• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মাইক্রোচিপ ফার্মেসি আর স্বপ্ন নয়
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মাইক্রোপ্রসেসর
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মাইক্রোচিপ ফার্মেসি আর স্বপ্ন নয়


মার্কিন বিজ্ঞানীরা ত্বকের নিচে স্থাপন করা যায় এমন এক ধরনের মাইক্রোচিপ তৈরি করেছেন, যার মধ্যে ওষুধ ভরে রাখা সম্ভব। একই সাথে এটি ওষুধের মাত্রা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। শরীরের বাইরে থাকা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে এ মাইক্রোচিপের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। গবেষণাটি অবশ্য এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। বাজারে ছাড়ার জন্য উপযুক্ত পণ্য তৈরি হতে এখনও অন্তত পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত যদি এটি হাতের নাগালে এসেই যায়, তাহলে প্রতিদিন যারা ইনজেকশন নিতে নিতে অতিষ্ঠ, তারা কষ্ট সহ্য করা থেকে বেঁচে যাবেন। এই সাথে অন্য রোগীরাও এর সুফল পাবেন।

গবেষকরা বলেছেন, ওষুধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগীর ত্বকের নিচে মাইক্রোচিপ বসিয়ে দেয়ার বিষয়টি এতদিন ছিল সুদূর ভবিষ্যতের কল্পনা বা ধারণা। কিংবা বলা যায় ফিকশন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই দিন পেতে আর খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ এ বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে।

মার্কিন বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল ডেনমার্কের ৬৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী সাত নারীকে। তারা সবাই হাড়ের ক্ষয়রোগে ভুগছিলেন। ওই নারীদের কোমরে চিপটি প্রবেশ করানো হয় এবং দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র দিয়ে সেটি সক্রিয় করা হয়। দেখা গেছে, চিপটি ওষুধের মাত্রা সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারে এবং এ জন্য তাদের শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, এটিই মানব শরীরে বসানো দূরনিয়ন্ত্রিত ওষুধ বিতরণকারী মাইক্রোচিপের প্রথম পরীক্ষা। তবে এর পেছনে যে মূল প্রযুক্তি, তা নিয়ে ১৫ বছর ধরে গবেষণা চলছে।

সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে সম্প্রতি এ ব্যাপারে গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স তথা এএএএসের বার্ষিক সম্মেলনেও বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি তথা এমআইটির অধ্যাপক রবার্ট লেনজার বলেন, যন্ত্রটির আগে থেকে প্রোগ্রাম করতে পারার যে বৈশিষ্ট্য, তা চিকিৎসাক্ষেত্রে চমকপ্রদ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন, তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, আমরা একটি চিপের মধ্যেই পেয়ে গেছি ফার্মাসি। এখন এটিকে হাড়ের ক্ষয়রোগীদের ওপর ব্যবহার হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারের জন্য অ্যাপ্লিকেশনের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

মাইক্রোচিপের প্রেসিডেন্ট ড. রবার্ট ফারা বলেছেন, আঙুলের নখের আকারের চিপটির সাথে বিভিন্ন ওষুধের অতি ক্ষুদ্র ‘পাত্রের’ সংযোগ রয়েছে। পুরো ওষুধ ভরা অবস্থায় যন্ত্রটির আকার হৃদযন্ত্রে বসানো পেসমেকারের আকারের সমান। দৈর্ঘ্য পাঁচ সেন্টিমিটার, প্রস্থ তিন সেন্টিমিটার আর পুরুত্ব এক সেন্টিমিটার। ওষুধের পাত্রটি ঢেকে রাখা একটি ক্ষুদ্র প্লাটিনাম এবং টাইটানিয়ামের কেসিং দিয়ে। কেসিংটি ভেঙে গেলে শুধু এক ডোজ ওষুধ বেরিয়ে আসতে পারে। চিপটি সময় নিয়ন্ত্রণ করে, কারণ এটি প্রোগ্রাম করা। একটি বেতার সঙ্কেতের ভিত্তিতে দূরনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে এটি পরিচালিত। তিনি বলেন, মাইক্রোচিপে গাড়ি, ওয়াশিং মেশিন এবং এমনকি কফি মেশিনও চলছে। আর শিগগিরই তা ছড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। স্বয়ংক্রিয় ওষুধ দেয়ার যন্ত্র ইতোমধ্যেই ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ডায়াবেটিসের রোগীরা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইনসুলিন নিচ্ছে। কিন্তু হাড়ের ক্ষয়রোগে আক্রান্তদের কষ্ট সহ্য করেই প্রতিদিন নিতে হচ্ছে ইনজেকশন।

গবেষক অধ্যাপক মাইকেল চিমা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, যখন মাইক্রোপ্রসেসর কোনো নির্দিষ্ট কেসিংয়ের ভেতর দিয়ে কারেন্ট পাস করতে চায় তখন কেসিংটি ডিকম্পোস বা সেখান থেকে ওষুধ বেরিয়ে আসতে ২৫ মাইক্রোসেকেন্ড সময় লাগে। এরপর অন্যান্য যন্ত্রের সহায়তায় ওষুধটি রক্তের মধ্যে ঢুকে পড়ে।

এমআইটির গবেষণা প্রকল্পের আওতায় এই উদ্ভাবনাটি হলেও বিষয়টি নিয়ে এখন কাজ করছে মাইক্রোচিপ ইনকরপোরেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা সিস্টেমটির উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছে যাতে করে ওষুধের একাধিক ডোজ ব্যবস্থাপনা করা যায়। এখন শুধু ২০ ডোজ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে শত শত ডোজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে বছর পাঁচেক।

সান দিয়াগোয় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন ওয়াটসন চলতি গবেষণার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করা প্রয়োজন। লিস্টেড এরিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পরীক্ষা একজন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, যা উল্লেখ করা হয়নি। একটি যন্ত্রে মাত্র ২০ ডোজ ওষুধ রাখতে পারা একটি সীমাবদ্ধতা, যা উত্তরণ জরুরি। এ ব্যাপারে ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তথা এফডিএ’র অনুমোদন পেতে হলে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল অস্টিওপোরোসিস সোসাইটির নার্স জুলিয়া থমসন মনে করেন, রোগীর দেহে মাইক্রোচিপ নিয়ন্ত্রিত ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা অবশ্যই জনপ্রিয় হবে। প্রতিনিয়ত ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে রোগীদের যে কষ্ট তা এই প্রযুক্তির কারণে লাঘব হবে। তাদের অভিযোগেরও অবসান হবে। যারা ইনজেকশন নিতে গড়িমসি করেন তারাও এতে স্বস্তি পাবেন। তিনি বলেন, গবেষণাটি ক্ষুদ্র আকারে হলেও এই উদ্ভাবনা সত্যি চাঞ্চল্যকর।

প্রথম জৈব কমপিউটার : এদিকে উদ্ভাবিত হয়েছে বিশ্বের প্রথম জৈব কমপিউটার। এতদিন জৈব কমপিউটারের ধারণাটি শুধু কল্পনাতেই ছিল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তরের প্রয়াস পেয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও টেকনিয়ন-ইসরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একদল গবেষক জৈব কমপিউটার তৈরিতে সফল হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। পিটিআই এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাত দশক আগে এক বিজ্ঞানী প্রথম জৈব কমপিউটারের তত্ত্ব দিয়েছিলেন।

ব্যাকটেরিয়া এবং ডিএনএ সংশ্লেষের মাধ্যমে এক পর্যায়ে জৈব কমপিউটার তৈরিতে সফল হয়েছেন তারা। গবেষকরা জানিয়েছেন, জৈব কমপিউটারে ডিএনএ চিপ ব্যবহার করা হয়েছে, যা উপযুক্ত ‘সফটওয়্যার’ ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম। গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইহুদ কেইনান।

কেইনান জানিয়েছেন, ডিএনএ ব্যবহার নতুন নয়। আগেও তথ্য উদ্ধার করতে ডিএনএ ব্যবহার করা হতো। তবে এবারই প্রথম কমপিউটিং ব্যবস্থায় ডিএনএ পরীক্ষা করা হলো। ইলেকট্রনিক কমপিউটারে ইনপুট, আউটপুট, প্রসেসিং ও স্টোরেজ নামে চারটি প্রাথমিক অংশ থাকে। ইলেকট্রনিক কমপিউটারের মতো জৈব কমপিউটারেও চারটি অংশ রয়েছে। এ চারটি অংশই হচ্ছে জৈব অণু।

তিনি বলেন, গবেষকরা জৈব কমপিউটারটি তৈরি করেছেন একটি টিউবে রাখা দ্রবণের মধ্যে। ডিএনএ সংশ্লেষ করে পাওয়া বিভিন্ন অণুর সাথে নির্দিষ্ট ডিএনএ এনজাইম ও অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট বা এটিপি নামের কো-এনজাইম দ্রবণে মিশিয়ে জৈব কমপিউটার তৈরি করেছেন তারা। এটিপি হচ্ছে জৈব কমপিউটারের শক্তির উৎস। কোষে কো-এনজাইম হিসেবে এটিপি ব্যবহার হয়। জৈব কমপিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার হিসেবে কাজ করে জটিল অণু। পূর্বনির্ধারিত কোনো কাজ সম্পাদনে অণুগুলো পরস্পরকে সক্রিয় করে। ইনপুট হিসেবে অণু দেয়া হলে নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আউটপুট হিসেবে আরেকটি অণু তৈরি হয়।

কেইনান বলেন, জৈবিক পদ্ধতি নিয়ন্ত্রিত সব প্রাণসত্তাই জৈব কমপিউটার। তার মতে, মানুষও জৈব কমপিউটার, একটি মেশিন। মানুষের ক্ষেত্রেও কমপিউটারের মতো চারটি প্রাথমিক অংশের নিয়ম মানছে অণুগুলো। জৈব কমপিউটার খালি চোখে দেখা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন তিনি।

জৈব কমপিউটার তৈরি করা হয়েছে ইংরেজ গণিতবিদ, যুক্তিবিদ, কমপিউটার ও ক্রিপ্টোবিশেষজ্ঞ অ্যালান টুরিংয়ের ৭৫ বছরের পুরনো তত্ত্ব ব্যবহার করে। অ্যালান টুরিংকে কমপিউটার বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক বলা হয়।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস