• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১০ একগুচ্ছ নতুন সম্ভাবনা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মানিক মাহমুদ
মোট লেখা:২৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মেলা
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১০ একগুচ্ছ নতুন সম্ভাবনা



দেশে প্রথমবারের মতো ৪-৬ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে অনুষ্ঠিত হলো ‘ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১০’। শুধু মেলা বললে বোধকরি খাটো করা হয় এ উদ্যোগকে। এ যেন হয়ে উঠেছিল এক উৎসব। এ উৎসবে মেতে উঠেছিল লক্ষাধিক মানুষ আর সরকারি-বেসরকারি শতাধিক প্রতিষ্ঠান। উৎসবের আয়োজন করে ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম আর বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নভোথিয়াটার

কেনো এ মেলা?

আমরা জানি, ডিজিটালপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান উন্নত করা যায়, স্বচ্ছতা আনা যায়, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়, দ্রুততার সাথে সেবা দেয়া যায় এবং নতুন নতুন সেবা উদ্ভাবন করে জনসাধারণের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় এনে দ্রুততার সাথে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করা যায়। এদিক থেকে বলা যায়, মেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সরকারিভাবে যেসব সেবা দেয়া হয়, সেসব সেবা প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসাধারণকে সেবা গ্রহণে আগ্রহী করে তোলা এবং সেবা গ্রহণপদ্ধতি সম্পর্কে তাদের জানানো এবং মেলার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো। এর মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে জনগণ আগ্রহী হয়। আশা করা যায়, এর ফলে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়ে চিন্তা-চেতনার নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে। আরো লক্ষ্য ছিল সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেসব সেবা উদ্ভাবন করে সেসব সেবাকেও এ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করা। এ মেলা আয়োজনের আরেক লক্ষ্য সেবাগ্রহীতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সেবার মান সম্পর্কে সেবাগ্রহীতাদের পরামর্শ নেয়া। একমাত্র সেবাগ্রহীতা জনসাধারণই বলতে পারেন সেবার মান কেমন, তা কতখানি গুণগতসম্পন্ন এবং এর কতটুকু মানোন্নয়ন করা দরকার। শুধু তাই নয়, সেবা যোগান প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ, গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কোথায় কী পরিবর্তন করা দরকার, তা নিয়েও ভাবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই মেলাসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও নীতি-নির্ধারকদের।

প্রধানমন্ত্রী বললেন

মেলার উদেবাধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদেবাধনী অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী নীতি-নির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, দেশের শতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ, ঘরে বসে রেলের টিকেট কেনা, গ্রামে বসে উপজেলার ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়া, মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার মানোন্নয়ন, ইন্টারনেট থেকে ইউনিয়ন পরিষদে জীবন ও জীবিকাভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসেবা ইত্যাদি নানা ধরনের উদ্ভাবন স্থান পাচ্ছে এই মেলায়। সেবামূলক কর্মকান্ডে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে এ ধরনের মেলার আয়োজন আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করবে। নির্বাচনের আগে আমরা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্যই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দিন বদলের হাতিয়ার হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি তথ্যপ্রযুক্তিকে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা প্রশাসনের সব স্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের সরকার জনগণের সরকার। সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা যেকোনো মূল্যে এ লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পটির চারটি উপাদানকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এগুলো হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন, সরকারের কর্মকান্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করা, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। এই চারটি উপাদানের যোগসূত্র হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের কাছে সেবা নিয়ে যাওয়া আমাদের অঙ্গীকার। আর সেজন্য সরকারের প্রশাসন ও সেবাখাতে যারা কাজ করছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। উদ্ভাবন করতে হবে কিভাবে, কোন পথে আমাদের ১৫ কোটি মানুষের সেবা নিশ্চিত করা যায়। আমরা চাই জনগণ সেবার জন্য প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরবে না বরং সেবাই জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই বাংলাদেশ হবে সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক বাংলাদেশ; যেখানে থাকবে না ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অশিক্ষার অন্ধকার।’

ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা : কতখানি জরুরি ছিল?

খুবই জরুরি ছিল এমন একটি উদ্যোগের। কেননা, বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছে- যার মূল বক্তব্য হলো দেশের সার্বিক অবস্থার গুণগত পরিবর্তন ঘটানো। এই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হলে পরিবর্তন ঘটতে হবে সংশ্লিষ্ট সবার মানসিকতায়, নীতিতে, সেবায় এবং প্রশাসনে। এজন্য বিদ্যমান সেবা যোগান প্রক্রিয়াকে বিশ্বায়ন উপযোগী ‘গতিশীল’ করে তোলা দরকার। সে কারণেই রূপকল্পে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যাপক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি, সরকারের বিভিন্ন দফতর ইতোমধ্যে বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরকারের এসব মন্ত্রণালয় যেসব ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্য দিয়ে ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ যতখানি নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তা সব সামনে তুলে ধরার এবং পর্যালোচনা করার একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করে এ মেলা। মেলা আয়োজনের এটি একটি অন্যতম প্রাসঙ্গিক দিক।

ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু একটি প্রযুক্তি রূপকল্প নয়, এটি একটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রূপকল্প। সে অর্থে এটি একটি প্রক্রিয়া। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হতে থাকবে- উন্নত প্রযুক্তি এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি, স্থিতিশীল দ্রব্যমূল্য, সবার জন্য শিক্ষা, সবার জন্য স্বাস্থ্য, মানুষের সৃজনশীলতা এবং সক্ষমতার বিকাশ, সামাজিক ন্যায়বিচার, অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই সক্ষমতা কতখানি তৈরি হচ্ছে এবং এর মধ্য দিয়ে ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন ঘটানোর কোন পর্যায়ে আমরা আছি, তা মূল্যায়ন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মেলা আয়োজনে এটি আরেকটি জরুরি দিক।

সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে আগেই

ইতোমধ্যেই দেশে অনেকখানি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে সরকারি-বেসরকারি একাধিক স্তরে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে আইসিটি টাস্কফোর্স। এতে সরকারি নেতৃত্বের পাশাপাশি দেশবরেণ্য বিশেষজ্ঞরাও যুক্ত রয়েছেন। বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী নেতারাও রয়েছেন। সম্প্রতি আইসিটি নীতিমালা ২০০৯ পাস হয়েছে। এতে ৩০৬টি সুস্পষ্ট কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। দেশবরেণ্য বিশেষজ্ঞদের মিলিত প্রচেষ্টায় এসব কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে একটি করে মোট ৫৩টি দ্রুত ফলদায়ক উদ্যোগ চিহ্নিত করেন। এর মূল উদ্দেশ্য তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এ সেবা যোগান প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও ত্বরান্বিত করা। মেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্টলে এসব দ্রুত ফলদায়ক উদ্যোগের প্রতিফলন দেখা যাবে। দ্রুত ফলদায়ক এসব উদ্যোগ যাতে কার্যকর ও গতিশীল থাকে, সেজন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সৃষ্টি করা হয়েছে ই-গভ : ফোকাল পয়েন্ট। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনেও ই-নেতৃত্ব সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা তৈরির জন্য আয়োজন করা হয়েছে ‘ই-গভর্নেন্স/ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক একধিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা’। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের উদ্যোগে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি চালু করার জন্য একটি ‘ভিশন’ তৈরি করা হয়েছে। এখন চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কৌশলপত্র তৈরির কাজ। এর খসড়া তৈরি করেছে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিজ নিজ উদ্যোগে এ খসড়ায় তাদের অধ্যায়সমূহ চূড়ান্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম এ প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করছে।


কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্টলে ‍উৎসুক দর্শকের ভিড়

উল্লিখিত এসব উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এ প্রভাব বোঝা যায় পরিবর্তিত মানসিকতায়, চিন্তায় এবং যুক্তিতর্কে। এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু তাৎপর্যপূর্ণ উপলব্ধি তুলে ধরা যায়। ক্রমশই এটি নীতি-নির্ধারকদের চিন্তায় আসছে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে, সবচেয়ে বড় কথা সেবাদান প্রক্রিয়ায় আনতে হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এর কোনো বিকল্প নেই। এর একটি হলো, ‘সেবা মানুষের কাছে যাবে, মানুষ সেবার কাছে যাবে না।’ প্রচলিত ধারণা হলো- সেবা নির্দিষ্ট এক জায়গায় থাকবে, মানুষ সেখানে যাবে একাধিক স্তর অতিক্রম করে। এই স্তরসমূহ অতিক্রম করা সহজ নয়, সেখানে রয়েছে অস্বচ্ছতা, প্রতারণা, হয়রানি সর্বোপরি সম্ভাবনা রয়েছে অসম্পূর্ণ সেবা পাবার। তথ্যপ্রযুক্তি এই প্রচলিত প্রক্রিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিতে পারে। সেবা পাবার জন্য মানুষের অনেক ধাপ অতিক্রম করার পরিবর্তে একবারে তা পাবার সুযোগ করে দিতে পারে। এজন্য আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তা হলো, আইসিটি বলতে শুধু কমপিউটার আর ইন্টারনেটকে বুঝায় না। ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে ‘আইসিটি অর্থ কমপিউটার আর ইন্টারনেট বাক্স’- এই ধারণার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর জন্য শুধু কমপিউটার-ইন্টারনেট একমাত্র উপাদান নয়। হালআমলে মোবাইল হলো সেবা যোগানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর বাইরে রয়েছে রেডিও, টেলিভিশনের মতো অনেক সহজলভ্য প্রযুক্তি মাধ্যম। এটা স্পষ্ট, পর্যাপ্ত সেবা তৈরি করা হলেও, সেবা যোগানোর জন্য যে তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যম তা যদি সহজলভ্য না হয়, তবে সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে না। আর একটি উপলব্ধি হলো, ই-নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সেবা যোগান প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তি মাত্র ২০ শতাংশ অবদান রাখতে সক্ষম। ৪০ শতাংশ অবদান রাখে সেবা যোগান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াকে রি-ইঞ্জিনিয়ারিং করতে হবে। আর ৪০ শতাংশ অবদান আসে চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট থেকে- যেখানে মানুষই মুখ্য। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এসব পরিবর্তন এবং উপলব্ধির কথা নীতি-নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরাই বলছেন বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী ফোরাম এবং কৌশল প্রণয়ন ফোরামে।


বাংলাদেশ ব্যাংক স্টলে ‍উৎসুক দর্শকদের ভিড়

মেলায় যারা অংশ নেয়

মেলায় অংশ নেয় বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি সংস্থা। মেলায় মোট অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১২৭টি। এর মধ্যে সরকারের প্রতিনিধিত্ব ছিল ১১২টি স্টলে (১০৯টি স্টলের মধ্যে) এবং বেসরকারি প্রতিনিধিত্ব ছিল ১৫টি স্টলে (১০টি ই-মিডিয়াসহ)।

উল্লেখযোগ্য সরকারি ডিজিটাল উদ্যোগ

মেলায় অংশ নেয়া সরকারি বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগের বেশিরভাগই ওয়েবসাইটভিত্তিক। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকেউ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে এখন ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পাচ্ছেন। তবে সংখ্যায় কম হলেও একাধিক মন্ত্রণালয় আইসিটি ব্যবহার করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে শুরু করেছে। কয়েকটির উদাহরণ এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।


কমপিউটার বিজ্ঞানী ও ‍আইসিটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় মেলার বিভিন্ন সেবা ঘুরে দেখছেন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় :
শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইসিটিকে ব্যবহার করে একাধিক সেবা নিশ্চিত করছে। www.moedu.gov.bd এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন-বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্যতালিকা, বিদেশে বৃত্তিসংক্রান্ত তথ্য, বিভিন্ন প্রেস বিজ্ঞপ্তি, দাফতরিক প্রজ্ঞাপন ইত্যাদি তথ্য জানা যায়। শিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নের বিশেষ করে ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের উন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রেণীকক্ষে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি যেমন এমপিথ্রি প্লেয়ার, স্মার্ট ফোন ও ল্যাপটপের মাধ্যমে শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে সহায়তা পাওয়া যায়।
www.educationboard.gov.bd এবং www.educationboardresults.gov.bd উভয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন স্ট্যাটাস দেখা, সেন্টার খুঁজে পাওয়া এবং আইডি নাম্বার দিয়ে পরীক্ষার ফল দেখতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সহায়তা দেয়া হয়। দূতাবাস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ছাত্রদের শিক্ষাসনদ পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া, জরুরি ফরম ডাউনলোডের সুবিধা, ওয়েবের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, ই-মেইল ও এসএমএসের মাধ্যমে জাতীয় পরীক্ষাসমূহের ফল জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ওয়েবসাইটের (www. nctb.gov.bd) মাধ্যমে বিভিন্ন নোটিস, প্রতিবেদন, পাঠ্যক্রম ইত্যাদির পাশাপাশি সরাসরি ডাউনলোড করার জন্য ডিজিটাল পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা যাতে প্রাথমিক/মাধ্যমিক সমাপনী ও বৃত্তি পরীক্ষার ফল সহজেই পেতে পারে সেজন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করার ব্যবস্থা করেছে।



শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আধুনিকায়ন হয়েছে। সেখানে এখন এসএমএসের মাধ্যমে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ক্রমিক নম্বর দিয়ে সহজে, দ্রুত ও কম খরচে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার নিবন্ধন করা যায়। কমপিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রক্রিয়াজাত করার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে, যাতে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষার ফল বের করা যায়। এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রচার করা হয় যাতে প্রার্থীরা ঘরে বসেই পরীক্ষার ফল জানতে পারেন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখাদেখি এখন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

কৃষি মন্ত্রণালয় :
কৃষি মন্ত্রণালয়ের রয়েছে ১৬টি ডিজিটাল উদ্যোগ। এর মধ্যে এআইএসের দু’টি উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা সরাসরি জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এর একটি ‘কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র’ তথা এআইসিসি, যার মাধ্যমে কৃষক কৃষিবিষয়ক যেকোনো তথ্য সহজে পেতে পারেন। উপরন্তু এআইসিসি থেকে কৃষকেরা ইন্টারনেটসহ অন্যান্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যটি এসএমএসের মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে কৃষকদের মাঝে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রচার করার উদ্যোগ, যাতে কৃষক তৎক্ষণিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেতে পারেন।

মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় : মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় তিনটি ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর উদ্যোগ হলো ‘ফিশারিজ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার’ তথা এফআইসিসি। এর মাধ্যমে মাছ চাষীরা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে সরাসরি মাছ চাষ ও চাষ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক তথ্য জানতে পারেন। টেলিকনফারেন্স ও ভিডিওকনফারেন্স ব্যবহার করে মাছ চাষী, মাছ চাষ বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঝে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। আধুনিক অনলাইন ও অফলাইন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুর আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য উপস্থাপনার মাধ্যমে মৎস্য চাষীদের দক্ষতা উন্নয়ন সহজতর ও অধিকতর কার্যকর করা এবং সেই সাথে দুর্যোগপরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম তদারকি করা যায়। প্রাণিসম্পদ সেবা বিভাগ ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় প্রাণিস্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বিষয়ে তথ্য দ্রুত পাঠাতে পারেন সেজন্য স্থাপিত এসএমএস গেটওয়ে যা এসএমএসের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। হাঁস/মুরগির অসুস্থতার তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। যা কোনো মড়ক সংক্রান্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয় এসএমএসের মাধ্যমে সব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানো যায় এ ব্যবস্থায়।

শিল্প মন্ত্রণালয় :
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি ডিজিটাল উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো সংক্রান্ত উদ্যোগ হলো ‘ইলেক্ট্রনিক পূর্জি তথ্যসেবা ব্যবস্থাপনা’। এতে এসএমএসের মাধ্যমে মিল সংশ্লিষ্ট সব আখচাষী মোবাইল ফোনে জানতে পারেন, কবে তার আখ মিল কিনবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ :
স্থানীয় সরকার বিভাগের রয়েছে চারটি ডিজিটাল উদ্যোগ। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক হেল্পডেস্কের মাধ্যমে মানুষ টেলিফোনে সর্বক্ষণিক বিভিন্ন সেবা, কর, ফি, সেবা পাবার পদ্ধতি, জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধন ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেন। ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিল সম্পর্কিত তথ্য জানা ও বিল ডাউনলোড করা যায়। ইপ্সিত ই-মেইল ঠিকানায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল পাঠানোর ব্যবস্থাও করা যায়। মোবাইল ফোন সেন্টার অথবা এসএমএসের মাধ্যমে পানির বিল পরিশোধ করা, হিসাবের স্থিতি জানা যায়। ইলেকট্রনিকভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পদ্ধতি সম্পন্ন করে দ্রুত ছাড়পত্র দেয়া যায়। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ডিজিটাল উদ্যোগ হলো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র’ স্থাপন করা। এর লক্ষ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা পৌঁছানো। বর্তমানে এর সংখ্যা ১০২। স্থানীয় সরকার বিভাগ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১০০০ ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র’ থেকে সাধারণ মানুষ এখন দ্রুত, জটিলতা ও হয়রানি ছাড়াই জীবিকাভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য যেমন কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন, মানবাধিকার, কর্মসংস্থান, বাজার প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য পাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ এসব তথ্য পাবার পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য, আইন বিষয়ে সামনাসামনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পাচ্ছেন। এই পরামর্শ এরা মোবাইলের মাধ্যমে অন্য এলাকার বিশেষজ্ঞের কাছেও নিতে পাচ্ছেন। এই প্রান্তিক সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ দৈনন্দিন জীবন ও ভাবনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
http://www.dmic.org.bd এই ওয়েবসাইটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল উদ্যোগ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এই তথ্যবাতায়ন ব্যবহার করে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারেন। এই তথ্যবাতায়নটি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত পূর্বাভাস, দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ, দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর কার্যক্রম সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব আগ্রহী সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের জন্য একটি প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। http://www.cdmp.org.bd/csdb/ এই ওয়েবসাইট থেকে সাইক্লোন শেল্টার ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতির (CYSMIS) মাধ্যমে জনগণ সব সাইক্লোন শেল্টারের তথ্য সহজেই জানতে পারে। মোবাইল ফোন সম্প্রচার পদ্ধতি ব্যবহার করে বন্যাপ্রবণ সিরাজগঞ্জ ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ কক্সবাজার জেলায় সরাসরি পূর্বাভাস বার্তা পাঠানো, যাতে জনগণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বার্তা পাঠাতে পারেন।



স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই www.dghs.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগের ঠিকানাসহ ৪৮২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রয়োজনীয় তথ্য ও বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়। বারোয়ারি এসএমএসের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি স্বাস্থ্য তথ্য বিতরণ এবং কম খরচে জনগণের মাঝে টেলিমেডিসিন সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মোবাইলভিত্তিক সেবা প্রচলন করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেখা অক্ষর থেকে বর্ণ ও‘পড়ে’ নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি নাগরিক স্বাস্থ্যকার্ড তৈরি করা হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় :
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় পাঁচটি ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েবসাইটের (www.ecs.gov.bd) মাধ্যমে জনগণ নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সহজে পেতে পারেন; যেমন-৩৫২১৭টি কেন্দ্রের হালনাগাদ ফল, প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের খরচের পরিমাণ ও প্রবণতা ইত্যাদি। নির্বাচনে প্রার্থীদের যেসব তথ্য আইন অনুযায়ী প্রকাশ করতে হয়, সেগুলো মানুষ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানতে পারেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ সহজে নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত ভোটার পরিচয়পত্র বিষয়ে তথ্য জানতে পারেন এবং এর যথার্থতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে তা পরিবর্তন বা পরিমার্জনের জন্য অনুরোধ করা যায়। ইন্টারনেট এবং এসএমএসের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা আছে- যাতে ভোটার সহজে এবং ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন দলের বুথের ওপর নির্ভর না করেই ভোট দিতে পারেন। উল্লেখ্য, এতে করে ভোটকেন্দ্রে নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখা সহজ হয় ও কোনো ধরনের উস্কানি বা প্রতারণার সুযোগ কমে আসে। ইলেকট্রনিক ভোট মেশিনের সাহায্যে জনগণ সহজে ও কম সময়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন ও সহজে ভোটের নির্ভুল ফল জানা যাবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় :
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের রয়েছে ছয়টি ডিজিটাল উদ্যোগ। এর মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ওয়েবসাইট (www.bangladeshtourism. gov.bd)-এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে অনলাইন হোটেল, মোটেল, পর্যটন প্যাকেজ, গাড়ি বুকিং দেয়া সম্ভব এবং ভ্রমণসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে জানা যায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের (www.biman-airlines.com) ওয়েবসাইট থেকে বিমানের সময়সূচি, বিমানের ধরন, যাত্রাপথ ইত্যাদি জানা সম্ভব।

বাংলাদেশ রেলওয়ে :
বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েবসাইটের (www.railway.gov.bd) মাধ্যমে ট্রেনের সময়সূচী জানা, যেকোনো পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং ভাড়া সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ফিরতি টিকেট কেনার সুবিধা চালু হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বর্তমানে যাত্রীরা কোনো নির্দিষ্ট দিনের ট্রেনের টিকেট আছে কি না তা জানতে পারেন। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ স্মার্ট কার্ডের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে পারাপারকারীরা খুব কম সময়ে টোল পরিশোধ করে পারাপার করতে পারছেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় :
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এসএমএসের মাধ্যমে টেলিফোনের বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি এখন এসএমএসের মাধ্যমে মানিঅর্ডার সেবাও পাওয়া যায়।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি :
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অথবা গ্রাহকের নিকটস্থ ফোন সেন্টারের মাধ্যমে তিতাস গ্যাসের বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেছে। বিল পরিশোধের জন্য এসএমএস সতর্ক বার্তা ও বিল পরিশোধের পর নিশ্চিতকরণ বার্তা পাবার ব্যবস্থাও রয়েছে। অনুমোদিত বিক্রয় কেন্দ্র থেকে প্রি-পেইড কার্ড/স্মার্ট কার্ড চার্জ করে সহজেই বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা যায়। এই ব্যবস্থায় বিল পরিশোধে গ্রাহক অনেকখানি ঝামেলামুক্ত হয়েছেন। একইসাথে এতে গ্যাস ব্যবহারের সাশ্রয় ঘটেছে এবং আগাম বিক্রয় ও বিল পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য স্বয়ংক্রিয় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার ব্যবস্থা থাকায় আর্থিক ও বিক্রয় ব্যবস্থাপনার মান উন্নত হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ অধিদফতর :
বিদেশে চাকরি সম্পর্কিত তথ্য ওয়েবসাইটের (www.bmet.org.bd) মাধ্যমে পাবার ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সব তথ্য এখন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। স্মার্ট কার্ডের সাহায্যে প্রবাসী কর্মীদের ছাড়পত্র দেয়া ও প্রবাসে থাকার সময় অন্যান্য সেবা যোগান সহজতর করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে সহজে ও নির্ভরযোগ্যভাবে অনলাইনে ভিসা ও ছাড়পত্রের যথার্থতা যাচাই ও বিদেশ যাওয়া সহজতর হয়েছে।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় :
এ মন্ত্রণালয় ওয়েবভিত্তিক (www.hajj.gov.bd) হজ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির লাগসই ব্যবহারের মাধ্যমে হজ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়েছে। তাছাড়া ইচ্ছুক হাজীদের প্রয়োজনীয় সেবা যেমন- অনুমোদন, ভ্রমণ পরিকল্পনা প্রণয়ন, হজ কার্ড দেখা ইত্যাদি সহজ হয়েছে। ভূমি জরিপ পরিদফতর ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রতারণামুক্ত ও নির্ভুল পদ্ধতিতে দ্রুততম সময়ে ভূমির দলিল হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করেছে। এতে ভূমির অবৈধ দখল প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। সঠিক ও নির্ভুল মানচিত্র সরবরাহ করে জমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় :
মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটের (www.molwa.gov.bd) মাধ্যমে নাগরিক সনদ, প্রয়োজনীয় ফরম, তথ্যের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের নামের হালনাগাদ তালিকা পাবার ব্যবস্থা করেছে, যাতে করে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের অগ্রাধিকার দেয়া যায়।

ডিজিটাল উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য পুরস্কার

একটি ছয় সদস্যবিশিষ্ট জুরি কমিটির নেতৃত্বে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী উদ্যোগসমূহকে পুরস্কৃত করা হয়। কমিটির সম্মানিত সদস্যরা ছিলেন : ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (সভাপতি); সুনীল কান্তি বোস, সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় (সদস্য); আব্দুর রব হাওলাদার, ভারপ্রাপ্ত সচিব, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (সদস্য); অধ্যাপক এসএম লুৎফুল কবীর, পরিচালক, আইআইসিটি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা (সদস্য); রবার্ট জুকহাম, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউএনডিপি, বাংলাদেশ (সদস্য) এবং ড. খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সদস্য সচিব)।

জুরি কমিটি অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা করে মোট চার ক্যাটাগরিতে ডিজিটাল উদ্ভাবনী উদ্যোগকে পুরস্কৃত করার প্রস্তাব করে। ক্যাটাগরি চারটি হলো : ০১. ডিজিটাল উদ্যোগটি সেবা দানের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে সর্বাধিক অবদান রেখেছে; ০২. ডিজিটাল উদ্যোগটি সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে তোলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে; ০৩. ডিজিটাল উদ্যোগটি সরকারের সবচেয়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং ০৪. ডিজিটাল উদ্যোগটি বেসরকারি খাতে সবচেয়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। জুরি কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় ক্যাটাগরি ১ ও ২ জুরি কমিটি দিয়ে নির্বাচিত হবে এবং ক্যাটাগরি ৩ ও ৪ নির্বাচিত হবে দর্শনার্থীদের ভোটে। এজন্য মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীরা যাতে করে ডিজিটাল ভোটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হয়। জুরি কমিটি ক্যাটাগরি ১ ও ২-এর জন্য ‘দক্ষতা উন্নয়নে ই-সরকার’ ও ‘মানব উন্নয়নে ই-সেবা’ শিরোনামে একটি করে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও দুইটি করে বিশেষ সম্মাননা মোট তিনটি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জুরি কমিটি ডিজিটাল উদ্ভাবনী উদ্যোগ মূল্যায়ন করার জন্য একগুচ্ছ বিবেচ্য স্থির করে। এসব বিবেচ্য স্থির করা হয় ক্যাটাগরি ১ ও ২-এর জন্য। ক্যাটাগরি ১-এর জন্য মানদন্ড ছিল- ০১. ডিজিটাল সেবাটি কি ‘গতানুগতিক ধাঁচেরই’ ছিল? ০২. কতজন মানুষ বর্তমানে ডিজিটাল সেবাটি ব্যবহার করছেন? ০৩. কতজন মানুষ এই সেবাটি ব্যবহার করতেন, যদি তারা জানতেন যে এটি একটি নতুন সেবা? ০৪. ডিজিটাল সেবাটি সেবাদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি কমাতে ভূমিকা রেখেছে? ০৫. কত দ্রুত উদ্যোগটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যাবে? ০৬. উদ্যোগটি সারাদেশে ছড়িয়ে গেলে সর্বাধিক কতজন মানুষ সেবা পাবেন? ০৭. সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রশ্নে এই সেবা কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে? ০৮. অতিদরিদ্র ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী এই সেবা থেকে উপকৃত হচ্ছে কি-না?

ক্যাটাগরি ২-এর জন্য বিবেচ্য ছিল- ০১. ডিজিটাল সেবাটি কি ব্যয় ও সময় কমাতে পারে? ০২. সেবাটি কি সেবাদানের স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে? ০৩. সেবাটি কি সেবাদানের প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে? ০৪. এই সেবাটি বাস্তবায়নের জন্য কেমন অর্থ ও মানবসম্পদ দরকার? ০৫. সেবাটি বাস্তবায়নের জন্য কত সময় দরকার? ০৬. সেবাটি কত দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব? ০৭. সেবাটি কতখানি ব্যয়সাশ্রয়ী? ০৮. সেবাটি সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াকে কতখানি কার্যকর করে তুলেছে? ০৯. এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে কত স্বল্প কারিগরি দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন?

জুরি কমিটি এসব বৈশিষ্ট্যের আলোকে ক্যাটাগরি ১ ও ২-এর বিজয়ী নির্বাচন করেন। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জুরি কমিটি মেলায় সব ডিজিটাল উদ্ভাবনী উদ্যোগসমূহকে প্রাথমিকভাবে পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে ক্যাটাগরি ১ ও ২-এর জন্য আলাদা আলাদাভাবে দশটি করে উদ্যোগ চিহ্নিত করে। দিবতীয় পর্যায়ে এই চিহ্নিত উদ্যোগসমূহকে পরিদর্শন ও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তাদের মধ্য থেকে আটটি ডিজিটাল উদ্ভাবনী উদ্যোগকে বিজয়ী নির্বাচন করে। এর পাশাপাশি কেন এ উদ্যোগ বিজয়ী হলো তার ব্যাখ্যাও হাজির করে। বিজয়ীদের তালিকা ও বিজয়ী হবার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো।

‘দক্ষতা উন্নয়নে ই-সরকার’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের বহুদিনের অভিযোগ-বন্দর ব্যবস্থাপনায় পদ্ধতিগত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ডিজিটালপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ব্যবস্থাপনার মান ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করেছে। আজ দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে আর অভিযুক্ত হতে হয় না। এর পেছনে রয়েছে একাধিক ডিজিটালপ্রযুক্তির সার্থক প্রয়োগ এবং Business Process-এর আধুনিকায়ন। এই অনুকরণীয় সাফল্যের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পায় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১০-এর দক্ষতা উন্নয়নে ই-সরকার বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

‘দক্ষতা উন্নয়নে ই-সরকার’ বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ৮২ হাজারেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য ডাটাবেজ সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতা ও গতি বাড়ানো উভয় ক্ষেত্রেই লাভবান হয়েছে। সেজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পায় দক্ষতা উন্নয়নে ই-সরকার বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার। একইসাথে ইউনিকোড মানসম্পন্ন বাংলা ফন্ট এর আগেও ছিল, তবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নিজ উদ্যোগে যে ‘নিকস ফন্ট’ এবং ‘নিকস কনভার্টার’ প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, তা সরকারের ভেতরে তথ্য বিনিময়ে বহুদিনের সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এই সময়োপযোগী ও ফলপ্রসূ উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন পায় দক্ষতা উন্নয়নে ই-সরকার বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার।

‘মানব উন্নয়নে ই-সরকার’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি, এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে সময়মতো পরীক্ষার ফল পৌঁছানো, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসএমএসভিত্তিক পরীক্ষার ফল পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অভিনব এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবন ছুঁয়ে যাওয়া একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণও। পাশাপাশি, এসএমএসের মাধ্যমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্যোগ এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, এবছর আরো বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই বহুমুখী উদ্যোগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় পায় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১০-এর মানব উন্নয়নে ই-সেবা বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

‘মানব উন্নয়নে ই-সরকার’ বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো। দেশের চিনিকলগুলোতে প্রচলিত পূর্জি ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের প্রান্তিক কৃষকদের আখ কেনা-বেচায় যে স্বচ্ছতা ও স্বচ্ছন্দ এসেছে, এর স্বীকৃতিস্বরূপ ডিজিটাল পূর্জি উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থাকে মানব উন্নয়নে ই-সেবা বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়। বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সবার কাছে সময়মতো প্রাক-দুর্যোগ সতর্কবার্তা পৌঁছানো আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সে কাজটি ডিজিটালপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে সহজে করা যায়, তারই একটি পথ দেখিয়ে দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো, তাদের Cell Broadcasting-এর মাধ্যমে প্রাক-দুর্যোগ সতর্কবার্তা পাঠানোর উদ্যোগের মাধ্যমে। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো পায় মানব উন্নয়নে ই-সেবা বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার।

দর্শনার্থীদের ডিজিটাল ভোটে সবচেয়ে জনপ্রিয় সরকারি ই-উদ্যোগ হিসেবে পুরস্কৃত হয় এআইএসের কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (AICC), যারা ভোট পেয়েছিল মোট ৭০৫টি এবং জনপ্রিয় বেসরকারি ই-উদ্যোগ হিসেবে পুরস্কৃত হয় Bangladesh Telecenter Network-এর ই-কৃষি, যারা ভোট পেয়েছিল ৭২৬টি। মেলায় ভোট পড়েছিল মোট ৪,০৩১টি।

দর্শনার্থীদের ডিজিটাল ভোট দেবার জন্য মেলায় একটি ভোটিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে মেলার দর্শকরা মেলা শেষে ভোট দিতে পেরেছেন। ভোটিং সিস্টেমটা ছিল খুবই সহজ। এতে মোট ক্যাটাগরি ছিল দুইটি- সরকারি এবং বেসরকারি। মেলায় আসা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে মোট ৬০টি ই-উদ্যোগ বাছাই করা হয়েছিল ভোটিংয়ের জন্য এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে ২৩টি। খুবই সাধারণ ছিল ভোট দেয়ার নিয়ম, একজন দর্শকের জন্য প্রতি ক্যাটাগরি থেকে কমপক্ষে একটি এবং সর্বোচ্চ তিনটি সেবা বাছাই করার সুযোগ ছিল। অর্থাৎ, একজন দর্শক দুই ক্যাটাগরি থেকে কমপক্ষে দুইটি এবং সর্বোচ্চ ছয়টি সেবা ভোট করার জন্য বাছাই করার সুযোগ পেয়েছেন। প্রথম ধাপে সরকারি সেবাসমূহ থেকে বাছাই করে সাবমিট করতে হয় এবং পরের ধাপে বেসরকারি সেবাসমূহ থেকে বাছাই করে ফাইনাল সাবমিট করতে হয়।

সাতটি প্রবন্ধ : ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের প্রশ্নে সরকারি-বেসরকারি নেতৃত্বে শুধু ডিজিটাল উদ্যোগ নেয়া যথেষ্ট নয়। দরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট সব দিক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা এবং সে আলোকে ভবিষ্যতের পথ নির্মাণ করা। সেজন্যই মেলায় তিন দিনে ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কিত সাতটি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনার ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রবন্ধ সাতটি হলো-

01. Taking Services to Citizens Doorsteps through Public Service Delivery Centers;
02. m-Governance: Embracing the new Mobile Paradigm for Service Delivery;
03. Sustaining e-Service Delivery with Appropriate ICT HR in the Government;
04. Implementing ICT Policy 2009 to Achieve Digital Bangladesh;
05. Integration of Government Agencies through Interoperability;
06. PPP Framework to Sustain e-Service Delivery Ges
07. Developing A Positive Image of Bangladesh.

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা দু’টি দৃষ্টান্ত

প্রান্তিক আখচাষীরা মোবাইলে সেবা পাচ্ছেন :
মোবারকগঞ্জ সুগার মিল এবং ফরিদপুর সুগার মিলের হাজার হাজার আখচাষীর মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। হাসি ফুটে উঠেছে মিল কর্তৃপক্ষের চোখেমুখেও। সুগার মিলগুলোর চিত্র আমরা জানি। বছরে বছরে লোকসান, পুরনো পদ্ধতিতে দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করা, এর ফলে লোকসান এবং মিলের সাথে আখচাষীদের দূরত্ব বেড়েই চলেছে দিনে দিনে। মিল থেকে যতখানি সেবা আখচাষীদের পাবার কথা তা প্রায় উঠে যেতে বসেছে। এই দুরবস্থা দিনে দিনে এতটাই তলানিতে এসে ঠেকেছে, সবাই ধরেই নিয়েছে মিল বন্ধ হয়ে যাবে, বন্ধ না হলেও আখচাষীদের কোনো নতুন সম্ভাবনা নেই। এর সাথে বাজারে চিনির মূল্য কম এবং সরকারের ওপর মিলকে বেসরকারিকরণের চাপ আছেই বিশ্বব্যাংকের। ফলে আখচাষীরা আখ চাষে উৎসাহিত হবে এমন কারণ কেউই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এমনি এক পরিস্থিতিতে মিলের দাফতরিক কাজে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার সংশ্লিষ্ট সকলের মনে আশার সঞ্চার করেছে। হাসি ফুটে ওঠার এটাই কারণ।

শুরু ২০০৯ সালে। ইউএনডিপির পাইলট প্রজেক্ট ও ইলেকট্রনিক পূর্জি তথ্যসেবা ব্যবস্থাপক। উদ্দেশ্য-এসএমএসের মাধ্যমে আখচাষীদের পূর্জি তথ্য জানানো। পদ্ধতি হলো মিলের সার্ভারে আখচাষীদের ডাটাবেজ থাকবে। আখ মাড়াই মৌসুমে মিল কর্তৃপক্ষ তাদের আখ চাহিদার ভিত্তিতে এই ডাটাবেজ থেকে নির্দিষ্টসংখ্যক আখচাষীকে এসএমএস পাঠাবে। আখচাষীরা এই এসএমএসের ভিত্তিতে তাদের আখ কাটবে এবং নির্দিষ্ট দিনে আখ নিয়ে মিলে/সেন্টারে চলে আসবে।

এতে কী সুবিধা হবে? সবচেয়ে বেশি সুবিধা বা লাভ আখচাষীর। হয়রানি কমে, সময় বাঁচে। পূর্বের প্রচলিত পদ্ধতিতে আখচাষীরা পূর্জি পেত কাগজের স্লিপে। বেশিরভাগ সময় এই স্লিপ পৌঁছত যেদিন আখ সরবরাহ করার কথা তার পরে। ফলে অনেক আখচাষী তার আখ মিলে সরবরাহ করতে পারতেন না। পরে মিলে গিয়ে অনুনয় করতে হতো অথবা যারা গুড় তৈরি করেন তাদের কাছে বিক্রি করতে হতো। মিল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত আখ না পাবার কারণে মাড়াই মৌসুমের পুরো সময় মিল চালাতে পারতো না। উৎপাদন কম হতো। ফলাফল লোকসান।

সুবিধা আরো আছে। এসএমএসের মাধ্যমে পূর্জি ব্যবস্থা চালু হবার পর দেখা গেছে মিলের উৎপাদন বেড়ে গেছে। কারণ আখচাষীরা সময়মতো এবং সবাই আখ সরবরাহ করেছেন। ফলে মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম যে, মিলে ‘নো কেইন’ হয়েছে। অর্থাৎ, মাড়াই মৌসুমে কোনো ব্রেক ডাউন ঘোষণা করতে হয়নি। মিলের মাঠকর্মীদের পরিশ্রম কমে গেছে। কারণ, আগের মতো পূর্জির কাগজ নিয়ে তাদের আর দৌড়াতে হয় না। মিলের দাফতরিক কাজের চাপ কমে গেছে, সাথে সাথে ব্যয়ও কমে গছে।

তবে চ্যালেঞ্জ ছিল একাধিক। শুরুতে মিল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, এমন আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার এখানে বেমানান। তারা যুক্তি হাজির করেছিল- সব আখচাষীর কাছে মোবাইল নেই, থাকলেও তারা এই এসএমএস পড়তে পারবেন না। কারণ তারা নিরক্ষর। তার ওপর ইংরেজিতে লেখা এসএমএস বোঝার সাধ্য তাদের নেই। মাঠকর্মীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেছিল এই বলে যে, আখচাষীর সাথে তাদের দবন্দ্ব তৈরি হবে। ট্রেড ইউনিয়ন বলেছিল, অনেকের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এসব তথ্যপ্রযুক্তি চলবে না। সমালোচনা করে বলেছিল, এসব উদ্যোগ মোবাইল কোম্পানিগুলোর আয় বাড়ানো ছাড়া নতুন কোনো ফল বয়ে আনবে না।

কিন্তু ছয় মাসের মাথায় তাদের সবার ধারণা পাল্টে গেল। পাল্টাবার প্রধান কারণ আখচাষীরাই বলতে শুরু করেছেন তাদের জন্য এই ব্যবস্থা খুবই কার্যকর। এমনকি তারা এটাও বলতে শুরু করেছেন যে, এই ব্যবস্থা চালু রাখা দরকার এবং এর জন্য ভবিষ্যতে যদি তাদের কোনো ব্যয় করতে হয়, তাতেও তারা প্রস্তুত। এর ফলে যারা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করেছিল তাদের মুখ বন্ধ হয়েছে। আখচাষীরা তাদের অভিজ্ঞতায় বলেছেন, এসএমএস ইংরেজি হওয়ায় এতে কোনো সমস্যাই হয়নি তাদের। কারণ এ সমস্যা তারা সমাধান করেছেন তাদের সন্তান বা পড়শীদের মাধ্যমে।

মিল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেশের সব মিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখানকার মতো শুধু পূর্জি সেবা নয়, এসএমএসের মাধ্যমে আখচাষ সম্পর্কিত সব তথ্য, যেমন কখন সার দিতে হবে, কোন ধরনের রোগবালাই দমনের জন্য কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে- এসব তথ্যসেবাও থাকবে সে ব্যবস্থায়। এসএমএস বাংলা করারও চেষ্টা চলছে।

জেলা তথ্যবাতায়ন :
মাঠ পর্যায়ে সরকারিভাবে সবচেয়ে বড় তথ্যভান্ডার ৬ জানুয়ারি ২০১০। বাংলাদেশে উল্লেখ করার মতো একটি দিন। কারণ, সেদিনটি ছিল বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে প্রথম বছর পূর্তি উদযাপন করার দিন। কিন্তু দিনটি আরো এক কারণে উল্লেখ করার মতো। তা হলো এইদিনে দেশের ৬৪টি জেলার জন্য জেলা তথ্যবাতায়ন চালু করা হয়। এর উদেবাধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদেবাধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এদিনে আমরা সরকার গঠন করে নতুন প্রজন্মকে কথা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব। তারই অংশ হিসেবে আজ এ জেলা তথ্যবাতায়ন চালু হলো।’

জেলা তথ্যবাতায়ন হচ্ছে ইন্টারনেটে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৬৪টি ওয়েব পোর্টাল। এতে দেয়া আছে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার, সরকারি দফতরগুলো, ফরম ও প্রতিবেদন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য। এর পরই রয়েছে জেলা সম্পর্কিত তথ্য, যেমন- এক নজরে জেলা, জেলার পটভূমি, ভৌগোলিক প্রোফাইল, শিল্প-বাণিজ্য, পত্রপত্রিকা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি ইত্যাদি। সবশেষে অন্যান্য লিঙ্কের অধীনে জরুরি সেবা, ফটো গ্যালারি, প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট, মন্তব্য খাতা, সচরাচর জিজ্ঞাস্য ইত্যাদি বিষয়। এক কথায় বললে দরকারি প্রায় সব তথ্যই এখানে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরও যদি কেউ মনে করেন তার জেলার দরকারি কোনো তথ্য দেয়া হয়নি সেক্ষেত্রে তিনি ‘অভিমত ও পরামর্শ’ শিরোনামের বোতাম টিপে নিজের মতামত ও পরামর্শ জানাতে পারেন। কারণ, জেলা প্রশাসন ওয়েবসাইটটি নিয়মিত হালনাগাদ করবে।

জেলা তথ্যবাতায়ন স্থান, সময়, ব্যক্তি নির্বিশেষে যেকোনো মানুষের জন্য জেলা সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য সহজে প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণকে তথ্য প্রদানে মাঠ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা হলো। এর ফলে জেলা প্রশাসন এই বাতায়ন থেকে নির্ভরযোগ্য ও সঠিক তথ্য পাওয়া নিশ্চিত করতে করতে বাধ্য হবে। জেলা তথ্য বাতায়ন মানুষের তথ্য পাবার অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করলো। মানুষের ঘরে বসেই তথ্য পাবার দবার উন্মোচিত হলো। দেশের যেকোনো জেলাকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনের একটি আকর্ষণীয় মাধ্যম তৈরি হলো। তৃণমূল পর্যায়ে বাংলায় তথ্যসেবা যোগান হলো।

জেলা তথ্যবাতায়ন নির্মাণ করে জেলার ওয়েব টিম। মাঠ প্রশাসনের এই ওয়েব টিম তথ্য সংগ্রহ, তথ্য হালনাগাদ করে এবং ভবিষ্যতেও এরাই এর সার্বিক তথ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। তথ্যবাতায়নে তথ্যের পরিবেশন ও ডিজাইন একই ধরনের ও মানের ভিত্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে। একই ধরনের হবার কারণে জনগণের জন্য তথ্য অনুসন্ধান ও জেলা প্রশাসনের জন্য পোর্টাল ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে। এই জেলা তথ্যবাতায়ন হালনাগাদ রাখার ক্ষেত্রে যাতে করে জেলা প্রশাসনের অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে না হয়, সেদিকটি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওয়েব টিমের জন্য পাঁচ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয় দুই ব্যাচে। প্রতি ব্যাচে ৬৪ জন করে। প্রশিক্ষণের আয়োজন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম’। এখন এর সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সমাপনী অনুষ্ঠান : আনন্দের ভাগাভাগি

সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল প্রাণোচ্ছ্বাসে ভরা। অতিথিরা সবাই আত্মবিশ্বাসের কথা বললেন এবং সফলভাবে মেলা সম্পন্ন হবার আনন্দ ভাগাভাগি করলেন। সবাই বললেন নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, এখন সামনে এগোবার সময়। অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘ভাবতে পারিনি, এত দ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই মেলার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের যে মজবুত ভিত্তি তৈরি হলো তা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য গভীর আস্থা তৈরি করবে।’ ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বললেন, ‘খেয়াল রাখতে হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান যে লক্ষ্য তা অর্জিত হচ্ছে কি-না?’ স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বললেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বেড়ে গেল বহুগুণ।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো: আবদুল করিম বললেন, ‘ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা আয়োজন করার মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা ও আস্থা আমাদের অর্জন হলো তাতে আমার মনে হচ্ছে আমরা ২০১১ সালে ই-এশিয়া আয়োজন করার পরিকল্পনা করতে পারি।’

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : manikswapna@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
২৫ এপ্রিল ২০১০, ১২:০৪ AM
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস