কোন তারিখে কী বার
আমরা অনেক সময় কোনো একটি ঘটনার সন ও তারিখ জানি। কিন্তু সেই তারিখে কী বার ছিল তা জানতে ইচ্ছে করে। সেই ইচ্ছে করলেও হাতের কাছে এমন কোনো উপায় থাকে না, যাতে করে চট্ করে সেই বারের নামটা জানা যায়। ফলে জানার ইচ্ছেটাকে সেখানেই মাটিচাপা দিতে হয়। তেমনটি যাতে না ঘটে, সে জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখে কী বার ছিল তা জানার একটা উপায় এখানে জানানোর প্রয়াস পাবো।
আমরা জানি জানুয়ারি মাস ৩১ দিনে। এর অর্থ হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিটা বার আসবে ৩ দিন দেরি করে। এ ৩ দিন দেরি হবে জানুয়ারি মাসে একই তারিখের বারের তুলনায়। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে এবং ২৮ দিনে ঠিক ৪ সপ্তাহ। তাহলে ফেব্রুয়ারির জন্য এই ৩ সংখ্যাটি আমরা মনে রাখি। আসলে এই ৩ হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের দিনের সংখ্যার পার্থক্য। একইভাবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের পার্থক্য ৩ দিন- ফেব্রুয়ারি ২৮ দিনে, মার্চ ৩১ দিনে। অতএব মার্চের জন্য মনে রাখতে হবে ৩ সংখ্যাটি। আবার যেহেতু মার্চ থেকে এপ্রিলে দিনের সংখ্যা ১ দিন কম, সেহেতু মার্চের তুলনায় এপ্রিলের একই তারিখের বারগুলো আসবে ৭-১ বা ৬ দিন পিছিয়ে বা দেরিতে। অতএব এপ্রিলের জন্য মনে রাখা চাই ৬ সংখ্যাটি। এভাবে কোন মাসের একই তারিখ আগের মাসের তুলনায় কয়দিন দেরিতে আসবে তা বিবেচনা করে নিচের ছকটি তৈরি করা হয়েছে।
জানুয়ারি ০
ফেব্রুয়ারি ৩
মার্চ ৩
এপ্রিল ৬
মে ১
জুন ৪
আগস্ট ২
সেপ্টেম্বর ৫
অক্টোবর ০
নভেম্বর ৩
ডিসেম্বর ৫
এই ছকটি মনে রেখে কয়েকটি গাণিতিক ধাপ সম্পন্ন করে আমরা বলে দিতে পারবো কোন তারিখে কী বার ছিল।
প্রথম ধাপ :
যে তারিখটির বারের নাম জানতে চান তা ধরুন। মনে করুন আমরা ১৯৮৬ সালের ২৩ জুন কী বার ছিল তা জানতে চাই।
দ্বিতীয় ধাপ :
উপরের ছক থেকে মাসের নামের সংখ্যাটি নিন। জুন মাসের জন্য এ সংখ্যা ৪।
তৃতীয় ধাপ :
এবার তারিখের সংখ্যাটি নিন। এখানে এ সংখ্যাটি ২৩।
চতুর্থ ধাপ :
সনের সংখ্যা থেকে শেষ দুটো অঙ্ক দিয়ে গঠিত সংখ্যাটি নিন। এখানে ৮৬।
পঞ্চম ধাপ :
সনের সংখ্যার শেষ দুই অঙ্কের সংখ্যাকে ৪ দিয়ে ভাগ করে জেনে নিন সনটি লিপইয়ার বা অধিবর্ষ কি নয়। যদি ৪ দিয়ে তা নিঃশেষে বিভাজ্য হয়, তবে তা অধিবর্ষ, ভাগশেষ থাকলে তা অধিবর্ষ নয়। এখানে ৮৬-কে ৪ দিয়ে ভাগ করে তা নিঃশেষে বিভাজ্য হয়ে ভাগফল দাঁড়ায় ২১। অতএব ১৯৮৬ সনটি একটি অধিবর্ষ।
ষষ্ঠ ধাপ :
উপরে পাওয়া সংখ্যা চারটি একসাথে যোগ করুন : ৪+২৩+৮৬+২১=১৩৪
সপ্তম ধাপ :
পাওয়া যোগফলকে ৭ দিয়ে ভাগ করুন। ১৩৪-কে ৭ দিয়ে ভাগ করে ভাগফল পাওয়া গেল ১৯। আর অবশিষ্ট রইলো ১।
অবশিষ্ট হিসেবে পাওয়া সংখ্যাই বলে দেবে নেয়া তারিখে কোন বার ছিল। নিচের তালিকা থেকে জানা যাবে তারিখটি কোন বার হলে অবশিষ্ট কত থাকবে। যেমন আমাদের দেয়া উদাহরণে অবশিষ্ট ছিল ১। তাই এ বারটি যে ছিল সোমবার তা নিচের ছকই বলে দেবে।
রোববার ০
সোমবার ১
মঙ্গলবার ২
বুধবার ৩
বৃহস্পতিবার ৪
শুক্রবার ৫
শনিবার ৬
জানা তারিখে জানা বার নিয়ে এই নিয়মটি অনুশীলন করে দেখুন ঠিক কি না।
জন্মদিন নিয়ে সমস্যা
প্রশ্ন হচ্ছে একটি দলে অন্তত কতজন লোক দরকার। যাতে এটুকু নিশ্চিত হয় যে, এই দলে দুইজনের জন্ম তারিখ একই দিনে, প্রথম সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ?
এ প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্নজন যে বিভিন্ন লোকসংখ্যার কথা উল্লেখ করবে, সেটুকু নিশ্চিত বলে দেয়া যায়। কেউ বলবে এজন্য কমপক্ষে প্রয়োজন ৩০ জন। কেউ বলবে ৬০ জন। কেউ ৯০, কেউ হয়তো ১৬০ কিংবা ৩৬০ ইত্যাদি।
কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, মাত্র ২৩ জন লোকের একটি দলেই দুইজনের একই জন্ম তারিখ হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। আর এই সম্ভাবনা ৭০ শতাংশে ওঠে, যদি লোকসংখ্যা ৩০-এ পৌঁছে। এ সম্ভাবনা ৯০ শতাংশে তুলতে চাই ৪১ জনের একটি দল। লোকসংখ্যা ৪৭-এ উন্নীত করতে এ সম্ভাবনার মাত্রা ৯৫-এ ওঠে। আর সম্ভাবনার মাত্রা ৯৯ শতাংশ থাকে ৫৭ জন লোকের দলে।
আমরা সাধারণ মানুষ এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে পারি এভাবে বিভিন্ন সংখ্যার মানুষের দল গঠন করে। এক্ষেত্রে যেকোনো একজনের জন্ম নিয়ে খুঁজে দেখতে পারি আর কারো জন্মদিন নেয়া জন্মদিনের সাথে মিলে যায় কি না। তবে লোকসংখ্যা যদি খুব বেশি হয়, তবে তেমনটি খোঁজা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্য সম্ভাবনা যাচাই করে দেখার ব্যাপারে গণিতের নিয়মকানুন রয়েছে।
ধরা যাক, আমরা ৩৬৫ জনের একটি দল নিয়ে এর সম্ভাবনা যাচাইয়ে নামলাম। হতে পারে এই ৩৬৫ জনের ৩৬৫ জনই একই দিনে জন্মেছেন। তা হলে এক্ষেত্রে সম্ভাবনার মাত্রা ৩৬৫/৩৬৫। কিংবা হতে পারে ৩৬৫ জনের মধ্যে ৩৬৪ জনের জন্ম একই তারিখে। এক্ষেত্রে সম্ভাবনা মাত্র ৩৬৪/৩৬৫। তা হলে n সংখ্যক লোকের জন্মদিন একই তারিখে হওয়ার সম্ভাবনা দাঁড়ায় (৩৬৫/৩৬৫) (৩৬৪/৩৬৫) (৩৬৩/৩৬৫) (৩৬২/৩৬৫)... (৩৬৬-n)/৩৬৫।
এভাবে গণিতের প্রবাবিলিটির নিয়মকানুন ব্যবহার করে আলোচ্য সম্ভাবনা যাচাই সম্ভব। তবে তা সাধারণ লোকের জন্য প্রযোজ্য নয় বলে এখানে উল্লিখিত হলো না। শুধু আলোচ্য প্রশ্নের অবাক করা সম্ভাবনা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়ার জন্য এ বিষয়ের এখানে উপস্থাপনা।
গণিতে একটি মজা
যেকোনো একটি সংখ্যা নিন। সংখ্যাটি পাশাপাশি লিখে একটি সংখ্যা তৈরি করুন। এবার সংখ্যাটি ৭ দিয়ে ভাগ করুন। দেখা যাবে সংখ্যাটি সব সময় ৭ দিয়ে বিভাজ্য হবে।
উদাহরণ-১ :
আমরা প্রথমে ৬ সংখ্যাটি নিলাম। ৬-কে পাশাপাশি ৬ বার বসিয়ে তৈরি করলাম ৬৬৬৬৬৬ সংখ্যাটি। এবার এ সংখ্যাকে ৭ দিয়ে ভাগ করে দেখা গেল ভাগফল হলো ৯৫২৩৮। কোনো ভাগশেষ রইল না।
উদাহরণ-২ :
এবার ৩২ সংখ্যাটি পাশাপাশি ৬ বার বসিয়ে তৈরি করলাম সংখ্যা ৩২৩২৩২৩২৩২৩২। এ সংখ্যাটিকে ৭ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল দাঁড়ায় ৪৬১৭৬০৪৬১৭৬ এবং কোনো ভাগশেষ থাকে না।
এভাবে আরো বড় কোনো সংখ্যা নিয়ে পাশাপাশি ৬ বার বসিয়ে যে সংখ্যা পাব, তাকে ৭ দিয়ে ভাগ করলে সব সময়ই তা নিঃশেষে বিভাজ্য হয়। কেনো এমন হয়? চেষ্টা করে দেখুন না, রহস্যটা বের করে আনা যায় কি না। আর হ্যাঁ, পাঠকদের কানে কানে বলে দিচ্ছি, গণিতদাদু নিজেও এর কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
কজ ওয়েব
গণিতদাদু