অতিসম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট বাজারে এনেছে অফিস ২০১০। ইতোমধ্যে এর খুচরা সংস্করণ বিক্রি শুরু হয়েছে। মাইক্রোসফটের দাবি হচ্ছে এই সফটওয়্যার দিয়ে আগের যেকোনো সময়ের চাইতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট ইত্যাদি দিয়ে কাজ করা যাবে।
মাইক্রোসফটের এই নতুন সফটওয়্যার এমএস অফিস ২০১০ অনেকটাই সার্চ ইঞ্জিন গুগলের লেখালেখির সফটওয়্যার গুগল ডকসের মতো। গুগল ডকসে যেসব সুবিধা রয়েছে, সেসব সুবিধা যোগ করে অফিস ২০১০ বাজারে ছেড়েছে মাইক্রোসফট করপোরেশন। মাইক্রোসফট আর গুগলের মধ্যে চলতে থাকা দ্বন্ধে এ ঘটনা বিশেষ মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন এ সংস্করণে যুক্ত হয়েছে অফিস ওয়েব প্রোগ্রাম। এ ওয়েব প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে মাইক্রোসফট তার অফিস সফটওয়্যারের জন্য ক্লাউড কমপিউটিংয়ের সূচনা করলো। ক্লাউড কমপিউটিং হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে সার্ভারে মূল সফটওয়্যার রেখে ক্লায়েন্ট পিসি থেকে লোড করে ফাইল চালানো। এর ফলে হার্ডওয়্যারজনিত দূর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই ক্লাউড কমপিউটিং এখন মাইক্রোসফট অফিসে পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি মাইক্রোসফট সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুকের সব ব্যবহারকারীকে অনলাইন অফিস সুইট ব্যবহারের সুযোগ দেবে।
গুগল আর মাইক্রোসফটের বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমাগত প্রতিদ্বন্ধিতা চলছে নিজেদের বাজার ধরে রাখা নিয়ে। গুগলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাইক্রোসফট বিং নামের সার্চ ইঞ্জিন চালু করে আর গুগল তৈরি করতে যাচ্ছে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ক্রোম। এই গুগল ক্রোম বাজারে আসতে পারে এ বছরেই। গুগল আর মাইক্রোসফটের মাঝে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয় ২০০৬ সালে, যখন গুগলে প্রথমবারের মতো বাজারে গুগল ডকস চালু করে। গুগল ডকসে এখন লেখালেখি করার, হিসাব কষার ও উপস্থাপনা তৈরির প্রোগ্রাম রয়েছে। আর ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য আছে প্রিমিয়াম সংস্করণ।
এবারে দেখা যাক মাইক্রোসফটের অফিস ২০১০-এ নতুন কী কী ফিচার যোগ করা হয়ছে। এ সফটওয়্যারের সবচেয়ে আলোচিত ফিচার হচ্ছে রিবন। যারা মাইক্রোসফট অফিসের পূর্ববর্তী ভার্সন অফিস ২০০৭ ব্যবহার করেছেন তাদের কাছে রিবন নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। রিবন হচ্ছে এ অফিস সফটওয়্যার এর লুক। অফিস ২০০৭-এ এর পূর্ববর্তী ভার্সনগুলোর চেয়ে পুরোপুরি আলাদা এক লুক নিয়ে বাজারে আসে। নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য এ নতুন লুক অনেক সহজ হলেও অনেক পুরানো ব্যবহারকারীদের কাজ করতে সমস্যা হবার ফলে এখন নতুন ভার্সনে পুরানো লুক রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অফিস ২০১০-এ যোগ করা হয়েছে আরো আধুনিক সুবিধা সম্বলিত অফিস বাটন। নতুন এই অফিস বাটন বেশ ইন্টারেকটিভ এবং আগের চাইতে অনেক বেশি কার্যকর। বিশেষ করে ফাইল ম্যানেজমেন্ট করার জন্য এই নতুন অফিস বাটন বেশ কাজে দেবে। এ বাটন শুধুই অফিস ওয়ার্ডের জন্যই নয় বরং অফিস সফটওয়্যার কালেকশনের সবগুলোতেই থাকবে। মাইক্রোসফট অফিস ২০১০-এ খুব সহজেই স্ক্রিনশট নেয়া যাবে। এর ফলে প্রেজেন্টেশন বা শেয়ার করা এখন অনেক সহজ হবে।
অফিস ২০১০-এ যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক ও নতুন নতুন নানা ফিচার। এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে- নতুন এবং উন্নতর ছবি এডিটিং টুল। অফিস ২০১০-এর সব অ্যাপ্লিকেশন উন্নত করা হয়েছে, যা ভালোমানের ছবি এডিট করতে সক্ষম হবে। এতে আর্টিস্টিক ইফেক্ট, কালার কারেকশন, ক্রপিং এবং অন্যান্য ফাইন টিউনিং রয়েছে। পাওয়ার পয়েন্টে এমবেড এবং ভিডিও এডিট করার বিশেষ সুবিধাও রয়েছে। মাল্টিমিডিয়া স্লাইড শো’র জন্য রয়েছে পাওয়ার পয়েন্ট ২০১০-এ নতুন বেশ কিছু সুবিধা।
অফিস ২০১০-এর ৬৪-বিট সংস্করণ এক্সেল ২০১০ স্প্রেডশিটের জন্য ২ গিগাবাইটেরও বেশি সুবিধা দেবে। ব্রডকাস্ট স্লাইড শো’র জন্য এতে রয়েছে অত্যাধুনিক বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। মাইক্রোসফট অফিসের আগের সংস্করণের ফাইল মেনুর পরিবর্তে নতুন সংস্করণে যোগ করা হয়েছে ব্যাকস্টেজ ভিউ। নতুন এই সুবিধা ফাইল ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
অফিস ২০১০ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডকুমেন্ট শেয়ার করার জন্য রয়েছে কো-অথোরিং সুবিধা। অফিস ২০১০-এ নানা ধরনের নতুন নতুন সুবিধার মধ্যে আরো রয়েছে আউটলুক সোশ্যাল কানেক্টর। এই সুবিধার ফলে মাইক্রোসফট শেয়ার পয়েন্ট ২০১০ ব্যবহারে আপনার অর্গানাইজেশন কিংবা অন্যান্যদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন উইন্ডোজ লাইভ, থার্ড-পার্টি সাইট যেমন ফেসবুকের সাথে। এগুলো ছাড়াও প্রচুর নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাজারে আসছে অফিস ২০১০।
মাইক্রোসফট অফিস ২০১০-এ ফাইলের নিরাপত্তা অনেক বাড়ানো হয়েছে। অফিসের ভিউতেও এখন প্রটেকটেড ভিউ নামে এক নতুন সুবিধা যোগ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ডকুমেন্ট ফাইলে পাসওয়ার্ড দেয়া এখন অনেক সহজ এবং আগের চাইতে অনেক বেশি সুরক্ষিত। তাছাড়া এর অফিস ২০১০ সোস্যাল বুকমার্ক যোগাযোগের জন্য এখন ভিন্ন মাত্রা আনবে বলেই সবার বিশ্বাস।
অফিস ২০১০ এর পরীক্ষামূলক ভার্সন ব্যবহার করতে চাইলে সরাসরি মাইক্রোসফটের ওয়েব সাইট থেকে একে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। আর মূল ভার্সন ব্যবহার করার জন্য মাইক্রোসফটের কাছ থেকে এ সফটওয়্যার কিনতে হবে। তবে মাইক্রোসফটের এই নতুন অফিস ২০১০ সফটওয়্যার এখন পর্যন্ত সেরা অফিস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে এ বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই।
মাইক্রোসফটের বিভিন্ন অফিস অ্যাপ্লিকেশনের ভার্সন ও সময়
উইন্ডোজের জন্য প্রথমবারের মতো মাইক্রোসফট অফিস বের করা হয় ১৯৯০ সালে। তার আগে এই সফটওয়্যার ম্যাকের জন্য বের করা হয়েছিল। মাইক্রোসফট অফিস ১।০, ১।৫, ১।৬ এবং ৩।০ নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছিল। এর পরেই মাইক্রোসফট বাজারে ছাড়ে তার যুগান্তকারী রিলিজ মাইক্রোসফট অফিস ৯৫। তারপরে মাইক্রোসফট অফিস ৯৭, মাইক্রোসফট অফিস ২০০০, মাইক্রোসফট অফিস ২০০৩ ও মাইক্রোসফট অফিস ২০০৭ হয়ে এখন বাজারে এসেছে এর সর্বশেষ ভার্সন মাইক্রোসফট অফিস ২০১০।
মাইক্রোসফট অফিস শুধুই উইন্ডোজ এবং ম্যাকের জন্য তৈরি করা হয়। এটি চালানোর জন্য এই দুই অপারেটিং সিস্টেমের যেকোনো একটি লাগবে। কমপক্ষে ৫০০ মেগাহার্টজ স্পিডের প্রসেসরের সাথে ২৫৬ মেগাবাইট র্যায়ম থাকলেই এই সফটওয়্যার চলবে। তবে হার্ডডিস্কের স্পেস লাগবে ৩ গিগাবাইটেরও বেশি। আর মাইক্রোসফট অফিস ২০১০ একই সাথে ৩২ বিট ও ৬৪ বিট ভার্সন বের করা হয়েছে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com