• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রতিদিনের জীবনে ভবিষ্যতের রোবট
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: শাহিন রহমান
মোট লেখা:৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
রোবট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রতিদিনের জীবনে ভবিষ্যতের রোবট

রোবট শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মানবসদৃশ কোনো যন্ত্র। কিন্তু রোবট বিপস্নবের এমন সময়ে আমরা বাস করছি; যেখানে রোবটকে বানানোর চেষ্টা চলছে পুরোপুরি মানবিক করার কাজে। সেই স্বপ্ন থেকেই মানবরূপী কিশোর রোবটের গল্প নিয়ে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গ বানিয়েছেন দুনিয়া কাঁপানো ছবি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। রোবট কিশোর ও রক্তমাংসের মায়ের মধ্যে মমতা ও ভালোবাসার প্রকাশ যার মূল প্রতিপাদ্য। এই যান্ত্রিক কিশোরের মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা দর্শকদের কাঁদিয়েছে। ছবিতে কিশোরটিকে আর রোবট লাগেনি। রক্তমাংসের মানুষের মতোই মনে হয়েছে। বাস্তবে এমন রোবট না থাকলেও বিশ্বব্যাপী রোবট নিয়ে যে গবেষণার মহাজোয়ার চলছে তাতে হয়তো খুব বেশিদিন এমন একটি রোবটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

রোবট শব্দটির উৎপত্তি চেক শব্দ ‘রোবটা’ থেকে, যার অর্থ ফোরসড লেবার বা মানুষের দাসত্ব কিংবা একঘেয়েমি খাটুনি বা পরিশ্রম করতে পারে এমন যন্ত্র। বর্তমানে বিভিন্ন গুরম্নত্বপূর্ণ কাজে রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজকর্মে মানুষের পরিবর্তে ব্যবহারের জন্য রোবটের উদ্ভাবন শুরম্ন হলেও বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজেই ব্যবহার শুরম্ন হচ্ছে। এমনকি অনেক খেলাধুলা বা প্রতিয়োগিতায় রোবটদের আধিপত্য বাড়ছে। বিশেষ করে বুদ্ধিভিত্তিক অনেক প্রতিযোগিতায় রোবটের পারফরম্যান্স মানুষের চেয়ে অনেক এগিয়ে। যেমন দাবা কিংবা কুইজ প্রতিযোগিতায় রোবট ইতোমধ্যেই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। এখন অন্যান্য ক্রীড়া ক্ষেত্রেও দখল নিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের স্রষ্টারা। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে খেলুড়ে রোবটদের প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ফিরা রোবোওয়ার্ল্ড কাপ নামের রোবটদের অলিম্পিক। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের প্রায় ২৬টি দল ফুটবল, বাস্কেটবল এবং ভারোত্তোলনের মতো খেলাগুলোতে অংশ নিয়ে থাকে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলেও দর্শক সমাগমের পরিমাণ অভাবনীয় বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

শুধু দর্শক সমাগমের দিক থেকে রেকর্ড নয়, সেই সাথে অনুষ্ঠানে রোবটগুলো বেশকিছু খেলায় বিশ্বরেকর্ডও গড়েছে। রোবটদের উসাইন বোল্ট হিসেবে পরিচিত রোবটটি এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে। রোবটটি স্প্রিন্ট দৌড় প্রতিযোগিতা ৩১ সেকেন্ডে সমাপ্ত করার মধ্য দিয়ে আগের ৪২ সেকেন্ডের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তবে দৌড়বিদরা যেখানে একশ’ মিটার দৌড়ান সেখানে রোবটরা সামনের দিকে তিন মিটার এবং পেছনে তিন মিটার দৌড়িয়ে থাকে। শুধু স্প্রিন্ট নয়, ম্যারাথনের মতো কঠিন দৌড়েও অংশগ্রহণ করবে রোবটগুলো। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস ল্যাবরেটরির রোবটগুলো ম্যারাথন ফাইনালে অংশ নেয়। টিম প্যান্থার নামের এ দলটি অংশ নেয় ৪২ মিটারের দৌড়ে। ব্যাপারটা আরো প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার জন্য আয়োজকরা এখনো জানায় ঠিক কোন পৃষ্ঠে ম্যারাথন দৌড় দেবে রোবটগুলো। ব্রিস্টল দলের একজন সদস্য বলেন, ‘মেঝে বা কার্পেটের চেয়ে টেবিলের ওপরের পৃষ্ঠ হলে ভালো হয়।’ ফুটবল এ প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলেও ভারোত্তোলনও কম নজর কাড়েনি। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড হিসেবে ৮৯টি ডিভিডি তুলতে পারা, যা ক্ষুদে আকৃতির রোবটগুলোর জন্য অনেক বলে বিবেচিত হলেও বর্তমানে বেশ কিছু রোবটকে ১০০ ডিভিডি তোলার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ড. হারম্যান। এ ছাড়া এমন অনেক রোবট রয়েছে যারা অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এই রোবটগুলোকে আয়োজকরা ডেকাথেলিটস নাম দিয়েছেন। এ প্রতিযোগিতার মূলমন্ত্র বিনোদন হলেও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে একটি নিয়ম মানতেই হবে। সেটি হচ্ছে-একবার খেলা শুরম্ন হয়ে গেলে রোবটগুলোকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বছর চলে আসছে রোবটদের এ অলিম্পিক।

খেলাধুলা বা প্রতিযোগিতার মধ্যেই নয়, দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে রোবট ব্যবহারের চেষ্টাও চলছে জোরেশোরে। এ বিষয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন রাশিয়ার প্রযুক্তিসম্রাট এবং বিজনেস জায়ান্ট রাশিয়ান প্রধান ই-মেইল এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠান মেইল ডট আরইউর প্রধান নির্বাহী দিমিত্রি গ্রিশিন (Dmitry Grishin)। তার রোবটিক অভিলাস এমন পর্যায়ে রয়েছে, তিনি তার বিয়ে উৎসবে উড়ন্ত রোবোটিক্স ড্রোন ব্যবহার করতে চান। এই রোবটগুলো অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের খুব কাছাকাছি এবং সব প্রান্ত থেকে প্রতি পদক্ষেপ ক্যামেরায় ধারণ করার কাজ করবে। এ বিষয়ে দিমিত্রি বলেন, মানুষ আজ উচ্চমানসম্পন্ন ছবি দেখতে পছন্দ করেন। আর আপনার কাছে যদি একটি উড়ন্ত ড্রোন থাকে, তাহলে আপনি তার সাথে ক্যামেরা যুক্ত করে দিয়ে ভালোমানের মুভি এবং ছবি তুলতে পারেন। আবার মদের দোকানে যদি রোবট মদ পরিবেশক থাকে তাহলে আপনি দ্রম্নত বাড়তি পানীয় পেতে পারেন। এক সময়ের রোবটিক্সের ছাত্র দিমিত্রি মনে করেন, কমপিউটার ই-মেইলের মতো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারের জন্য রোবট বানানো প্রয়োজন। এ জন্য তিনি রোবটিক্স গবেষণা এবং উদ্ভাবনের জন্য ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সাথে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে নিউইয়র্কভিত্তিক একটি রোবট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘গ্রিশিন রোবটিক্স’ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরম্ন করেছেন। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান কম খরচে উন্নতমানের শক্তিশালী ক্যামেরা, সেন্সর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স চিপ তৈরি করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার্ষিক ৫ লাখ ডলারের অনুদান দেয়ার কথাও জানিয়েছেন। আমি মনে করি, যখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে রোবটের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করানো যাবে তখন এই খাতে বিপুল বিনিয়োগ যেমন হবে; তেমিন মানুষের দৈনন্দিন জীবনও অনেক সহজ হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য, দিমিত্রির মেইল ডট আরইউ গ্রম্নপ বর্তমানে ফেসবুক, জিঙ্গের মতো জায়ান্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে।

এদিকে সম্প্রতি রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ অ্যান্ড্রোয়িড রোবট তৈরি করেছেন। এটি মূলত মহাকাশচারী রোবট। রোবটটি যেমন মানুষের কাজ নকল করতে পারে, তেমনি পারে নিজে কাজ করতে। ২০১৪ সালের পর এ ধরনের অ্যান্ড্রোয়িড রোবট চাঁদ, মঙ্গলগ্রহ ও অন্য সব গ্রহে পাঠানো শুরম্ন হবে। এ রোবট ছবি ও শব্দ ছাড়াও স্পর্শের অনুভূতি পাঠাতে সক্ষম। মানবরূপী রোবট নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গবেষণাকেন্দ্র হচ্ছে হিউম্যানয়েড রোবটিক্স ইনস্টিটিউট। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রফেসর তাকাসিনির নেতৃত্বে এ সংস্থা রোবটের মধ্যে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ও অনুভূতি সন্নিবেশের গবেষণা চালিয়ে আসছে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক :editor@techzoom24.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস