বিশ্বায়নের এই যুগে ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার এবং বিশ্ববাজারে দেশীয় প্রতিভা ও যোগ্যতায় দেশীয় ভাব-মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনে আর্থিক লেনদেনে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে এ খাতের বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে দৈনন্দিন ব্যবসায়িক কার্যক্রমেও প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট সমিতি, সংগঠন ও ফোরামগুলো তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ খাতে সুফল দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। সম্প্রতি এর সাথে যুক্ত হয়েছে ‘সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ’। দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য, সেবা, অর্থনৈতিক লেনেদেনসহ ব্যাংকিং কার্যক্রমে পর্দার পেছনে থেকে নিরলস পরিশ্রম করে দেশের জনগণের প্রযুক্তিসেবা নিশ্চিত করছেন অসংখ্য প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা বা চিফ টেকনিক্যাল অফিসার তথা সিটিও। তাদের মিলিত প্রয়াসই এই আলোচ্য ফোরাম।
দেশীয় বাজারে প্রযুক্তির কর্মকান্ডে সর্বোচ্চ পদবির কর্মকর্তাদের নিয়ে এ ধরনের ফোরাম এটিই প্রথম। সম্পূর্ণ অলাভজনক, অরাজনৈতিক এ ফোরাম আইটি শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক নেতা ও নীতিনির্ধারকদের সাথে মিলে দ্রম্নত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি এবং অনির্ধারিত বাজারের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই ফোরাম সহযোগী পস্নাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
ফোরাম শুরম্নর কথা
আধুনিক ব্যাংকিং খাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং নিজেদের মধ্যে অর্জিত জ্ঞান ভাগাভাগিসহ সমস্যা মোকাবেলা ও একে অন্যের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য গঠিত এই ফোরাম ২০১০ সালের ২৩ জুলাই থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সারা দেশে পেশাজীবী প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। তার মধ্যে শুধু ব্যাংকেই কর্মরত আছেন ৫ হাজার সিটিও।
দীর্ঘদিন আমত্মঃব্যাংকিং সিটিও কর্মকর্তারা নিজস্ব কার্যক্রম অভিজ্ঞতা একে অন্যের সাথে আলোচনা করলেও নিজেদের জন্য একটি পস্নাটফর্মের কথা ভাবছিলেন। এ সদ-ইচ্ছায় ২০১০ সালে এনসিসি ব্যাংকের আইটিপ্রধান তপন কান্তি সরকারকে সভাপতি করে বিসিটিও (BCTO) নামে একটি সম্পূর্ণ স্বনির্ভর অলাভজনক রাজনীতিমুক্ত ফোরাম গড়ে তোলা হয়। শুরম্নতে বিপুল সাড়া পায় এ ফোরাম। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সংখ্যা ছিল ২৪০ জন। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সিটিওরা আগ্রহ প্রকাশ করেন এ ধরনের একটি কমন পস্নাটফর্মে যুক্ত হওয়ার জন্য। যেখানে নিজের কর্মঅভিজ্ঞতাকে আরও ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
তাছাড়া যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সফলতার পেছনে বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারকারী সফল এ ব্যক্তিদের পর্দার আড়াল থেকে সামনে নিয়ে আসতে এবং ব্যাংকিং ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সিটিওদের আগ্রহ সর্বোপরি ফোরামের আকার, আয়তন বাড়াতে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বিসিটিও রূপান্তরিত হয় সিটিও ফোরাম বাংলাদেশে।উন্মোচিত হয় সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার। এ উপলক্ষে ৬ অক্টোবর ফোরাম এক জমকালো উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ লোকজনসহ গণমাধ্যম কর্মীরা। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল জিপিআইটি।
বর্তমান কার্যক্রম
২০১০ সালে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরম্ন করে এই ফোরাম। সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সহযোগিতার দেয়া ও নিজস্ব জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখতে শুরম্ন থেকেই ফোরামটি আয়োজন করে আসছে বিষয়ভিত্তিক সেমিনারসহ আলোচনাসভা ও কর্মশালা। প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তিপণ্যের সর্বোত্তম ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চত করতে এই ফোরাম সদস্যদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। ই-ব্যাংকিং এবং এক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ ক্লাউড কমপিউটিংসহ ডাটা সেন্টার ডিজাইন, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন ছিল প্রশংসনীয়। সময়োপযোগী এই আয়োজনগুলোতে অংশ নিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, ব্যাংকিং কর্মকর্তা এবং প্রযুক্তি শিল্প ইন্ডাস্ট্রির গণমান্য ব্যক্তিরা।
তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনের মধ্যে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো ক্লাউড কমপিউটিং আর ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি প্রয়োগে অনলাইন লেনদেনের অন্যতম চ্যালেঞ্জগুলো নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি। অনলাইন ব্যাংকিং বা ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সিটিওদের যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তা মোকাবেলায় এ ফোরাম ২০১২ সালের জুলাই মাসে আয়োজন করে এক কর্মশালার। এর বিষয় ছিল ব্যাংকিং সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ এবং সলিউশন।
তারই পরবর্তী সেমিনারগুলোর বিষয়বস্ত্ত ছিল গেস্নাবাল ব্যাংকিং সিকিউরিটি, ক্লাউড কমপিউটিংসহ ডাটা সেন্টার ডিজাইন ইত্যাদি। ভবিষ্যৎ কার্যক্রম
সারা বিশ্বে উন্নত-উন্নয়নশীলসহ বিভিন্ন দেশেই নীতিনির্ধারক, সরকারের সহযোগী কিংবা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বিভিন্ন সিটিও ফোরাম। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং লেনদেন সেবাকে মানুষের জন্য সহজ ও সুলভ করে ব্যবসায় বাণিজ্য উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে এ ধরনের ফোরাম। দেশে বর্তমানে কার্যরত তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সাথে যৌথভাবে এবং সরকারি অর্থায়ন সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ তথা সর্বোপরি প্রযুক্তি প্রয়োজন গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নিতে সিটিও ফোরাম আগামীতে আন্তরিকভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফোরাম সদস্যরা। দেশীয় সফটওয়্যারেরও বাজার বাড়ানোসহ দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ করার সুযোগ তৈরিতেও কাজ করবে এই ফোরাম। সারা দেশে বর্তমানে ১০ হাজার সিটিও কাজ করছেন। আগামীতে রাজধানীর বাইরের সিটিওদের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ফোরাম সদস্যরা মনে করেন রাজধানীর বাইরের সিটিওদের অংশগ্রহণে এই ফোরামের কার্যকারিতা দিন দিন বাড়বে।
শেষ কথা
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে এ ধরনের ফোরামের ভূমিকা গুরম্নত্বপূর্ণ। সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের যাত্রায় সম্ভাবনার যে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো তাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো বেগবান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ব্যাংকিং সেবা মানুষের জন্য আরো সহজ ও সাশ্রয়ী করতে এই ফোরাম কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করি।
সিটিও ফোরামের বর্তমান কার্যকরী কমিটি
সভাপতি : তপন কান্তি সরকার
সহ-সভাপতি : নাভেদ ইকবাল
সহ-সভাপতি : মো: মুসলেহ্ উদ্দিন
সেক্রেটারি জেনারেল : সৈয়দ মাসুদুল বারী
জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল : দেবদুলাল রায়
জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল : তারিক মোসাদ্দিক
ট্রেজারার : ইজাজুল হক
সদস্য : মো: শহীদ হোসেন
সদস্য : মো: আতিকুর রহমান
সদস্য : তানভীর হাসান