ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেমের জগতে শীর্ষে থাকা উবুন্টু ব্যবহারকারীদের মন জয় করে নিয়েছে এর সহজ অপারেটিং সুবিধা, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের কারণে। এসব ছাড়াও উবুন্টুর বিশেষ একটি সুবিধা হলো এর নিয়মিত আপডেট। শুরু থেকেই উবুন্টুর পেছনের কোম্পানি ক্যানোনিক্যাল প্রতি ছয় মাস পরপর মেজর ভার্সন রিলিজ করে আসছে, যার ফলে বিভিন্ন ড্রাইভারের সাপোর্ট সুবিধা, সফটওয়্যারের নতুন নতুন সংস্করণের পাশাপাশি আকর্ষণীয় ও সৃজনশীল বিভিন্ন সুবিধা উবুন্টুতে যোগ হচ্ছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। উবুন্টু ১১.০৪ বাজারে আসার ছয় মাস পর এই অক্টোবরের মাঝামাঝিই রিলিজ পাচ্ছে উবুন্টুর নতুন স্টেবল সংস্করণ ১১.১০। বরাবরের মতো এবারও নতুন এই সংস্করণে ব্যাপক ভিজ্যুয়াল পরিবর্তন এসেছে, যোগ হয়েছে নতুন নতুন সুবিধা। উবুন্টু ১১.১০-এর পরীক্ষামূলক সংস্করণ ঘেঁটে সেসব সুবিধা নিয়েই আজকের এই লেখা।
ইনস্টলেশন
যেসব ব্যবহারকারী অনেক আগে থেকে উবুন্টু ব্যবহার করে আসছেন, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন প্রতিটি মেজর রিলিজের সাথে সাথে উবুন্টু ইনস্টল করা আরো সহজতর হয়েছে। সেই ছোঁয়া আছে উবুন্টুর ১১.১০ সংস্করণেও। যারা আগে কোনোদিন অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করেননি বা অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা মহাঝামেলার কাজ বলে ধারণা করতেন, তারাও উবুন্টু ১১.১০ ইনস্টল করতে পারবেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই। এছাড়াও বাড়তি সুবিধা হিসেবে যোগ হয়েছে ইউজার ফটো, যার মাধ্যমে অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টলের সময়ই আপনার ছবি যোগ করে দিতে পারবেন। এটি হার্ডড্রাইভ থেকেও দিতে পারবেন অথবা ওয়েবক্যাম থেকে সরাসরি ছবি তুলে অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলে ছবি যোগ করতে পারবেন।
লগইন স্ক্রিন
এতদিন উবুন্টুতে যেই লগইন স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে তা জিডিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো লাইটডিএম নামের নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে লগইন স্ক্রিনকে দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন লুক। এককথায় তাকিয়ে থাকার মতো দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে নতুন এই লগইন স্ক্রিন।
অ্যাপ্লিকেশন
পরীক্ষামূলক সংস্করণে ১১.০৪-এর সফটওয়্যারগুলোর সর্বশেষ সংস্করণই জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্নোম ৩ (ডেস্কটপ ইন্টারফেস), ফায়ারফক্স ৭ (পরীক্ষামূলক সংস্করণ বা বেটা), লিবরে অফিস ৩.৪.২, শটওয়েল ফটো ম্যানেজার, গুইবার এবং সম্পূর্ণ নতুন উবুন্টু সফটওয়্যার সেন্টার।
উবুন্টু সফটওয়্যার সেন্টারের যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা পুরো ১১.১০-এ সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো। প্রথম দৃষ্টিতে একটু ঝামেলা মনে হলেও কিছুক্ষণ ব্যবহারের পরই এর আসল উপকারিতা বোঝা যায়। সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইন ও নতুনভাবে কাজ করা এই উবুন্টু সফটওয়্যার সেন্টার সবার ভালো লাগবেই।
দি ড্যাশ
উবুন্টুতে ড্যাশ যোগ করা হয় ১১.০৪ সংস্করণ থেকে। ড্যাশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেও ১১.১০-এ ড্যাশকে আরো উন্নীত করা হয়েছে। ড্যাশকে এখন আপনি রিসাইজ করতে পারবেন (মিনিমাইজ, ম্যাক্সিমাইজ)। এছাড়াও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সুন্দরভাবে সাজানো থাকায় সহজেই দ্রুত কোনো অ্যাপ্লিকেশন চালু করতে পারবেন, সার্চ করতে পারবেন অথবা প্রয়োজনে নতুন অ্যাপ্লিকেশন যোগ করে নিতে পারবেন।
লেন্স
বিশেষ ধরনের কোনো ফাইল খোঁজার জন্য লেন্স একটু তুলনামূলকভাবে দ্রুততর ও সুবিধাজনক উপায়, যা উবুন্টু ১১.১০-এ যোগ করা হয়েছে। এখান থেকে সার্চ করার পাশাপাশি ফাইলের ধরন, বিভাগ, স্টার রেটিং, তৈরির তারিখ কিংবা ফাইল সাইজের ওপর ভিত্তি করে ফাইল খুঁজতে পারবেন। এছাড়াও যাদের বিশাল মিউজিকের কালেকশন রয়েছে তারাও লেন্স থেকে উপকৃত হবেন। কেননা শুধু মিউজিক খোঁজার জন্য রয়েছে আলাদা লেন্স, যা ব্যবহার করে আপনি মিউজিক সার্চ করতে পারবেন।
স্টার রেটিং ফিল্টার
উবুন্টু সফটওয়্যার সেন্টারে থাকা অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্টার রেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে সার্চ করার সুবিধা যোগ হয়েছে লেন্সে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের দেয়া স্টার রেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে আপনি খুঁজে নিতে পারবেন পছন্দের অ্যাপ্লিকেশনটি। প্রায় সব ধরনের উইন্ডোজ সফটওয়্যারেরই লিনআক্স বিকল্প সফটওয়্যার রয়েছে। কিন্তু সাধারণত দেখা যায় উবুন্টু সফটওয়্যার সেন্টারে অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশন থাকায় প্রায়ই ব্যবহারকারীরা ভালো একটি অ্যাপ্লিকেশন খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন। এর ফলে ভালো ভালো ধরনের অ্যাপ্লিকেশন উবুন্টুর জন্য থাকা সত্ত্বেও অনেকেই সে সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যান। এক্ষেত্রে স্টার রেটিং ফিল্টার বেশ কাজে আসবে বলে মত দিয়েছেন উবুন্টু ডেভেলপারেরা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞই মন্তব্য করেছেন উবুন্টু সফটওয়্যার সেন্টারে থাকা অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ঠিকমতো স্টার রেটিংই করা হয়নি, তাই স্টার রেটিং ফিল্টার কতটা কাজে আসবে সে নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। যেহেতু এখন সুবিধা এসে পড়েছে, তাই আশা করা যায় শিগগিরই ভালো অ্যাপ্লিকেশনগুলো বেশি স্টার রেটিং পাবে, যার ফলে ব্যবহারকারীরাও সহজেই তুলনামূলক ভালো অ্যাপ্লিকেশনগুলো খুঁজে পাবেন।
উইন্ডো কন্ট্রোল
উবুন্টু ১১.১০-এর সবচেয়ে সমালোচিত ফিচার হচ্ছে উইন্ডো কন্ট্রোলের গায়েব হয়ে যাওয়া। যেকোনো উইন্ডোতে থাকার সময় ওপরের গ্লোবাল মেনুতে লক্ষ করলে দেখবেন ফাইল, এডিট ইত্যাদির বাম পাশে ক্লোজ, মিনিমাইজ এবং ম্যাক্সিমাইজ বাটনগুলো উধাও হয়ে গেছে। যদিও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ মাউস পয়েন্টার গ্লোবাল মেনুতে নিলেই বাটনগুলো দৃশ্যমান হয়ে যাবে, তবুও অনেকেই বলছেন এটি দেখতে বেশ উদ্ভটই লাগে।
ব্যাটারি টাইম
ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় ব্যাটারি ব্যাকআপ আর কতক্ষণ থাকবে, তা দেখতে হলে সাধারণত ব্যাটারি আইকনে ক্লিক করতে হয়। কিন্তু নতুন উবুন্টুতে ইচ্ছে করলেই ‘শো টাইম ইন মেনুবার’ সিলেক্ট করে দিয়ে ক্লিক করা ছাড়াই অবশিষ্ট সময় দেখা যাবে, যা অনেকের জন্যই সুবিধাজনক হবে।
মেসেজিং মেনু
উবুন্টুর সঙ্গে থাকা গুইবার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে টুইটার বা ফেসবুকের সাথে যুক্ত থাকা যায়। টুইটারে কেউ রিপ্লাই দিলে বা মেসেজ পাঠালে সাধারণত এটি মেনুবারের মেসেজ আইকনের নিচে যোগ হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সংশ্লিষ্ট মেসেজটি দেখছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি সেখানেই থাকবে। এই মেনুতে নতুন যোগ করা হয়েছে একটি ‘ক্লিয়ার’ অপশন। এর মাধ্যমে একাধিক মেসেজ ওপেন না করেও মেসেজিং মেনু থেকে মুছে দিতে পারবেন। এই আপডেটটি উবুন্টু ব্যবহারকারীদের কাছে বেশ সাড়া পেয়েছে বলে বিভিন্ন সাইট থেকে জানা গেছে।
উল্লিখিত সুবিধাগুলো উবুন্টু ১১.১০-এর পরীক্ষামূলক সংস্করণ (বেটা ১) থেকে নেয়া। সাধারণত পরীক্ষামূলক সংস্করণে সব সুবিধা মোটামুটিভাবে দেয়া থাকে। মূল মেজর সংস্করণে এগুলোকে পলিশ করে দেয়া হয়। এছাড়াও সর্বশেষ সংস্করণে কিছুটা পরিবর্তন আসতেও পারে। আসলেই কী কী সুবিধা থাকছে তা জানা যাবে এই অক্টোবরেই, যখন মুক্তি দেয়া হবে উবুন্টু ১১.১০।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : sajib@aisjournal.com