• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ২০১২ সালের প্রযুক্তিপণ্য
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সৈয়দ হাসান মাহমুদ
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
নতুন ডিভাইসেস
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি পণ্য
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
২০১২ সালের প্রযুক্তিপণ্য
প্রযুক্তির বাজারে হরহামেশাই অবমুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে কিছুটা চমক থাকেই প্রযুক্তি পণ্যগুলোর মধ্যে। নতুন কী কী পণ্য আসছে বাজারে তা নিয়ে অনেকেই ভাবতে শুরু করেন বছর শেষে নতুন বছর আসার আগেই। নতুন বছরে কোম্পানিগুলোও চেষ্টা করে তাদের উৎপাদিত সেরা পণ্যটি বছরের প্রথম দিকেই ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে। ২০১২ সালে কী কী প্রযুক্তিপণ্য বাজারে আসছে, তার অবমুক্তির দিনটির জন্য অনেকেই অধীর আগ্রহে বসে থাকেন। গত বছরের সফল কিছু প্রযুক্তিপণ্যের নতুন ভার্সন আসছে নতুন বছরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত ও আলোচিত কয়েকটি পণ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এ লেখায়।

উইন্ডোজ এইট



অপারেটিং সিস্টেমের দুনিয়ায় আরেকটি মাইলফলক বানাতে যাচ্ছে মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ ভিসতার ব্যর্থতা কিছুটা কাটাতে সক্ষম হয়েছে উইন্ডোজ সেভেন। যাদের উইন্ডোজ সেভেন নিয়েও কিছুটা অতৃপ্তি ছিল তাদের কথা মাথায় রেখে বানানো হচ্ছে উইন্ডোজ এইট। উইন্ডোজ এইট ডেভেলপার প্রিভিউ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর যে সাড়া পাওয়া গেছে তা অভাবনীয়। সহজ কথায় বলা যায়, ২০১২ সালে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত বস্ত্তটি হচ্ছে উইন্ডোজ এইট। বেশ কিছু নতুন ফিচার যোগ করা হচ্ছে এতে, যার ফলে উইন্ডোজ ব্যবহারের অভিজ্ঞতার আমূল পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে-উন্নত টাচস্ক্রিন ইনপুট, উইন্ডোজ স্টোর (অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন স্টোর), মেট্রো স্টাইল, পিকচার পাসওয়ার্ড বা ফেস রিকগনিশন, মাল্টিপল ডেস্কটপ, উন্নত টাস্কবার, বুট সিকিউরিটি, চমৎকার ভিজ্যুয়ালাইজেশন ইত্যাদি অনেক কিছু।

অ্যান্ড্রয়েড ৫.০

২০০৮ সালে যাত্রা শুরু গুগলের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের ১.৫ (কাপকেক) ভার্সন দিয়ে। তারপর একে একে বের হয় ১.৬ (ডোনাট), ২.১ (ইকলেয়ার), ২.২ (ফ্রয়ো), ২.৩ (জিঞ্জারব্রেড), ৩.০ (হানিকম্ব) ও গত বছরের অক্টোবরে রিলিজ পাওয়া ৪.০ (আইসক্রিম স্যান্ডউইচ)। মজার ব্যাপার হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েডের ভার্সনগুলোর নাম রাখা হয়েছে বিভিন্ন সুইটস ও ডেসার্টের নামে। নতুন বছরে বের হবে অ্যান্ড্রয়েড ৫.০, যার কোডনেম হচ্ছে, জেলি বিন। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয়, ভার্সনগুলোর নাম ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমে রাখা হয়েছে যার শুরু সি দিয়ে অর্থাৎ কাপকেক। অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোর মধ্যে বেশি ব্যবহার দেখা গেছে ২.২ ও ২.৩ ভার্সনের এবং ট্যাবলেট পিসিতে ৩.০ ভার্সনটি। অ্যান্ড্রয়েড ৪.০ ভার্সনটি দেখা যাবে স্যামসাংয়ের বানানো গুগল নেক্সাস প্রাইম নামের স্মার্টফোনে। অ্যান্ড্রয়েড ৫.০-এ ফ্ল্যাশ সাপোর্ট থাকবে না বলে জানা গেছে। নতুন ভার্সনে আগের ভার্সনের প্রায় সব ফিচার রাখার পাশাপাশি আরো নতুন কিছু ফিচার যোগ করা হবে। অ্যান্ড্রয়েড ৫.০-এ কী কী থাকবে, তা সঠিক বলা হয়নি। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ৪.০-এ কী আছে তার ওপর নজর বুলালেই নতুনটিতে কী থাকতে পারে, তার আভাস পাওয়া যাবে। অ্যান্ড্রয়েড ৪.০-তে রয়েছে উন্নত ইউজার ইন্টারফেস, সহজ মাল্টি-টাস্কিং ব্যবস্থা, রিসাইজেবল ইউজেটস, নতুন লক স্ক্রিন অ্যাকশন, কুইক ইনকামিং কল রেসপন্স, উন্নত টেক্সট ইনপুট ব্যবস্থা, স্পেল চেকার, শক্তিশালী ভয়েস ইনপুট ইঞ্জিন, ফেস রিকগনিশন, বাড়তি ক্যামেরা ফিচার, উন্নত ই-মেইল ব্যবস্থা, শক্তিশালী ওয়েব ব্রাউজিং সিস্টেম, ফাইল শেয়ারিং ইত্যাদি। অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ ভার্সনের জন্য গুগলের কাছে ইউজারদের কিছু দাবি রয়েছে, যা তারা নতুন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমটিতে দেখতে চায়। সেগুলো হচ্ছে-ফুল ক্রোম ব্রাউজার, ফাইল ম্যানেজার, আরো সহজ কিবোর্ড, ক্লিয়ার আপগ্রেড পাথ, পাওয়ার এফিসিয়েন্সি, থিম অপশন, আরো দ্রুতগতি ইত্যাদি।

অ্যাপল পণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানি কে কী নিয়ে আসছে নতুন বছরে সে দিকে একটু নজর দেয়া যাক। গত বছরের নেটবুক ও ট্যাবলেট পিসির ঝড়ের পর এ বছর আবার ট্যাবলেট পিসির দুনিয়ায় বড় ধরনের ঝড় শুরু হতে যাচ্ছে। সেই সাথে গেমিং কনসোল ও ক্যামেরার জগতেও সাড়া পড়তে যাচ্ছে।

আসুস ইইই প্যাড ট্রান্সফরমার প্রাইম



অ্যাপলের আইপ্যাড ট্যাবলেট পিসির বাজারে যে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল, তার পালে হাওয়া লাগাতে অনেক কোম্পানি উঠেপড়ে লেগেছিল। গত বছর স্যামসাং ও ব্ল্যাকবেরিসহ আরো কিছু কোম্পানি আইপ্যাডকে টেক্কা দিয়ে আরো ভালো পণ্য সবাইকে উপহার দিয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আইপ্যাড ২ বের করে সবাইকে চমক লাগিয়ে দেয়। কিন্তু আইপ্যাড ২-কেও মাত করে দিয়েছে এমন কয়েকটি পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্যামসাং গ্যালাক্সি ট্যাব ১০.১, মটোরোলা জুম ইত্যাদি। কিন্তু সবাইকে টপকে এখন ওপরে চলে এসেছে আসুস। আসুসের ইইই প্যাড ট্রান্সফরমারের আরো উন্নত ভার্সন ট্রান্সফরমার প্রাইম ভালো কনফিগারেশনের ট্যাবলেট পিসি। ০.৩৩ ইঞ্চি পুরুত্বের ও ৫৮৬ গ্রাম ওজনের মেটালিক আউটলুকের আল্ট্রা-স্লিম আসুস ইইই ট্রান্সফরমার প্রাইম একাধারে একটি ট্যাবলেট পিসি ও আবার ল্যাপটপও। ডকিং স্টেশন ছাড়া একে ট্যাবলেট হিসেবে এবং ডকিং স্টেশনসহ একে ল্যাপটপের মতো ব্যবহার করা যাবে। সুপিরিয়র পারফরম্যান্স দেয়ার জন্য এতে যোগ করা হয়েছে এনভিডিয়া টেগরা ৩ কোয়াড কোরের মোবাইল প্রসেসর। এ প্রথম কোনো ট্যাবলেটে কোয়াড কোর ও এনভিডিয়া টেগরা ৩ প্রসেসর ব্যবহার করা হলো। এতে আরো রয়েছে-১ গিগাবাইট র্যানম, ১০.১ ইঞ্চি এলইডি স্ক্রিন যা ১২৮০ বাই ৮০০ রেজ্যুলেশন সাপোর্ট করে, দশ আঙুল ব্যবহার করা যায় এমন মাল্টিটাচ স্ক্রিন, কোর্নিং গোরিলা গ্লাসের এটির স্ক্রিন বেশ টেকসই যাতে সহজে ক্র্যাচ পড়বে না, এতে ৩২-৬৪ গিগবাইট স্টোরেজ ও আনলিমিটেড আসুস ওয়েবস্টোরেজ সুবিধা পাওয়া যাবে, ডকিং স্টেশনের সাথে ফুল কোয়েরটি কিবোর্ড, টাচপ্যাড, এক্সট্রা ইউএসবি পোর্ট ও কার্ড রিডার পোর্ট পাওয়া যাবে, প্যাডের গায়ে রয়েছে টু ইন ওয়ান অডিও জ্যাক, মাইক্রোএসডি কার্ড রিডার, ইন্টারনাল মাইক্রোফোন, স্টেরিও স্পিকার, ভিডিও চ্যাটের জন্য ১.২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং ফ্ল্যাশ ও উন্নত অ্যাপাচারসমৃদ্ধ ৮ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা, যা কম আলোতেও ভালো ছবি তুলতে সক্ষম। এতে আরো রয়েছে-জি-সেন্সর, লাইট সেন্সর, গাইরোস্কোপ, ই-কম্পাস, জিপিএস, ফ্ল্যাশ সাপোর্ট, মাল্টিটাস্কিং সুবিধা, স্পেশাল অ্যাপ্লিকেশন বান্ডেল, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ ও ফুল হাই ডেফিনিশন ভিডিও রেকর্ডিং। ইতোমধ্যে পণ্যটি বাজারে এসে গেছে, কিন্তু আমাদের দেশে এখনো আসেনি। ট্যাবলেট পিসিটির দাম রাখা হয়েছে ৪৯৯ মার্কিন ডলার।

কিন্ডল ফায়ার ২

অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস অ্যামাজন তাদের কিন্ডল ফায়ার নামের ৭ ইঞ্চির ট্যাব বাজারে এনে বেশ ভালো ব্যবসায় করে নিয়েছে মিনি ট্যাবের প্রতিযোগিতায়। এবার তারা নামতে যাচ্ছে ১০ ইঞ্চি ট্যাবলেট পিসির বাজার মাতানোর জন্য তাদের নতুন কিন্ডল ফায়ার ২-এর সাহায্যে। তারা ঘোষণা দিয়েছে তাদের এ প্যাডটি আইপ্যাডের চেয়ে অনেক কম দামে বাজারে ছাড়া হবে। প্রথম অবস্থায় অ্যামাজন কিন্ডল ছিল ই-বুক রিডার, কিন্তু এখন তা প্রবেশ করেছে ট্যাবলেট পিসির জগতে। এ বছরের শেষের দিকে এটি বাজারে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে অ্যামাজন।

নুক ট্যাবলেট ২

কিন্ডল ফায়ারের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে বার্নেস অ্যান্ড নোবেল নুক ট্যাবলেট। কিন্ডল ফায়ার ২-এর দেখাদেখি তারাও বের করতে যাচ্ছে নুক ট্যাবলেট ২। ৭ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে প্যানেলের নুক ট্যাবলেট অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলে। এতে আরো রয়েছে ১ গিগাহার্টজের ডুয়াল কোর প্রসেসর, ১ গিগাবাইট র্যা।ম, ১৬ গিগাবাইট স্টোরেজ ও ৯ ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ। নতুন নুক ট্যাবলেট ২-এ কী থাকবে তা জানা যায়নি, তবে আগের ভার্সনের সাথে তুলনা করে ধারণা করা যাচ্ছে এতে কোয়াড কোরের আগমন ঘটতে পারে এবং তা আরো শক্তিশালী করে বাজারে ছাড়া হবে, যাতে তা আইপ্যাড ও কিন্ডল ফায়ার ২-কে মাত দিতে পারে।

প্লেস্টেশন ভাইটা



স্টেশন ২-এর পর প্লেস্টেশন ৩ বাজারে আসায় কনসোল গেমিংয়ের জগতে বিরাট এক পরিবর্তন এসেছে। প্লেস্টেশন ৩ বাজারে আসার পর মাইক্রোসফটের এক্সবক্স কিছুটা মিইয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এক্সবক্স ৩৬০ এলিট দিয়ে তারা তাদের অবস্থান কিছুটা শক্ত করে নিয়েছে। হ্যান্ডহেল্ড গেমিং কনসোল হিসেবে পিএসপির তুলনা হয় না। কিন্তু এখন তুলনা করা যাবে, কারণ সনি বের করেছে প্লেস্টেশন ভাইটা নামের নতুন ভার্সনের হ্যান্ডহেল্ড গেমিং কনসোল। প্লেস্টেশন পোর্টেবলের আদলে বানানো এ কনসোলে যোগ করা হয়েছে অনেক সুবিধা, যা হ্যান্ডহেল্ড গেমিং দুনিয়ায় এক বিপ্লব আনতে যাচ্ছে। প্লেস্টেশন ভাইটা বের হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে। তবে তা বাজারজাত করা হয়েছে শুধু জাপান, হংকং, তাইওয়ান ও চীনের কিছু অংশে। কনসোলটি পৃথিবীব্যাপী বাজারজাত করা হবে এ বছরের ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ থেকে। কনসোলটির আকার ও পুরুত্ব হচ্ছে-৭.২ বাই ৩.২৮৯ বাই ০.৭৩ ইঞ্চি এবং ওজন হচ্ছে ২৬০ গ্রাম (ওয়াই-ফাই) ও ২৭৯ গ্রাম (থ্রিজি)। প্লেস্টেশন ভাইটা কার্ডের সাহায্যে মেমরি ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। কনসোলে দেয়া ক্রসপ্লে সুবিধার জন্য প্লেস্টেশন ৩ কনসোলের সাথে মাল্টিপ্লেয়ার মোডে গেম খেলা যাবে।

নিনটেনডো উইই ইউ



প্লেস্টেশন গেমিং কনসোলের প্রতিদ্বন্দ্বী নিনটেনডো সনির সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য বের করতে যাচ্ছে উইই ইউ ভিডিও গেম কনসোল। এ কনসোলের মূল আকর্ষণ হচ্ছে গেম কন্ট্রোলার, কারণ কন্ট্রোলারের মধ্যে দেয়া আছে টাচস্ক্রিন। গেম খেলার সময় টিভি অফ করলেই কন্ট্রোলারের মধ্যের স্ক্রিনে ডিসপ্লে চলে আসবে। এটি উইই রিমোট, উইই মোশন প্লাস, উইই ব্যালান্স বোর্ড, উইই ক্লাসিক কন্ট্রোলারসহ সব কন্ট্রোলার সাপোর্ট করবে। এটি ফুল হাই ডেফিনিশন সাপোর্ট করে। এতে আরো থাকবে আইবিএম পাওয়ারভিত্তিক মাল্টিকোর মাইক্রোপ্রসেসর, এএমডি রাডেওন হাই ডেফিনিশন জিপিইউ, চারটি ইউএসবি ২.০ পোর্ট ও ব্যাকওয়ার্ড কম্প্যাটিবিলিটি। সাদা রঙের মনকাড়া ডিজাইনের এ কনসোলের দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এটি এ বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে ছাড়া হবে বলে নিনটেনডো কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে।

ক্যানন ফাইভডি মার্ক ৩

এসএলআর ক্যামেরার দুনিয়া ক্যানন আর নাইকন একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ক্যানন এ বছর বাজারে ছাড়বে তাদের ফাইভডি মার্ক ৩। ক্যামেরাটির স্পেসিফিকেশন কী হবে, এ সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা দেয়া হয়নি। তবে ক্যানন বিশাল এক চমক নিয়ে আসতে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

নাইকন ডি৮০০

ক্যাননের বিপরীতে নাইকন আনতে যাচ্ছে নাইকন ডি৮০০, যাতে থাকবে ৩৬ মেগাপিক্সেল সেন্সর, উন্নত ফেস রিকগনিশন সিস্টেম, ইউএসবি ৩.০, আইএসও রেঞ্জ ১০০-৬৪০০, ৩.২ ইঞ্চি স্ক্রিন, বিল্ট-ইন জিপিএস, ফুল এইচডি ভিডিও মোড ইত্যাদি। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের জন্য বেশ ভালোমানের ক্যামেরা এটি। তাই ফটোগ্রাফাররা এটি কবে বের হবে সে অপেক্ষায় বসে আছেন।

অ্যাপল আইপ্যাড ৩

অনুমান করা হয়েছিল, অ্যাপল আইপ্যাড ৩ বড় দিনের উপহার হিসেবে সবার হাতে গত ডিসেম্বরেই তুলে দেয়া হবে, কিন্তু তা হয়নি। জানা গেছে, আইপ্যাড ৩ এ বছরের মার্চ বা এপ্রিলের দিকে বাজারে আসবে। বলা হচ্ছে, এটি ২৪ ফেব্রুয়ারি বাজারে আসবে। কারণ এ দিনটি হচ্ছে প্রযুক্তি জগতের স্মরণীয় দিকপাল স্টিভ জবসের ৫৭তম জন্মদিন। ফ্রেব্রুয়ারি বা এপ্রিল যাই হোক না কেনো, অ্যাপলের প্রতীক্ষিত এ পণ্যটি এ বছরের প্রথমার্ধে যে বের হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রযুক্তিপণ্যের দামের ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাপল সাধারণত দামের ব্যাপারে খুব একটা পার্থক্য করে থাকে না, যখন এরা কোনো পণ্যের পরবর্তী ভার্সন বাজারে আনে। ১৬ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার আইপ্যাড অরিজিনাল বা মূল (আইপ্যাড ১) এবং আইপ্যাড ২-এর দাম ৫০০-৫৫০ মার্কিন ডলারের মতো। তাই ধারণা করা হচ্ছে, আইপ্যাড ৩-এর দাম ৬০০-৬১৫ মার্কিন ডলারের মধ্যে থাকবে। ধারণক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে দাম আরো বাড়তে পারে। মূল আইপ্যাডে ছিল অ্যাপল এফোর ১ গিগাহার্টজ প্রসেসর এবং আইপ্যাড ২-এ ছিল অ্যাপল এফাইভ ১ গিগাহার্টজ ডুয়াল কোর প্রসেসর। সিঙ্গল ও ডুয়াল কোরের পর ধারণা করা হচ্ছে আইপ্যাড ৩-এ থাকবে কোয়াড কোরের ১ গিগাহার্টজ বা তার চেয়ে বেশি গতির অ্যাপল এসিক্স প্রসেসর। নতুন এ প্রসেসরের ফলে আইপ্যাড ৩ আরো শক্তিশালী ও কার্যক্ষম হয়ে উঠবে। পুরনো আইপ্যাড ভার্সন দু’টিতে ব্যবহার করা হয়েছে আইওএস নামের অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু আইপ্যাড ৩-এ হাইব্রিড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে, যা বানানো হবে মোবাইল ফোন ও কমপিউটার অপারেটিং সিস্টেমের সংমিশ্রণে। মূল আইপ্যাডে ক্যামেরা ছিল না, কিন্তু আইপ্যাড ২-এ ছিল। আইপ্যাড ৩-এ অন্তত ৫-৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা থাকতে পারে, যা এখনকার আইফোন ৪-এ আছে। গত বছর অ্যাপল কার্বন ফাইবার এক্সপার্টকে কোম্পানিতে নিয়োগ দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, আইপ্যাড ৩-এর ক্যাসিং বানানো হবে খুব হালকা, কিন্তু মজবুত কার্বন ফাইবার দিয়ে। আইপ্যাড ৩-এ নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ফোরজি এলটিই (লং টার্ম ইভ্যালুশন) থাকার সম্ভাবনা আছে। ডিসপ্লে সার্চ গবেষক রিচার্ড শিম দাবি করছেন-আইপ্যাড ৩-এর ডিসপ্লে প্যানেল ২০৪৮ বাই ১৫৩৬ পিক্সেল হবে। এতে মুভি, টিভি শো, গেম ও পিকচার কোয়ালিটি আরো নিখুঁত ও ঝকঝকে হয়ে উঠবে। আইপ্যাড ৩-এ আরো থাকতে পারে থান্ডারবোল্ট পোর্ট, যা খুব দ্রুতগতিতে ডাটা ট্রান্সফার করতে পারার ক্ষমতাযুক্ত ডকিং পোর্ট। এ পোর্টটি ম্যাকবুক এয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে, যার ডাটা ট্রান্সফার করার গতি ইউএসবি ২.০-এর চেয়ে ২০ গুণ বেশি। কেউ বলছেন, আইপ্যাড ৩ আগের ভার্সনের তুলনায় শতকরা ২০ ভাগ পাতলা হবে। আবার কেউ বলছেন, হাই রেজ্যুলেশন রেটিনা ডিসপ্লে যুক্ত করার ফলে তার পুরুত্ব বাড়তে পারে। আইপ্যাডের ওজন হতে পারে ০.৬ পাউন্ডের মতো। আইপ্যাড ও আইপ্যাড ২-এর ব্যাটারির আয়ু ১০ ঘণ্টার মতো, কিন্তু আইপ্যাড ৩-এ তা বাড়িয়ে ১২-১৫ ঘণ্টা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে মাল্টি-কার্ড রিডার ও এইচডিএমআই পোর্টও থাকতে পারে।

অ্যাপল আইফোন ৫

আইফোন ৫-এর বাজারে আসার কথা জুনের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, গতানুগতিক আইফোনের ডিজাইনের চেয়ে এ ফোনের ডিজাইন ভিন্নরকমের হবে। এতে থ্রিডি ভিডিও ডিসপ্লে, ফেস রিকগনিশন ও উচ্চগতির ফোরজি নেটওয়ার্ক থাকতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এতে ১.৫-২.০ গিগাহার্টজ গতির ডুয়াল কোর অ্যাপল এফাইভ চিপসেটের প্রসেসর এবং ১ গিগাবাইট র্যািম থাকবে বলে গবেষকেরা ভাবছেন। আইফোন ৫-কে স্যামসাং গ্যালাক্সি ২-কে মাত দেয়ার মতো করে বানানো হবে। তাই সহজেই এর কিছু ফিচার অনুমান করা যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে-৩.৭-৪ ইঞ্চি স্ক্রিন, আরো পাতলা ও হালকা ক্যাসিং, উন্নত কিবোর্ড, বিল্ট-ইন জিপিএস, ৮-১০ মেগাপিক্সেল রেয়ার ক্যামেরা, ১.৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্টসাইড ক্যামেরা, ৬৪-১২০ গিগাবাইট মেমরি, ২০ ঘণ্টা টক টাইম (থ্রিজি) বা ১০ ঘণ্টা টক টাইম (ফোরজি), আরো বেশি ব্যাটারি লাইফ ইত্যাদি। ইউটিউবে আইফোন ৫ কনসেপ্ট ফিচারস নামে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে দেখানো হয়েছে হলোগ্রাফিক কিবোর্ড ও ডিসপ্লেযুক্ত আইফোন ৫। ইন্টারনেটে দেখতে পাবেন কত বাহারি কনসেপ্ট ডিজাইন রয়েছে আইফোন ৫-এর। তবে মূল ডিজাইন কেমন হবে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয়া হয়নি অ্যাপল থেকে।

অ্যাপল স্মার্ট টিভি



শোনা যাচ্ছে, অ্যাপল নামতে যাচ্ছে স্মার্ট টিভির যুদ্ধে। অ্যাপলের পণ্যের গুণগত মান, সহজ ইউজার ইন্টারফেস ও মনকারা ডিজাইনের কারণে তা সহজেই কারো মন জয় করতে সক্ষম। ২০০৭ সালে অ্যাপল প্রথম অ্যাপল টিভি বাজারে এনেছিল। তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যাপল টিভি বা আইটিভি বের হয়েছে ২০১০ সালে। এটি যেকোনো ব্র্যান্ডের হাই ডেফিনিশন টিভি বা ম্যাক কমপিউটার বা আইটিউনস ইনস্টল করা উইন্ডোজযুক্ত পিসির সাথে যুক্ত করার মতো একটি ডিজিটাল মিডিয়া রিসিভার ডিভাইস বা স্মল ফর্মফ্যাক্টর নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লায়ান্স। এটি দিয়ে আইটিউনস স্টোর, নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, ফ্লিকার, মোবাইলমি, এমএলবি.টিভি, এনবিএ লিগ পাস, এনএইচএল গেম সেন্টার ইত্যাদি থেকে ডিজিটাল কনটেন্ট চালানো যাবে। অ্যাপল টিভির উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে-ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল মিডিয়া সেন্টার, রোকু, বক্সি ও গুগল টিভি। দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যাপল টিভিতে রয়েছে অ্যাপল এফোর (এআরএম করটেক্স-এ৮) চিপসেটের প্রসেসর, অ্যাপল এফোর (পাওয়ারভিআর এসজিএক্স৫৩৫) গ্রাফিক্স চিপসেট, ২৫৬০ মেগাবাইট র্যা ম, ৮ গিগাবাইট ন্যান্ড ফ্ল্যাশ, মাইক্রোইউএসবি, এইচডিএমআই, ইনফ্রারেড রিসিভার, অপটিক্যাল অডিও, ওয়াই-ফাই, ৪৮০পি ও ৭২০পি ভিডিও আউটপুট এবং আইওএস ৪.১ অপারেটিং সিস্টেম। ওয়াল্টার আইজ্যাকসন রচিত স্টিভ জবসের বায়োগ্রাফিতে উল্লেখ করা হয়েছে-স্টিভ জবস অ্যাপল টিভির উন্নতি নিয়ে কাজ করছিলেন। অ্যাপল তাদের টিভি বক্সটিকে টিভির ভেতরে ইন্ট্রিগেট করে তা দিয়ে হোম থিয়েটার সিস্টেম বানানোর পরিকল্পনা করছে বলে অনেকেই সন্দেহ করছেন। আর যদি সেটা করা হয়, তবে স্যামসাংয়ের স্মার্ট টিভির দুনিয়ায় একক রাজত্বের দিন শেষ হয়ে যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, টিভিটি এ বছরের শেষের দিকে বের হতে পারে।

অ্যাপল ম্যাকবুক প্রো

অ্যাপল ম্যাকবুক প্রো বর্তমানে ইন্টেলের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রসেসর স্যান্ডিব্রিজসহ বাজারজাত করা হচ্ছে। স্যান্ডিব্রিজ মোবাইল প্রসেসরগুলোর টিপিডি বা থার্মাল পাওয়ার ডিজাইন ১৭-৫৫ ওয়াট। এ বছরের ম্যাকবুক প্রো বানানো হবে ইন্টেলের নতুন প্রজন্মের প্রসেসর আইভি ব্রিজের সাহায্যে। আইভি ব্রিজ সিরিজের প্রসেসরের টিপিডি ১৭-৫৫ ওয়াট, কিন্তু তা ম্যাকবুক প্রোকে কোয়াড কোর সাপোর্ট আরো ভালো দিতে পারবে। ভিআর-জোন নামের অনলাইন ম্যাগাজিনের ফাঁস করা তথ্যানুসারে জানা যায়, ১৩ ইঞ্চি আকারের নতুন ম্যাকবুক প্রো-তে ব্যবহার করা হবে ভালোমানের গ্রাফিক্স চিপসেট এবং সেই সাথে দেয়া হবে আল্ট্রা হাই রেজ্যুলেশন সাপোর্ট। বর্তমানে ১৭ ইঞ্চির ম্যাকবুক প্রো-তে ফুল হাই ডেফিনিশন সাপোর্ট বা ১৯২০ বাই ১০৮০ পিক্সেল সাপোর্ট রয়েছে। কিন্তু নতুন ম্যাকবুক ১৩ ইঞ্চিতেই পাওয়া যাবে ২৮৮০ বাই ১৮০০ রেজ্যুলেশন সাপোর্ট। ১৩ ইঞ্চিতে ২৬১ পিপিআই, ১৫ ইঞ্চিতে ২২৬ পিপিআই ও ১৯ ইঞ্চিতে ২০০ পিপিআই কালার ডেপথ দেয়া হবে।

অ্যাপল ম্যাকবুক এয়ার

ম্যাকবুক এয়ারকে আরো হালকা ও পাতলা করার চিন্তা করছে অ্যাপল। ম্যাকবুক এয়ারেও ব্যবহার করা হবে প্রোবুকের মতো ইন্টেল আইভি ব্রিজের প্রসেসর। এ প্রসেসরগুলো কম বিদ্যুৎ খরচ করে বলে ব্যাটারির আয়ু অনেকটা বেড়ে যাবে। ম্যাকবুক এয়ারেও ব্যবহার করা হবে আল্ট্রা হাই রেজ্যুলেশন সাপোর্ট। ইউএসবি ৩.০ পোর্টের পাশাপাশি এতে ব্যবহার করা হবে থান্ডারবোল্ট পোর্ট, যা ইউএসবির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে ডাটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম। গ্রাফিক্স চিপসেট হিসেবে এএমডি নাকি এনভিডিয়া চিপসেট ব্যবহার করা হবে, তা এখনো জানা যায়নি।

আইপ্যাড মিনি



অ্যাপলের পণ্যের দাম কিছুটা বেশি, তাই অন্যান্য কোম্পানি তারচেয়ে কম দামে পণ্য বাজারে এনে অ্যাপলের সাথে টেক্কা দিতে পারছে। অ্যাপলের আইপ্যাড ২-এর তুলনায় গ্যালাক্সি ট্যাব ৭ ইঞ্চি, কিন্ডল ফায়ার, ব্ল্যাকবেরি প্লেবুক ইত্যাদি কম দাম হওয়ায় তা বেশি বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের ট্যাবলেট পিসিগুলোর চাহিদার কথা খেয়াল রেখে এ বছরের শেষের দিকে অ্যাপলও বের করতে যাচ্ছে আইপ্যাড মিনি, যার আকার হবে ৭.৮৬ ইঞ্চি। আইপ্যাড মিনির কনফিগারেশন এবং ফিচার সম্পর্কে তেমন কিছু জানানো হয়নি।

কমপিউটার ও অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসে প্রাণ সঞ্চার করে অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেমের দুনিয়ায় আগে মাইক্রোসফট, লিনআক্স ও অ্যাপলের মধ্যে যুদ্ধ হতো। কিন্তু স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পিসির বদৌলতে আরো কয়েকটি কোম্পানি অপারেটিং সিস্টেমের যুদ্ধে যোগ দিয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গুগল। কমপিউটারের জন্য অপারেটিং সিস্টেম বানানোর পাশাপাশি ট্যাবলেট পিসি ও স্মার্টফোনের জন্যও বানানো হচ্ছে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। মোবাইল ওএসের বেলায় মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৭ মোবাইল অ্যাপলের আইওএস ও গুগলের অ্যান্ড্রয়েডের সাথে লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। অ্যাপল নতুন বছরে অপারেটিং সিস্টেমে তেমন একটা জোর না দিয়ে তাদের মোবাইল ডিভাইস নিয়ে বেশ পরিশ্রম করছে। এখন দেখা যাক কে কী ধরনের অপারেটিং সিস্টেম উপহার দিতে যাচ্ছে ২০১২ সালে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস