বর্গ সংখ্যার আরও কিছু মজা
গত সংখ্যায় আমরা বর্গসংখ্যার ছয় ধরনের মজার বিষয় জেনেছি। এবার শুরুতেই বর্গসংখ্যার আরও কয়টি মজার বিষয় জানব। নিচের বর্গসংখ্যার সংখ্যাচিত্র বা নাম্বার প্যাটার্নটি লক্ষ করুন। সহজেই ধরে নিতে পারবেন কী করে বর্গফলটি বের করা যাবে।
১১২ = ১২১
১০১২ = ১০২০১
১০০১২ = ১০০২০০১
১০০০১২ = ১০০০২০০০১
১০০০০১২ =১০০০০২০০০০১
................................ইত্যাদি।
এই সংখ্যাচিত্রটি যে শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়াবে, তা সহজেই আন্দাজ-অনুমান করতে পারি আমাদের স্কুলে শেখা দুই পদের সমষ্টির বর্গ নির্ণয়ের সূত্র (a +b)2 = a2 + 2ab + b2 স্মরণে এনে। এ সূত্রমতে :
১০১২ = (১০০ + ১)২ = ১০০২ + ২. ১০০.১ + ১২ = ১০০০০ + ২০০ +১ = ১০২০১
১০০১২ = (১০০০ + ১)২ = ১০০০০০০২ + ২.১০০০.১ + ১২ = ১০০০২০০০১
..........................ইত্যাদি।
এখন যদি আমরা ১০১২, ১০২২, ১০৩২, ১০৪২, ............ইত্যাদি বর্গসংখ্যার সংখ্যাচিত্র বা নাম্বার প্যাটার্নটি বের করি, তবে এটি দাঁড়াবে এমন :
১০১২ = ১০২০১
১০২২ = ১০৪০৪
১০৩২ = ১০৬০৯
১০৪২ = ১০৮১৬
১০৫২ = ১১০৩২
................ইত্যাদি।
এখানেও সেই আগের মতো আমরা পাব :
১০১২ = (১০০ + ১)২ = ১০১২ + ২.১০০.১ + ১২ = ১০২০১
১০২২ = (১০০ + ২)২ = ১০০২ + ২.১০০.২ + ২২ = ১০৪০৪
১০৩২ = (১০০ + ৩)২ = ১০০২ + ২.১০০.৩ + ৩২ =১০৬০৯
১০৪২ = ( ১০০ + ৪)২ = ১০০২ + ২.১০০.৪ + ৪২ = ১০৮১৬
১০৫২ = ( ১০০২+ ৫)২ = ১০০২ + ২.১০০.৫+ ৫২ = ১১০৩২
.........................................................................ইত্যাদি।
অ্যানাগ্রাম নাম্বারের মজা
১৩ ও ১৪ এই দুটি সংখ্যার মধ্যেও একটি মজার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে।
১৩২ = ১৬৯, আর ০১ + ৬৯ = ৭০
৩১২ = ৯৬১, আর ০৯ + ৬১ = ৭০
১৩ X ৩১ = ৪০৩, আর ০৪ + ০৩ =০৭
লক্ষণীয়, ১৩-কে উল্টে লিখে পাওয়া যায় ৩১। আবার ১৩-এর বর্গসংখ্যা ১৬৯-কে একইভাবে ১৩-কে উল্টো করে লিখে পাওয়া যায় ৩১। ৩১-এর বর্গসংখ্যা ৯৬১। আর এখানে ৭০-এর উল্টো সংখ্যা হচ্ছে ০৭।
একই নাম্বার প্যাটার্ন বা সংখ্যাচিত্র লক্ষ করা গেছে ১৪ এবং এর উল্টো সংখ্যা ৪১-এর বেলায়।
১৪২ = ১৯৬, আর ০১ + ৯৬ = ৯৭
৪১২ = ১৬৮১, আর ১৬ + ৮১ = ৯৭
১৪ X ৪১ = ৫৭৪, আর ০৫ + ৭৪ = ৭৯
এখানে ৯৭-এর উল্টো সংখ্যা ৭৯। তবে ১৪-এর বর্গসংখ্যার উল্টো সংখ্যা ৪১-এর বর্গসংখ্যা নয়।
উল্লেখ্য, এ ধরনের আরও নাম্বার প্যাটার্ন রয়েছে। খুঁজে দেখুন না বের করতে পারেন কি না।
এই ফাঁকে একটা কথা জানিয়ে রাখি। ১৩-এর অঙ্কগুলো পাল্টে আমরা লিখেছিলাম ৩১। কিংবা ১৬৯-এর উল্টো সংখ্যা পেয়েছিলাম ৯৬১। গণিতের ভাষায় ১৩-এর অ্যানাগ্রাম হচ্ছে ৩১, আর ১৬৯-এর অ্যানাগ্রাম ৯৬১। ভাষার বেলায়ও এই অ্যানাগ্রাম কথাটির ব্যবহার আছে। যেমন- ‘কথা’ শব্দটির অ্যানাগ্রাম ‘থাক’। ‘খেলে’ শব্দের অ্যানাগ্রাম ‘লেখে’। কিন্তু ‘বাবা’ শব্দের অ্যানাগ্রাম ‘বাবা’ এবং ‘থুথু’ শব্দের অ্যানাগ্রাম ‘থুথু’ই। কারণ এগুলো উল্টো করে লিখলেও একই থেকে যায়। মোট কথা একই সংখ্যার, শব্দের বা বাক্যাংশের অঙ্ক বা বর্ণ পরিবর্তন করে ভিন্ন সংখ্যা, শব্দ বা বাক্যাংশ গঠন করার নাম অ্যানাগ্রাম। এখানে যে নাম্বার অ্যানাগ্রামের কথা বলা হলো, এটি গণিতের এক মজার বিষয়। এ মজায় ডুবে যাওয়ার ‘অ্যানাগ্রাম উন্মাদনা’ বা ‘অ্যানাগ্রাম ম্যানিয়া’।
অ্যানাগ্রামের ক্ষেত্রে আরও দুটি মজার নাম্বার প্যাটার্ন বা সংখ্যাচিত্র লক্ষ করতে চাই। ১০৮৯ সংখ্যাটিকে ৯ দিয়ে গুণ করলে এর উল্টো সংখ্যা ৯৮০১ পাওয়া যায়। তেমনি ১০৮৯ সংখ্যাটিতে ১০-এর পর ধারাবাহিকভাবে একটি করে ৯ বসিয়ে যেসব সংখ্যা পাওয়া যায়, সেগুলোর ক্ষেত্রে একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। নিচের সংখ্যাচিত্রটি লক্ষ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
১০৮৯ X ৯ = ৯৮০১
১০৯৮৯ X ৯ = ৯৮৯০১
১০৯৯৮৯ X ৯ = ৯৮৯৯০১
১০৯৯৯৮৯ X ৯ = ৯৮৯৯৯০১
১০৯৯৯৯৮৯ X ৯ = ৯৮৯৯৯৯০১
১০৯৯৯৯৯৮৯ X ৯ = ৯৮৯৯৯৯৯০১
..................................... ইত্যাদি।
২১৭৮-কে ৪ দিয়ে গুণ করলে একই ধরনের অ্যানাগ্রাম পাওয়া যায়।
২১৭৮ X ৪ = ৮৭১২
২১৯৭৮ X ৪ = ৮৭৯১২
২১৯৯৭৮ X ৪ = ৮৭৯৯১২
২১৯৯৯৭৮ X ৪ = ৮৭৯৯৯১২
২১৯৯৯৯৭৮ X ৪ = ৮৭৯৯৯৯১২
২১৯৯৯৯৯৭৮ X ৪ = ৮৭৯৯৯৯৯১২
......................................ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে : শুধু ৪, ৫, ৬ এবং ৭ অঙ্কের সংখ্যাকেই এভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে এমনি উল্টো সংখ্যা বা অ্যানাগ্রাম নাম্বার পাওয়া যাবে।
মরলি’র উপপাদ্য
যেকোনো একটি ত্রিভুজ নিন। হতে পারে এটি যেকোনো ধরনের ত্রিভুজ। এর প্রতিটি কোণকে সমত্রিখন্ডিত করুন। পাশাপাশি কোণের ত্রিখন্ডক রেখাগুলোর ছেদবিন্দু তিনটি পরস্পর যোগ করলে একটি ত্রিভুজ পাব। এই ত্রিভুজটি সব সময় একটি সমবাহু ত্রিভুজ হবে। চিত্রে মাঝখানের কালো রঙে ঢাকা ত্রিভুজটিই হচ্ছে এই সমবাহু ত্রিভুজ। এই হচ্ছে মরলি’র উপপাদ্য (Morley’s Theorem)।
কজ ওয়েব
গণিতদাদু