গ্লোবাল ডিজ্যাবিলিটি রাইটস লাইব্রেরি প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে স্থাপিত ডিজিটাল জ্ঞানদানে সহায়ক গ্রন্থাগার। খুব শিগগিরই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অ্যাডভোকেট, মানবাধিকার কর্মী এবং সবার জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে ‘গ্লোবাল ডিজ্যাবিলিটি রাইটস লাইব্রেরি’ সংক্ষেপে জিডিআরএল। ইতোমধ্যে এর আংশিক কার্যক্রম শুরু করেছে। আপনি এই জিডিআরএল ব্যবহার করতে পারবেন ইন্টারনেট থাকুক আর না-ই থাকুক। লাখ লাখ তথ্যের সমাবেশ ঘটছে এই লাইব্রেরিতে।
ইউনাইটেড স্টেট ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ডিজ্যাবিলিটি বা ইউএসআইসিডি কাজ করছে ইউনিভার্সিটি অব আইওওয়ার একটি যৌথ উদ্যোগ ওয়াইডারনেট প্রজেক্ট। এই প্রকল্পে সহায়তা জোগাচ্ছে ইউএসএআইডি। এর মধ্য দিয়ে হাজার হাজার বই, ওয়েব লিঙ্ক, অনলাইন রিসোর্স সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে অনলাইন এবং অফলাইনে।
এ প্রজেক্টটি ব্যবহার করছে ইনোভেটিভ অফলাইন ডিজিটাল ইনফরমেশন স্টোরেজ টেকনোলজি তথা ই-গ্রানারি। এই ই-গ্রানারি হলো একটি অফলাইন ব্যবস্থা, যার মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট না থাকলেও জিডিআরএলে সংরক্ষিত সব তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন। ই-গ্রানারিটি ওয়্যারলেস স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে মূল সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকে। মূলত স্বল্পোন্নত দেশগুলো যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার কম অথবা ধীরগতিসম্পন্ন সেবা রয়েছে সেখানে ই-গ্রানারি ব্যবহার হয়।
জিডিআরএল ইতোমধ্যে ৩৫০টি স্থানে ই-গ্রানারির মাধ্যমে লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করেছে। জিডিআরএল যে ২২টি দেশে কার্যক্রম শুরু করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অনলাইনে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে ভিজিট করতে পারেন www.gdrl.org সাইটে।
ইউএসআইসিডির প্রেসিডেন্ট মার্কা ব্রিসথ বলেন, জিডিআরএলের বড় শক্তি হচ্ছে প্রতিবন্ধী মানুষ, অ্যাডভোকেট, মানবাধিকার কর্মী যারা এর তথ্য ব্যবহার করবেন প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে।
২০১১-র শেষ দিকে বাংলাদেশে শুরু হবে ই-গ্রানারি কার্যক্রম। ২০১২-র মধ্যে প্রায় ৬০টি ই-গ্রানারি স্থাপন করা হবে। আশা করি প্রায় দশের অধিক বাংলাদেশে স্থাপন করা হবে। আর যেকোনো সময় যেকেউ লাইব্রেরি ভিজিট করতে পারবেন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
জিডিআরএলে এখন ইংরেজিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বই বা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বাংলা ভাষার কনটেন্ট যাতে পাওয়া যায় জিডিআরএলে তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনার কাছে যদি কোনো বাংলা কনটেন্ট থাকে তাহলে জিডিআরএলে দিতে পারেন। জিডিআরএলে এই মুহূর্তে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ সংক্রান্ত তথ্য, ইন্ডিপেনটেড লিভিং, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন, কর্মসংস্থান, পাবলিক পলিসি ইত্যাদিসহ আরও বিষয়বস্ত্তর তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে জিডিআরএলে।
জিডিআরএল পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা জিডিআরএল দানকারী তথ্য গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। জিডিআরএলের কর্মকর্তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন কিভাবে অফলাইন ও অনলাইনের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যায়। ওয়াইডারনেট প্রজেক্টের কর্মকর্তা ফ্রেন্কহলবেনটিং (ইশারাভাষী) এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে যাতে আরও বেশি তথ্য পৌঁছে দেয়া যায় এবং বাংলাদেশে বর্তমানে অফলাইন ও অনলাইনে পরিচালিত লাইব্রেরি কার্যক্রমের সাথে জিডিআরএলের সমন্বয় ঘটিয়ে আরও উত্তরোত্তর জিডিআরএলের কার্যত্রম সম্প্রসারণের আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
বাংলাদেশে ইয়ং পাওয়ার ইন স্যোসাল অ্যাকশন (ইপসা) জিডিআরএলের সদস্য সংগঠন হিসেবে নির্বাচিত হয়। ইপসার আইসিটি অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার অন ডিজ্যাবিলিটির (আইআরসিডি) প্রশিক্ষক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আমরা ই-গ্রানারি স্থাপন করতে সক্ষম হব এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জিডিআরএল কার্যক্রম তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন www.ypsa.org।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে জাতীয় ই-তথ্যকোষ (infokosh.bangladesh.gov.bd)। যেটি আসলে একটি অনলাইন লাইব্রেরি ব্যবস্থা। জিডিআরএল ও জাতীয় ই-তথ্যকোষের মধ্যে সমন্বয় করা যেতে পারে। জাতীয় তথ্যকোষে সংরক্ষিত তথ্য ই-গ্রানারি ব্যবহার করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি। আর একটি সম্ভাবনার দিক হলো বাংলাদেশে গড়ে ওঠা চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টারের মাধ্যমে জিডিআরএলের তথ্য সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারবে।
আপনি যদি জিডিআরএলের একজন ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে অথবা ইন্টার্নশিপ করতে চান তাও করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.usicd.org/index.cfm/global-disability-rights-library http://gdrl.org, http://www.usicd.org/index.cfm/gdrl-faq।
আপনি চাইলে আপনার সংগঠনের ওয়েবসাইট জিডিআরএলে দিতে পারেন। আপনি যদি মনে করেন কোনো অডিও কিংবা ভিডিও মানুষের কাজে লাগবে তাও আপনি জিডিআরএলে দিতে পারেন। জিডিআরএল বিশ্ব নাগরিকের একটি গ্রন্থাগার। চাইলে আপনিও তার অংশ হতে পারেন। আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন widernet.org/digitallibrary/ GDRLSiteSelection/।
লাইব্রেরি বলতে গতানুগতিক যে ধারণা আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে, তা বিশ্বব্যাপী পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির বদৌলতে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্লোবাল ডিজ্যাবিলিটি রাইটস লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হলো। এতে গতানুগতিক হরফে ছাপানো বইয়ের পাশাপাশি স্থান করে নিচ্ছে ডিজিটাল বই। যেমন- ই-টেক্সট, ডিজিটাল টকিং বুকস, বড় হরফে ছাপানো বই এবং ব্রেইল। আর এর মাধ্যমে গ্রন্থাগারগুলো হয়ে উঠছে সবার ব্যবহারোপযোগী। শিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর, প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রতিবন্ধী সবাই এই লাইব্রেরির সুবিধা পাবেন। গ্রামের কৃষক কিংবা দরিদ্র নারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা শিক্ষক সবার প্রয়োজন মেটাতে পারবে কল্পিত এই আগামী দিনের গ্রন্থাগার। আপনি ঘরে বসেই পড়তে পারবেন প্রিয় ম্যাগাজিন বা বই। আপনার ইন্টারনেট থাক বা না থাক, অনলাইন বা অফলাইনে যেকোনো তথ্য ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। পেনড্রাইভের মতো একটি ছোট ডিভাইস যার নাম মাইক্রো চিপস ই-গ্রানারি, যা আপনার কমপিউটারে ব্যবহারের মাধ্যমে লাখ লাখ পেজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। ধরা যাক, একটি বড় ভিডিও ফাইল ডাউনলোড করতে যেখানে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা, ই-গ্রানারি ব্যবহারের মাধ্যমে তা আপনি লোড করতে পারবেন দুই মিনিটে। আমাদের পাশের দেশ থাইল্যান্ডে কারাগারে কয়েদিরা বসে তৈরি করছে শত শত ডিজিটাল টকিং বই। আর এই বইগুলো চলে যাচ্ছে থাইল্যান্ডে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার বই নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি টেলিফোনিক টকিং গ্রন্থাগার। একটি ফোনকলের মধ্য দিয়ে যেকোনো ব্যক্তি তার পছন্দের বইটি শুনতে পাচ্ছে ঘরে বসেই। এখন থেকে সব বই পাওয়া যাবে জিডিআরএলের মাধ্যমে। বাংলাদেশে এ ধরনের একটি জিডিআরএলের কার্যক্রম আরও দ্রুতগতিতে এগোবে-এ অপেক্ষায় রইলাম। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৫০০-র বেশি ডেইজি টকিং বই তৈরি হয়েছে। বাংলা ভাষায় প্রণীত এসব বই স্থান পাবে গ্লোবাল ডিজ্যাবিলিটি রাইটস লাইব্রেরিতে। এতে করে যেকোনো বাঙালি যেকোনো স্থান থেকে এসব অডিও বই ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। আর দাপটের সাথে বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার সাথে জিডিআরএলে স্থান করে নেবে। আর এ জিডিআরএল সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য জানার জন্য ই-মেইল করুন vashkar79@hotmail.com-এ।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : vashkar79@hotmail.com