লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
মন্ত্রনালয়ের রদবদল
অতি সম্প্রতি সরকার রেলওয়ে বিভাগকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে নতুন রেলওয়ে মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। একই সাথে ‘বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়’ ভেঙে দুইটি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। একটি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। অপরটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে গত ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬-এর রুল ৩-এর চতুর্থ ধারারক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী এই নতুন মন্ত্রণালয় গঠন করলেন।
মন্ত্রণালয় বিভাজন ও মন্ত্রিপরিষদে রদবদল নিয়ে সরকারের ভেতরে চলে নানা নাটকীয়তা। প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, এ প্রক্রিয়ার অধীনে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন এতদিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে নবগঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয়ে এবং সবশেষে নবগঠিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রধান ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কমিশন ও সুবিধা আদায় এবং জালিয়াতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুতে অর্থ বরাদ্দ স্থগিত করে দেয়। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের সাথে একমত পোষণ করে অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থা এডিবি, জাইকা ও আইডিবি তাদের ঋণ বরাদ্দ স্থগিত করে দেয়। এ সময় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসনকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, সরকার পক্ষের ও বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, নারী সমাজ, ছাত্র ও সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে দাবি জানায়। তাছাড়া গত ঈদ-উল-আজহার সময় সারা দেশের প্রায় সব সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাস-ট্রাক মালিকেরা বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করলে সর্বস্তরের মানুষও তার পদত্যাগ দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে সরকার এক ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। কিন্তু তার পদত্যাগের প্রবল দাবির মুখেও তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং নিজেকে সফল মন্ত্রী হিসেবে দাবি করতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও অদৃশ্য কারণে মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বাদ দেননি। সাম্প্রতিক মন্ত্রণালয়ের রদবদল ও নতুন মন্ত্রী নিয়োগের প্রেক্ষাপটে জনমনে ধারণা জন্মে এবার তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু তা হলো না। তিনি নতুন করে দায়িত্ব পেলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। বিষয়টি অনেককে বিস্মিত করেছে। কারণ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে তার লেখাপড়া ও কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমনটি আমাদের জানা নেই। শুধু সরকারি দলের রাজনৈতিক সমীকরণ সূত্রে এ ধরনের মন্ত্রী নিয়োগ কোনো সুফল বয়ে আনবে, এমনটি মনে করছেন না অনেকেই।
এদিকে সৈয়দ আবুল হোসেনের অধীনে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে অর্থাৎ বিটিআরসিকে আনার চিন্তাভাবনা করছে, এই মর্মে জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশে অনেকেই উদ্বিগ্ন। দুর্নীতির অভিযোগে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে আনা হলেও এখন আবার তার অধীনে যাচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই কমিশন। উল্লেখ্য, এ সংস্থার আওতায় রয়েছে দেশের সব মুঠোফোন কোম্পানিসহ টেলিযোগাযোগসংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রতিষ্ঠান। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব এ খাত থেকে সরকার পায়। এবং এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হয়। নবগঠিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে আবুল হোসেনকে দায়িত্ব দেয়ার পর বিটিআরসিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাবার্তা শুরু হয়। তবে এমনটি করা হলে এর প্রভাব ইতিবাচক হবে না বলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আখতারুজ্জামান বলেছেন, বিটিআরসি টেলিযোগাযোগের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এখন টেলিযোগাযোগ ও বিটিআরসিকে যদি আলাদা করা হয়, তবে বিষয়টি হবে হৃৎপিন্ড ছাড়া মানুষ, যার কোনো মূল্য নেই। তিনি বিটিআরসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার যথার্থ দাবি জানান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ টেলিযোগাযোগ খাতের অমঙ্গলই ডেকে আনবে।
সরকার কোন বিবেচনায় সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে আনল এবং কেনো আবার বিটিআরসিকে তার অধীনে আনার চিন্তাভাবনা করছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। যদিও বাজারে এরই মধ্যে এ নিয়ে নানাধর্মী ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায় কথা চালু হয়ে গেছে। তবে আমরা মনে করি, সরকারের এ পদক্ষেপ সুবিবেচনাপ্রসূত নয় এবং তা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে কোনো উপকার বয়ে আনবে না। বরং ঘটবে উল্টোটাই।
কজ ওয়েব