় এর শার্পনেস বা ছবির মান নিচে নামার সম্ভাবনাও হাই-ডেফিনিশন টিভিতে নেই।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার বিষয়টি মাথায় রেখেই চালু করা হয়েছে ভার্জিন মিডিয়ার নতুন হাই-ডেফিনিশন টিভি চ্যানেল ITVI। ভার্জিন মিডিয়ার টিভি প্লাটফরম দেবে কিছু ITVI হাই-ডেফিনিশন অন-ডিমান্ড কনটেন্ট। ITV Net TV Player-এর মাধ্যমে এই অন-ডিমান্ড কনটেন্ট দেবে। শুধু জানুয়ারি মাসেই ৮০ লাখের মতো দর্শক এই অন-ডিমান্ড সার্ভিস ব্যবহার করেছে।

ভার্জিনিয়া মিডিয়ার হাই-ডেফিনিশন লাইনআপ অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। সব ভার্জিন মিডিয়া গ্রাহক বিবিসি-র চ্যানেলসমূহ ও চ্যানেল ফোর দেখার সুযোগ পাবে। ‘ভার্জিন মিডিয়া এক্সক্লুসিভ’-এর অংশ হচ্ছে ইএসপিএন, এফএক্স, এমটিভি নেটওয়ার্কস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও লিভিং। এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে XL TV প্যাকেজের সাথে। এজন্য গ্রাহকদের আলাদা কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপোর্ট ও ডিসকভারি চ্যানেলও এক্সএল টায়ারে সংযোজন করা হবে। আর Film4 হাই-ডেফিনিশন দেখতে পাবে পেইডটিভি ব্যবহারকারীরা।

ভার্জিন এ বছর যেসব হাই-ডেফিনিশন চ্যানেলের কথা ঘোষণা করেছে তার মধ্যে এটি হচ্ছে পঞ্চম। আশা করা হচ্ছে ভার্জিন আসছে দিনে আরো অনেক এইচডি চ্যানেল খোলার ঘোষণা দেবে। ভার্জিন এরই মধ্যে কয়েকশ’ ঘণ্টার অন-ডিমান্ড হাই-ডেফিনিশন প্রোগ্রাম অফার করেছে। এসব প্রোগ্রামের মধ্যে সম্পূর্ণ টেলিভিশন সিরিজ থেকে শুরু করে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রও রয়েছে।

ভার্জিন মিডিয়ার রয়েছে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে অগ্রসরমানের অন-ডিমান্ড টিভি সার্ভিস। এটি হচ্ছে বিবিসির iPlayer ক্যারি করার প্রথম টিভি প্লাটফরম। এটি প্লে-টিভি প্রোভাইডারদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এটিই প্রথম চালু করে হাই-ডেফিনিশন টিভি সার্ভিস। এটি দেয় হাই-স্পেসিফিকেশন, এইচডি-রেডি ভি-প্লাস পার্সোনাল রেকর্ডার সুবিধা। এ কোম্পানি যুক্তরাজ্যে পরিচালনা করে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্চুয়াল মোবাইল নেটওয়ার্ক। চালুর সময় এটি ছিল বিশ্বের প্রথম এ ধরনের মোবাইল ফোন সার্ভিস। যুক্তরাজ্যে এটি বড় বড় ফিক্সড-লাইন হোম ফোন সার্ভিস প্রোভাইডারদের একটি।

সাম্প্রতিক নিউজ আইটেমের ক্ষেত্রে ভার্জিন মিডিয়া আশা করছে একটি ব্রডব্যান্ড সার্ভিস এ বছরের শেষ দিকে চালু করবে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য। এ ব্রডব্যান্ডের গতি হবে প্রতিসেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট।

প্রযুক্তির ছোঁয়া সবখানে

দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টকে ঘিরে প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়ানো হচ্ছে সবখানে। বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলাগুলো চলার সময় হাসপাতালের বেডগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একটি ইলেক্ট্রনিক বেড ব্যুরো সিস্টেম। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০-এর হেলথ ইউনিটের ম্যানেজার ড. ওয়েন স্মিথ বলেন, সব ফিফা অ্যাক্রিডিটেড হাসপাতালে অনলাইন ডাটাবেজ প্রোগ্রাম ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। পাইলট প্রোগ্রাম হিসেবে এ ব্যবস্থা এরই মধ্যে চালু হয়েছে সবারসেট হাসপাতাল, মিলনারটন মেডি-ক্লিনিক এবং এনওয়ান সিটি হাসপাতালে। বিশ্বকাপের সময় তা চালু করা হবে ওয়েস্টার্ন ক্যাপে।



দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ফুটবল আমুদে মানুষ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপভোগ করার সুযোগ পাবে অন্য আর সবার মতোই এবারের টুর্নামেন্টে। সুইস ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্লাইন্ড এবং সাউথ আফ্রিকান ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ব্লাইন্ড একসাথে মিলে কাজ করছে ছয়টি স্টেডিয়াম থেকে ৪৪টি খেলার ‘অডিও ডেসক্রিপশন প্রজেক্ট’ নিয়ে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইনার-এয়ার হেডফোন ব্যবহার করে খেলার বর্ণনা শুনতে পারবে। এ প্রকল্পের আওতায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিশেষ টিকেট দেয়া হবে ৬টি স্টেডিয়াম থেকে ৪৪টি খেলা শুনে উপভোগ করার জন্য।

সাম্প্রতিক কিছু প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ফলে নাইজিরিয়ার তাদের সেলফোনের মাধ্যমে বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা উপভোগ করতে পারবে। সেলফোনে সরাসরি সম্প্রচারিত খেলাগুলোই এরা এখন উপভোগ করবে। এই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে সাম্প্রতিক উদ্যোগে। ডিএস টিভি মোবাইল, নোকিয়া ও এমটিএন নাইজিরীয়রা অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে লাইভ টিভি সার্ভিস এবার পৌঁছে দিচ্ছে নাইজিরিয়ার মোবাইল ডিভাইসে।

বিখ্যাত ভিডিও গেম এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি ‘ইলেক্ট্রনিক আর্টস’-এর ডেভেলপ করা ভিডিও গেম ফিফা ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবল সাউথ আফ্রিকার সৌজন্যে বিশ্বকাপের ভিডিও গেম পৌঁছে যাবে গেমপাগল মানুষের কাছে। বিশ্বকাপ খেলাকে এসব ভিডিও গেমের মাধ্যমে প্রায় ট্রু-টু-লাইফ তথা প্রাণবন্ত করে তোলা হবে। ডিজাইনাররা সযত্নে তৈরি করেছেন এসব ভিডিও গেম তৈরির ব্যাপারে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেডিয়ামগুলো তো বটেই, এমনকি শহরের বড় বড় আকাশচুম্বী ভবন দেখতে পাওয়া যাবে এসব গেমে।

বিশ্বকাপ ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোকে এবার ইসি কুঙ্গি ট্রিটমেন্টের আওতায় আনা হয়েছে। সোজা কথায় ফুটবলের মাঠগুলো থাকবে ছত্রাকমুক্ত। রোডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে মাঠের পিচগুলোকে পরিপক্ব রাখার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জোন্না ডেমসের গবেষণার সুফলকে কাজে লাগানো হয়েছে। এ ব্যবস্থা দেয়ার ফলে এ বছর ‘সুপার কোরটিন রাগবি’-র ৩০টি খেলার পরও এলিস পার্ক স্টেডিয়াম এখনো খুবই ভালো অবস্থায় রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা দর্শকদের গতিবিধি লক্ষ রাখার জন্য একটি ট্র্যাক সিস্টেম ব্যবহার করবে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা চলার সময়। এর ফলে দেশের ভেতরে ও বাইরে লোকের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত হবে। মুভমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেম (এমসিএস) নামের এ ব্যবস্থা সহায়তা দেবে আইনশৃঙ্খলা কার্যকর করার ক্ষেত্রে। সেই সাথে এ ব্যবস্থার আওতায় অপরাধমূলক ও সন্দেহজনক চলাচল ও কর্মকান্ড রোধ করা সম্ভব হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোসাজাগ লামিনি জুমা এ সিস্টেম চালু করবেন ওআর টাম্বু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশন (আইডিসি) ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় আইসিটির প্রভাব তদারকি করছে। আইটিনিউজ আফ্রিকা ডট কম-এর কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আইডিসির আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও তুরস্কবিষয়ক পরিচালক মার্ক ওয়াকার বলেছেন, এ তদারকির লক্ষ্য হচ্ছে এই ক্রীড়া অনুষ্ঠানে আইসিটির প্রভাব কতটুকু তা পরিমাপ করা। তিনি বলেন, আইডিসির বিশ্বাস এ কোম্পানি এ আয়োজনে হালনাগাদ নিরাপত্তা, ইভেন্ট ও ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট, যোগাযোগ, মোবাইলপ্রযুক্তি ইত্যাদির উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ দেখাবে এই ঐতিহাসিক আয়োজনে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাতশ’ AlwaysOn হটস্পটে ইন্টারনেট সলিউশন (আইএস) চালু করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এ প্রজেক্টের ক্ষেত্রে বেশকিছু কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে সহায়ক হয়েছে। প্রয়োজন হচ্ছে আরো এক্সেস পয়েন্টের। যেমন আই হটস্পট। ফলে এক্ষেত্রে গতি আনার প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশ্বকাপ শুধু কাজ শেষ করার তারিখরেখা টেনে দেয়। এ প্রকল্পের ফোকাস ছিল ইতিবাচক ইন্টারনেট অভিজ্ঞতার ওপর। বিশ্বকাপ দর্শক ও গণমাধ্যম চেয়েছে এ খেলাকে আরো উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতে।

গুগল স্ট্রিট ভিউ দর্শকদের দেবে ‘৩৬০ ডিগ্রি স্ট্রিট লেভেল ভিউ’-এর সুযোগ। এ সুযোগ পাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান প্রধান শহরের অধিবাসীরা। খোলা স্থান, শপিং এরিয়া ও পার্কিং এলাকায় এই স্টিট ভিউ সুবিধা পাওয়া যাবে বিশ্বকাপ ফুটবল চলার সময়ে।

ফিফা কর্মকর্তারা নন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুটবল আমুদে দর্শক এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্যান অব দ্য ম্যাচ তথা সেরা ফুটবল খেলোয়াড় নির্ধারণ করবেন। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের গভর্নিং বডির একটি টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপ প্রতিটি খেলার সেরা খেলোয়াড় নির্ধারণ করে আসছিল। কিন্তু এবার এই প্রথমবারের মতো সেরা খেলোয়াড় নির্ধারণের বিষয়টি ছেড়ে দেয়া হবে অনলাইন ও মোবাইল ভোটিংয়ের ওপর। প্রমোশনের মাধ্যমে ফুটবল আমুদেদের মধ্য থেকে লোক নির্ধারণ করা হবে ৬৪টি খেলার ট্রফি বিতরণের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পেমেন্ট প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান PayPal গিয়ে পৌঁছেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এই আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথে ‘ফার্স্ট ন্যাশনাল ব্যাংক’-এর একটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই পেপলের এই সেবা দক্ষিণ আফ্রিকায় চালু হয়। জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার সামান্য আগে পেপল আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যকম সেখানে শুরু করবে। দক্ষিণ আফ্রিকানরা বিশ্বব্যাপী ১৯০টি বাজারের ৮ কোটি ১০ লাখ পেপল অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সাথে লেনদেনের সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকরা কার্যত গ্লোবাল ই-কমার্স মার্কেটে প্রবেশ করলেন।

২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যবহার করবে এর নিজস্ব ডেডিকেটেড উপগ্রহ। এই উপগ্রহ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট অপারেটর ‘ইন্ট্যালসেট’ থেকে। এই স্যাটেলাইট একান্তভাবেই ব্যবহার করা হবে হাই-ডেফিনিশন সিগন্যাল সম্প্রচারের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি মালিকানাধীন ব্রডকাস্ট সিগন্যাল ডিস্ট্রিবিউটর SenTech জোহান্সবার্গে স্যাটেলাইট আপলিঙ্কের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগ দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য চালু করা হয়েছে স্যাটেলাইট IS-706। অপরদিকে ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য ব্যবহার করা হবে ৭টির মতো উপগ্রহ। ৪টি উপগ্রহ ব্যবহার করা হচ্ছে ইউটেলসেট থেকে।

জোহান্সবার্গকে কার্যত রূপ দেয়া হচ্ছে একটি ডিজিটাল সিটিতে। এর ফলে সেখানে যোগাযোগ খরচ কমবে। যোগাযোগ সেবার মানোন্নয়ন ঘটবে। আইটি সেবায় প্রবেশের সুযোগ বাড়বে। জোহানেসবার্গ নগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত হচ্ছে অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে জোহানেসবার্গের মানুষের জীবনমান পাল্টে দিতে হবে।

তবে ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড গোল্ডলাইন টেকনোলজি ব্যবহারের সম্মতি দেয়নি। ফিফা গভর্নিং বডিও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে একটি এক্সপেরিমেন্ট প্রেজেন্টেশনের পর। এ প্রেজেন্টেশনে ক্যামেরা রাখা হয়েছিল গোলপোস্টের ওপর এবং ইলেক্ট্রনিক চিপ বসানো হয়েছিল বলের মধ্যে। লক্ষ্য ছিল এটি নির্ধারণ- বল গোললাইন অতিক্রম করলো কী করলো না, তা জানা। এ প্রযুক্তি সম্পর্কে বোর্ড সদস্যরা একমত হতে পারেননি। তবে বেশিরভাগ সদস্য নীতিগতভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে। একইভাবে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় রেফারিরা ভিডিও রিপ্লে ব্যবহার করবেন না।

কজ ওয়েব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস