• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইউআইএসসি : জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মানিক মাহমুদ
মোট লেখা:২৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সার্ভিস সেক্টর
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইউআইএসসি : জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
স্বপ্ন ও বাস্তবতা

২০০৭ সালে ইউনিয়ন ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টার তথা ইউআইএসসি নিয়ে কাজ শুরু হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য বা মিশন নিয়ে চারটি বিষয়ে কাজ শুরু হয় : এক. ‘তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার’ অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের মানুষের তথ্য ও সেবা পাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলা। এখানে সেই সহজলভ্য প্রযুক্তির কথা বলা হচ্ছে। যেমন মোবাইল ফোন, যা অগণিত নিরক্ষর মানুষও আজ ব্যবহার করছে। প্রযুক্তি শুধু কমপিউটার আর ইন্টারনেট নয়। দুই. ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা’ অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করা। শক্তিশালী করার অর্থ ইউনিয়ন পরিষদকে আরো উদ্যোগী করে তোলা, ইউনিয়ন পরিষদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো। তিন. ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিশ্চিত করা’ অর্থাৎ জনগণের সেবার চাহিদা নির্ণয় করা, সেই চাহিদা অনুযায়ী সেবার সংখ্যা বাড়ানো, প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই সেবাকে ই-সেবায় পরিণত করা এবং এই সেবা যাতে করে ইউনিয়নের সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ হয়রানিমুক্তভাবে, কম সময় ও খরচে পেতে পারে, তা নিশ্চিত করা। স্বপ্ন ছিল, এর মধ্য দিয়েই আমাদের দেশে বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য কমে আসবে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তৃণমূল মানুষের সার্বিক জীবনমানে। অর্থাৎ সত্যিকার অর্থেই গ্রামের মানুষ, গ্রামের সবচেয়ে গরিব মানুষ, সবচেয়ে বঞ্চিত নারী ইউনিয়ন পরিষদে এসে তার প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও সেবার সুযোগ পাবে কোনো ঝামেলা ছাড়া। কিন্তু স্বপ্নের বিপরীতে বাস্তবতা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমরা সে সময় দেখেছি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মানুষ শুধু জন্মনিবন্ধন আর নাগরিক সনদ এ ধরনের হাতেগোনা কয়েকটি সেবা নেয়। এর বাইরে যে আরো অনেক সেবা এখান থেকে পাওয়া সম্ভব এ ধারণা মানুষের মধ্যে ছিল না। যদিও বর্তমান বাস্তবতা হলো দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে মানুষ ঝামেলামুক্তভাবে ৫০ ধরনের বেশি তথ্য ও সেবা পাচ্ছে।

স্বপ্ন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

স্বপ্ন বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সংশ্লিষ্টদের আস্থার অভাব। ইউনিয়ন পরিষদে যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব, এই কেন্দ্র যে আবার পরিচালিত হতে পারে স্থানীয় দুইজন তরুণ উদ্যোক্তার মাধ্যমে, সেই উদ্যোক্তার মধ্যে আবার একজন নারী এবং এই তথ্যকেন্দ্র থেকে ৫০ ধরনের বেশি সেবা দেয়া সম্ভব হবেু সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ ব্যাপারে আস্থার অভাব ছিল সে সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। এনআইএলজিতে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র বিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এলজিডি, বেসরকারি টেলিসেন্টার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের দুটি ইউনিয়ন পরিষদে আমরা সিইসি নামে যে পাইলট প্রকল্প শুরু করেছিলাম ২০০৭ সালে তার আলোকে তখন আমরা আজকের ইউআইএসসির বিজনেস মডেলের ধারণা উপস্থাপন করেছিলাম সেখানে। সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বিত শুরু হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল তথ্য ও সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করবে দুইজন উদ্যোক্তা, যারা হবে স্থানীয় এবং তারা কোনো বেতনভুক্ত কর্মী হবে না। প্রায় সবারই মত ছিল এই মডেল কাজ করবে না। বেতনভুক্ত কর্মী থাকতেই হবে এবং এরা মতামত দেন সবচেয়ে ভালো হয় এটা যদি পরিচালনা করে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। আমরা তাতে একমত হইনি। একমত না হওয়াটা যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল দুই বছর যেতে না যেতেই তা প্রমাণ হয়। টেকসই তথ্য ও সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রশ্নে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নেতৃত্ব ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাইলট প্রকল্প যখন পর্যায়ক্রমে সিইসি থেকে সরকার ইউআইএসসি নামে বিসত্মৃত ঘটাতে শুরু করল তখন যেসব ইউনিয়নে এই চেয়ারম্যানদের ভূমিকা পূর্ণ সহযোগিতামূলক ছিল না, ফলে ইউআইএসসির টিকে থাকতে বেগ পেতে হয়েছে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী তথ্যভান্ডারর না থাকাটা ছিল আরও একটি চ্যালেঞ্জ। সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করল। সমস্যা নানা ধরনের। কারিগরি সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, নেতৃত্বের সমস্যা। উদ্যোক্তাদের সফলতা, দুর্বলতা পর্যালোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফরম দরকার। গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় উল্লিখিত সমস্যা সমাধান বেশ সময়সাপেক্ষ, যা তথ্য ও সেবাকেন্দ্রকে টেকসই করে তোলার প্রশ্নে একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।

পর্যালোচনা ২০০৭-২০১৩ : ইনোভেশন ও শিক্ষণীয়
স্থানীয় মানুষের তথ্যসেবার চাহিদা : স্থানীয় মানুষের তথ্যসেবার চাহিদা নিরূপণ করার জন্য ‘তথ্য ভান্ডারের কার্যকারিতা যাচাই’ সংক্রান্ত এই গণগবেষণা পরিচালিত হয় ২০০৮-এর মে-জুনে বাংলাদেশের দুটি ইউনিয়নে। এর একটি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়ন এবং অন্যটি দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ উপজেলার মুশিদহাট ইউনিয়ন। এই দুই ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বে ‘কমিউনিটি ই-সেন্টার’ গড়ে তোলা হয়েছিল। গণগবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল টেলিসেন্টারে যে তথ্যভান্ডার ব্যবহার করা হয় তা কতখানি কার্যকর হচ্ছে যাচাই করে দেখা এবং এই তথ্যভান্ডারকে আরো অধিক কার্যকর করে তুলতে হলে কোথায় কী পরিবর্তন ঘটানো দরকার। এই গণগবেষণায় প্রধান গবেষকের ভূমিকা পালন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে তিন ধরনের মানুষ। এক. স্থানীয় জনগোষ্ঠী যারা সংলাপের (যৌথ আলোচনা) মাধ্যমে তথ্যভারের কার্যকারিতার মান নির্ণয় করে এবং এ ‘কমন সায়েন্টিফিক মেথড’ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। দুই. স্থানীয় একদল স্বেচ্ছাব্রতী তথ্যকর্মী, যারা এই সংলাপ পরিচালনায় সহায়কের ভূমিকা পালন করে। তিন. বাইরের (ইউএনডিপি) গবেষক, যারা স্বেচ্ছাব্রতী তথ্যকর্মীদের সংলাপ-সহায়ক হয়ে উঠতে এবং গবেষণার ফাইন্ডিংস তথ্যায়ন করতে দক্ষতা অর্জনে ভূমিকা রাখে।

উল্লেখযোগ্য একাধিক তথ্য বেরিয়ে আসে এই গবেষণা থেকে। দেখা যায়, তথ্যভান্ডারের বিদ্যমান বেশিরভাগ তথ্যই তৃণমূল মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য (communicative) নয়। কারণ, তথ্যের (বিশেষ করে অ্যানিমেশন কনটেন্ট) বাক্য বিন্যাসে পাঠ্যবইয়ের ভাষা এবং প্রায়ই ইংরেজি শব্দের ব্যবহার। কৃষককেরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে মতামত দেন ‘আমাদের জন্য তথ্য বানালে তাতে ইংরেজি আর কঠিন (টেকনিক্যাল) শব্দ ব্যবহার করবেন না’। একাধিকবার উপস্থাপনের পর বোঝা যায়, সিইসিতে অনেক কনটেন্ট আছে যেগুলো সেলফ এক্সপ্লেনেটরি নয়। এসব কনটেন্ট একবার দেখে কৃষকের পক্ষে আয়ত্তে আনা সম্ভব নয়। এমনকি অন্যের সাহায্য নিয়েও নয়। এর ওপর কনটেন্ট যদি টেকনিক্যাল বিষয়ে হয় তাহলে তা আরও জটিল। এমন কনটেন্ট মানুষ অর্থ ও সময় ব্যয় করে দেখবে কেন? সিইসি ম্যানেজার ও স্বেচ্ছাব্রতী তথ্যকর্মীদের অভিজ্ঞতা হলো এই ধরনের কনটেন্ট বিনামূল্যে হওয়ার পরও, এমনকি বিষয়বস্ত্ত প্রয়োজনীয় জেনেও মানুষ আগ্রহ দেখায় না। তথ্য ব্যবহারকারীরা চিহ্নিত করেন তথ্যভান্ডারে একাধিক বিষয়ে তথ্য রয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের কাছে অপ্রয়োজনীয় অর্থাৎ তাদের কাছে এর চেয়েও উন্নত সমাধান রয়েছে, যা তারা পূর্ব পুরুষদের থেকে অর্জন করেছে। এই সঙ্কট বিদ্যমান তথ্যভান্ডারের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করতে পারে। এই সঙ্কট দ্রুত কাটিয়ে ওঠার সুযোগ নেই, তবে তথ্য ব্যবহারকারীরা মতামত দেন, এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হলো তথ্যভান্ডার তৈরির আগে নির্বাচিত বিষয়ে স্থানীয় মানুষের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা। শুধু প্রশ্নপত্র পূরণ করে এই চাহিদা নির্ণয় করা অসম্ভব। একজন সেন্টার ম্যানেজার ও স্বেচ্ছাব্রতী তথ্যকর্মীর দায়িত্ব শুধু তথ্য সরবরাহ করা নয়, বরং তথ্য সংগ্রহকারীর চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ হলো কিনা তা যাচাই করা এবং তথ্য ব্যবহারকারীর সাথে এমন আচরণ করা যাতে করে তার মধ্যে আরও নতুন তথ্য সংগ্রহের আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং এভাবে উন্নয়ন চাহিদা সৃষ্টির একটি সৃষ্টিশীল সংস্কৃতি গড়ে তোলা। যৌথ আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে, গ্রামে খুব কমসংখ্যক মানুষই আছে, যারা কমপিউটারের সামনে বসে সাবলীলভাবে প্রশ্ন করে তথ্য জানার চেষ্টা করে। এটা ঘটে না তার, কারণ লজ্জা আর অজানা এক প্রযুক্তিভীতি। নারীদের ক্ষেত্রে এটা মারাত্মক পর্যায়ে বিদ্যমান। অনেক মানুষ তথ্য জানতে আসে, কিন্তু লজ্জায় বা ভয়ে তথ্য না বুঝলেও কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলেও তা না করেই ফিরে আসে। এর সমাধান না হলে তথ্যভান্ডারের ওপর মানুষের আস্থা গড়ে উঠবে না, বরং দূরত্ব বাড়তে থাকবে। সিইসিতে দরকার বন্ধুসুলভ পরিবেশ- যাতে করে কোনো তথ্য ব্যবহারকারী যদি দেখেন যে সংগৃহীত তথ্য যথাযথভাবে কাজ করেনি, অর্থাৎ তথ্য সঠিকভাবে বানানো হয়নি, এটা যেনো নির্ভয়ে ও অনায়াসেই জানাতে পারেন এবং কী পরিবর্তন করলে এই তথ্য কাজ করবে সে পরামর্শও যেনো দিতে পারেন। পরামর্শ বাসত্মবায়নে সিইসি কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে উদ্যোগ না নিলে কেনো তা নেয়া হলো না তার কারণ জানতেও যাতে করে যেকেউ প্রশ্ন করতে পারেন তেমন বন্ধুসুলভ সহায়ক পরিবেশ জরুরি। অন্যথায় শুধু তথ্য ভান্ডার নয়, সিইসির সামাজিকভাবে টেকসই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াই দুর্বল হয়ে পড়বে। তথ্যের বিনিময়ে স্থানীয় মানুষের আর্থিক অংশ নেয়া থাকতে হবে- সবসময়ই সংলাপের একটি তুমুল উত্তেজনাকর আলোচ্য বিষয় ছিল তথ্য চাহিদা বাড়াতে হলে, উন্নয়ন চাহিদা সৃষ্টি করতে হলে এবং সিইসির ওপর মানুষের মালিকানা বাড়াতে হলে, তথ্যের বিনিময়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যত অল্পই হোক একটি অর্থনৈতিক অংশ নেয়া থাকা অনিবার্য। তবে এই অংশ নেয়া অবশ্যই বেচাকেনার মতো হলে চলবে না, হতে হবে এমনভাবে, যাতে মানুষ মনে করতে থাকে তথ্য চাহিদা, উন্নয়ন চাহিদা বাড়ার সাথে তাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং এ প্রক্রিয়াকে টিকিয়ে রাখা তাদের একটি সামাজিক দায়িত্ব।

টেকসই ইউআইএসসির সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিজনেস মডেল : আজকের ইউআইএসসি’র যে টেকসই অবস্থা তার প্রধান ভিত্তি হলো এর বিজনেস মডেলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব। এখানে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কাজ করছে। এক. তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করাই ছিল এর লক্ষ্য। দুই. তথ্যকেন্দ্র পরিচালনা করে দুইজন স্থানীয় উদ্যোক্তা। এর একজন নারী, একজন পুরুষ, যাদের বয়স ৩০ বছেরর নিচে। এভাবে স্থানীয় উদ্যোক্তা বাছাই করা হয়েছে, কারণ এতে করে স্থানীয় মানুষকে সেবা দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে এবং উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উদ্যোক্তারা যাতে করে শুরু থেকেই তথ্য সেবাকেন্দ্রকে ব্যবসায় হিসেবে বিবেচনা করে। প্রবল বাধা থাকার পরও উদ্যোক্তাদের বেতন দেয়ার ব্যবস্থা এখানে রাখা হয়নি এবং ইউপি সচিবকে দিয়ে সেবা দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। তিন. তথ্যসেবা কেন্দ্রের আইসিটি উপকরণ আসে স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানেরা এলজিএসপি ফান্ড থেকে এটা নিশ্চিত করেন। উদ্যোক্তারা এই উপকরণ পায় প্রথম দিকে। এটা দিয়ে শুরু করা হয়। পরে অনেক উপকরণ উদ্যোক্তা নিজেরাই কেনে। চার. তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে। বর্তমানে তথ্যভান্ডার জাতীয় ই-তথ্যকোষে রূপান্তরিত হয়েছে। এতে ৩শ’র বেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্য যুক্ত করেছে। দেখা গেছে, কোনো এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান যত শক্তিশালীই হোক না কেনো, তা মানুষের তথ্য ও সেবার চাহিদা পূরণের জন্য টেকসই হতে পারে না। আমরা ২০০৭ সালের অবস্থা চিন্তা করতে পারি। তখন ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন আর নাগরিক সনদ দেয়ার মতো সেবার বাইরে আর কোনো সেবা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ৫০টির বেশি সেবা ইউআইএসসি থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে জমির পর্চা তোলার মতো সেবাও মানুষ ডিসি অফিসে না গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করতে পারছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রামের মানুষ পেতে শুরু করেছে এই ইউআইএসসি স্থাপন হওয়ার কারণেই। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় ইংলিশ শেখার মতো ব্যতিক্রমধর্মী সেবা সারাদেশে বিসত্মৃত হচ্ছে। বর্তমানে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের সাথে ইউআইএসসির সমঝোতা স্মারক চুক্তি রয়েছে। আরও ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাঁচ. তথ্যসেবা কেন্দ্রের কাজের মনিটরিং করে জেলা প্রশাসন। উপজেলা থেকে ইউএনও প্রতিমাসের সমন্বয় সভায় ইউআইএসসির অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন উদ্যোক্তাদের সাথে। জেলা পর্যায়ে প্রতিমাসের সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক ইউআইএসসির অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন ইউএনওদের নিয়ে। জেলা প্রশাসনকে মনিটর করে বিভাগীয় প্রশাসন। প্রতি মাসে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকদের যে সমন্বয় সভা হয় সেখানেও ইউআইএসসির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। একই ধারাবাহিকতায় বিভাগীয় কমিশনারেরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তাদের মাসিক সমন্বয় সভায় ইউআইএসসির অগ্রগতি উপস্থাপন করেন।

ইউআইএসসি’র বিদ্যমান সেবাগুলো : নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধন, সরকারি ফরম ডাউনলোড, জমির পর্চার আবেদন, সব ধরনের নাগরিক আবেদন, জীবন বীমা, টেলিমেডিসিন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, পাবলিক পরীক্ষার ফল, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন, ভিসা ভেরিফিকেশন ও ট্র্যাকিং, অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ও নবায়ন, অনলাইনে সরকারি বন্ড বিক্রির আবেদন প্রসেস, অনলাইনে সরকারি টেন্ডারের আবেদন, শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে অবসর ভাতার আবেদন, মোবাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের স্বাস্থ্য পরামর্শ, মোবাইলে কৃষি পরামর্শ, আইনী সহায়তা, তথ্যসেবা- আইন ও কৃষি ইত্যাদি, ই-পুর্জি, স্ট্যাম্প বিক্রি (ডিসি অফিসের ভেন্ডর লাইসেন্স), সরকারি প্রজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড, পানি পরীক্ষা, আর্সেনিক পরীক্ষা, মাটি পরীক্ষা (এসআরডিআই), ইউপি চেয়ারম্যানদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি ডকুমেন্ট প্রণয়ন, সরকারি বিভিন্ন প্রচারণা কাজে লজিস্টিক সাপোর্ট, কমপিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখা ও অনলাইনে আবেদন, ভিওআইপির মাধ্যমে বিদেশে টেলিফোন, স্কাইপির মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং, সামাজিক অনুষ্ঠানের ভিডিও রেকর্ডিং-এডিটিং- কম্পোজ-প্রিন্ট-দলিল লেখাসহ, মোবাইল ব্যাংকিং, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি শিক্ষা, সার্ভিস ক্যাম্পের মাধ্যমে কৃষি পরামর্শ, সার্ভিস ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরামর্শ, সার্ভিস ক্যাম্পের মাধ্যমে আইনী পরামর্শ, ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ, জ্ঞান সেবা (কৃষি-প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন), জ্ঞান সেবা (মৎস্য-প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন), জ্ঞান সেবা (পোল্ট্রি-প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন), সোলার সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট (ইডকল), স্ক্যান, ফটোকপি, লেমিনেশন, মোবাইল ফোন কল, মোবাইলে টাকা লোড, মোবাইল মেরামত, মোবাইলের সিম বিক্রি, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর খেলা ও মুভি প্রদর্শন এবং নেবুলাইজার ভাড়া।
৯০৩২ উদ্যোক্তার কর্মসংস্থান : প্রতিটি ইউআইএসসিতে দুইজন করে উদ্যোক্তা হিসেবে বর্তমানে ৯০৩২ উদ্যোক্তা কাজ করছেন সারাদেশে। এর মধ্যে অর্ধেক নারী। এদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই কর্মসংস্থান বেশিরভাগের জন্য সন্তুষ্টিজনক হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়। ৪০ শতাংশ ইউআইএসসিতে মাসে ১০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এসব ইউআইএসসি বাণিজ্যিকভাবে টেকসই হয়েছে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। ৩৫ শতাংশ ইউআইএসসিতে মাসে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। এরা স্ট্রাগল করছে ইউআইএসসিকে টেকসই করে তোলার জন্য। অবশিষ্ট ইউআইএসসিগুলো রয়েছে ঝুঁকির মুখে। উল্লিখিত তিন ধরনের অবস্থা পর্যালোচনা করে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়। ঝুঁকির মুখে যারা রয়েছেন সফল উদ্যোক্তারা তাদের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেন। নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে এই প্রতিষ্ঠা সামাজিকভাবে তাদের এক নতুন অবস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছে। একাধিক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা এই অবস্থানের কারণে পরিবারে, এলাকায় এক ভিন্ন ধরনের মর্যাদার আসন প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। একাধিক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন যাদেরকে দেশের বিভিন্ন বড় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রিসোর্স পারসন হিসেবে এনে তাদের অভিজ্ঞতা বিশ্ল্বেষণ করার সুযোগ সৃষ্টি করছে।
ইউআইএসসি ব্লগ- সমস্যার অংশগ্রহণমূলক সমাধান : উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১০ সালে এই ব্লগটি তৈরি করা হয়। বর্তমানে এর সদস্য প্রায় ১৪ হাজার। এই ব্লগের সদস্য প্রধানত উদ্যোক্তা, পাশাপাশি দেশের ডিসি, এডিসি, ইউএনও, বিভাগীয় কমিশনার, একাধিক মন্ত্রী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, মহাপরিচালকসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। কী ঘটে এই ব্লগে- এই প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা ব্যাখ্যা দাবি রাখে। তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কারিগরি সমস্যা, সফটওয়্যার সম্পর্কিত সমস্যা, প্রশাসনিক সমস্যা। এরা উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। কিভাবে কেন্দ্র পরিচালিত হবে, কিভাবে কনটেন্ট ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হবে তা শিখেছেন উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণে। কিন্তু ওই প্রশিক্ষণে হার্ডওয়্যার সম্পর্কে বিসত্মৃত ধারণা তারা পান না। পাওয়ার কথাও নয়। ফলে কেন্দ্র শুরু করার অল্প দিনের মধ্যে ছোটখাটো হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিলেই কেন্দ্রের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। ব্লগে এর প্রায় বেশিরভাগেরই সমাধান মিলছে। যেমন একজন উদ্যোক্তা হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত কোনো সমস্যা ব্লগে লেখামাত্রই যেসব উদ্যোক্তা বিষয়টি জানেন তারা সাথে সাথে তার সমাধান জানিয়ে দিচ্ছেন। এই জানিয়ে দেয়াটাকে তারা তাদের একটা দায়িত্ব মনে করেন। এভাবেই এ সমস্যার ৯০ শতাংশ সমাধান মেলে ব্লগ থেকে। আর একটি সমস্যা হলো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানেরা অনেক এলাকাতেই যেভাবে সহযোগিতা করা দরকার তা করছেন না। এই না করার পেছনে কারণও রয়েছে। হয়তো তারা ঠিকভাবে জানেন না, বুঝতে পারেননি ইউআইএসসির গুরুত্ব। এই ধরনের সমস্যা ব্লগে এলে দ্রুতই এর সমাধান মিলছে। কারণ এই সমস্যা ইউএনও, এডিসির জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দ্রুতই এরা এ ব্যাপারে তৎপর হয়ে ওঠেন। ইউআইএসসি পরিচালনা, আয় বাড়ানো, টেকসই হওয়া সম্পর্কিত কোনো সমস্যা হলে তা উদ্যোক্তারা সাথে সাথে ব্লগে লেখেন, লেখার সাথে সাথেই মতামত, পরামর্শ আসতে শুরু করে। চলতে থাকে তর্ক-বিতর্ক। এই ইন্টারেকশনের মধ্যেই প্রশ্নকারী তার কাঙ্ক্ষিত সমাধান পেয়ে যান। বিভাগীয় কমিশনার, মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই ব্লগকে ফলোআপ করার কাজে ব্যবহার করেন। যেমন একাধিক বিভাগীয় কমিশনার অনলাইন মনিটরিং টুল থেকে জেলার অবস্থা বিশ্লেষণ করে তা ব্লগে প্রকাশ করেন। এতে করে তা উদ্যোক্তা ও জেলা প্রশাসনের জন্য চাপ এবং সন্তুষ্টি দুইই তৈরি করে। কেননা এতে মন্ত্রিপরিষদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রশংসা করা হয়, সমালোচনা করা হয়।

অনলাইন মনিটরিং টুল : জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় প্রশাসন যাতে করে দ্রুত ইউআইএসসিকে ফলোআপ করতে পারে, দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করার উদ্যোগ নিতে পারে সেজন্য অনলাইন মনিটরিং টুল তৈরি করা হয়েছে। এই টুল ব্যবহার করে একজন ডিসি বা ইউএনও কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি ইউআইএসসির আয়, সেবা গ্রহণকারীর সুনির্দিষ্ট অবস্থা চিত্র জেনে নিতে পারেন। যেমন জেলার বা উপজেলার কোনো ইউআইএসসি সপ্তাহে কতদিন খোলা ছিল, কোন দিন কত আয় হলো, কোন দিন কতজন সেবা গ্রহণ করল, তার সব চিত্র জেনে নিতে পারে। এভাবে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগের চিত্র জানা সম্ভব। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকেও এই চিত্র বিশ্লেষণ করে জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়।

সর্বশেষ দৃষ্টান্ত- মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো : ইউআইএসসিতে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে প্রথম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম ঘটনা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার জন্য মানুষ ইউআইএসসি থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারলেন। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের দালালের দরকার পড়েনি। এই প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনে ইচ্ছুক কর্মীদের বাছাই করা হয়। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ১৩-২১ জানুয়ারি ২০১৩ পর্যন্ত সাতটি বিভাগ থেকে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৬ জন শ্রম অভিবাসনের জন্য নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যায় নিবন্ধন করেন, যা প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার ৯৪৫ জন, চট্টগ্রামে ২ লাখ ২৪ হাজার ৪১৬ জন, রাজশাহীতে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৪৩ জন, রংপুরে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬৮ জন, সিলেটে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫৬ জন, খুলনায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪১০ জন এবং বরিশালে ৭২ হাজার ২৯৮ জন অনলাইনে নিজ নিজ ইউনিয়নের ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি) থেকে নিবন্ধন করেন।

ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার বনায়ন কর্মী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সাতটি বিভাগ থেকে অনলাইনে স্বয়ংক্রিয় লটারি প্রক্রিয়ায় ৩৪ হাজার ৫০০ কর্মী বাছাই করে। সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ স্বয়ংক্রিয় বাছাই প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় এবং এরই মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে প্রথম দফায় চূড়ান্তভাবে ১১ হাজার ৫০০ কর্মী বাছাই করা হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে।
সব জেলা ও ইউনিয়ন কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে, অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম কেন্দ্রীয়ভাবে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করে সম্পূর্ণ নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি তদারকি করে। একই সাথে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন কারিগরি সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি টেকনিক্যাল কল সেন্টার এবং মালেয়শিয়ায় শ্রম অভিবাসনে নিবন্ধনে আগ্রহী কর্মীদের জন্য একটি সাধারণ কলসেন্টার স্থাপন করে। এসব কলসেন্টারে ১০ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ৫৬৭টি কল গ্রহণ করা হয় বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে। এসব মোবাইল কলের ৩৯ শতাংশ ছিল শ্রম অভিবাসনে আগ্রহী কর্মীদের এবং ৬১ শতাংশ ছিল বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও উদ্যোক্তাদের। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও উদ্যোক্তাদের কলের ৬১ শতাংশই ছিল ইন্টারনেট সংযোগের ব্যান্ডউইডথ সম্পর্কিত, যা শুধু ব্যবহারকারীর নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের অসুবিধাকে তুলে ধরেনি, একই সাথে দেশের দুর্গম স্থান থেকে ডিজিটাল অভিবাসনের নতুন প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়তা করে।
ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে ডিজিটাল নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুধু দরিদ্র ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নতুন সুযোগ তৈরি করে দেয়নি, একই সাথে দেশের সবচেয়ে দুর্গম স্থান থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। এসব তথ্যকেন্দ্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে শ্রম অভিবাসনের জন্য অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক নিবন্ধিত কর্মী তাদের অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন। আবার লটারির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত কর্মী কনফার্মেশন কার্ড এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে পারছেন তাদের কাছের ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে এবং নিজ নিজ মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে।

ইউআইএসসিকে টেকসই করার প্রশ্নে এই ঘটনা নতুন এক অভিজ্ঞতা। এক সময় ছিল যখন ইউআইএসসির জন্য এলজিইডি থেকে উপকরণ সংগ্রহ করাই ছিল সবচেয়ে বড় বিষয়। তারপর অনেক সমস্যা, অনেক প্রশ্ন আসতে থাকল একের পর এক। কি করে ইউআইএসসিতে সেবার সংখ্যা বাড়বে। কি করে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়বে। কি করে ইউআইএসসিতে আয় বাড়তে থাকবে। কি করলে আয় বাড়ার আরও নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হতে থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব বাড়তে থাকে। কিন্তু মালয়েশিয়ার এই নিবন্ধন ছিল প্রথম ঘটনা, যা ছিল স্থানীয় মানুষের শতভাগ চাহিদার পূর্ণ প্রতিফলন। আমরা দেখলাম মানুষ যতজন নিবন্ধন করার সুযোগ পেয়েছে। আরও মানুষ ছিল যারা নিবন্ধন করার সুযোগ পায়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করা সম্ভব হয়নি। আমরা দেখলাম গত কয়েক বছরে ইউআইএসসি যে পরিমাণে পরিচিতি পেয়েছে, এক মালয়েশিয়ার নিবন্ধন দিয়ে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি পরিচিতি পেয়েছে।

মানুষের এই চাহিদা পূরণের ঘটনা সরকারের মধ্যে ইউআইএসসি সম্পর্কে নতুন আস্থা তৈরি করেছে, যা ইউআইএসসির জন্য নতুন এক সম্ভাবনা। একটি সফলতা যে বহু সফলতার পথ রচনা তৈরি করতে পারে এখানেও তার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। যেমন মালয়েশিয়ার নিবন্ধন শেষ হতে না হতেই হংকংয়ে নারী শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। এরপর নিশ্চয়ই বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে নিবন্ধন করার বিষয়টি ইউআইএসসির বাইরে করার কথা আর সরকার ভাববে না। শুধু নিবন্ধন নয়, জাতীয় পর্যায়ের যেকোনো ধরনের কাজ যেমন ডাটা এন্ট্রি এমন সব কাজই এই ইউআইএসসি থেকে করা সম্ভব। ইতোমধ্যে বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

দুর্বল ইউআইএসসিগুলোর সক্রিয় হওয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই নিবন্ধনের কাজ। এই কাজ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অনলাইন মনিটরিং টুল দিয়ে যে তথ্য আমরা পেতাম তাতে দেখা যায় দেশে ৩৫০০ ইউআইএসসি সক্রিয় ছিল, যেখানে আয় ছিল নিয়মিত। অবশিষ্ট ১০০০ ছিল ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মালয়েশিয়া যাওয়ার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ডিসি অফিস থেকে যখন এটুআই প্রোগ্রামে ইউআইএসসির নামের তালিকা আসতে শুরু করে তখনই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের টনক নড়ে। যেসব ইউআইএসসি’র নামের তালিকা ডিসি অফিস থেকে এলো না, কারণ হিসেবে জানা গেল যেসব ইউআইএসসি ভালো চলে না তাদের নাম পাঠানো হয়নি। এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের জন্য অসম্মানজনক বিষয় হয়ে উঠতে শুরু করল। তারা উঠেপড়ে বলা শুরু করলেন, আমরা আজই প্রয়োজনীয় সব উপকরণ কেনে দেব কিন্তু ‘আমার ইউনিয়ন’ থেকে নিবন্ধন অবশ্যই হতে হবে। এর ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা দিল দীর্ঘদিন ধরে যেসব ইউআইএসসি দুর্বল ছিল, যেখানে সেবার কাজ অনিয়মিত ছিল, তা সক্রিয় হয়ে উঠল।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং ট্রাবলশুটিং সহায়তা দেয়া হয়েছিল ইউআইএসসি ব্লগের মাধ্যমে। প্রথম দিনে আমরা দেখলাম হাজার হাজার ফোন আসতে শুরু করল। আমরা ফোনকলের পাশাপাশি ব্লগে পোস্ট দিলাম। ব্লগেও সমস্যা লিখতে এবং এখানে সমাধান দেখে নিতে অনুরোধ করা হলো। এক ঘণ্টার মধ্যে চিত্র পাল্টে গেল। ব্লগে হাজার হাজার প্রশ্ন আসতে শুরু করল। ব্লগে যত বেশি অংশ নেয়া বাড়ে, ফোনকল তত কমতে শুরু করল। এতে একদিকে যেমন উদ্যোক্তাদের সময় বাঁচল, ডিসি অফিসের সময় সাশ্রয় হলো, তেমনি সবার ব্যয় কমল।

এ প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনে আগ্রহী প্রায় ১৪.৫ লাখ কর্মী নিবন্ধন করেন এবং একটি জাতীয় ডাটাবেজ তৈরি হয়, যা সরকারি-বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রথমবারের মতো একটি স্বয়ংক্রিয় ডাটাবেজ, যা সব ইউনিয়ন পরিষদের জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। একই সাথে এটি শ্রম অভিবাসনে আগ্রহী বিভিন্ন পেশার জন্য নিবন্ধিত কর্মীদের ভবিষ্যতে বাছাই করতে সহায়তা করবে।
নগর তথ্য ও সেবাকেন্দ্র : ইউআইএসসির মতো নগর তথ্য ও সেবাকেন্দ্র বা টিআইএসসি একটি ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’। টিআইএসসি গড়ে উঠবে উপজেলা ও জেলা শহরে, যেখানে সরকারি-বেসরকারি সব সেবা পাওয়া যাবে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থাপিত নগর তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি সেবার বাইরে উভয় প্রতিষ্ঠানের সেবাও পাওয়া যাবে।

নগর তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হলে একাধিক ফল সৃষ্টি হবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে নগর তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপিত হলে জনগণ এক জায়গায় এসে সব সরকারি-বেসরকারি সেবা পাবেন। এর ফলে কোনো সেবা নেয়ার জন্য জনগণকে শহরের শেষ প্রামত্ম থেকে কোনো নির্দিষ্ট সরকারি অফিসে বা পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন অফিসে আসতে হবে না। এর মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর ফলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে। জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সময় ও ব্যয়ের ব্যাপক সাশ্রয় ঘটবে। নগর তথ্য ও সেবাকেন্দ্র হয়ে উঠবে একটি টেকসই ব্যবসায় কেন্দ্র হিসেবে। টিআইএসসির সাথে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব এই পথকে সুগম করবে। এর ফলে টিআইএসসিতে সেবার সংখ্যা বাড়বে, ব্যবসায় নিরাপত্তা বাড়বে, বাড়বে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ও বাড়বে আয়

প্রশ্ন : আপনার ইউআইএসসি থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কত মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন? কোন কোন পেশার মানুষ নিবন্ধন করলেন? এদের মধ্যে নারী কতজন ছিলেন?

আমার ইউআইএসসি থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ৩৪০ জন মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। বিভিন্ন পেশার মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে দিনমজুর, কৃষক, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, বাসের ড্রাইভার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইত্যাদি। এদের মধ্যে নারী ছিলেন না।

প্রশ্ন : ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করার সুবিধা পাওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষের কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে?

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করার সুবিধা পাওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষের ইউআইএসসির প্রতি অনেক আস্থা হয়েছে। যার ফলে এরা এখন কোনো কাজের জন্য বাইরে যায় না। বিশেষ করে পাসপোর্ট ফরম আমার এখানে কেউ করতে আসতেন না। এখন যেকোনো দেশের জন্য পাসপোর্ট করার প্রয়োজন, আর সেজন্য সবাই আমার কাছে পাসপোর্টের আবেদন করতে আসেন।

প্রশ্ন : সরকারের এই উদ্যোগ ইউনিয়ন পরিষদকে কি শক্তিশালী করেছে?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের আশা নিয়ে আমাদের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করেছেন তার অগ্রগতি উদ্যোক্তারা যতটুকু সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই মালয়েশিয়ার নিবন্ধন অনলাইনে করতে দিয়ে তার দ্বিগুণ বাসত্মবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। কারণ আমাদের প্রচারের মাধ্যমে মানুষ যতটুকু তথ্য ও সেবাকেন্দ্রকে চিনতেন তার চেয়ে এখন মানুষ অনেক বেশি চেনেন, কারণ এরা টিভিতে বা রেডিওতে শুনেছেন মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে যেতে হবে। এরা মনে করতেন এই নাম তো শুনিনি, এটা আবার কোন জায়গা। নিবন্ধন করি আর নাই করি, একবার দেখে আসি কি আছে সেখানে।
প্রশ্ন : এই উদ্যোগ থেকে আপনার কত আয় হয়েছে? এতে কি ইউাইএসসির ব্যাপারে আপনার আস্থা বেড়েছে?
১৫ হাজার টাকা। সরকার যেভাবে প্রতিটি কাজে তথ্য ও সেবাকেন্দ্রকে ভরসা করেছে। তাতে করে আমারও আস্থা বেড়ে গেছে যে ভবিষ্যেতে আরও অনেক ধরনের সরকারি কাজে সরকার আমাদের সাহায্য করবে।

মোসা: জোসনা খাতুন
উদ্যোক্তা, নিতপুর ইউআইএসসি, পোরশা, নওগাঁ

মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা তাদের নিজ নিজ ইউআইএসসি কেন্দ্র বা পাশের ইউআইএসসি কেন্দ্রের মাধ্যমে নিবন্ধন কাজ সম্পাদন করেছেন। প্রথমে প্রার্থীদের হাতে লিখে ফরমটি পূরণ করতে দেয়া হয়েছে এবং পরে উদ্যোক্তারা সেই পূরণ করা ফরমটি থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পাদিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয় এবং এটি প্রিন্ট ও সংরক্ষণের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনলাইনে কর্মী প্রেরণের রেজিস্ট্রেশন সম্পাদিত করার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে হয়েছে। যেমন- উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণপরবর্তী তাদের করণীয় সম্পর্কে অবগত করতে প্রশিক্ষণ প্রদানকারীদের যথেষ্ট ধৈর্যশীল হতে হয়েছে। নিবন্ধনের সময় মাত্র তিন দিন হওয়ায় উদ্যোক্তাদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়েছে। বৈদ্যুতিক সমস্যা ও ব্যান্ডউইডথের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।

মালয়েশিয়া সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের কর্মী পাঠানো চুক্তি সম্পাদনের পর সরকার এ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ, পক্ষপাতহীন ও ঝামেলাহীনভাবে করার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে করার সিদ্ধামত্ম নেয়। দেশের বাইরে সেসব বাংলাদেশী কর্মী যেতে ইচ্ছুক তারা বেশিরভাগ সময়ই দালালদের খপ্পরে পড়ে এবং প্রচুর টাকা খরচ করেও যেতে পারে না। ইউআইএসসি থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করার ফলে আগ্রহী প্রার্থীদের যেসব সুবিধা হয়েছে তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়নি, পক্ষপাতহীনভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়নি, সরকারের মাধ্যমে কাজটি হওয়ায় কর্মীরা মালয়েশিয়া যাওয়ার পর সেখানে অবস্থান এবং চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, ইউআইএসসি থেকে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সরকারি সিদ্ধামত্ম সময়োপযোগী এবং বাসত্মবসম্মত। এ জেলায় মোট ৬৭টি ইউআইএসসি অনলাইনে নিবন্ধন করার কাজে যুক্ত ছিল। মোট ২১ হাজার ৫৮৪ জন অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। উদ্যোক্তারা নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ টাকা আয় করেছেন। এই আয়ের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে তাদের কেন্দ্রের আয় বেড়েছে। পাশাপাশি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে এবং কেন্দ্রের প্রচার এবং ইউনিয়নের জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।

মো: ওবায়দুল আজম
জেলা প্রশাসক, নরসিংদী

আশা জাগানিয়া এক অনন্য বাস্ততা

প্রবাসে যাওয়ার স্বপ্ন প্রতিটি নাগরিকের মনে জাগিয়ে তোলে অনন্য উদ্দীপনা-প্রেরণা। কিন্তু প্রবাসে পাড়ি দেয়ার পথে পদে পদে হয়রানি বেকার যুবকদের কাছে ছিল অসহনীয় এবং বইতে না পারার মতো কষ্টভার। ঠিক সে সময় ইউআইএসসির মাধ্যমে গৃহের প্রাঙ্গণে এবং পরিচিত উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে নিবন্ধনের সংবাদটিই জাগিয়ে তোলে আশা-ভরসা ও প্রাণোচ্ছ্বাস। চ্যালেঞ্জগুলো : জেগে ওঠা উচ্ছ্বাসে জেলা প্রশাসন থেকে দেয়া হয় নিশ্চয়তা ও আত্মবিশ্বাস। দেয়া হয় নিবিড় প্রশিক্ষণ, করা হয় সক্রিয় পর্যবেক্ষণ। চ্যালেঞ্জ ছিল ইন্টারনেটের ধীরগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, অনাধুনিক পুরনো কমপিউটার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসম মানসিক অবস্থা, রাজনৈতিক বৈপরিত্য, উদ্যোক্তাদের সম্যক ধারণার অভাব, আস্থাহীনতা ইত্যাদি।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা : আমরা জেলা প্রশাসন বরিশালের পক্ষ থেকে প্রথমে ডিজিটাল বাংলাদেশ যে শুধু স্বপ্ন নয় বরং একামত্ম বাসত্মব, একামত্ম সত্য ও বিশ্ব দুয়ার খোলার উপায় সে বিষয়টি বোঝানোর এবং কথা ও কাজ দিয়ে প্রতিফলন ঘটানোর উদ্যোগ নিই। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটেরা ইউআইএসসি’র উদ্যোক্তাদেরকে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। অতঃপর পর্যবেক্ষণের জন্য ও সক্রিয় সহায়তাকল্পে ১০টি উপজেলাকে চারটি ইউনিটে বিভক্ত করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারেরা, দক্ষ এসি এবং এপিদেরও ট্রাবলশুটার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। জেলাতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করে সার্বক্ষণিক সহায়তা ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হয়। প্রতিটি ইউআইএসসি’র আডি ও পাসওয়ার্ড নিয়ে জটিলতা নিরসন করা হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এটুআইয়ের হেল্প ডেস্ক থেকে সহায়তা নেয়া হয়। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য গ্রাম পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য এবং একজন করে প্রথম/দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদার ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়। লোডশেডিং হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে শহরের লোড কমিয়ে পল্লি এলাকায় লোড বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। নির্ধারিত সময়ের পরও ইউআইএসসি চালু রাখার ব্যবস্থা নেয়। অধিক গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আগাম লিফলেট আকারে ফরম পূরণের নিয়মকানুন ব্যাপক প্রচার করা হয়। উদ্যোক্তাদের বাইরেও উদ্যমী, শিক্ষিত যুবক, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদেরকে নিবেদিতভাবে নিয়োগ করে প্রার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষা ও ফরম পূরণের জন্য পৃথক হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহায়তা ও সাংগঠনিক ক্ষমতাও ছিল উৎসাহব্যঞ্জক।

আমি নিজেও দূর-দূরান্তে ছুটেছি, ঘুরেছি। এনপিডি এটুআই ও সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এন আই খানও টেলিফোনে নানা উপকারী পরামর্শ এবং ট্রাবলশুটিংয়ের বিষয়ে সহায়তা দিয়েছেন। বরিশাল জেলার ৮৫টি ইউআইএসসির মধ্যে ৭৮টি এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। এ জেলা থেকে নিবন্ধন করেছেন মোট ১৮ হাজার ৬১১ জন। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা আয় করেছেন ৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা। এই আয়ের মাধ্যমে ইউআইএসসিগুলোর উদ্যোক্তাদের মনে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাদের মনে এই ধারণার জন্ম হয়েছে, দায়িত্ব অর্পণ করা হলে তারা তা যথাযথভাবে পালনে সক্ষম। পাশাপাশি যেসব ইউআইএসসির কার্যক্রমে শিথিলতা দেখা গিয়েছিল, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তারাও নতুনভাবে জেগে উঠেছে। লোডশেডিং ও ইন্টারনেট সংযোগের ধীরগতি সত্ত্বেও এ জেলার উদ্যোক্তারা নিবন্ধন কার্যক্রমটি সফল করতে সক্ষম হওয়ায় তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুণ। জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ ধরনের গণমুখী ইতিবাচক কার্যক্রমে আবারও সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন, এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এরা। এছাড়া কমপিউটার জ্ঞান-দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তারা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন এবং জেলা প্রশাসন ও বিসিসির কাছে অধিকতর প্রায়োগিক জ্ঞানসমৃদ্ধ প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

পাসপোর্ট হওয়ার সাথে সাথে মন চলে যায় মেঘের ওপর দিয়ে দূর দেশে। প্রাণ চলে যায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আশাবাদী স্বপ্নের অজানা প্রামত্মরে। কিন্তু বহুক্ষেত্রে সেটি সফল হয় না। প্রতারণা, উচ্চ ব্যয়, হয়রানি, মিথ্যা প্রলোভনে বঞ্চনার ইতিহাস শুধুই যখন বেড়ে চলেছিল সে সময় ইউআইএসসি থেকে নিবন্ধন এবং স্বল্প ব্যয়ে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় চাকরি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সরকার ও জনপ্রশাসনকে করেছে আপন, জনপ্রিয়, নন্দিত ও অভিনন্দিত। নিবন্ধনের তিনটি দিন ছিল উদ্যোক্তা ও সম্পৃক্তদের নির্ঘুম রাত জাগা কর্মোৎসব। এছাড়া ঝিমিয়ে পড়া উদ্যোক্তারাও জেগে ওঠেন সাহসে। বাড়িয়ে দেন সৌহার্দ্যের হাত। অভাবনীয় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হন বিনা বেতনে চলা ইউআইএসসি এবং উদ্যোক্তারা। হাতে নিবন্ধন রসিদ পাওয়ার পরই অনেকের চোখে ঝরেছে আনন্দের ফোয়ারা। জেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে তাই করা হয় আবেগী প্রশংসা ও দেয়া হয় নিবন্ধনের জন্য অফুরাণ প্রেরণা। নিবন্ধন, লটারি, চূড়ান্ত লটারি, প্রশিক্ষণ, পাসপোর্ট তৈরি সব প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে ছকে বাঁধা পরিকল্পনায়, যা বাংলাদেশের বাস্তবতায় চমকপ্রদ-অনন্য আশা জাগানিয়া এক রোমাঞ্চকর সত্য উপাখ্যান।
আজ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান ও পরিকল্পনা শুধু স্বপ্ন নয়, বরং সত্য, মহাসত্য রূপে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। আত্মবিশ্বাসে জেগে উঠছে গ্রামবাংলা। কর্মসংস্থানের সুযোগ, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় যুব-প্রাণে যে জোয়ার আমি দেখেছি তাতে শুধু কাব্য করে বলতে পারি- ডিজিটাল বাংলাদেশ খুলে দিল বিশ্ব দুয়ার স্বচ্ছ-সেবায়, কর্মে ও প্রতিভায় জাগাল জোয়ার।

মো: শহীদুল আলম
জেলা প্রশাসক, বরিশাল

সরকারিভাবে এটুআই পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া সরকারের চাহিদার ভিত্তিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মালয়েশিয়ায় ১০ হাজার কৃষক পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে সারাদেশে স্থাপিত ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি) থেকে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের প্রাথমিক নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। নিবন্ধনে আগ্রহী ব্যক্তিরা যাতে সহজে, কম খরচে, হয়রানিমুক্ত উপায়ে নিবন্ধন করতে পারেন এবং সব ইউনিয়নের কোটা নিশ্চিত করে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচনের জন্যই মূলত ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়।

ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কৃষকদের প্রাথমিক নিবন্ধনের কাজটি ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। এটা যেমন ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের জন্য, একইভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির জন্যও চ্যালেঞ্জিং ছিল। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের ৪৫১৬টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের মধ্যে ৪২১৮টি কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ব্যক্তি অনলাইনে সফলভাবে নিবন্ধন করেন। নিবন্ধিত বেশিরভাগই এর আগে সামনাসামনি কমপিউটার দেখেননি বা কখনও ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে যাননি। সফলভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার ফলে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রগুলো তাদের সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে, তেমনিভাবে সাধারণ মানুষের মনে আস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সত্যিই সহজে, কম খরচে ও হয়রানিমুক্ত উপায়ে সেবা পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া যেসব মানুষ আদৌ জানতেন না যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র কী এবং এখানে কী কী সেবা পাওয়া যায়, তারা এখন এসব কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।

সফলভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার ফলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা যেমন বাংলাদেশ পুলিশ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে তাদের নিয়োগের বিষয়ে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

নাঈমুজ্জামান মুক্তা
জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ
এটুআই প্রোগ্রাম

আমার উপজেলায় মোট ১১টি ইউআইএসসি। এর মধ্যে সবই অর্থাৎ ১১টি সেবাকেন্দ্রই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর অনলাইনে নিবন্ধন করার কাজে যুক্ত ছিল। ১৯৬৩ জন মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন।
উদ্যোক্তারা নিবন্ধন করার মাধ্যমে ৯৮ হাজার ১৫০ টাকা আয় করেছেন। এই আয়ের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যেহেতু ইউআইএসসির উদ্যোক্তা ছাড়া অন্য কেউ অনলাইনে নিবন্ধন কাজটি করতে পারেননি, সেহেতু ইউআইএসসির সাথে সাথে উদ্যোক্তারাও তাদের নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ অনেকাংশে বেড়ে গেছে এবং অতি অল্পসময়ে তাদের আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সমাজে উদ্যোক্তাদের সম্মান অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এ কারণে উদ্যেক্তারা ইউআইএসসিতে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক উৎসাহিত হয়েছে।

সরকারের এই উদ্যোগ ইউআইএসসিকে টেকসই করে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে আমি মনে করছি। ইউআইএসসির কার্যক্রম সম্পর্কে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এখান থেকে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা অপ্রতুল ছিল। ইউআইএসসি থেকে মালয়েশিয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এই কার্যক্রমের পর সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদিত হওয়ায় সরকার সম্পর্কে জনগণের ধারণা আরও ইতিবাচক হয়েছে। স্থানীয়ভাবে অল্প খরচে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদিত হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ কমেছে। ফলে ইউআইএসসি সম্পর্কে সাধারণ জনগণের কাছে সরকারি সেবার একটি নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে, যা ইউআইএসসিকে ভবিষ্যতে টেকসই করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয়।
সরকারিভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সব উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশাসনের সরাসরি হসত্মক্ষেপে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি উদ্যোগটিকে সফল করার ক্ষেত্রে গতিশীল ভূমিকা পালন করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ঘনিষ্ট তত্ত্ববধানে উদ্যোগটিকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। সর্বোপরি উদ্যোক্তা ইউপি সচিব, ইউপি চেয়ারম্যান এবং ট্যাগ অফিসারদের নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করে এই কার্যক্রমকে সফল করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করি। সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় এই উদ্যোগ সফল হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা, ইউপি সচিব, ইউপি চেয়ারম্যান, ট্যাগ অফিসাররা এবং প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতায় এই উদ্যোগটিকে সফল করেছে।
শামীমা ফেরদৌস
ইউএনও, সদর, শরীয়তপুর

মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে কর্মী প্রেরণ
উৎসাহ-উদ্দীপ
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস