আইটিনির্ভর এ পৃথিবীতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার দিনকে দিন যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি মোবাইল নির্মাতা সংস্থাগুলোও বসে নেই। মোবাইল ফোন ক্রমশই দ্রুতগতি ও ফিচারসমৃদ্ধ হয়ে উঠছে বলে আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে এক সময়ে এই মোবাইল পারসোনাল কমপিউটারের জায়গা দখল করে নেবে। স্মার্ট ফোন টেকনোলজি সেই দিকে এগিয়ে যাওয়ার পূর্বাভাসই দিচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে নতুন ডিজাইন, প্রযুক্তি নিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় মশগুল থাকে সারা বছর। প্রযুক্তির এ দৌড়ে অ্যাপল কমপিউটার শামিল হয় ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি। আইফোন নামের স্মার্ট ফোন নিয়ে তারা পৃথিবীতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করে। দুনিয়া মাতানো এ স্মার্ট ফোন অ্যাপল কমপিউটারকে নিয়ে যায় ভিন্ন মাত্রায়। আইফোনের প্রকৌশলগত নৈপুণ্য ও নজরকাড়া ডিজাইন ব্যবহারকারীদের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে শুরু থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় অ্যাপল কমপিউটার ২০১০ সালের ৭ জুন বাজারে এনেছে আইফোন ফোর।
ডিসপ্লে :
অ্যাপল কমপিউটারের ১৩৭ গ্রাম ওজনের আইফোন ফোর মাত্র ৯.৩ মিমি পুরু, যা বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা স্মার্ট ফোন খেতাব পেয়েছে। আইফোন ফোর তার আগের ভার্সনগুলো থেকে আকারে ছোট এবং ওজনেও হালকা। ১৬/৩২ গিগাবাইট মেমরিসম্বলিত এ স্মার্ট ফোনটির ফিচারে অনেক নতুনত্ব আছে, যা আগের কোনো স্মার্ট ফোন/মোবাইল ফোনেই ছিলো না। অ্যাপল কমপিউটার আইফোন ফোরের ডিসপ্লেতে রেটিনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে যা বিশ্বে প্রথম। অ্যাপল প্রকৌশলীরা স্ক্রিনের একটি পিক্সেলের প্রস্থ ৭৮ মাইক্রোমিটার বাড়াতে সক্ষম হওয়ায় ৩.৫ ইঞ্চির (ডায়াগোনাল) এ ডিসপ্লেতে আগের আইফোন ডিসপ্লেগুলোর তুলনায় ৪ গুণ বেশি পিক্সেল ধারণ করতে পারে। অ্যাপলের রেটিনা ডিসপ্লে আইপিএস (ইন প্ল্যান সুইচিং) টেকনোলজি নামের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে যা আই প্যাড ও অ্যাপল এলইডি সিনেমা ডিসপ্লেতেও ব্যবহার করা হয়েছিলো। এর ফলে অন্যান্য মোবাইল ফোনের মতো এটিকে যেভাবেই ধরা হোক না কেনো নিখুঁত ছবির মান নিশ্চিত করবে। তেল প্রতিরোধক (অয়েল রেজিস্ট্যান্ট) সম্বলিত ডিসপ্লেটিতে ব্যবহার করা হয়েছে শাটল ট্রেন এবং হেলিকপ্টারে ব্যবহার কাঁচের উপাদান।
মাল্টি টাস্কিং :
মাল্টি টাস্কিংয়ের সুবিধাও রয়েছে আইফোন ফোরে। ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই একটি অ্যাপ্লিকেশন থেকে আরেকটি অ্যাপ্লিকেশনে যেতে পারবেন সহজে। এতে আইফোনের গতি কমে যাবে না। ব্যবহারকারী যদি কোনো কাজ বন্ধ করে দেন, তিনি চাইলে আবার সেখান হতেই তার কাজ শুরু করতে পারবেন। এ ছাড়াও সিনেমা দেখাসহ ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় কল রিসিভ করা যায়, এমনকি ইন্টারনেটে কোনো ফাইল আপলোড করার সময় ব্যবহারকারী ইচ্ছে করলেই বসে বসে সিনেমা অথবা গেমস খেলতে পারবেন কোনো সমস্যা ছাড়া।
ভিডিও রেকর্ডিং :
এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধাসমৃদ্ধ আইফোন ফোরে ব্যাকলাইট ইলুমিনেশন সেন্সর থাকায় যেকোনো আলোতে ব্যবহারকারীকে ভিডিও করার সুবিধা দেবে। এ ছাড়া অন্ধকারেও ভিডিও করা যাবে এলইডি লাইটের সাহায্যে। আই মুভি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে সিনেমাও বানানো যাবে ভিডিও থেকে। আইফোন ফোরে মোট ৫ মেগাপিক্সেলের ৫ এক্স জুমসমৃদ্ধ দুটি ক্যামেরা রয়েছে। সাধারণ ছবি তোলার পাশাপাশি নিজের ছবিও তুলতে পারবেন ব্যবহারকারী সামনের ক্যামেরা দিয়ে। এমএমএসে ছবি পাঠানো ছাড়াও ব্যবহারকারী মোবাইল মি (অ্যাপ্লিকেশন)-এর সাহায্যে পরিবার, বন্ধুদের সাথে ছবি শেয়ার করতে পারবেন নিমিষেই।
ফেসটাইম ভিডিও কল :
অ্যাপল কমপিউটার আইফোন ফোর ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ফেসটাইম ভিডিও কল টেকনোলজি ব্যবহার করেছে যা প্রযুক্তিবিশ্বে প্রথম। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী কথা বলার সময়ে অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে দেখতে পারবেন। ব্যবহারকারী ইচ্ছে করলে সে ছবি সংরক্ষণও করতে পারবেন।
ব্যাটারি চার্জ :
অন্যান্য স্মার্ট ফোনের মতো অ্যাপল আইফোন ফোরের ব্যাটারি চার্জ ব্যবহারের বিভিন্নতার ওপর নির্ভরশীল। এতে বিল্ট ইন রিচার্জেবল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। নিচে ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ব্যাটারি চার্জ সম্পর্কিত তথ্য দেয়া হলো :
টকটাইম :
* ঘণ্টার উপরে (টুজি)
* ঘণ্টার উপরে (থ্রিজি)
* ঘণ্টা স্ট্যান্ডবাই টাইম
ইন্টারনেট ব্যবহার :
ঘণ্টার উপরে (থ্রিজি)
ঘণ্টার উপরে (ওয়াইফাই)
ভিডিও দেখা যাবে : ১০ ঘণ্টার উপরে
> অডিও প্লেব্যাক : ৪০ ঘণ্টা সাপোর্টেড ফরম্যাট : AAC, Audible (2,3,4), HE-AAC, AEA, MP3 VBR, AAX, AAX+, AIFF এবং WAV)
অন্যান্য প্রযুক্তি :
প্রযুক্তির চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যসমৃদ্ধ আইফোন ব্যবহার করেছে অ্যাপল এফোর (Apple A4) প্রসেসর। এ প্রসেসরটি আইফোনের মাল্টি টাস্কিং, ভিডিও এডিটিং, ফেস টাইম টেকনোলজিকে সাবলীলভাবে পরিচালনা করে। প্রসেসরটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট হওয়ায় ব্যাটারির চার্জকেও এটি দীর্ঘায়িত করে। সহকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ফোর। মাল্টিটাস্ক সাপোর্ট করা আইওএস আইফোনের ফিচারগুলোকে করেছে প্রাণবন্ত। মাল্টি থ্রেড হ্যান্ডলিং সুবিধাসম্বলিত আইওএস নিঃসন্দেহে অন্য মোবাইল ওএসগুলোকে পেছনে ফেলেছে এর অপূর্ব ফিচার আর অদিবতীয় পারফরমেন্সের জন্য। অ্যাপল আইফোনে ব্যবহৃত স্টেইনলেস স্টিল ব্যান্ড সাধারণ স্টিলের চেয়ে ৫ গুণ শক্তিশালী। অ্যাপল প্রকৌশলীদের মতে, স্টেইনলেস স্টিল ব্যান্ডটিই আইফোনের পাতলা কিন্তু শক্তিশালী গঠনের মূল উপাদান। এছাড়াও স্টিলের এ আবরণটি আইফোনের অ্যান্টেনার কাজও করে থাকে। আইফোন ফোরে বিল্ট ইন থ্রি অ্যাক্সিস গায়রোস্কোপ রয়েছে যা অ্যাক্সেলোমিটারের সাথে যুক্ত করা হলে আইফোনকে অ্যাডভান্সড মোশন কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যার ফলস্বরূপ আইফোন ফোরে গেম হয়ে উঠবে আরো প্রাণবন্ত।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে আইফোন ২০০৭ সালে পৃথিবীতে শুধু সাড়া ফেলে থেমে থাকেনি, আইফোন জয় করেছিলো লক্ষ-কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং পরিণত হয়েছিলো মানুষের স্বপ্নে। আইফোন ফোর বের হওয়ার পর সেলস সেন্টারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় আর তাদের আইফোনের মালিক হবার আকাঙ্ক্ষা দেখে এর সৌন্দর্যকে বিচার করা যাবে না। একমাত্র ব্যবহারকারীই প্রকৃত সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারে। আইফোন ফোর স্মার্ট ফোনের জগতে নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে- এ কথা অস্বীকার করার মতো মানুষ পাওয়া যাবে না।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : tazbirs@gmail.com