• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কমপিউটার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুহাম্মদ ওয়াশিকুর রহমান
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সুপার কমপিউটার
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কমপিউটার
আমরা কমপিউটিং সিস্টেমের সাথে মানব মস্তিষ্কের চিন্তাকৌশল এবং মানবদেহের জীবনচক্রের মিশ্রণ ঘটিয়ে সুপার কমপিউটার তৈরির পরিকল্পনা করছি। বর্তমান কমপিউটার বিজ্ঞানীরা এমন কথাই বলছেন। মূলত গবেষকেরা দেখেছেন মানুষের চিন্তাকৌশল এবং জীবনপ্রক্রিয়া প্রচলিত সুপার কমপিউটারের চেয়ে শক্তিশালী। একই সাথে দৈনন্দিন জীবনে মানুষের সাথে কমপিউটারের যোগসূত্র তৈরির কারণে মানুষের কমপিউটার নির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে। এখন মানুষ চায় তড়িৎ সমাধান আর কমপিউটারের স্বাভাবিক জ্ঞান, যা মানুষের মতোই সহজে বুঝতে পারবে এবং শেয়ার করতে পারবে। কিন্তু কমপিউটার প্রযুক্তি এখনো মানুষের ওপর নির্ভরশীল। এখনো কমপিউটারের যেকোনো কমান্ড কোনো কাজ করার আগে বারবার আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে নেয়। এতে ভুল করেই অনেক ফাইল ডিলিট কিংবা ভুল কমান্ড দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই দুর্বলতা দূর করার জন্যই বিশ্বের প্রযুক্তি জায়ান্টরা কাজ করছেন। আর এক্সেত্রে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে মানবদেহের বিশেষ করে ব্রেন এবং ডিএনএ সিস্টেমের অনুকরণে কমপিউটার তৈরির প্রক্রিয়া। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের সাথে সাথে আলোচনার ঝড়ও বাড়ছে।

একজন মানুষ প্রকৃতির সাথে যেমন দ্রম্নত খাপ খাইয়ে নিতে পারে, আবার নির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দীর্ঘসময় ধরে বিপুলসংখ্যক তথ্য নিজের মধ্যে সংরক্ষণ করা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাই একজন মানুষ যদি মেশিন হতো তাহলে সে সুপার কমপিউটারের চেয়েও শক্তিশালী যন্ত্র হতো। বিজ্ঞানীরা এমন কথাই বলছেন। আর বিষয়টির সত্যতা প্রমাণে খুব বেশি কিছু নিয়ে ভাবতেও হবে না, শুধু চিন্তা করম্নন একজন মানুষের মস্তিষ্কের ওজন কত? মাত্র তিন পাউন্ড। কিন্তু এই অঙ্গটি বিশ্বসংসারে সবচেয়ে জটিল যন্ত্র। কেননা এর মধ্যেই প্রতিটি মুহূর্তে ঘটে চলেছে শত শত রাসায়নিক বিক্রিয়া, বিদ্যুতের খেলা, সুইচ অন-অফ, কোটি কোটি সঙ্কেতের আদান-প্রদান আর সংরক্ষণের খেলা। একইভাবে মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গেই চলছে এমন নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়া, যার সবটি মিলে একজন মানুষ। এর মধ্যে মানবদেহের ডিএনএ সিস্টেম আরও একটি জটিল বিষয়। বিশেষ করে মস্তিষ্কের চিন্তাকৌশল এবং তথ্য সংগ্রহ-সংরক্ষণ এবং ধারণক্ষমতা এক কথায় অকল্পনীয়। তাই এই বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে কমপিউটার নির্মাণে অকল্পনীয় কান্ড করা সম্ভব হবে। আর তাই বিজ্ঞানীরা মানবদেহের মস্তিষ্ক, ডিএনএ সিস্টেমগুলোর আদলে কমপিউটার তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা নিউরোসিস্টেম, ডিএনএ, ন্যানোটেকনোলজিসহ বেশ কিছু প্রযুক্তির মিলন ঘটিয়ে এমন একটি প্রসেসিং এবং স্টোরেজ সিস্টেম উদ্ভাবনের চেষ্টা চালাচ্ছে যা চিন্তাভাবনা বা কাজের ক্ষেত্রে মানুষের মতো করে কাজ করবে। একই সাথে প্রচলিত স্টোরেজ সিস্টেমের চেয়ে একদিকে যেমন বেশি তথ্য বা ডাটা সংরক্ষণ করতে পারবে, অপরদিকে বিপুল ডাটার দ্রম্নত এবং সঠিক প্রক্রিয়াজাতও করতে পারবে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন একটি মানুষের মস্তিষ্ক ২.৫ পেটাবাইট ডাটা সংরক্ষণ করে রাখতে সক্ষম; প্রায় ১ মিলিয়ন গিগাবাইট তথ্যের সমপরিমাণ। একই সাথে এই বিপুল পরিমাণ তথ্য ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ধারণ করে রাখা সম্ভব এবং আকারও হবে বেশ ছোট।

এ বিষয়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানবদেহের ডিএনএ সিস্টেমের আদলে কমপিউটারের স্টোরেজ সিস্টেম উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে। গবেষক দলের দাবি অনুযায়ী এই গবেষণায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের দেহে প্রায় ৫০ ট্রিলিয়ন কোষ আছে। ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা ডিএনএ এক প্রকারের নিউক্লিক অ্যাসিডের অণু, যেখানে সব জেনেটিক তথ্য সংরক্ষেত থাকে। এগুলোর চার প্রকারের বেসের মাধ্যমেই লেখা হয়ে থাকে গুরম্নত্বপূর্ণ বিপুলসংখ্যক জেনেটিক তথ্য। তাই এই পদ্ধতিতে তৈরি হলে ২.৫ পেটাবাইটের মতো ডাটা সংরক্ষণ করে রাখতে সক্ষম; প্রায় ১ মিলিয়ন গিগাবাইট তথ্যের সমপরিমাণ। একই সাথে এই বিপুল পরিমাণ তথ্য ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ধারণ করে রাখা সম্ভব হবে।

অপরদিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্র নিয়ে আজ বিশ্বজুড়ে যে মাতামাতি, সে বিষয়ে তো কমবেশি সবারই ধারণা আছে। এখনও তেমনভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স না এলেও গবেষকেরা মানুষের মস্তিষ্কের যাবতীয় কাজকর্ম নকল করে এক সুপার কমপিউটার বানাতে চান। যার মাধ্যমে কমপিউটার মানুষের মতো করেই চিন্তাভাবনা, যোগাযোগ, অনুভূতি, নিজস্ব বুদ্ধি ব্যবহার করে কাজ করতে সক্ষম হবে। এ বিষয়ে গবেষণা করছেন সুইজারল্যান্ডের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী হেনরি মারক্র্যাম। তিনি ‘হিউম্যান ব্রেন প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রজেক্টে কাজ করছেন। যার উদ্দেশ্য মানুষের মস্তিষ্কের যাবতীয় কর্মপদ্ধতি ডিজিটালি বা একটি কমপিউটারে পরিবর্তন করা।

এদিকে কমপিউটার প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএম সিন্যাপস (SyNAPSE) শিরোনামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষকেরা মানুষের ব্রেনের চিন্তাশক্তির প্রক্রিয়া এবং ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করছেন। আইবিএমের গবেষকেরা মূলত মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তাকৌশল অনুকরণ করার চেষ্টা করেন যাতে একে ডিজিটালরূপে রূপান্তর করা যায়। গবেষণা কার্যক্রমটি এখনও অনেক প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও কমপিউটিং, সুপার কমপিউটিং, নিউরো বিজ্ঞান এবং ন্যানোপ্রযুক্তির অসংলগ্নতা দূর করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি এখনও তাত্ত্বিক পর্যায়ে থাকলেও বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।

এক্ষেত্রে মেশিন বা কমপিউটারের বড় সীমাবদ্ধতা হলো বিশেস্নষণ করার জন্য আকৃতি বা বিষয় সম্পর্কে আগাম কিছু তথ্য জানা থাকা প্রয়োজন। যেমন- কোনো বস্ত্তর বিভিন্ন অংশ পৃথক করার জন্য কমপিউটারকে আগে থেকে বলে দেয়া দরকার সেই বস্ত্তটির কতগুলো অংশ আছে। আপনাকে আগে কমপিউটারকে জানিয়ে দিতে হবে, সেই বস্ত্তটির ১০টি অংশ কি ১২টি অংশ। নতুন কৌশলে মানুষের কোনো বস্ত্তকে ঠিকমতো চেনার বা অনুধাবন করার ক্ষমতা বা সামর্থ্যকে অনুকরণ করা হয়ে থাকে। কারণ এক্ষেত্রে কমপিউটারের বা মেশিনের কোনো বস্ত্তর কয়টি অংশ আছে সে সম্পর্কে আগে থেকে কোনো ধারণা থাকার প্রয়োজন হয় না। তার অর্থ একটি মেশিন বা রোবট আগে থেকে কোনো রকম ট্রেনিং না পেয়ে ধারণা করতে বা শিখতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উৎকর্ষ পেরিয়ে মানব মস্তিষ্কের অনুকরণে কমপিউটার তৈরির বিষয়টি সূদুরপ্রসারী উল্লেখ করলেও শুরম্নটা খুব শিগগিরই হবে বলে আশা করছেন। আবার অনেকের মনে বারবার ঘুরেফিরে যে প্রশ্নটি আসছে তা হচ্ছে মানুষের মতো বুদ্ধিমান কমপিউটার কি আদৌ তৈরি করা সম্ভব? আর যদি তা হয়ও, তবে কমপিউটারের সাথে মানুষের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস