• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > রোবটিক টেলিসার্জারি: ৩ হাজার মাইল দূর থেকে রোগীর অপারেশন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর তৌসিফ
মোট লেখা:৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
রোবট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
রোবটিক টেলিসার্জারি: ৩ হাজার মাইল দূর থেকে রোগীর অপারেশন
হাসপাতালে রোগী। পাশে একটি রোবট। ডাক্তার রোগী থেকে তিন হাজার মাইল দূরে। সেখান থেকে ডাক্তার এ রোগীর অপারেশন করে তাকে সারিয়ে তুললেন। এও কি সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। বাস্তবে তা ঘটেছে এবং ঘটছে। এক নতুন ধরনের টেলিমেডিসিন প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ তা সম্ভব করে তুলেছে। আর এর নাম দিয়েছে রোবটিক টেলিসার্জারি। এ লেখায় এই টেলিসার্জারির ওপরই আলোকপাত।
মালেয়া ফক্স। যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন স্টেটের মেয়ে। ২০১১ সালের গরমের মৌসুম। তখন তার বয়স মাত্র সাত মাস। দেখা গেল তার গায়ে জ্বর। ভয়াবহ জ্বর। তাপমাত্রা ১০২.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট, সেন্টিগ্রেড স্কেলে ৩৯ ডিগ্রি। বাড়ির কাছের স্থানীয় ডাক্তার আগেই বলেছিলেন, এটি সাধারণ ভাইরাসের জ্বর। মালেয়ার মা ডাক্তারের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি। দ্বিতীয় আরেক ডাক্তার দেখানোর জন্য মালেয়াকে নিয়ে গেলেন পাশের এক হাসপাতালে।
ড. জেনিফার নিডল। বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক। তার বিশেষজ্ঞতা শিশুদের ইনটেনসিভ কেয়ার বিষয়ে। তখন তিনি কাজ করতেন মালেয়ার হাসপাতাল থেকে ১০০ মাইল দূরের পোর্টল্যান্ডের একটি শিশু হাসপাতালে। সেখান থেকেই তিনি মালেয়ার ডায়াগনোসিস তথা রোগ নির্ণয় করেন। যার ফলে মালেয়া প্রাণে বাঁচার সুযোগ পায়। এ কাজটি করেন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। হাসপাতালে মালেয়ার পাশে তখন ছিল দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগসমৃদ্ধ একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ভিডিও কনফারেন্সিং ইউনিট। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ১০০ মাইল দূর থেকে ড. জেনিফার নিডল ডায়াগনোসিস করে জানালেন মালেয়া মেনিংগোকোসেমিয়ায় আক্রান্ত। এটি একটি প্রাণসংহারী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যার ফলে মেনিনজাইটিস (সাধারণত তীব্র জ্বরে সৃষ্ট মস্তিষ্কের আবরক-ঝিল্লির প্রদাহমূলক রোগ) হয়। দূর থেকে যথাসময়ে এই রোগ নির্ণয় করে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। ড. নিডল নার্সকে বললেন ব্রেথিং টিউব ইনসার্ট করতে- অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলেই শুধু এই টিউব ইনসার্ট করা হয়। তখন কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই তাকে হাসপাতালে বহন করে নিতে আসা হেলিকপ্টারটি কুয়াশার কারণে ফিরে যেতে হয়। ফলে তার যাবতীয় চিকিৎসা সারতে হয় দূর থেকেই।
মালেয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ছিল অরিগন সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইউনিভার্সিটি টেলিমেডিসিন নেটওয়ার্কের আরেকটি সাফল্য। এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় অরিগন স্টেটের ১০টি হাসপাতালের সাথে এ সংস্থার এক্সপার্ট নিওন্যাটোলজিস্ট, স্ট্রোক নিউরোলজিস্ট, নিউরোসার্জন, ট্রমা সার্জন ও অন্য বিশেষজ্ঞদের ইলেকট্রনিকভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এসব হাসপাতালের রোগীদেরকে কার্যত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথেই সংযুক্ত করা হলো। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এ নেটওয়ার্কের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ড. মাইলস এলেনবি। তিনি বলেন, ‘সঙ্কট সময়ে একটি ফোনকল খুবই সহায়ক। একটি ছবি হাজার শব্দের চেয়েও মূল্যবান। কিন্তু লাইভ ভিডিও এক অমূল্য ধন। আসলে আমরা দেখতে পাই কী ঘটছে।’
রিমোট ডায়াগনোসিস তথা দূর থেকে রোগ নির্ণয় টেলিমেডিসিনের ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রের একটি উদাহরণ মাত্র। ব্যাপক অর্থে এর মাধ্যমে নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা জোগানো যায়। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের একদল সার্জন ৩ হাজার মাইল (৪ হাজার ৮২৮ কিলোমিটার) দূরে ফ্রান্সের স্ট্রসবুর্গ সিভিল হসপিটালের ৬৮ বছর বয়েসী এক মহিলা রোগীর দেহ থেকে একটি ক্যান্সারাস গলব্লাডার বা পিত্তকোষ অপারেশন করে অপসারণ করেন। এ প্রক্রিয়াটিতে ব্যবহার করা হয় একটি ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন লিঙ্ক ও একটি রোবটিক সার্জিক্যাল সিস্টেম। সেটি ছিল বিশ্বে প্রথম রিমোট সার্জারি বা টেলিসার্জারি। এটি চিকিৎসা জগতের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ক্ষেত্র। এর বাইরে ইউএসএ সেনাবাহিনী এখন তা ব্যবহার করছে। মেডিক্যাল ও সাইক্রিয়াটিক ক্ষেত্রে চলছে এদের টেলিমেডিসিন প্রয়োগ।
চাহিদা পূরণ : কিন্তু এ ধরনের প্রযুক্তি প্রয়োজন শুধু জরুরি চিকিৎসার বেলায়। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা সমস্যার আরেকটি ক্ষেত্রেও উপকার বয়ে আনছে। সমস্যাটি হচ্ছে- মানুষ বেশি, ডাক্তার কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এর ৪৭ শতাংশ সদস্য দেশে প্রতি এক হাজার লোকের জন্য ডাক্তার রয়েছেন একজনেরও কম। নাইজার ও লাইবেরিয়ায় প্রতি এক লাখ লোকের জন্য রয়েছেন মাত্র দুইজন ডাক্তার। সুখের কথা, ২০১১ সালের হিসাব মতে, মোনাকোতে প্রতি এক হাজার লোকের জন্য রয়েছেন সাতজন করে ডাক্তার। দেশপ্রতি ডাক্তারদের ঘনত্বে আছে ভারসাম্যহীনতা। মালাওতে ৮৭ শতাংশ লোক বাস করে গ্রামে। কিন্তু দেশটির প্রায় সব ডাক্তার থাকেন শহরে। একইভাবে কানাডার উত্তরাঞ্চলের কিছু কমিউনিটিতে প্রফেশনাল ডাক্তার পাওয়ার সুযোগ খুবই কম।
বাস্তবে : বর্তমানে চীনে প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য রয়েছেন ১৪ জন ডাক্তার। এরা ডাক্তারের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করছেন নতুন টেলিমেডিসিন প্রকল্পের মাধ্যমে। এ ধরনের প্রথম প্রকল্প চালু করা হয়েছে হুনান প্রদেশের জেংজহো ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটালে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে টেলিপ্রেজেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে সংযুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন কনসালটেশন রুম, ক্লাসরুম ও অপারেশন থিয়েটার। এই টেলিপ্রেজেন্স সিস্টেম হচ্ছে একটি হাই ডেফিনিশন রিয়েল টাইম ভিডিও লিঙ্ক। এটি ইনস্টল করেছে Huawei Enterprise নামের একটি কোম্পানি। এর মাধ্যমে জেংজহো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা সেবা নেয়া যায়। এ জন্য ১৮টি শহরের হাসপাতালের সাথে ১১৮টি গ্রামীণ মেডিক্যাল ইউনিটের সংযোগ রক্ষা করা হয়। থ্রিজি মোবাইল কানেকশন, ফাইবার অপটিকস, ডিএসএল নামে পরিচিত দ্রুতগতির ক্যাবল কানেকশন, উপগ্রহ ও অন্যান্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ইন্টারেক্ট করতে পারেন প্রদেশজুড়ে তাদের সহকর্মীদের সাথে। এমনকি গ্রামে যেখানে খুব কম গতির ইন্টারনেট রয়েছে, সেখানেও এ সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ডায়ালাইসিস বা ইসিজি মেশিনের মতো মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি থেকে পাওয়া ডাটা রিয়েল টাইমে স্ট্রিমিং করা যায়। এ টেলিপ্রেজেন্স সিস্টেমের প্যানোরেমিক ক্যামেরার মাধ্যমে রোগী যখন ডাক্তারের সাথে কথা বলেন, তখন মনে হয় যেনো সামনা-সামনি বসে কথা বলছেন। অধিকন্তু, বিভিন্ন ধরনের টেলিমেডিসিন টার্মিনালের অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। এরা এর সহজে বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি সাধারণ ডেস্কের ওপর রেখে ব্যবহার করতে পারবেন।
টেলিহেলথ ইউনিট : যদি প্রযুক্তির আরও উন্নয়ন ঘটে। আমরা হাতে পাই আরও সস্তা, ক্ষুদ্র ও তারহীন ট্র্যান্সমিটার- আর তা ৪জিএলটিই ডাটার মতো বড় বড় ডাটা প্রসেস করতে পারে, তবে এর ব্যবহার আরও ব্যাপক হবে। উপরে বর্ণিত হুয়াইয়ি এন্টারপ্রাইজের মতো অনেক কোম্পানি এরই মধ্যে এমন কমপ্যাক্ট ডিভাইস নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে, যা দিয়ে রোগীকে নিজের ঘরে রেখে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখা যাবে। ছোট্ট ‘টেলিহেলথ ইউনিট’ টেবিলের পাশে রাখা যাবে। যেসব বয়স্ক রোগী, গর্ভবতী মা, দীর্ঘমেয়াদি রোগী, অপারেশনের পরের রোগী ও যারা উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকিতে আছেন, তাদের স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখবে এ ইউনিট। এর সাহায্যে রক্তচাপ থেকে শুরু করে হার্টরেট পর্যন্ত পরিমাপ করতে পারে, ইসিজি ও ডায়ালাইসিসও করা যাবে। ইউনিটের ওয়াই-ফাই সেন্সরের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ ও সেন্ট্রাল সার্ভারে পাঠানো যাবে। এই সার্ভার কোনো গরমিল তথ্য পেলে হেলথকেয়ার ম্যানেজমেন্ট টিমকে অবহিত করে
ফিডব্যাক : sabrina.nuzhat.borsha@gmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা